21/02/2022
আপনি যদি ৫০০০ টাকায় কক্সবাজারে দু'দিন ঘুরতে চান তাহলে আপনার জন্যে কয়েকটি স্পেশাল টিপসঃ
# নবীনগরের আলেয়াবাদ থেকে প্রতিদিন হানিফ পরিবহন ছেড়ে যায় সন্ধ্যা ৭.৩০ টায়। ৪০ সিটের দূর্দান্ত এই বাসের সিট ভাড়া মাত্র ৭০০/-। কক্সবাজার পৌছাবে পরদিন আনুমানিক সকাল ৭ টায়।
# অত:পর কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে অটো / সি এন জি ৫০ টাকায় ( ওরা ভাড়া চাইবে-৩০০ টাকা) রিজার্ভ নিয়ে চলে আসুন সুগন্ধা বিচের যেকোন হোটেলে।
ডলফিন মোড় থেকেও আসতে পারেন, জনপ্রতি ভাড়া নিবে ১০/-।
সুগন্ধা বিচ এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নিরাপদ বিচ।
তাই চেষ্টা করবেন, এই বিচের কাছাকাছি কোন হোটেলে উঠতে ।
আপনারা যদি কাপল হয়ে থাকেন তাহলে সুগন্ধা গেস্ট হাউস/ হোটাইট বিচে উঠতে পারেন, ১ দিনের জন্যে রুম ভাড়া নিবে : ১৫০০-২০০০ টাকা।
আর যদি ৫/৬ জন বা তার চেয়েও বেশি হয়ে গ্রুপে যেতে চান তাহলে অবশ্যই ফ্ল্যাট সিস্টেম হোটেলে উঠবেন।
আমার পরিচিত এমন একটি হোটেল হচ্ছেঃ
হাইপেরিয়ান হোয়াইট প্যালেস।
২০০০ টাকা নিবে, কিন্তু আমার রেফারেন্স দিয়ে আগে থেকে বুকিং নিলে ১৩০০-১৫০০ টাকা নিবে। ৩ রুমের একটি ফ্ল্যাট। চোখ ধাঁধাঁনো ডেকোরেশন। লিফট সুবিধার পাশাপাশি গ্রিজের ( গরম পানির) ব্যবস্থাও আছে এখানে। সাগরমুখী বেলকুনি তো বটেই।
আমরা সেখানে প্রতিবার ই থাকি। সার্ভিস খুব ই ভালো ওই হোটেল ম্যানেজমেন্ট এর।
ছোট মুখে ছোট একটি কথাঃ যে হোটেলেই থাকুন, আগে দেখে নিবেন তার ওয়াশরুমটা পরিচ্ছন্ন কিনা। এটাই আসল। এটা ভালো হলে সব ভালো।
তবে সরকারী ছুটির দিন ছাড়া যাওয়ায় প্লান করবেন। তাতে সাশ্রয়ী হবে অনেক কিছুর এবং ভীড়টাও কম হবে।
ভুলেও ১৬ ডিসেম্বর, ২১ ফেব্রুয়ারী, থার্টি ফার্স্ট নাইটে কক্সবাজার থাকবেন না, ১০ টাকার আলুভর্তা ৩০০ টাকা নিবে। ১০০০ টাকার হোটেল রুম ১০ হাজার টাকা নিবে।
১ম দিনঃ
# হোটেলে সকাল ৮ টায় চেক ইন করে নাস্তা করে সোজা খালি পায়ে চলে যান- সুগন্ধা / লাবনী পয়েন্টে।
সাগরে দৌড় ঝাপ দিয়ে লাভ নেই, কারণ বিশাল বিশাল ঢেউ এর কাছি আপনি কাবু।
সুতরাং, সাগরের ঢেউ এর কাছে আত্মসমর্পণ করুন, অর্থাৎ লাফাবেন না, বিপরীত পাশে থাকবেন না। বেশি দূর যাবেন না, হাটু পানিই কিছুক্ষণ এর মধ্যে গলা পানিতে পরিণত হবে।
# সেখানে দেখবেন ক্যামেরা ম্যান পাগল হবে আপনার ছবি তুলার জন্যে, আর নতুন হয়ে থাকলে আপনিও পাগল হবেন তাদের ডি এস এল আর ক্যামেরায় ছবি তুলতে। প্রতি ছবি ৫ টাকা নিবে।
দরদাম করে ২০/৩০ টা ( ১০০ টাকায়) ছবি তুলে নিবেন, ওরা অনেক গুলোই তুলবে, আপনি সিলেক্ট করে নিবেন। ফোন নম্বর দিয়ে যাবেন তাকে, সন্ধ্যা বা যেকোন সময় সে-ই ফোন দিয়ে আপনার হোটেলে এসে আপনার ফোনে ছবি গুলো ট্রান্সফার করে দিবে। তখন টাকাটা পরিশোধ করে দিবেন।
