25/08/2025
একজন ছাত্রদল কর্মীর একাডেমিক লাইফ: ফ্যাসিস্ট বাহিনী কতৃক ৪ বার হামলা, ১টি মামলা, ৫২ দিন কারাবাস, পাত বসানো ভাঙ্গা হাত, মাথায় ১১টি সেলাই
অনার্স রেজাল্ট ৩.৪৩
মাস্টার্স রেজাল্ট ৩ ৩৭
অনার্স ২য় সেমিস্টার:
২০১৮ সালে অনার্সের ২য় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হই। অসুস্থ শরীর নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলাম।
অনার্স ৭ম সেমিস্টার:
২০২২ সালের মে মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদলকে ক্যাম্পাসে আসতে না দেয়ার ঘোষনা দেয় এবং আসলে প্রতিহত করার হুমকি দেয়।
ক্যাম্পাসে অবস্থানের যে গণতান্ত্রিক অধিকার সেটা রক্ষার জন্য ছাত্রদল ক্যাম্পাসে আসে। ক্যাম্পাসে আসলে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের উপর হামলা করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এ সময় ছাত্রদলের অনেককে হামলা করে মুমূর্ষু করে ফেলা হয়। টানা কয়েকদিন অধিকার রক্ষার সর্বাত্মক চেষ্টা করে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ। বহু নেতা-কর্মীকে আহত করা হয়। এমনকি নারী নেত্রীদেরো অমানুষিকভাবে পেটানো হয়।
সে সময় আমার অনার্সের ৭ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা দিয়ে ছাত্রদলের পক্ষে অবস্থান নিতে চলে যেতাম। মৃত্যুভয় মাথায় নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছি। ছাত্রলীগের হাতে ধরা পড়লে কি হতো সৃষ্টিকর্তা জানেন। ক্যাম্পাসের তৎকালীন অবস্থা ক্যাম্পাসের সবাই জানে। কত চাপের মধ্যে পরীক্ষা দিয়েছি একবার ভাবুন।
এতকিছুর পরে অনার্সের রেজাল্ট ৩.৪৩
মাস্টার্স ১ম সেমিস্টার:
সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় হাত ভেঙ্গে যায়, মাথা ফেটে যায়। হাতে পাত বসাতে হয়েছিল, যা এখনো আছে। ভাঙ্গা হাত ও মাথায় ১১টি সেলাই নিয়ে ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়েছি
মাস্টার্স ২য় সেমিস্টার:
২৮ অক্টোবর পরবর্তী সময়ে সারাদেশে সরকারবিরোধীদের ( বিএনপি এবং অন্যান্য) উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালায় সরকারি বাহিনী। গ্রেপ্তার, রিমান্ড, গুম-খুন হরদমে চালিয়েছে ফ্যাসিস্ট বাহিনী ও তার দোসররা। সারাদেশে বিএনপি ঘোষিত অবরোধ চলছিল তখন।
এই অবরোধের সমর্থনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের পক্ষ থেকে মিছিল করলে সেখানে হামলা করে, মিছিল থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারের পোষা সন্ত্রাসী বাহিনীর কতিপয় সদস্য। বাসা থেকে পর্যন্ত তুলে নিয়ে যেতো।
এই আন্দোলনের মাঝে ছিল আমার মাস্টার্সের ২য় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে অথবা পরে মিছিল থাকলে সেখানে অংশগ্রহণ করতাম।
সেসময় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার অভাব ছিল আমার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সহায়তায় পরীক্ষা কেন্দ্রে নিরাপদভাবে অবস্থান করতাম। পরীক্ষার সময় শেষ হবার আগেই খাতা জমা দিয়ে বের হয়ে যেতাম। বাইক রেডি থাকতো নিরাপদভাবে ক্যাম্পাস থেকে বের হবার জন্য। খুব হিসেব করে ক্যাম্পাসে পা ফেলতে হতো।
তবুও জেলে যেতে হয়েছে। আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে মিছিল থেকে গ্রেপ্তার হয়েছি। দুমাসের কাছাকাছি সময় কারাগারে ছিলাম।
একটিবার ভাবুন একজন ছাত্রদল নেতাকে কি পরিমান মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে জীবন ও একাডেমিক লাইফ পার করতে হতো?
এতকিছুর পরে মাস্টার্সের রেজাল্ট ৩.৩৭
নিজেদের পরিচয় না লুকানোর কারনে বারবার ফ্যাসিস্টের থাবার শিকার হয়েছে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। এত জুলুমের শিকার হবার পরও ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ তাদের লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। আর এজন্য ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ বাহবা পেতেই পারে।
নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে রেখে সরকারি সংগঠনে পোস্ট নিয়ে, আরামে পড়াশোনা করে রেজাল্ট ভাল করা সহজ।
কিন্তু ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দের মতো নিজেদের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে ফ্যাসীবাদের সাথে সম্মুখে লড়াই করার পরও একাডেমিক রেজাল্টে সন্তোষজনক পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে বুঝতাম কোনটা কত বড় মেধাবীদের সংগঠন।
মেহেদী হাসান।
আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী, ডাকসু
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।