
07/09/2025
বাংলাদেশের আধুনিক রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক ইতিহাসে বদরুদ্দীন উমর এক অনন্য নাম। তিনি ছিলেন কেবল একজন রাজনীতিবিদ বা ইতিহাসবিদ নন, ছিলেন চিন্তার স্থপতি, ছিলেন বাঙলার মেহনতি মানুষের পক্ষের সংগ্রামী ব্যক্তি। তাঁর ইন্তেকালে আমরা হারালাম এমন একজনকে, যিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন জ্ঞান, আন্দোলন ও ইনকিলাবের পথে।
১৯৩১ সালে বর্ধমান জেলার অভিজাত পরিবারে তাঁর জন্ম। কিন্তু শৈশব থেকেই তিনি বুর্জোয়া স্বাচ্ছন্দ্যের সীমারেখা অতিক্রম করে সমাজের শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়াবার মানসিকতা অর্জন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলাকালীন তিনি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন এবং ভাষা আন্দোলনের সময় প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় থাকেন। পরবর্তী সময়ে তিনি শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চ পদে কাজ করলেও মূলত রাজনীতির ময়দান ও গবেষণার জগতে তাঁর আসল ভূমিকা প্রতিফলিত হয়।
বদরুদ্দীন উমর ছিলেন নীতিতে অবিচল। ১৯৮০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাম্যবাদী দল, যার মাধ্যমে শ্রমিক-কৃষকের রাজনীতি পুনর্গঠনের প্রয়াস চালান। যদিও মূলধারার রাজনীতিতে দলটি প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি, কিন্তু চিন্তার ক্ষেত্রে এটি ছিল বিকল্প সম্ভাবনার প্রতীক।
২০২৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি নির্দ্বিধায় তা প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁর এই অবস্থান আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, রাষ্ট্রীয় সম্মান নয় জনগণের অধিকার রক্ষা করাই ছিল তাঁর আজীবন ব্রত।
বদরুদ্দীন উমরের মৃত্যুতে আমরা হারালাম একজন জ্ঞানী, এক আপসহীন কণ্ঠস্বর। তবে তাঁর গ্রন্থ, তাঁর বক্তৃতা, তাঁর বিশ্লেষণ সবকিছু আজও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ন্যায়বিচারহীন সমাজে প্রকৃত বুদ্ধিজীবীর দায়িত্ব কী হতে পারে।