বুদ্ধ -Buddha

বুদ্ধ -Buddha ইহা একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় পেইজ ৷
(1)

কঠিন চীবর দান ও বড়ুয়া বৌদ্ধদের উন্মাদনাড. বরসম্বোধি ভিক্ষুকঠিন চীবর দানকে দানশ্রেষ্ঠ, দানরাজা এবং দানোত্তম ইত‍্যাদি গাল...
06/11/2025

কঠিন চীবর দান ও বড়ুয়া বৌদ্ধদের উন্মাদনা

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

কঠিন চীবর দানকে দানশ্রেষ্ঠ, দানরাজা এবং দানোত্তম ইত‍্যাদি গালভরা বিশেষণে অভিষিক্ত করা হয়। আষাঢ়ী পূর্ণিমায় ভিক্ষু-ভিক্ষুণীদের যে বর্ষাবাস শুরু হয় তিনমাস পর আশ্বিনী পূর্ণিমায় তা সমাপ্ত হওয়ার মধ‍্য দিয়ে পরবর্তী একমাস অর্থাৎ কার্তিক পূর্ণিমা পর্যন্ত বিহারের বিহারে এ দান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ বছর ফ্রান্সে বড়ুয়া বৌদ্ধ অধ‍্যুষিত ছয়টি বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়েছে। তথ‍্যে যতদূর জানা যায়, ফ্রান্সে নব্বইয়ের দশক হতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম হতে বড়ুয়া বৌদ্ধ জনগুষ্ঠীর অভিবাসন শুরু হয়েছে এবং এ অভিবাসন বৃদ্ধির সংখ‍্যা বছরের পর বছর এগিয়ে যাচ্ছে। এখন ফ্রান্সে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সংখ‍্যা প্রায় ছয়-সাত হাজার হবে বলে মনে করা হয়। যদি তা হয়, তাহলে পাশ্চাত‍্যের যে কোনো দেশের তুলনায় ফ্রান্সে হবে সর্বাধিক। যা অতীব আনন্দের সমাচার।

প্রথম দিকে যাঁরা এসছিলেন তাঁরা ফ্রান্সে বিভিন্ন বিষয়ে সীমাহীন কষ্ট ভোগ ও পরিশ্রম করে বর্তমানের একটা অবস্থান তৈরী করেছিলেন। এরাই আবার দেশের ধাম্মিক ও আর্থ-সামাজিক ব‍্যবস্থার চাকাকেও অনেকটা সচল করতে সহায়তা করেছেন। ফ্রান্সে বডুয়ারা আসার পর হতে চিন্তাশীল ব্যক্তিরা নিজেদের মত করে ধম্ম চর্চার জন‍্য একটা বিহার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন অনুভব করছিলেন এবং সে লক্ষ‍্য বাস্তবায়নে নিজেদের প্রয়াস অব‍্যাহত রেখেছিলেন। কিন্তু নিজেদের আর্থিক দৈন‍্যতা, রাষ্ট্রের বিভিন্ন আইনি জটিলতা, নিজেদের মধ‍্যে অনৈক‍্যতা ইত‍্যাদি কারণে বিহার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূরণে দীর্ঘ সূত্রিতা কাজ করছিল। নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ সময় পার করার পর যখন গুটিকয়েক উৎসাহী উদ‍্যোক্তার প্রচেষ্টায় একটি বিহার হল, এরপর দেখতে দেখতে এখন ছয়টি বিহার স্থাপিত হয়েছে এবং ছয়টি বিহারে এবছর কঠিন চীবর দান সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি আরও একটি বিহার আত্ম প্রকাশ করেছে এবং ভবিষ‍্যতে আরও কয়েকটি বিহার স্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে বিহার অধিক হওয়া ভাল। কিন্তু সে বিহার সমূহে যদি নিয়মিত ধ‍্যানাভ‍্যাস না হয়, ধম্ম শিক্ষা না হয় এবং বৌদ্ধ নীতিবোধের প্রশিক্ষণ না হয়ে কেবল দলাদলি, আঞ্চলিকতা, স্বজন প্রীতি ও আড্ডাখানার আখড়া হয় তাহলে তা উপকারের চেয়ে অপকারই হয় বেশী।

এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, যে বিহারগুলি যেখানে যেখানে স্থাপিত হয়েছে, সেগুলি সেখানে সেখানে স্থাপনের সরকারী কোনো অনুমোদনও নাই। ফ্রান্স যেহেতু একটি উদার ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ, সেহেতু এখানে যত্রতত্র ধর্মস্থান করার জন্য সরকার অনুমোদন দেয়না। তাই বাসগৃহের মতো ঘর কিনে বা ভাড়া করে সেগুলিতে অল্প সংখ‍্যক লোক সমবেত হয়ে ধাম্মিক কার্যাবলী সীমিত পরিসরে সম্পন্ন করা হয়। কেননা অধিক লোক জমায়েত এবং উচ্চ শব্দাদি করে অন্য প্রতিবেশীদের শান্তিভঙ্গ করা ফরাসীরা পছন্দ করেননা। ঘরগুলির ভাড়াও মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়। কঠিন চীবর দানের মত অধিক লোক সমাগম করে অনুষ্ঠান করতে গেলে অনেক দিন পূর্ব হতে পরিকল্পনা করে বিশাল সভাগৃহ ভাড়া করে করতে হয়। কেননা সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন আর্থিক বাজেটের মধ‍্যে পাঁচ শতাধিক লোক ধারণ করার ক্ষমতা বিশিষ্ট এরকম সভাগৃহ পাওয়াও খুব দুষ্কর।

