02/06/2025
বাইরে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে,আকাশপাতাল এক করে বৃষ্টি নেমেছে, সাথে ঝোড়ো হাওয়া এসে গায়ে লাগছে মৃদু। হঠাৎ মৃদু ঠান্ডা বাতাসের ছোঁয়ায় শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে।আমার এসব কিছুতে ভ্রূক্ষেপ নেই।আমি সমানে এক নাগাড়ে সামনে থাকিয়ে আছি।কৃষ্ণচূড়ার ফুলের পাপড়ি গড়িয়ে বৃষ্টির পানি টপটপ করে মাটিতে এসে মিশে যাচ্ছে সে দৃশ্যটার দিকে।ঠান্ডা বাতাস লেগে যে শিহরণ গায়ে লাগছে তার চেয়ে বেশী শিহরিত হচ্ছিলাম এই দৃশ্য দেখে।
ব্রিটিশদের তৈরি করা লাল ইটের দালানের বিশাল বিশাল চাঁদা আকৃতির ডিজাইন করা বারান্দায় আমি সামনের দিকে তাকিয়েই দাঁড়িয়ে আছি অনেক্ষণ
দেখছি লাল কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো কীভাবে দুলতে দুলতে বৃষ্টির পানি গায়ে বেয়ে নিচে পড়ছে।
আমি এসেছিলাম জরুরি একটা কাজে কোর্ট বিল্ডিংয়ে।বাইরের এই বৃষ্টির যত ঝঞ্ঝাট, কোর্ট বিল্ডিংয়ের লাল কুপরির মতো রুমগুলোতে তার চেয়েও বেশি ঝক্কি ঝামেলা মনে হলো,সবাই ব্যস্থ।এই বৃষ্টিতে এত সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার তাদের সময় নেই আমার মতো।সময় যে আমারও আছে, তা না।
আমি দাঁড়িয়ে আছি সম্ভোনাথ বাবুর অপেক্ষায়।
তার কাছে এসেছিলাম একটা কাজে।তিনি মহাব্যস্ত কীসব কাগজপত্র এদিক-সেদিক করে যাচ্ছেন।
আমাকে দেখে বললেন,
রিফাত সাহেব, বসুন। একটু অপেক্ষা করুন। আপনার কাজটা আমি দেখছি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম,কতক্ষণ অপেক্ষা?
সম্ভোনাথ বাবু মৃদু হেসে বললেন,
আসলেন তো মাত্র, এত তাড়া দিয়ে কাজ করতে চাইলে অপেক্ষা দীর্ঘতর হতে পারে। জানেনই তো, একটা পয়েন্ট মাথা থেকে ছুটে গেলে আবার সব চিন্তা-ভাবনা করে ঠিক করতে হয়।
আমি বললাম,
ঠিক আছে, অপেক্ষা বাড়াতে চাই না। বাইরে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি, আপনি কাজ শেষ করুন।সে কারণেই বাইরে এসে দাঁড়িয়েছি। এখনো দাঁড়িয়ে আছি।যদিও শুরুতে বিরক্ত লাগছিল, এখন উপভোগ করছি পরিবেশটা।
হঠাৎ পেছন ফিরে তাকাতেই দেখি খালি করিডোরে কেউ যেন দূর থেকে হেঁটে আসছে।বৃষ্টির ফোঁটার মতোই টকটক করে তার পায়ের হিল জুতার শব্দ এগিয়ে আসছে আমার দিকে।
তিনি কাছে আসতেই একটু অস্বস্তি অনুভব করলাম।
আমি চোখ নামিয়ে পেছন ঘুরে নিতে যাব, তিনি বললেন,
প্লিজ, হেল্প করবেন? শর্মিলা মেমের রুমটা কোন দিকে?
আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করলাম,
কোন শর্মিলা মেম?
তিনি বললেন,
জেলা দায়রা জজ...........
আমি পথ দেখিয়ে দিলাম,
সামনে গিয়ে ডানে ঘুরে সোজাসুজি হেঁটে যাবেন।
তিনি মাথার কাপড়টা ঠিক করে সামনে এগিয়ে গেলেন।আমি ওনার পথ চেয়ে আছি।
ডানে ঘুরে চোখের আড়াল হলেন।আমি আবার ব্যস্ত হয়ে পড়লাম বৃষ্টির ফোঁটা কৃষ্ণচূড়ার পাতা বেয়ে ঝরে পরা দেখতে।
ঠিক ১০ মিনিট পর,
পেছন থেকে কে যেন মৃদু কণ্ঠে ডাক দিলেন,
এই যে, শুনছেন?
প্রথমবার সাড়া না দেওয়ায় আবার বললেন,
এই যে, শুনছেন...
পেছনে ফিরতেই দেখি—তিনি দাঁড়িয়ে, কিছুক্ষণ আগে যাকে রুম দেখিয়ে দিয়েছিলাম।
মনে মনে ভাবলাম ভুল ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলাম নাকি!
তিনি বললেন,
ধন্যবাদ আপনাকে। আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে ঘুরে এলাম।
আমি মৃদু হেসে ধন্যবাদ গ্রহণ করলাম।
তিনি বললেন,
আপনি তো এক নাগাড়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছেন। বৃষ্টি কি খুব পছন্দ করেন?
আমি বললাম,
না। বৃষ্টির পানি কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাপড়ি গড়িয়ে পরা দেখতে পছন্দ করি।
আপনি এখানে চাকরি করেন?জিজ্ঞেস করে তিনি কথা বাড়াতে চাইলেন।
এইদিকে,সম্ভোনাথ বাবু ডাক দিলেন,
রিফাত সাহেব, রিফাত সাহেব....