# দুপুর ১২/১ টায় চলে আসুন হোটেলে, অত:পর ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হয়ে যোহরের নামাজ পড়ে রেস্টুরেন্টে খেয়ে নিয়ে একটা জিপ/ সি এনজি রিজার্ভ করুন- ১ হাজার টাকার মধ্যে।
লোকেশন- মেরিন ড্রাইভ রোড- দরিয়া নগর- হিমছড়ি- মিনি বান্দরবান - ইনানী বিচ- পাটুয়ার টেক।
সব গুলো পয়েন্টে আপনি ১০-১৫ মিনিট করে টাইম পাবেন ঘুরতে। তবে পাটুয়ার টেকে সূর্যাস্ত দেখে নিবেন। এটাকে বলা হয় বিচের রাণী। অসম্ভব ও ভয়ংকর কিন্তু মায়াবী সৌন্দর্যের একটা প্রতিচ্ছবি এই জায়গা। অনেকটা সেন্ট মার্টিনের ছোয়া পাবেন। নিরিবিলি পরিবেশ, একদিকে পাহাড়, আরেক দিকে পাথুরে বিচ ও নীল সাগর।
সেখানে মাগরিব এর নামাজ পড়ে চলে আসুন আপনার হোটেলে। রাত ৮ টা বেজে যাবে প্রায় এতোক্ষণে। হোটেলে রেস্ট নিন। রাত ১০ টায় ডিনার করতে বের হয়ে যান। অতপর আবার চলে আসুন রাতের সমুদ্রের ভয়ংকর গর্জন শুনতে- সুগন্ধা বীচে।
কতোক্ষণ অবস্থান করে হোটেলে চলে আসুন।
২য় দিনঃ
# শুভ সকাল।
সকালে নাস্তা সেরে আবার চলে আসুন বিচে, লাবনী/ কলাতলী বিচে। গোসল করুন, জাম্প দিন, ইচ্ছে মতো আনন্দ করুন সাগরের নোনা জলে।
১১ টার মধ্যে ফিরে আসুন হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে দুপুরে খেয়ে অটোটে করে চলে আসুন কক্সবাজার ৬নং জেটি ঘাটে। মহেশখালীর উদ্দ্যেশ্যে।
মহেশখালী বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ। এখানে দেখার আছে শূটিং ব্রিজ, আদিনাথ মন্দির ও সুউচ্চ পাহাড়।
এখানে আসতে হলে জেটিঘাট থেকে ট্রলার / স্পিড বোটে চেপে আসতে হবে মহেশখালী।
ভাড়া নিবে-৭৫ টাকা জনপ্রতি ( স্পিড বোট), ট্রলার ৪০ টাকা, সময় নিবে ৪০ মিনিট।
সেখানে ৩০০/৪০০ টাকায় অটো রিজার্ভ করে মহেশখালী ঘুরে এসে সন্ধ্যায় চলে আসুন আপনার হোটেলে।
কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে বার্মিজ মার্কেট থেকে মা-বোনদের ঝিনুকের গয়না গাটি, দাদীর জন্যে আচার - শুটকী কিনে নিতে পারেন।
রাত ১০ টায় আবারো হানিফ পরিবহনে উঠে পড়েন। পরদিন সকাল ৭ টায় আলেয়াবাদ বাস স্ট্যান্ডে নিজেকে খুঁজে পাবেন -ইনশাল্লাহ।
বি.দ্রঃ পাতলা পায়খানা, পেটে গ্যাস, বমি, খাউজানি( চুলকানি), মৃগী রোগ/ মৃরিগী ব্যারাম / মাজা ব্যথা.. প্রভৃতি রোগ না জানিয়েই হঠাত আসে ভূমিকম্পের মতো, তাই এগুলোর ঔষধ অবশ্যই ট্রাভেল ব্যাগে রাখবেন, সাথে জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি অবশ্যই রাখবেন। ২/৩ টা পলিথিন ব্যাগ রাখবেন সাথে , এতে সাগরে ভিজা কাপড়গুলো ভাজ করে নিয়ে আসতে পারবেন, তাতে আপনার ব্যাগে রাখা শুকনো কাপড় গুলো নষ্ট হবে না।
হোটেলে প্রবেশ করে ওয়ারড্রব, আলমারির প্রতিটা ড্র্য়ার, তোষকের কর্ণার, প্রথমেই চেক করে নিবেন- অবৈধ কোন জিনিস বা মাদক দ্রব্য আছে কিনা। নতুবা এগুলো দিয়ে আপনার অজান্তেই যেকোন মুহূর্তে আপনি নিজেই ফেসে যেতে পারেন!
( যাদের বাসে বমি করার অভ্যাস আছে, তারা এতো দূর ভ্রমণ না করে নবীনগরের তিতাস পাড়, রসুলপুর, সলিমগঞ্জ এর এমপি টিলা দেখে আসুন, কক্সবাজার ভ্রমণের স্বাদ কিছুটা হলেও মিটবে।)
শুভ যাত্রা। সংগৃহীত