বডুয়া-সিংহ সব মিলিয়ে আনুমানিক সংখ‍্যা ছয়-সাত হাজার বঙ্গীয় বৌদ্ধ বললেও সক্রিয়ভাবে বিহার সমূহের বিভিন্ন ধাম্মিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে মাত্র হাতে গোণা কিছু লোক। অধিকাংশ লোক কিন্তু ধাম্মিক ও সামাজিক কার্যক্রমে আর্থিক সহায়তায় অধরাই থাকে। ফ্রান্সে অধিক লোক সমাগমে বড় অনুষ্ঠান বলতে একমাত্র কঠিন চীবর দানই হয়ে হয়। যে ছয়টি বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠিত হয়েছে, সে ছয়টি বিহারের সংশ্লিষ্ট ভিক্ষু ও সদস‍্যেরা উপাসক-উপাসিকাদের বাসায় বাসায় মাসাধিক পূর্ব হতে গিয়ে গিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে কঠিন চীবরের দানের চাঁদা সংগ্রহ করে থাকেন। কঠিন চীবর দানের জন‍্য বাসায় বাসায় গিয়ে যেভাবে টাকা সংগ্রহ করে থাকেন, তা দান সহগ্রহ করা না বলে চাঁদা সংগ্রহ করা বলাই উত্তম। কেননা দান কখনও গিয়ে চেয়ে নেওয়া হয়না। স্বত:স্ফুর্তভাবে শ্রদ্ধা সহকারে দেওয়াই হল দান। যেহেতু ভিক্ষু-দায়ক অযাচিতভাবে দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে চেয়ে সংগ্রহ করে থাকেন এবং অনেক সময় লোকেরা লজ্জায় পড়ে বাধ‍্য হয়ে কিছু দিয়ে থাকেন, সেজন‍্য তাকে চাঁদা বলাই ভাল।

এভাবে কঠিন চীবর দানের নামে চাঁদা সংগ্রহ করে বডুয়ারা দানোত্তম, দানরাজা, দানশ্রেষ্ঠ ও আরও কতকিছু গালভরা মহিমা প্রচার করলেও আসল কার্য কিন্তু দেখা যায় খুবই লঘু। তা যেন ‘বহ্বারম্ভ লঘু ক্রিয়া।’

হিন্দুদের দুর্গা ও অন‍্যান‍্য পূজা সমূহে যেমন বাধ‍্য করে চাঁদা আদায় পূর্বক যতটা পূজার জন্য ব‍্যয় না হয়, তার চেয়েও বেশী ব‍্যয় হয় নানা রকমের বিনোদনে। যেমন রকমারী নৃত‍্য, গীত, বাদ‍্য-বাজনা, নেশা দ্রব্য সেবন ইত‍্যাদি নিজেদের ইন্দ্রিয় তৃপ্তিতে। ইহা তাদের জন‍্য মানায়। কেননা কল্পিত দেব-দেবীদের যে চরিত্র ও কাহিনীও হল সেরকম। তাই তদনুসারেই হয় তাদের রঙ্গ-তামাশাপূর্ণ উৎসব অনুষ্ঠান সমূহ। কিন্তু এগুলি বৌদ্ধ আচার-অনুষ্ঠানের সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। ইদানীং বড়ুয়ারা কঠিন চীবরের নাম দিয়ে চাঁদা আদায় করে বিবাহ অনুষ্ঠানের মত মাছ, মাংস (ছাগল-মুরগী), ডিম, বিরিয়ানী ইত‍্যাদি সহকারে উদরপূর্তির মহোৎসব করে থাকেন। অত:পর কিছুক্ষণ ভিক্ষুদের কাছ হতে পারম্পরিক ও গতানুগতিক চর্বিত-চর্বন কিছু বক্তব্য শুনে কোন রকমে দান কার্য সম্পন্ন করার সাথে সাথে যে আসনে ভিক্ষুরা বলে ধম্ম কথা বলেছেন, সে আসনে উঠে মদ‍্যপান করে দুর্গাপূজার মত উশৃঙ্খল-উন্মত্ত-উদ্দাম কামোত্তেজ্জক নৃত‍্য-গীত ও বাদ‍্য-বাজনা সহকারে বেপরোয়া বেয়াপনা শুরু করে দেয়। অনেকক্ষণ পর্যন্ত সেগুলি চলতে থাকে। সব কঠিন চীবর দানে শুরু হয়েছে এরকম উন্মাদ বেহায়াপনা। যেভাবে গালভরা মহিমা কীর্তন করে কঠিন চীবর দানের কথা দেশনা শুনেছে, শীল-সমাধি ও প্রজ্ঞার কথা শুনেছে, সেগুলির মাধ‍্যমে লেশমাত্র আত্ম সংযমের শিক্ষা
বড়ুয়ারা গ্রহণ করেনি। দিন দিন উন্মত্ত-উশৃঙ্খলতা যেন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলি আয়োজন করছে বিহার ও অনুষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ধম্মকে আজ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা গভীরভাবে ভাববার বিষয়!

