08/10/2023
আমার ১৯তম গ্রন্থ ‘বিরূঢ়ক’ থেকে
বাংলাদেশের নৌবন্দর ২৫০০ বছর আগে মগধ মহারাজ বিম্বিসারেও লক্ষ্য ছিলো- বুদ্ধ ধম্ম প্রচারে মগধ সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রভাব।
-----------------------------------------------------------------------
বিম্বিসার হর্যঙ্ক বংশের প্রথম শাসক নন। কিন্তু তিনিই এই বংশের গৌরব। তিনিই মগধকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন এবং তিনি হর্যঙ্ক বংশের সর্বপ্রথম শাসক যিনি এক বৃহৎ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পদক্ষপে নিলেন। এই লক্ষ্যকে অর্জন করার জন্য যুদ্ধ, বানিজ্য, রাজনীতি, বিবাহনীতি ও কুটনীতির পাশাপাশি তিনি গাঙ্গেয় অববাহিকায় ও যমুনার তীরবর্তী অঞ্চল হতে হিমালয় এবং আরো দূর-দুরান্তে আর একটি সাম্রাজ্যর ভিত্তি স্থাপন ও প্রতিষ্ঠার পৃষ্ঠপোষকতা দিতে লাগলেন, তাহলো আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্য। গৌতম বুদ্ধ ছিল আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় মহারাজ বিম্বিসারের প্রধান সহায়ক। বিম্বিসার এটি ভালই উপলব্দি করেছিলেন, যুদ্ধ দিয়ে রাজ্য জয়ের চেয়ে আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মগধের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা ভাল রাজনীতির কৌশল। তারই সর্বাত্মক পৃষ্ঠপোষকতায় গৌতম বুদ্ধর ধম্ম দর্শন ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। বুদ্ধকে বেনুবন দান মহারাজ বিম্বিসারের লক্ষ্য অর্জিনের প্রথম প্রদক্ষেপ।
সামাজিক, অর্থনৈতিক, আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্য, বুদ্ধের ধম্ম, ঐতিহাসিক কারণে মহারাজ বিম্বিসারের সামনে মগধকে এগিয়ে নিয়ে গাঙ্গেয় অববাহিকায় ও যমুনার তীরবর্তী অঞ্চল হতে হিমালয় এবং আরো দূর-দুরান্তে সাম্রাজ্যর প্রতিষ্ঠার যে সুযোগ উপস্থিত হলো, তিনি তাঁর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করলেন।
অঙ্গরাজ ব্রহ্মদত্তের সাথে বিম্বিসারের পিতার শত্রæতা। অঙ্গ সমৃদ্ধিশালী রাজ্য। তাই পাশের পার্বত্য অঞ্চলের গোষ্ঠীপতিদের শক্তিশালী হয়ে ওঠা ব্রহ্মদত্তের মনঃপুত হয় নি। ব্রহ্মদত্ত সৈন্যদল পাঠিয়ে বিম্বিসারের পিতাকে প্রথম যুদ্ধে পরাজিত করলেন। পরাজিত বিম্বিসারের পিতা, বিম্বিসারকে সিংহাসনে অভিষিক্ত করে বললেন “সেনিয় তুমি গোষ্ঠীপতি নও। তুমি স্বাধীন রাজা। যাও নিজের রাজ্যসীমা বাড়াও, বৃদ্ধি করো।” পিতার আদেশ পালন করতে বিম্বিসার তাঁর তরুণ দেহের সমস্ত শক্তি, উৎসাহ, সমস্ত বুদ্ধি নিয়ে ব্রহ্মদত্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন। য়ুদ্ধ চলতে লাগলো দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। অবশেষে সবায়কে অবাক করে বিম্বিসার, ব্রহ্মদত্তকে পরাজিত করে নিজেকে অঙ্গ, মগধের রাজা ঘোষণা করল। এই জয়ের ফলে ও রাজা হয়ে তিনি অঙ্গকে মগধ রাজ্যের সাথে যুক্ত করলেন। মগধের সাম্রাজ্যর সীমা বৃদ্ধি করলেন। অর্থনৈতিক দিক থেকে এই জয় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বঙ্গদেশ অঙ্গর অর্ন্তভুক্ত। তাই বঙ্গদেশও মগধের অধীনে এলো। বঙ্গদেশের রাজধানী চম্পা, যা একটি প্রসিদ্ধ নদী বন্দর। এই বন্দর দিয়ে ও থেকে বাণিজ্যতরী গঙ্গা হয়ে এবং উপকূল রেখা হয়ে দক্ষিণ ভারতে যেতো। আবার দক্ষিণ থেকে মসলা, মণিমুক্তা উত্তর ভারতে আসতো।
অঙ্গ আসলে শুধুই বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে না, গঙ্গা ব-দ্বীপের সমুদ্র বন্দরগুলোতে পৌঁছানোর পথও নিয়ন্ত্রণ করে।
এই বন্দরগুলোর সঙ্গে ব্রহ্মদেশের উপকূলের বাণিজ্য সর্ম্পক থাকায়, অঙ্গ জয়ের ফলে মগধের অন্তর্বাণিজ্যর সঙ্গে বহির্বাণিজ্য যুক্ত হয়েছিল। অথনৈতিকভাবে যা মগধকে অনেক শক্তিশালী করেছে। তাই গৌতম বুদ্ধ কজঙ্গলা হয়ে ব্রহ্মদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে বিম্বিসারের বিশেষ ভূমিকা ও মগধ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠায় আধ্যাত্মিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যও থাকতে পারে।