25/08/2025
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার ঢাকার মহানগর হাকিম সারাহ্ ফারজানা হক এ আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মো. এরফান খান আফ্রিদিকে আদালতে হাজির করে তার সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন।
সোমবার দপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে তৌহিদ আফ্রিদিকে ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর তাকে এজলাসে তোলা হয়।
তৌহিদ আফ্রিদির পক্ষে তার আইনজীবী মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
তিনি বলেন, “তৌহিদ আফ্রিদি আওয়ামী লীগের কেউ না। বাদী এফিডেভিট দিয়ে বলেছে, ভুল তথ্যে মামলায় তাদের আসামি করা হয়েছে। আসামি জামিন, অব্যাহতি বা খালাস পেলে তার আপত্তি নেই। ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা নেই। রিমান্ডের যৌক্তিকতা নেই। তার রিমান্ড নামঞ্জুর করে জামিনের প্রার্থনা করছি।”
রাষ্ট্রপক্ষে মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন আফ্রিদির রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
আফ্রিদিকে ‘মিডিয়া সন্ত্রাসী’ দাবি করে আইনজীবী সুমন বলেন, “এই আসামি লাইভে এসে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের নারকীয় হত্যা করতে উৎসাহিত করেন। তাকে রিমান্ডে নিলে জানা যাবে কারা এ হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত কার কি নির্দেশনা ছিল। তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।”
শুনানি শেষে আদালত আফ্রিদির ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন জানিয়েছেন।
বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন মাই টিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে তৌহিদ আফ্রিদিকে রোববার রাতে সিআাইডির একটি দল বরিশাল থেকে গ্রেপ্তার করে।
বরিশালের কোতয়ালী মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, বাংলা বাজার এলাকার পপুলার ডায়গনষ্টিক ল্যাবের পাশের একটি ভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
আফ্রিদিকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে বলা হয়েছে, “স্বৈরাচারীর পক্ষ নিয়ে ‘কনটেন্ট ক্রিয়েটর’ তৌহিদ আফ্রিদি সেলিব্রেটি ও অন্যান্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধের জন্য প্ররোচিত করেন। যারা দ্বিমত পোষণ করেছে তাদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন।
“মামলার তদন্তকালে উঠে এসেছে এজাহারনামীয় আসামি তৌহিদ আফ্রিদি ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশ ও বিদেশে একজন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও মাই টিভির পরিচালক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিগত পতিত সরকারের বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এক্ষেত্রে সরাসরি একজন মিডিয়া সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে এবং ওই টিভি চ্যানেলের পরিচালক হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলেনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে ছাত্র জনতার দাবিকে উপেক্ষা করে আন্দোলন বিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ যোগায়। ”
আবেদনে আরো বলা হয়েছে, “আফ্রিদিরএমন উস্কানিমূলক কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে আসাদুল হক বাবু মারা যান বলে তদন্তে প্রকাশ পায়।
“তদন্তে এসেছে, মামলার এজাহারনামীয় তৌহিদ আফ্রিদি মাই টিভির ডিরেক্টর হিসেবে মহান সাংবাদিকতার পেশায় গুরুত্বপূর্ন পদে নিয়োজিত ও দায়িত্বে থেকে হলুদ সাংবাদিকতার মাধ্যমে তরুল সমাজের মাঝে থাকা তার অনৈতিক প্রভাব ও প্রতিপত্তিতে দলীয় ও ব্যক্তিগত হীনস্বার্থে তদানীন্তন আওয়ামী সরকাররে আজ্ঞাবহ হয়ে বিরোধী দলমতকে প্রত্যাখান করে উদ্দেশ্যমূলক হিংসাত্মক এহেন কার্যক্রম সংঘঠিত করায় মামলার প্রকৃত ঘটনা, অজ্ঞাতনামা আসামিদের পরিচয় সনাক্তকরণ ও রহস্য উদঘাটনের জন্য তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন।”
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের ৫ অগাস্টে যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন আসাদুল। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় গত বছরের ৩০ অগাস্টে যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়।
মামলায় আসামির তালিকায় বাবা-ছেলে নাসির উদ্দিন ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে।
এর আগে রোববার আফ্রিদির বাবা টিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন সাথীকে গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
পরদিন তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। রিমান্ড শেষে শনিবার কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।
গুগল নিউজে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কে ফলো করুন
কনটেন্ট ক্রিয়েটর
তৌহিদ আফ্রিদি