দান অনুষ্ঠানে ভিক্ষুদের দেশনা শুনে যারা ভক্তিতে গদগদ হয়ে ঘন ঘন সাধুবাদ ধ্বনিতে সভাস্থলকে মুখরিত করে তোলে, তাদেরকেই আবার অশ্লীল-অশালীন গান-বাদ‍্যের জন্য বিনোদন উপভোগে রত থাকতে দেখে হতবাক হয়ে যাই। তাই আমি মনে করি যে, শান্ত, দান্ত, শীল, সমাধিযুক্ত এবং সংযম শীলতাপূর্ণ বুদ্ধের এ নৈর্বাণিক ধম্ম বডুয়াদের চরিত্রের উপযোগী নয়। প্রায় বডুয়ারা ভিক্ষুদের প্রদত্ত কোনো শিক্ষাই আমলে নেয়না। যতক্ষণ শুনে ততক্ষণ মাত্র। ধম্ম অনুষ্ঠানে একটু বিনোদন মূলক ধম্ম সম্বন্ধিত এবং ধম্ম সংবেগ জাগানোর জন‍্য কিছু গীতি-নাট‍্য বা বুদ্ধ ভক্তিগীতের চর্চা ইচ্ছা করলে করা যায়। এর বাহিরে করা ধম্মের নামে অপসংস্কৃতির চর্চা করার সামিল। পূর্বে আমাদের গ্রামে-গঞ্জে কঠিন চীবরাদি উৎসবে সে ধরণের নাটক-কীর্তন-ভজন ইত‍্যাদিরই ব‍্যবস্থা হতো। বর্তমানে অন‍্যান‍্য সম্প্রদায়ের অপসংস্কৃতি গুলি আমাদের ছেলে-মেয়েরা আমদানি করে নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকেই কলঙ্কিত করছে। সুশীল ও বিবেকবান মানুষেরা যদি এ ব‍্যাপারে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতে ব‍্যর্থ হয়, তাহলে এর পরিণাম ভবিষ‍্যতে আরও ভয়াবহ হবে সন্দেহ নাই।

নীচের ভিডিও ক্লিপটি আপনাদেরকে দেখার জন‍্য প্রদত্ত হল। ইহা ফ্রান্সে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া একটি কঠিন চীবর দানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দৃশ‍্য। কঠিন চীবর দান সম্বন্ধিত অনুষ্ঠানে এরকম অশ্লীল গানের সাথে উদ্দাম নৃত‍্যের আয়োজনই বুঝিয়ে দেয় আমাদের মন-মানসিকতা কত যে হীন ও নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, তা আর অপেক্ষা রাখেনা। আমি মনে করি, কোনো ভদ্র, মার্জিত, সভ‍্য, শিক্ষিত ও আত্ম সম্মানবোধ সম্পন্ন পরিবারের সন্তানেরা কখনও এসব বেহায়াপনা করতে পারেনা। এদেশে শিখার মতো, অনুকরণের মতো ভাল অনেক কিছু রয়েছে। সেগুলি গ্রহণ করে জীবনকে উন্নত না করে যারা অসভ‍্যামিগুলি গ্রহণ করছে, তাতেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, মাছিকে সুগন্ধ স্থানে রাখলেও কখনও সুগন্ধিত স্থানে থাকবেনা। দুর্গন্ধ ও দুর্গন্ধযুক্ত স্থানই খুঁজবে। স্বভাব বদলানো বড়ই কঠিন!

বুদ্ধ বলেছেন —> “ভিক্ষু জীবিকা নির্বাহ করবে পিণ্ডপাতে;চাষাবাদ, ব্যবসা, বা লেনদেন তার জন্য নয়।”— (Vinaya Pitaka)----- এই ...
06/11/2025

বুদ্ধ বলেছেন —

> “ভিক্ষু জীবিকা নির্বাহ করবে পিণ্ডপাতে;
চাষাবাদ, ব্যবসা, বা লেনদেন তার জন্য নয়।”
— (Vinaya Pitaka)
----- এই কাজটির প্রকৃতি:

যদি ভিক্ষুটি নিজের ভোগের জন্য বা বিক্রয়ের জন্য কলা বহন করেন,
তবে তা ভিক্ষুর জীবিকার নিয়মের বাইরে পড়ে, এবং বুদ্ধের নির্ধারিত বিনয় অনুযায়ী অনুচিত।
কারণ ভিক্ষু সংসারজীবনের কাজ (বাণিজ্য, লেনদেন, জিনিস বেচা-কেনা) থেকে দূরে থাকবেন।

কিন্তু যদি তিনি —

বিহারের জন্য দান করা কলা অন্য কোথাও বহন করছেন (যেমন রান্নাঘর বা ভিক্ষাদানের স্থানে),

অথবা সাধুপ্রয়োজনে (যেমন দাতাকে সাহায্য করতে বা অন্য ভিক্ষুদের জন্য বহন করছেন),

তাহলে তা ধর্মীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য ও যথোপযুক্ত কাজ।

------ বুদ্ধের দৃষ্টিতে “কর্মের উদ্দেশ্যই মুখ্য”

