14/05/2024
নাম আব্দুল হালিম। রাজশাহী শহরে রিক্সা চালান। কিছু মানুষের বিনয় মুগ্ধ করে। এই লোকটির বিনয়ও তেমন।
রিক্সায় উঠে খেয়াল করলাম উনার হাত এখনও পাকেনি। ব্যালান্স করতে পারছেন না ঠিক মতো।
বললাম, "নতুন চালাচ্ছেন? "
-জ্বী। এক সপ্তাহ হলো।
-আগে কী করতেন?
-লেবারের কাজ।
-রিক্সা চালানো শুরু করলেন কেন?
-আগে একটু টাকা কম হলেও চলতো। এখন খরচ বেড়ে গেছে। লেবারের কাজে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হয়। নির্দিষ্ট আয়। রিক্সা যতক্ষণ ইচ্ছে চালানো যায়। বেশিক্ষণ চালালে বেশি আয় হয়।
-টাকা হঠাৎ বেশি প্রয়োজন পড়লো কেন?
-দুই নাতিকে মাদ্রাসায় দিয়েছি। আসাদুল্লাহ আল গালিবের মাদ্রাসায়। একেকজনের থাকা, খাওয়া পোশাক, বেতন মিলে মাসে ৫০০০/- টাকা লাগে। দুই জনের ১০০০০/-। আমি আর জামাই মিলে এই টাকা ম্যানেজ করতে হয়।
-এতো খরচ!
-জ্বী ভাই। দরখাস্ত করেছিলাম কিন্তু কমায় নি।
-এতো টাকা খরচ করে পড়াচ্ছেন কেন!
-কী করবো ভাই। নিজে তেমন লেখাপড়া করিনি। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। এখন নাতি দুইটাকে আলেম বানাতে পারলে মরেও শান্তি পাবো। আমার খুব ইচ্ছা, আমার দুই নাতি বড় আলেম হোক।
- কী পড়ছে ওরা?
-একজন এখন মাওলানা হচ্ছে আর একজন আল-কুরআন হিফজ করছে।
রিক্সা চালক ভাইকে বেশ কিছু টাকা ধরিয়ে দিলাম। বললাম, নাতিদের এ মাসে কিছু কিনে দিয়েন।
উনি টাকাগুলো নিয়ে কাঁদতে লাগলেন। বললেন, "আল্লাহ রহমানুর রহীম। আগামীকাল তাদের টাকা দেওয়ার কথা। এখনও ম্যানেজ হয়নি। প্রতিটি পয়সা আমি সেভ করি। দুপুরবেলা খুব ক্ষুধা লেগেছিলো। ভাত খেয়ে টাকা নষ্ট করিনি। সিঙ্গাড়া আর পানি খেয়েছি।টাকাগুলো পেয়ে খুব উপকার হলো ভাই।
তিনি দোয়া করতে লাগলেন। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগলাম, আমাদের অভিভাবকরা কত কষ্ট করে আমাদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। আমাদের মানুষ করতে গিয়ে তাদেরও কত বেলার খাবারের টাকা বাঁচাতে হয়েছে কেবল আল্লাহ তায়ালাই জানেন।
__সংগৃহীত