13/08/2025
রিযিক কেবল আয়ের অঙ্ক নয়
আজকের দুনিয়ায় আমাদের অনেকের কাছে “রিযিক” শব্দটি যেন শুধুই টাকার অঙ্ক, মাসের সেলারি, বা ব্যবসায়ের লাভ-ক্ষতির হিসাব। আমরা ভাবি, যার ইনকাম বেশি, তার রিযিকও বেশি। অথচ ইসলামের আলোকে এই ধারণা শুধু অসম্পূর্ণ নয়, অনেক সময় ভুলও।
রিযিক হলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটি সুবিশাল নিয়ামত, যা শুধু অর্থকেই নয়, স্বাস্থ্য, সুখ, শান্তি, পরিবার-পরিজন, এমনকি এক ফোঁটা বৃষ্টির পানিকেও অন্তর্ভুক্ত করে। রিযিকের ধারণা আমাদের সংকীর্ণ চিন্তার গণ্ডি পেরিয়ে আল্লাহর অসীম দয়ার প্রতিচ্ছবি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন: "পৃথিবীতে চলমান সকল প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপর।" (সূরা হুদ ১১:৬) এই আয়াত প্রমাণ করে, রিযিক শুধু মানুষের জন্য নয়। এবং কেবলমাত্র টাকা পয়সাই না—প্রতিটি প্রাণী, পাখি, পোকা এমনকি গাছের জন্যও আল্লাহ রিযিকের ব্যবস্থা করেছেন।
এবং এই আয়াত আমাদের এটাও মনে করিয়ে দেয় যে—রিযিকের মালিক আল্লাহ। আমরা কেবল উপার্জনের চেষ্টা করি, কিন্তু আসলে যা আমরা পাই—তা আসে আল্লাহর তরফ থেকে, তাঁর রহমতে। অন্য আয়াাতে বলা হয়েছে, "আল্লাহ যাকে ইচ্ছা রিযিক বর্ধিত করেন এবং সীমিত করেন।" (সূরা রাদ, ১৩:২৬)
আজ আমরা রিযিককে শুধু টাকা-পয়সার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। কে কত বেতন পায়, কত লাক্সারিয়াস গাড়ি চালায়—এটাই যেন সফলতার মাপকাঠি। কিন্তু রিযিকের বিশালতা এর চেয়ে অনেক গুণ বেশি।
হাদিসে বলা হয়েছে ধনী হওয়ার মানে শুধু বহুমাত্রায় অর্থ-সম্পদ থাকা নয়; প্রকৃত ধন হলো মনের শান্তি, আত্মার তৃপ্তি। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: "যদি তোমরা আল্লাহর উপর সঠিকভাবে তাওয়াক্কুল করতে, তাহলে তিনি তোমাদেরকে রিযিক দিতেন, যেমন পাখিদের রিযিক দেন—সকালে খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে।" (তিরমিযি)
রিযিক মানে হলো আল্লাহর দেওয়া জীবনের সমস্ত নিয়ামত — টাকা, সময়, সম্পর্ক, সুস্থতা, শান্তি, ও হেদায়েত। সুতরাং, রিযিককে শুধুমাত্র আয়ের অঙ্কে পরিমাপ করবেন না, বরং জীবনের সব দিক থেকে এর গভীরতা অনুভব করুন। সত্যিকারের রিযিক হল সেই যা আমাদের হৃদয়কে শান্ত করে, আমাদের জীবনকে আলোকিত করে, আমাদের আত্মাকে পূর্ণ করে।