বুদ্ধ সর্বদা শিখিয়েছেন —

> “চেতনা হি কাম্মং বদন্তি” —
অর্থাৎ, কর্মের ফল নির্ভর করে তার উদ্দেশ্যের উপর।

তাই যদি এই ভিক্ষুর উদ্দেশ্য লোভ বা সংসারজীবন না হয়, বরং সেবা, দান বা সহযোগিতা হয় —
তবে তিনি কোনো ভুল করছেন না।
------ এই কাজটি উচিত বা অনুচিত হবে তাঁর উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে।

ব্যবসা বা নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য হলে — অনুচিত (অবিনয়)।

ধর্মীয় প্রয়োজনে বা দাতার কল্যাণে হলে — যথোপযুক্ত ও সম্মানীয়।

01/11/2025
ছঠ পূজা এবং এর সাথে বৌদ্ধ সম্পর্ক ড. বরসম্বোধি ভিক্ষুছঠ পূজা ভারতীয় পঞ্জিকা শকাব্দ অনুসারে বছরে দু’বার পালন করা হয়। এ...
31/10/2025

ছঠ পূজা এবং এর সাথে বৌদ্ধ সম্পর্ক

ড. বরসম্বোধি ভিক্ষু

ছঠ পূজা ভারতীয় পঞ্জিকা শকাব্দ অনুসারে বছরে দু’বার পালন করা হয়। একটা হল চৈত্র শুক্ল ষষ্টী তিথিতে এবং অন্যটি হল কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্টী তিথিতে। এগুলির মধ্যে কার্তিক মাসে পালন করা ছঠ পর্ব হল সবচেয়ে বেশী লোকপ্রিয় ও প্রসিদ্ধ। এ ছঠ পূজা হল বিহার অঞ্চলের একটি আঞ্চলিক পর্ব। কিন্তু বর্তমানে তা বিহারের মধ্যে সীমিত নাই। তা এখন বিহার হতে বের হয়ে ভারতের সমস্ত প্রদেশের কোণায় কোণায় পালিত হতে দেখা যাচ্ছে। কেবল তা নয়, বিদেশেও কিছু প্রসিদ্ধ নদীর তটে ছঠ পালনকারীরা ছঠ মাতার স্তূপ করতে দেখা যায়। করোনা মহামারীর কারণে এ বছর বিহার সরকার ছঠ পূজা ঘরের মধ্যে পালন করতে আদেশ জারী করেছিল। লোক সে আদেশ কতটুকু পালন করেছে তা নিউজ চ্যানেলে আপনারা অবশ্যই দেখেছেন।

আসল কথা হল ছঠ পূজা বা ছঠ ব্রত কেন পালন করা হয়? ইহার ইতিহাস কি? আমরা যদি এর ইতিহাস দেখি, তাহলে ইহা স্পষ্ট হয় যে, বিহারের ধরিত্রী হল ভগবান বুদ্ধ এবং সম্রাট অসোকের কারণে অতীব প্রসিদ্ধ। বিশ্বের সবাই বুদ্ধভূমি ও সম্রাট অসোকের ভূমি বলেই বিহারকে জেনে থাকে। এ ধরিত্রীতে ছঠ নামক আস্থার উৎপত্তি কখন হয়েছে?

পাঠকগণ, আপনারা সম্পূর্ণ আলেখ্য পড়বেন, এ আলেখ্যটি পড়ার পর আপনারা বুঝতে পারবেন যে, কিভাবে ছঠ মাতার উৎপত্তি হয়েছে, কোথা হতে হয়েছে এবং কেন হয়েছে? কেননা, ছঠ পূজা হল বর্তমানে বিহারের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ উৎসব তিন দিন পর্যন্ত পালন করা হয়। তন্মধ্যে প্রথম দিন স্নানাদি করে উপবাস থেকে মহিলারা ব্রত পালন করে থাকেন এবং সন্ধ্যায় ব্রত ভঙ্গ করে থাকেন। পরেরদিনও সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্রত পালনের মাধ্যমে অতিবাহিত করে থাকেন। সেদিনের ব্রতে সারাদিন জল পর্যন্ত পান করেননা এবং তৃতীয় দিন মহিলারা নদীরঘাটে অথবা সরোবরের ঘাটে গিয়ে পাতলা আর্দ্র বস্ত্র পরিহিত হয়ে ভগবান সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করে নিজেদের ব্রত ভঙ্গ করে থাকেন। কিন্তু যদি আমরা ইহার ইতিহাস অনুসন্ধান করতে যাই, তখন ছঠ পূজার ইতিহাস কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না। কোন ইতিহাসের পুস্তকেও যেমন পাওয়া যায়না, তেমনি কোন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেও ইহার হদিস পাওয়া যায়না। তাহলে কোথায় পাওয়া যাবে? ছঠ মাতার কি কোন মা-বাবার নামের পরিচয় রয়েছে? না তাঁর কোন বংশাবলীর পরিচয় রয়েছে? অতীতে যে সমস্ত বিদেশী ভ্রমণকারী ভারতে এসেছিলেন, তাঁদের কোন লিখিত বিবরণেও ছঠ পূজার উল্লেখ পাওয়া যায় না। অর্থাৎ এ ছঠ পূজা পর্ব নামে যে কর্মকাণ্ড তিনদিন পর্যন্ত চলমান রয়েছে, তা সম্পূর্ণ রূপে হাওয়াবাজীতে চলছে। কোন প্রামাণ্য তথ্য বা ইতিহাস এর পেছনে নাই।

