
13/07/2025
তুচ্ছ ঘটনায় ছেলের ওপর রেগে যান বাবা। একপর্যায়ে ছেলের দিকে কাঁচি ছুরে মারেন তিনি। মুহূর্তেই কাঁচিটি ছেলের মাথায় গেঁথে যায়! নেওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে। অবস্থা জটিল হওয়ায় সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকায়। ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটোছুটির পর অবশেষে ভর্তি করা হয় পিজি হাসপাতালে। কিন্তু তৎক্ষণাৎ মাথা থেকে কাঁচি বের করা সম্ভব হয়নি; রাখা হয়েছে আইসিইউতে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এর চিকিৎসায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হবে; ঝুঁকিও আছে। ছেলের এ অবস্থায় বাবাও ছুটাছুটি করে পাগলপ্রায়।
রাগ মানুষকে কোন পরিস্থিতিতে নিয়ে যেতে পারে ভাবা যায়! এ কারণেই হাদিসে রাগ নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। শিক্ষা দেওয়া হয়েছে ক্রোধ সংবরণের অনেক উপায়।
"রাগ" কখনো কখনো প্রাণনাশের কারণ হয়ে ওঠে। বহু সম্পর্ক নষ্ট হয়, আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়, মান-সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয় রাগের কারণে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় বহু মানুষের জীবনে নেমে আসে অসহনীয় বিপর্যয়; যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়াটা অনেক সময় অসাধ্য হয়ে ওঠে। এ কারণেই নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগ নিয়ন্ত্রণকারীকে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহা-পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন—
"যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দান করবেন।" (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
"আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।" (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)।
আর পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে—
"তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও, যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও জমিন, যা তৈরি করা হয়েছে পরহেজগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষকে ক্ষমা করে, বস্তুত আল্লাহ সত্কর্মশীলদিগকেই ভালোবাসেন।" (সুরা আলে ইমরান: ১৩৪)
সুতরাং রাগ নিয়ন্ত্রণের অভ্যাস করুন। নিজেকে সংবরণ করুন সর্বাবস্থায়। ঠান্ডা মাথায় ভেবেচিন্তে করুন প্রতিটি কাজ। নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, "তোমাদের মধ্যে কাকে তোমরা অধিক শক্তিশালী মনে করো?" তাঁরা উত্তর দিলেন, "যে ব্যক্তি কুস্তিতে অন্যকে হারিয়ে দিতে পারে।" নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, "সে প্রকৃত বীর নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সে-ই প্রকৃত বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।" (বুখারি: ৫৬৮৪)।
©লেখা: Raqi Mahmudullah Muhib
(লেখাটি উপাকারী মনে হলে সতর্কতা ও দাওয়াহর নিয়তে লেখকের নামসহ কপি-পোস্ট করতে পারেন। নাম কেটে প্রকাশের অনুমতি নেই।)