24/08/2024
সময় এখন বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। তারপর আমাদেরকে আন্দোলনে নামতে হবে তিস্তা প্রকল্পের জন্য।
ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ড ও যুদ্ধ শুরু হয়েছিলো পানি পান করতে গিয়ে, যা ছিলো কারবালার প্রান্তরে।
পানি পিপাসায় হুসাইন (রাঃ) ও তাঁর অনুসারীরা প্রথম যখন বের হলেন পানি পান করতে, তখন ইয়াজিদের বাহিনি হত্যাকাণ্ড শুরু করে তীর নিক্ষেপ করে। ঐতিহাসিক কারবালা পৃথিবীর ইতিহাসে বিলুপ্ত হবে না কখনো।
পানি পান করতে না দিয়ে অবরোধ করে রাখা পৃথিবীর ইতিহাসে চূড়ান্ত জালিমের কাজ। জালিমরা যুগে যুগে কারবালা ছেড়ে বিভিন্ন প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়ে আর জুলুমের শুরু করে পানি সন্ত্রাস দিয়ে। তারপর আস্তে আস্তে অন্য জুলুমগুলো করা শুরু করে।
বাংলাদেশ একটি ভাটির দেশ বা বাংলাদেশ দিয়ে উজানের দেশগুলোর পানি নামার পানি পথ বলা যায়, যা শেষ হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। আর সেই সুযোগটাই নিয়েছে উজানের দেশ ভারত।
ভারতে সিকিমের উপর ভুটান বাঁধ দিয়ে ভুটান প্রায়ই সিকিম এর পানি বন্ধ করে দেয়। ভুটানের মত এত ছোট রাষ্ট্র এই দু:সাহস দেখায়। আর আমরা এতটাই দুর্বল যে, আমাদের দেশের প্রধান প্রধান ৮ টি নদীর উপর ভারত বাঁধ নিয়ে আন্তর্জাতিক নদী আইন অমান্য করে, আমাদের উপর পানি সন্ত্রাস করছে।
শুরুটা হয় পাকিস্তান আমলে, পাকিস্তানিরা পূর্ব-পাকিস্থান (বাংলাদেশ হওয়াতে) এটা নিতে মাতামাতি করে নাই।
ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গা নদীর উপর অবস্থিত একটি বাঁধ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এই বাঁধটি অবস্থিত। ১৯৬১ সালে এই বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় ১৯৭৫ সালে। সেই বছর ২১ এপ্রিল থেকে ফারাক্কা বাঁধ চালু হয়।
ফারাক্কা বাঁধ ২,২৪০ মিটার (৭,৩৫০ ফুট) লম্বা, যেটা প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সোভিয়েত রাশিয়ার সহায়তায় বানানো হয়েছিল। ১৯৬০ সালের ইন্ডিয়া-সোভিয়েত চুক্তি অনুযায়ী, আমেরিকা ব্লকের বিপরীতে তারা যৌথভাবে অনেক কিছুই করে।
আর এখন চিত্রটা পুরো বিপরীতে। ইন্ডিয়া-আমেরিকা ব্লক চীন-রাশিয়াকে কিভাবে রুখে দিবে তা নিয়ে এই উপমহাদেশে ভারতীয় আধিপত্য বিস্তারে দুই দেশ ব্যস্ত।
ফারাক্কা বাঁধ বাংলাদেশের মানুষের জন্য অভিশাপ। বিগত ৫০ বছর ধরে বাংলার মানুষকে খরাতে মরতে হয়ে যখন পানি দরকার। আবার যখন পানি দরকার নেই তখন বন্যায় ভাসিয়ে শেষ করে দিয়েছে।
মাওলানা ভাসানীর পর এই ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে কেউ জোর কোন পদক্ষেপ নেয়নি। শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে ইন্দিরা গান্ধীর যেই চুক্তি হয়েছিলো, সেই চুক্তিতে বাংলাদেশীরা নৈতিকভাবে বিজেতা ছিলো, কিন্তু কোন দিন তা বাস্তবায়ন করতে পারে নি।
তারা চেয়েছিলো বাংলাদেশে তাদের সৈন্য দিয়ে আধিপত্য রাখবে। শেখ মুজিবুর রহমান এসে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করে। পরিশেষে তারা সৈন্য প্রত্যাহার করে।
দ্বিতীয়ত, তিস্তা চুক্তি সবচেয়ে বড় একটি আঘাত হিসেবে আসে, যা বাংলাদেশের মত নব্য স্বাধীন একটি দেশের কাছে কূটনৈতিকভাবে পরাজয়ের। কিন্তু ১৯৭৪ সালের সেই চুক্তি কখনো তারা বাস্তবায়ন করেনি, আমাদের বাংলাদেশ থেকে কোন নেতা ১৯৭৬ এর পর প্রতিবাদও করেনি।
ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ, আমরা শান্তিপ্রিয়। কিন্তু ভারয় আমাদের অস্তিত্ব সংকটের মাঝে ফেলে দিচ্ছে সব সময়।
প্রতিবছর তারা আমাদের সাথে যে অন্যায় করে তার বিপরীতে কোন পদক্ষেপ কোনো রাজনৈতিক শক্তি, আর্ন্তজাতিক আদালত কিংবা জাতিসংঘ তোলে না। আবার যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যালেন্স করতে গিয়ে চীনকে তিস্তা প্রকল্প দিচ্ছে না।
আমরা বাংলাদেশের মানুষ হুজুগে মাতি খুব। যখন বন্যা চলে তখন এর চিরস্থায়ী সমাধান নিতে বা পদক্ষেপ নেবার কথা না ভেবে আমরা অন্য ইস্যুতে মেতে থাকি।
এখন ভূরাজনৈতিক চিন্তা না করে বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে তিস্তা প্রকল্প চীনকে দিতে হবে।
এই বছরই এই চুক্তি করে কাজ শুরু করতে হবে, এবং এর নিমিত্তে আমরা মাঠে নামবো। সরকারকে চাপ দিবো আর আমরা চীনকে স্বাগত জানাবো।
সম্পূর্ণ ডিফেন্স সিস্টেম সংযুক্ত করে চীনের ইয়াংহু যেমন বাঁধ দিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করেছে, ঠিক তেমনি তিস্তাসহ অন্য নদীগুলাতে বাঁধ দিয়ে সমর-শক্তির ঘাঁটি দিয়ে প্রত্যেকটা বাঁধ দিয়ে আমরা পাল্টা অবস্থানে যাবো।
অন্যায়ের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে ৫০ বছরে। এই জাতি যদি পানি সন্ত্রাস মোকাবেলা না করে, তবে ইয়াজিদবাহিনি পানি পান করার সময় যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তারপর যে জুলুম করেছে, সেই একই জুলুম হবে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের উপর।
আমরা নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই না বিধায় আমাদের কপালের এত দুর্দশা।
সময় এখন বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। তারপর আমাদেরকে আন্দোলনে নামতে হবে তিস্তা প্রকল্পের জন্য।
মাওলানা হামিদ খান ভাসানীর চেয়ে বড় লংমার্চ আমরা করবো। আর প্রতিজ্ঞা নিতে হবে - দেশের মানুষকে বন্যা-খরা থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই এই সংগ্রামে নামতে হবেই।
Homeland Or Die