ভারতের ইতিহাসে যে সমস্ত পর্ব পালন করা হত, সেগুলির সম্পর্কে বিদেশী ভ্রমণকারীরা তাঁদের ভ্রমণ বিবরণীতে অনেক কিছু বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী প্রসিদ্ধ ছিলেন ইরানী ঐতিহাসিক ও ভ্রমণকারী আল্ বেরুনী (৯৭৩-১০৪৮)। তিনি কোন সাধারণ ভ্রমণকারী ছিলেননা। তিনি ভারতীয়দের জন্য গ্রীক গ্রন্থ সমূহের অনুবাদ করেছিলেন এবং ভারতীয় অনেক গ্রন্থের আরবীয়দের জন্যও অনুবাদ করেছিলেন। ভারতে অবস্থান করে তিনি এখানকার ভাষা আয়ত্ব করেছিলেন এবং ভারতীয় ভাষায় অনেক প্রকারের পুস্তক রচনা করেছিলেন। সেগুলির মধ্যে ১৭ টি পুস্তক এখনও উপলব্দ হয়। তন্মধ্যে আল-বেরুনী নামে যে পুস্তক রয়েছে সে পুস্তকের ৭৬ সংখ্যক পরিচ্ছেদটি আপনারাও পড়ে দেখতে পারেন। তিনি সেখানে সমগ্র ভারতে পালনকারী পর্ব সমূহের সম্পর্কে বিস্তৃত বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। তাঁর বর্ণনার মধ্যে কোথাও তিনি ছঠ মাতা বা সূর্য পূজা সম্পর্কে একটি শব্দ পর্যন্ত ব্যয় করেননি। অর্থাৎ এ ছঠ মাতার পর্বকে একাদশ শতাব্দীর পরেই উদ্ভব করা হয়েছে। একাদশ শতাব্দীর পরেও যদি আপনি দেখেন, তাহলে ইহা কখনও ভারতের পর্ব ছিলনা। যদি আপনারা সম্পূর্ণ ইতিহাসকে আরও গভীর দৃষ্টিতে দেখেন, তাহলে আপনাদের স্পষ্ট হবে যে, এ পর্ব ভারত স্বাধীনতার পরেই বেশী করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইহার পূর্বে এ পূজার তেমন কোন উজ্জ্বল প্রচলন দৃষ্ট হয়না। তা ধোঁয়াশাই দেখা যাবে। কেবল তা নয়, আমরা সবাই জানি যে, ইংরেজদের সময়ে পণ্ডিত-পাণ্ডা- পুরোহিতেরা অনেক প্রকার কল্প কাহিনীর অবতারণা করেছেন এবং সে মিথ্যা কল্প-গল্প কাহিনীর নাম তাঁরা ‘পুরাণ’ রেখেছেন। কোন বিদেশী ভ্রমণকারী তাঁদের ভ্রমণ বৃত্তান্তে পুরাণের নাম পর্যন্ত লিখেননি। অর্থাৎ পুরাণ নামও হল সম্পূর্ণ নতুন। এখন এখানে এক প্রশ্নের উদ্ভব হয় যে, এ ছঠ পূজা ব্রাহ্মণ ধর্মের উৎসব কি করে হল? ইহা হল অনেক রোচক প্রসঙ্গ, যা আপনাদের বুঝতে হবে যে, এ উৎসবকে দেখতে এমনিতে ব্রাহ্মণবাদী উৎসবের মত দেখা যায়না। এ পর্বকে যদি আপনারা মনোযোগ দিয়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন যে, ছঠ মাতার যে স্তূপ রয়েছে, তাতে কোন মুর্তি হয়না বা দেখা যায়না। সেখানে কেবল স্তূপই হয়ে থাকে। সে স্তূপকে মহিলারা বিভিন্ন প্রকারে গান গেয়ে গেয়ে পূজার্চনা করে থাকেন। আবার সকালে উদীয়মান সূর্যকে অর্ঘ্য দিয়ে থাকেন এবং এভাবে সূর্যের উপাসনা করা অনেক বিদেশী সংস্কৃতিতেও দেখা যায়। যেমন, গ্রীক সংস্কৃতিতে, মিশরীয় সভ্যতায়ও দেখা যায়। ভারতে সপ্তম শতাব্দীর পর এরকম কিছু রাজা হয়েছিলেন, যাঁরা নিজেদেরকে সূর্যবংশী বলতে বেশী পছন্দ করতেন। ইহা ছিল সে সময়, যখন বিদেশ হতে তা ভারতে উঠে আসতে থাকে। তখন এখানকার রাজাগণ বিদেশের অনেক রীতি -নীতি ও মান্যতা সমূহ গ্রহণ করতে শুরু করে। যখন ভারতে বৌদ্ধ মার্গের পতন হয়েছিল, তখন অনেক বৌদ্ধ বিহারকে সূর্যের উপাসনা স্থল বানানো হয়েছিল। যেমন, উড়িষ্যার কোনার্ক মন্দির, বা বিহারের ঔরঙ্গাবাদের সূর্য মন্দির। এ ছঠ পর্ব বা উৎসবে কোনও মুর্তি পূজা করা হয়না, তবে ছোট ছোট স্তূপের পূজা করা হয়ে থাকে।

