28/07/2025
সাপের সঙ্গে বসবাস, গুহায় সন্তানপ্রসব! প্রেমিককে লুকিয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে ১৫ বছর ধরে জঙ্গলে! রাশিয়ান তরুণীর বিস্ময়কর বনবাসে চাঞ্চল্য
আধুনিক জীবন থেকে শত যোজন দূরে, যেখানে শুধু ঘন অরণ্যের নিঃসঙ্গতা আর প্রকৃতির নির্মম রূপ—সেই ভয়াল নিসর্গের বুকেই গড়ে উঠেছিল এক মায়ের আশ্রয়। না, কোনও সিনেমা নয়, গোকর্ণের জঙ্গলে সজীব এক গল্প। রাশিয়ার এক তরুণী, নিনা কুটিনা, দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে দীর্ঘ দুই মাস ধরে বসবাস করছিলেন কর্নাটকের এক দুর্গম পাহাড়ি গুহায়।
তার আগেও বছর বছর ধরে নানা অরণ্যে, গুহায় গুহায় ঘুরে কাটিয়েছেন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। একটি সন্তানকে তো গুহার মধ্যেই প্রসব করেছিলেন, কোনও হাসপাতাল, চিকিৎসক কিংবা ওষুধ ছাড়া।
❝প্রকৃতিই আমার আশ্রয়, সাপেরা আমার বন্ধু❞
গুহার ভিতরটায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু জামাকাপড়, প্লাস্টিকের চাদর, অল্প কিছু খাবার, আর এক কোণে এক হিন্দু দেবতার মূর্তি। মাথার উপর চুঁইয়ে পড়ছে জল। অথচ নিনা নির্ভার। তাঁর মতে, “প্রকৃতির সঙ্গে যাপনই আসল মুক্তি। সাপেরা আমাদের ক্ষতি করে না। ওরা আমাদের বন্ধু।”
সেই গুহা, যেখানে ২০২৪ সালে ভয়াবহ ধস নেমেছিল। বর্ষাকালে সাপের উপদ্রব চরমে। পুলিশ যখন তাঁকে উদ্ধার করে, তখনও চেতনাহীন নয়, বরং শান্ত ও আত্মবিশ্বাসী। তিনি নাকি নিজেই গুহা বেছে নিয়েছিলেন ধ্যান, প্রার্থনা আর শান্তির জন্য। তাঁর দুই সন্তান—৬ বছরের প্রেমা আর ৪ বছরের অ্যামা—এই ভয়াল প্রকৃতির মধ্যেই খুশিতে হুল্লোড় করে জলপ্রপাতে সাঁতার কাটে।
এক জোড়া পায়ের ছাপ আর তারপর...
গোকর্ণ পুলিশের নজরে প্রথম আসে কিছু পায়ের ছাপ। গভীর জঙ্গলে পাহাড়ি গুহার পথে সেই ছাপ অনুসরণ করে যখন তাঁরা এগোন, তখন আবিষ্কার হয় সেই কাপড় দিয়ে ঢাকা এক গুহার মুখ। ভিতর থেকে ভেসে আসা কথোপকথনের শব্দে থমকে যায় তাঁদের পা।
ভেতরে উঁকি দিতেই চোখে পড়ে এক বিদেশিনী আর তার দুই কন্যা—জীবন্ত অরণ্যবাস যেন ঠিক সামনে! উদ্ধার করে তাঁদের নিয়ে আসা হয় লোকালয়ে।
নিনা প্রথমে তাঁর সন্তানের পিতার কথা জানাতে চাননি। পরে জানা যায়, তিনি একজন ইজরায়েলি ব্যবসায়ী, ড্রর গোল্ডস্টেইন। বহু বছর ধরে গোয়ায় বসবাস করছেন, প্রতি বছর মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটান। নিনার অভিযোগ, তিনি আর সন্তানদের নিয়ে একা থাকতে চেয়েছিলেন, গোল্ডস্টেইনের ‘বসবাস’ বা সম্পর্ক নিয়ে ছিলেন নিরুৎসাহী।
নিনার ভিসার মেয়াদ বহু আগেই শেষ। বর্তমানে তিনি ভারতে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বিবেচিত। তাঁর ও মেয়েদের রাখা হয়েছে নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের এক আশ্রয়কেন্দ্রে। ভারত সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে তাঁদের রাশিয়ায় ফেরত পাঠানোর।
অন্যদিকে, ড্রর চান মেয়েরা ভারতে থাকুক—তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের পথ যেন বন্ধ না হয়ে যায়।
প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই আধুনিকতার যুগে, যেখানে মানুষ প্রযুক্তিতে আচ্ছন্ন, সেই সময়ও একজন মা কীভাবে এমন সাহসিকতা দেখালেন? সন্তানদের নিয়ে ভয়াল অরণ্যে স্বেচ্ছা নির্বাসন?
নিনা কুটিনার গল্প যেন এক আধুনিক যুগের জঙ্গলি মা—যিনি সভ্যতার থেকে দূরে, গুহার অন্ধকারে সন্তানদের নিয়ে জ্বালিয়েছেন ভালোবাসার দীপ।
তাঁর সাহস, ভালোবাসা ও প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থানের এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ—যা রোমাঞ্চ, বিস্ময় আর এক চিরস্থায়ী আবেগের ছোঁয়া রেখে যায়
অর্ঘ্য রায় ✍️