02/12/2023
একদল বলছে আপনার সন্তানকে দারিদ্র্য শেখান, আরেকদল বলছে আপনার ছেলেকে আভিজাত্য শেখান। অভিজাত বাবা তার সন্তানকে দরিদ্র্যতা চাইলে শেখাতে পারবেন, সেই সুযোগ তার আছে। তবে দরিদ্র বাবা তার ছেলেকে চাইলেও আভিজাত্য শেখাতে পারবে না।
অভিজাত শব্দটার সাথে ধনতন্ত্রের একটা সম্পর্ক আছে, আছে উঁচু বংশ ধারার সম্পর্কও। আবার আভিজাত্য হঠাৎ করে শেখানো যায়না। শুধু টাকা হলেও যেখানে আভিজাত্য অর্জন করা যায়না, সেখানে একজন অভাবগ্রস্থ বাবা কিভাবে তার সন্তানকে আভিজাত্য শেখাবে? নুন আনতে পান্তা ফুরায় যাদের তাদের সন্তানদের আভিজাত্য শেখানোর পরামর্শ দেয়া তাদের সাথে রসিকতারই নামান্তর।
কিন্তু সন্তানকে দারিদ্র্য আর আভিজাত্য শেখানোর আগে মানি ম্যানেজমেন্ট শেখানো খুব জুরুরি, বাটপারি না করা, মিথ্যা কথা না বলতে শেখানোটা খুবই জুরুরি। ধনী বা গরীব সব আত্মীয়ের সাথে সমান গুরুত্ব বা সমান সম্মান করতে শেখানোটা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি কাউকে অপমান না করতে শেখানো জুরুরি।
তারপর অর্থসংক্রান্ত/বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কখন কিভাবে করবে তা সন্তান বড় হওয়ার সাপেক্ষে ধীরে ধীরে শেখানো অপরিহার্য। অর্থনৈতিক/ বিনিয়গের সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমরা অনেকেই অনেক ভূল করি, যার খেসারত অনেক রছর ধরে দিতে হয়।
বাস্তব জীবনের একটা ঘটনা শেয়ার করি, বন্ধু প্রীতমের সাথে ঘটে যাওয়া একটা ভূল বিনিয়োগের কারনে প্রীতমকে গত ৩ বছর ধরে খেসারত দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরো ২-৩ বছর হয়তো দেয়া লাগবে। এমন না যে প্রীতম রিনিয়োগের সিদ্ধান্তগুলো না জেনে বুঝেই নিয়েছিল। প্রীতমের পড়াশোনা অর্থশাস্ত্র নিয়ে, অর্থনীতিতে অনার্স এবং পরিবেশ অর্থনীতিতে মাস্টার্স করছে, এমন না বন্ধু শুধু মুখস্থ করে পাশ করছে। অর্থনীতি নিয়ে প্রীতমের আগ্রহ অনেক আগ থেকেই, প্রতিটা টপিকস ধরে ধরে শিখছে প্রীতম, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারের পরও, ইউটিউবে Marginal Revolution University, Jacob Cipper সহ আরো অনেক চ্যানেলের অর্থনীতি বিষয় প্রতিটা নিজ উৎসাহে শিখছে, তাছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্ম Coursera থেকে অনেক পেইড কোর্স শেষ করছে। এসব উদাহরণ দিচ্ছি এটা বুঝানোর জন্য প্রীতম অর্থনীতি শুধু পাস করা বা শুধু ভালো রেজাল্টের জন্য পড়েনি। তারপরও বন্ধুর বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত ভূল ছিল! যদিও থিওরির সাথে এপ্লাইডের কিছু তফাৎ আছে, কিন্তু কনসেপ্ট ক্লিয়ার না থাকলে আপনি ভালো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন নাহ। সর্বোপরি তো রিজিকের একটা বিষয় আছেই।
আমি মনে করি মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আপনার আর্থিক সক্ষমতা ভাল বা খারাপের সাথে আপনি কতটুকু যুক্তিসম্মতভাবে, গোছানোভাবে চলতেছেন। প্রীতম ২০২২ এর মার্চে পোস্টিং এ আসে, নেগেটিভ ব্যালেন্স নিয়ে শুরু করে, প্রীতম যে মানুষ বাসায় মেহমান আসলে ঈদের খুশিতে মেতে উঠতো, সেই একি মানুষ ভয়ে আঁতকে উঠতো কেউ বাসায় আসলে কি বাজার করবে বা কি খাওয়াবে এই ভয়ে। আর কোথাও ঘুরতে যাওয়া বিলাসিতার নামান্তর, তো নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোথাও বেড়াতে যাওয়া বাদ দিয়ে দিসিল বন্ধু, খালি হাতে কিভাবে যাবে এই ভয়ে! কেউ দাওয়াত দিলে খুশির চাইতে মন খারাপ হয় বন্ধুর, খালি হাতে কিভাবে যাবে এই ভয়ে!!
প্রীতমের খুব খারাপ সময় তার অনেক কাছের মানুষকে মুখ ফিরিয়ে নিতে দেখছে, আবার উল্টো অনেক আত্মীয়ের কাছ অসময়ে বড় অংকের ঋন পাইছে, টাকার ঋন শোধ করে দিসে ঠিকই কিন্তু আসল ঋন তো টাকা দিয়ে শোধ করা যায় নাহ। আবার অনেক আত্মীয়ের ডাবল পার্ট দেখছে।
জীবনটা আসলেই আনসার্টেন, কোনকিছুরই কোন গ্যারান্টি নেই। কিন্তু গ্যারান্টি আছে আপনার পড়াশোনার/ সার্টিফিকেটের, ধৈর্য্যের, আপনার চারিত্রিক গুণাবলীর, এসব আপনাকে সময়ে অসময়ে রিটার্ন দিবেই।
টাকা আজকে নাই, কালকে হবে কিন্তু মিথ্যা বলা, বাটপারি করা, ডাবল স্ট্যান্ডার্ড চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের হওয়া এসব চাইলেই পাল্টাতে পারবেন নাহ। সন্তানকে দারিদ্র্যতা, আভিজাত্যের চাইতে ভালো চরিত্রের ভালো মানুষ বানানোর চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ন।
~নুরুল আবছার