এখন এ ছঠ পূজার ব্রতে আরও কিছু দেখতে থাকুন। এ পূজায় বিভিন্ন প্রকারের যে সমস্ত ফলের ব্যবহার করা হয় অর্ঘ্য দানের জন্য সে ফলগুলির মধ্যে পেয়ারা, আনারস, কলা, বাতাবিলেবু, আঁখ, নারিকেল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এখানে আরও মনোযোগ দিয়ে দেখতে হবে যে, কোনো ব্রাহ্মণ্য ধর্মের উৎসবে লেবু কোনও দেবী-দেবতার উদ্দেশ্যে অর্ঘ্য দেওয়াকে পাপ বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু এ পর্বে বাতাবিলেবু, যা হল লেবু প্রজাতির বড় লেবু তা অর্ঘ্য দেওয়া হয়।

আরও একটি বিষয়ে মনোযোগ দিতে হয় যে, কোনও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পর্বে তেলেভাজা বস্তু অর্ঘ্য দেওয়া হয়না। কিন্তু এ পর্বে লোক আটা হতে প্রস্তুতকৃত পুরী জাতীয় অনেক খাদ্যবস্তু দিয়ে থাকেন এবং সেগুলি অর্ঘ্য প্রদান করে থাকেন। এ উদাহরণ সমূহ হতেও এ পর্ব সম্পূর্ণরূপে ব্রাহ্মণবাদী উৎসব বলে মনে হয়না। কিন্তু বর্তমান তারিখে যদি আপনি দেখে থাকেন, তাহলে দেখতে পাবেন যে, অনেক সংখ্যক ব্রাহ্মণ গিয়ে সেখানে মহিলাদের মাধ্যমে অর্ঘ্য প্রদান করিয়ে থাকেন। সেখানে যখনই মহিলাগণ পূজা পাঠ করে চলে যান, তথায় যত সব পূজার সামগ্রী ফলাদি নিয়ে থাকেন, সবই ব্রাহ্মণেরা গাঁটবেঁধে নিয়ে যেতে থাকেন। বর্তমান সময়ে তো লোক তাঁদেরকে দান-দক্ষিণাও দিতে শুরু করেছেন।

তৃতীয় একটি বিষয়ও মনোযোগ দেওয়ার বিষয় যে, সমগ্র উৎসবে কোনও ব্রাহ্মণকে ডেকে ছঠ মাতা বা সূর্যের উপাসনা করানো হয় না। বরং মহিলারা নিজেরাই এ কাজ করে থাকেন এবং তাঁরা নিজেরাই গীত গেয়ে থাকেন। অর্থাৎ সেখানে কোন পণ্ডিত-পুরোহিতের কার্য পরিলক্ষিত হয়না। তাহলে প্রশ্ন আসে যে, যখন ইহা ব্রাহ্মণদের উৎসব নয় এবং বিহার, যেখানে সম্রাট অসোক এবং ভগবান বুদ্ধের সংস্কৃতির জন্য প্রসিদ্ধি রয়েছে, সে বৌদ্ধ মার্গে এরকমের কোন পূজা-অর্চনার কথাই বলা হয়নি। সেখানে উপবাস ব্রতের কথা তো বলাই হয়নি, তাহলে এখানে এ প্রকারের উৎসবের সূচনা কোথা হতে আসল? এ প্রশ্নের জবাব যখন আপনি খুঁজতে শুরু করবেন, তখন আপনার সামনে সমস্ত ষড়যন্ত্রের ফাঁস খোলাসা হয়ে যাবে। আসল কথা হল ইংরেজদের পূর্বে কখনও এ পর্বের অস্তিত্ব ছিলনা। স্বাধীনতার পর এ পর্বকে জবরদস্তি করে আরোপ করা হয়েছে। বিহারের লোকদেরকে বা বৌদ্ধ মার্গীদেরকে ব্রাহ্মণবাদীদের জালে ফাঁসানো এত সহজ ছিলনা। এজন্য ব্রাহ্মণবাদীরা তাঁদের মধ্যে ধর্মের আফিম ছড়ানোর জন্য এরকম প্রপঞ্চের রচনা করেছিলেন। একবার ভাবুন, যে বিহারকে ভগবান বুদ্ধের জ্ঞান প্রাপ্তির জন্য এবং সম্রাট অসোকের শাসনের জন্য জানা যায়, যে বিহারের নব যুবকদেরকে সমগ্র বিশ্বে টেলেন্টের জন্য জানা যায়, সে প্রদেশের উর্বর মস্তিস্কের লোকদেরকে সরাসরি অন্ধবিশ্বাসে না ফাঁসিয়ে তাঁদেরই মার্গকে পূজা পাঠ করিয়ে ধর্মের আফিমে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং ইহারই নাম দেওয়া হয়েছে ছঠ পূজা।

