13/08/2025
বিয়ের আগে জেসমিন শর্ত দেয়, তাকে লেখাপড়া করতে দিতে হবে। জাহাঙ্গীর রাজি হয়। রাজি হওয়াটা স্বাভাবিক।
কিন্তু বিয়ের পর তার মধ্যে বউকে হারানোর ভয় বাসা বাঁধে।
বউ ঢাকা গিয়ে ভার্সিটিতে পড়বে, নতুন মানুষদের সাথে মিশবে, পুরনো জাহাঙ্গীরকে ভুলে যাবে না তো?
এই দুশ্চিন্তা থেকে পরীক্ষার আগেরদিন রাতে সে জেসমিনের এডমিট কার্ড লুকিয়ে রাখে। জেসমিনের আর ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া হয় না।
পরবর্তীতে জেসমিন বিষয়টা বুঝতে পেরে জাহাঙ্গীরকে ছেড়ে চলে যায়। এ-ও ছেড়ে চলে যাওয়াটাও স্বাভাবিক।
একেবারে সাদামাটা একটা গল্প। কিন্তু এই গল্পের মধ্যে লুকিয়ে আছে আরও গল্প।
জাহাঙ্গীর কখনোই বাবা মায়ের ভালোবাসা পায়নি।
সঠিক প্যারেন্টিং না পাওয়া একটা ছেলের ট্রমা, নিজেকে নিয়ে ইন্সিকিউরিটি, কাউকে ভালোবাসার সাহস হারিয়ে ফেলা, কিংবা ভালোবাসলে ধরে রাখার আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা, এমনসব ব্যাধির কাউন্সিলিং করার মতো কেউ থাকে না।
এই মানুষগুলো সব হারিয়ে একাকী নিঃসঙ্গ জীবন কাটিয়ে দেয়। একদম জাহাঙ্গীরের মতো।
আর সমাজ?
সমাজ ঐ জাহাঙ্গীরের মতো খাটাস মানুষটাকেই দেখে, মানুষটার ভেতরের মানুষটাকে দেখে না। তারা দেখে খাইস্টা, খাটাস, রুড, বদলোক।
বৃদ্ধ বয়সে জাহাঙ্গীর আর জেসমিনের যখন আবার দেখা হয়। মুখোমুখি চেয়ারে বসে আছে দুজন। কিন্তু তাদের মধ্যে এক আকাশ দূরত্ব। ঠিক যেন আর্টসেলের গানের মতো-
জীবনের কাঁটা তারে তুমি
অন্তমিলের অপূর্ণতায়
বেওয়ারিশ ঘুড়ি উড়ে যাও অনাবিল
আকাশের শূণ্যতায়
নতুন সংসারে স্বামী সন্তান নিয়ে কতোই না সুখে আছে জেসমিন। খানিকটা হিংসে থেকেই জাহাঙ্গীর বলে ওঠে, ‘আমাকে ছাড়া থাকলে দেখি সবাই ভালো থাকে।’
সেদিনই প্রথমবারের মতো জাহাঙ্গীর জানতে পারে, জেসমিনের দুটি সন্তানের মধ্যে বড় মেয়েটি জাহাঙ্গীরের। যাকে জেসমিন জাহাঙ্গীরের পরিচয়েই বড় করেছে।
এর ঠিক পরের দৃশ্যেই দেখা যায়, খাটাস জাহাঙ্গীর তার মেয়ের কাছে গিয়ে বলছে, 'মা রে, আমি যদি জমিদার হইতাম, কলমের এক খোঁচাতে পুরা জমিদারি তোমারে লেইখা দিতাম। যদি রিকসাওয়ালা হইতাম, আমার মা-টারে পেছনে বসাইয়া সারা ঢাকা শহর ঘুরাইয়া দেখাইতাম। যদি মুচি হইতাম, আমার মায়ের সব জুতার সোল লাগায় দিতাম। জুতা পলিশ কইরা দিতাম।'
এই দৃশ্যে আমার বুকটা দুমড়েমুচড়ে গেছে।
উৎসবে অনেক ট্রানজিশন মোমেন্ট আছে, প্যাথেটিক মোমেন্ট আছে। কিন্তু এই যে জাহাঙ্গীরের মতো একজন নিঃসঙ্গ মানুষ যখন জেসমিনের পরবর্তী সংসার টা ফাইন্ড আউট করলো, যখন মেয়ের কাছে গিয়ে এক আকাশ আকুতি নিয়ে বললো, মাগো, একটা বেলা তুমি আমার বাড়িতে আমার সাথে বসে চারটা ডাইল ভাত খাবা?
তখন আমার নিঃশ্বাস এমনভাবে বন্ধ হয়ে আসছিল, মনে হচ্ছিল পৃথিবীটা অর্থহীন, পৃথিবীর সমস্ত সম্পর্ক অর্থহীন, একেবারেই অর্থহীন...
#উৎসব