
21/09/2025
📌মদিনার একটি হাসপাতালের আই সি ইউতে দীর্ঘ তিন বছর ধরে এভাবে অবচেতন অবস্থায় গভীর পর্যবেক্ষণে আছেন লোকটি।
উনি একজন আলেম। নাম মাওলানা হেদায়াতুল ইসলাম।
বাড়ি ফেনী। তিনি দুই হাজার বাইশের শুরুর দিকে উমরাহর সফরে মদিনা এসে হঠাৎ স্ট্রোক করে মালিক ফাহাদ হসপিটালে ভর্তি হন।
সেই থেকে আজ অবধি তিনি আই সি ইউতে আছেন। তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি।
কথা বলতে পারেন না। নড়াচড়া করার শক্তিটুকুও নেই। বেঁচে থেকেও যেন মৃত।
তাঁর সাথে পরিবারের কেউ নেই। এমনকি পরিবারের কেউ তাঁর খবরটুকুও নেন না। আসলে দেশ থেকে খবর নেওয়ার তেমন সুযোগও নেই। দীর্ঘ এই তিন বছরের মধ্যে নাকি পরিবারের কেউ উনাকে দেখতেও আসেননি।
পরিবারের সদস্যরা জানেনও না লোকটি বেঁচে আছেন নাকি পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। লোকটি তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু আজ তিন বছর ধরে তিনি একা। কেউ নেই তাঁর পাশে। স্ত্রী সন্তান থাকলেও পৃথিবীতে তিনি বড্ড একা। অসহায়।
উমরাহর সফরে যখন তিনি স্ট্রোক করেন তখন সাথে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন।
কিন্তু উমরাহর সফরের নির্দিষ্ট সময় শেষে স্ত্রী দেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান সংকটাপন্ন স্বামীকে আই সি ইউতে একা রেখে।
রোগীর অবস্থা অপরিবর্তিত দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাকি তাঁর স্ত্রীকে এখানে রোগীর সাথে অবস্থান করার প্রস্তাব দিয়েছিল।
স্ত্রীর থাকা-খাওয়া সহ যাবতীয় ব্যয়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা সৌদির হজ্ব মন্ত্রণালয় বহন করবে বলে প্রস্তাবও নাকি করেছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তিনি চলে যান দেশে।
তিন বছর ধরে তিনি আই সি ইউতে আছেন। অবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি। এভাবে আর কতদিন তিনি মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করবেন আল্লাহ ভালো জানেন। একজন রোগীকে আই সি ইউতে রাখার দৈনিক খরচ কী পরিমাণ হতে পারে তা হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিরাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু লোকটি সম্পূর্ণ ফ্রী চিকিৎসা পাচ্ছেন এই দীর্ঘ সময় ধরে। তাঁর চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ সৌদি আরবের হজ্ব মন্ত্রণালয় বহন করছে। দুর্ভাগ্য তিনি চেতনা ফিরে পাচ্ছেন না। তাঁর অবস্থা অপরিবর্তিত।
আজ আমরা তাঁর এক নিকট আত্মীয় সহ মদিনার আল মুয়াসাত হাসপাতালের সংরক্ষিত সুবিশাল আই সি ইউ কেবিনে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের পরিচয় জানতে পেরে জিজ্ঞাসা করেন, "উনার ছেলেসন্তান বা পরিবারের কেউ কি নেই? আরও বলেন, "এই আই সি ইউতে আরো অনেক রোগী রয়েছেন। যাদের স্বজনরা নিয়মিত দেখতে আসেন। খোঁজ নেন। কিন্তু এই রোগীর কোনো স্বজন কখনও আসেন না। খোঁজও নেন না। আমরা ভেবেছি তার পরিবারের কেউ নেই।"
ডাক্তার নার্স আর দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এমন অভিব্যক্তি শুনে কিছুক্ষণের জন্য থ বনে গিয়েছিলাম। ভাবতে লাগলাম, "আহ! কার জন্য এতসব আয়োজন? যেই স্ত্রী সন্তানের জন্য নিজের জীবনের সুখ আহ্লাদ সব ত্যাগ করে মানুষ রাতদিন পরিশ্রম করে সেই স্ত্রী সন্তান বা পরিবারপরিজনকে যদি জীবনের কঠিন অন্তিম মুহূর্তে পাশে না পায় তাহলে এই জীবনের স্বার্থকতা কী? এটাই বুঝি দুনিয়ার বাস্তবতা? মায়া ভালবাসা আবেগ এসব বুঝি শুধুই অভিনয়? দিনশেষে আসলেই কেউ কারো নয়? সবাই একা?
কিয়ামতের কঠিন দিনে স্ত্রী প্রাণপ্রিয় স্বামীকে চিনবে না। মা-বাবা প্রাণপ্রিয় সন্তানকে চিনবে না। আদরের ভাই বোনকে চিনবে না। সবাই ইয়া নাসফি ইয়া নাফসি করবে। রক্তের বন্ধনগুলো একে একে অচেনা হয়ে যাবে। কেউ পাশে দাঁড়াবে না। এতদিন এসব কথা কোরআন হাদিস থেকে শুধু শুনে এসেছি। অস্বাভাবিক অসম্ভব মনে হতো। কিন্তু আজকের এই ঘটনা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। আমাকে এটুকু বুঝতে শিখিয়েছে যে, দুনিয়ার সামান্য অসুস্থতা যদি মানুষকে এতো দূরে ঠেলে দিতে পারে, তাহলে আখিরাতের ভয়াবহ দিনের বাস্তবতা ঠিক কেমন হতে পারে?
👉এটাই বাস্তব প্রমাণ। পৃথিবীতে কেউ কারো না।
সবাই নিজের নিজের,কেউ, কারো কথা ভাবে না।💯
(সংগৃহীত)