সম্রাট অসোকের ৮৪ হাজার স্তূপের নাম আপনারা অবশ্যই শুনে থাকবেন। তবে পূজা করানোর নাম কোথাও শুনেননি হয়তো। কিন্তু বিহারের আজ কোণায় কোণায় গিয়ে দেখুন, ভারতের কোণায় কোণায় গিয়ে দেখুন, সর্বত্র ছোট ছোট স্তূপ তৈরী করে সেগুলিকে ছঠ মাতার নামে পূজা করানো হচ্ছে। ইহা তো ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কি! দেখে গণনা করতে থাকুন, ৮৪,০০০ হাজারেরও বেশী স্তূপ বের হয়ে আসবে। যে বৌদ্ধ মার্গে ব্রত রাখা অনুচিত মান্য করা হয়, অথবা বলা হয় যে, মন প্রসন্ন থাকলে বা পেট প্রসন্ন থাকলে তবেই কাজ ভালমতে করতে পারবে। সেখানে মিথ্যা কল্পিত গল্প কথা কাহিনী রচনা করা হয়েছে যে, কুন্তী যখন ব্রত রেখেছিলেন তখন অযোধ্যা হতে আসার পর সীতাও ব্রত রেখেছিলেন এবং তাঁরা ছঠ পূজা করতে শুরু করলেন। এরকম মিথ্যা কল্পিত গল্প সমূহ পুরাণে লিখে লোকদেরকে কিভাবে বেওকূপ বানানো হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

এখন ভাবুন যে, এ করোনা সঙ্কটকালে লোক যখন মাস্ক পড়ে বাহিরে বের হচ্ছে, মাস্ক পড়ে এবং দেবী-দেবতাদেরও মাস্ক পড়িয়েই পাণ্ডা-পূজারীগণ পূজা করছিলেন, যিনি পাণ্ডা-পূজারীদের মাস্ক হটাতে পারছেননা, করোনা মুক্ত নিজেও হতে পারছেননা, তিনি কি করে আপনার ভাল করবেন? সে ছঠ মাতা আপনার ভাল কিভাবে করবেন? আমরা প্রত্যেকে জানি যে, আস্থাই অন্ধ-বিশ্বাসের জন্ম দিয়ে থাকে এবং এ অন্ধ-বিশ্বাসের নাম কখনও সন্তোষী মা হয়ে থাকেন, কখনও ছঠ মাতা হয়ে থাকেন এবং বর্তমানে অর্থাৎ ২০২০ সালে করোনা মাতাও মর্ত্যলোকে অবতার নিয়ে ফেলেছেন।এভাবে বিভিন্ন প্রকারে দেবীগণ জন্ম নিয়ে থাকেন এবং জন্ম দেওয়ার লোক অন্য কেহ নন, তাঁরা হলেন পণ্ডিত-পূজারী ও পুরোহিতগণ। করোনা কালে যখন তাঁদের মন্দির বন্ধ হয়েছে, রোজগার বন্ধ হয়েছে, তখন তাঁরা তাঁদের পেট ভর্তির জন্য করোনা মাতা নাম দিয়ে আরেক মাতারও জন্ম দিয়ে ফেলেছেন। এভাবে তাঁরা কখনও সন্তোষী মাতাকে জন্ম দিয়েছেন এবং কখনও ছঠ মাতাকে জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু ইহা এত সহজ নয় যে, লোক এত সহজে তাতে ফেঁসে যাবে। এগুলিতে ফাঁসানোর জন্য তাঁরা সে সমস্ত তিথিকে ব্যবহার করেছেন, যেসমস্ত তিথি পূর্ব হতেই প্রসিদ্ধ ছিল। যেমন, রবি ফসল এবং খরিব ফসল। রবি ও খরিপ শব্দদ্বয় হল আরবী শব্দ।যা মুসলিম শাসকেরা ব্যবহার করতেন। শকাব্দের মধ্যে চৈত্র এবং কার্তিক এ দু’ মাস এরকম মাস হয়ে থাকে, যেসময় ফসল কাটা শুরু হয়। যেমন, অক্টোবর-নভেম্বরে খরিব ফসল কাটা হয়, যা কার্তিক মাস হয়ে থাকে, এবং রবির ফসল মার্চ-এপ্রিলে কাটা হয়। যা হল চৈত্র মাস। ইহা হল কৃষকদের পর্ব এবং এ সময় কৃষক সবসময় হর্ষোল্লাসে রত থাকতেন। ইহা ছিল সে সময়, যখন পরবর্তী মাস সমূহের জন্য ধন একত্র করা হত। কারণ, প্রাচীন কালে কোন চাকরী পদ্ধতি ছিলনা। লোকেরা প্রধানত: কৃষিকাজ করতেন, পশু পালন করতেন এবং সেগুলি হতেই মূলত: অর্থ উপার্জন করতেন। সেগুলিরই ব্যবসা-বাণিজ্য হত। কিছু লোক হয়তো সৈনিকের কাজ করতেন, বা কোন রাজার সেবক হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু সেসময় কৃষক হওয়া মানে প্রতিষ্ঠিত হওয়া। অর্থাৎ আপনি নিজে যত বেশী চাষাবাদ করবেন, ততবেশী ধন-সম্পদ আপনি আহরণ করতে পারবেন। তাই উল্লিখিত মাসের তারিখে বা তিথিতে ব্রাহ্মণবাদীরা পেট পূজা করার জন্য পুরাণ সমূহে নানা প্রকারে মিথ্যা কল্প কাহিনী জুরে দিয়েছেন। কখনও তাতে রামায়নের কোন ঘটনা তুলে এনে যুক্ত করে বলে দিয়েছেন, কখনও তাতে মহাভারতের কোন ঘটনার সাথে যুক্ত করে বলে দিয়েছেন এবং বৌদ্ধ মার্গের পতনের পরে সম্পূর্ণ ভারতে যে মার্গী লোক ছিলেন, তাঁরা সবাই মার্গ বিহীন হয়ে পড়েছিলেন। তাঁদেরকে স্বীয় স্বীয় জালে অতি সহজে এ ব্রাহ্মণবাদীরা ফাঁসিয়ে নিয়েছেন। এবং ইহারই এক পরিণাম হল এ ছঠ পূজা। ভাবুন তো, স্তূপের পূজা হচ্ছে। নদী ঘাটে বানিয়ে ছোট ছোট স্তূপ সমূহের পূজা হচ্ছে। এভাবে আমরা দেখি যে, এ ছঠ ব্রত যে সম্পূর্ণরূপে ব্রাহ্মণ্যবাদী উৎসব, প্রাথমিকভাবে তা তো দেখা যায়না। কিন্তু মনোযোগ সহকারে আমরা যদি দেখি, তাহলে ভগবান বুদ্ধ এবং সম্রাট অসোকের সিদ্ধান্তকে বিলুপ্ত করার জন্য তাঁদের অনুসারীদেরকে সম্পূর্ণরূপে ব্রাহ্মণ্যবাদে ফাঁসানোর জন্য এ উৎসব রচনা বা সৃষ্টি করা হয়েছে। যার অধিকাংশ কর্মকাণ্ড তো ব্রাহ্মণ্যবাদীদের বিপরীত দেখা যায়, কিন্তু সর্বোপরি এ কর্মকাণ্ড সম্পন্নকারী সকলেই ব্রাহ্মণ্যবাদের জালে সম্পূর্ণরূপে ফেঁসেই রয়েছে। (সাঁচীর স্তূপে প্রাচীন বৌদ্ধ শিল্পকলায় ছঠ পূজার চিত্র খোদিত হয়েছে। যা ছবিতে প্রদত্ত হল)।

বৌদ্ধধর্মের তিনটি মূল্যবান রত্ন১. বুদ্ধ - আমাদের সকলের মধ্যে বসবাসকারী আলোকিত সত্তা২. ধর্ম - বুদ্ধের শিক্ষা এবং বাস্তবতা...
30/10/2025

বৌদ্ধধর্মের তিনটি মূল্যবান রত্ন

১. বুদ্ধ - আমাদের সকলের মধ্যে বসবাসকারী আলোকিত সত্তা

২. ধর্ম - বুদ্ধের শিক্ষা এবং বাস্তবতার নিয়ম

৩. সংঘ - বুদ্ধের ভ্রাতৃত্ব

চারটি আর্য সত্য

১. সমস্ত অস্তিত্ব দুঃখে পরিপূর্ণ

২. মনের মধ্যে স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা এবং বিভ্রান্তির কারণে এই দুঃখের সৃষ্টি হয়

৩. এই বিভ্রান্তিগুলি কাটিয়ে আমরা দুঃখের অবসান ঘটাতে পারি

৪. অষ্টগুণ পথ অনুসরণ করে আমরা দুঃখ থেকে মুক্তি অর্জন করতে পারি

অষ্টগুণ পথ

১. সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি: বাস্তবতার স্পষ্ট উপলব্ধি এবং বোধগম্যতা

২. সঠিক চিন্তাভাবনা

৩. সঠিক কথা বলা: কেবল সত্য এবং উপকারী কথা বলা

৪. সঠিক আচরণ

৫. সঠিক জীবিকা

৬. সঠিক প্রচেষ্টা - আপনার শক্তিকে যথাযথ উপায়ে পরিচালনা করা

৭. সঠিক সচেতনতা

৮. সঠিক একাগ্রতা বা চেতনা

বুদ্ধত্বের পাঁচটি নীতি

১. হত্যা না করা

২. চুরি না করা

৩. যৌনতায় লিপ্ত না হওয়া অসদাচরণ

৪. মিথ্যা বলা বা পরচর্চা না করা

৫. নেশাদ্রব্য দিয়ে শরীরকে দূষিত না করা

(আলোকিত হওয়ার ক্ষেত্রে) পাঁচটি বাধা

১. ইন্দ্রিয়ের আকাঙ্ক্ষা

২. অন্যদের বা নিজের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ অভিপ্রায়

৩. আলস্য, ক্লান্তি বা অলসতা

৪. উদ্বেগ এবং অস্থিরতা

৫. সন্দেহ

পঞ্চশক্তি বা আধ্যাত্মিক ক্ষমতা

১. নিজের উপর আত্মবিশ্বাস এবং বিশ্বাস

২. আধ্যাত্মিক লক্ষ্য অর্জনে শক্তি এবং প্রচেষ্টা

৩. চিন্তাভাবনা এবং কর্ম উভয় ক্ষেত্রেই মনোযোগীতা

৪. সমাধি সর্বোচ্চ ধ্যানমূলক একাগ্রতা

৫. প্রজ্ঞা

💐🌳ধর্মের ছয়গুণ। যথা:১. এই ধর্ম সুব্যাখ্যাত বা সুপ্রকাশিত।২. এই ধর্ম স্বয়ং দ্রষ্টব্য বা নিজে নিজে দেখার যোগ্য।৩. এই ধর্ম ...
28/10/2025

💐🌳ধর্মের ছয়গুণ। যথা:
১. এই ধর্ম সুব্যাখ্যাত বা সুপ্রকাশিত।

২. এই ধর্ম স্বয়ং দ্রষ্টব্য বা নিজে নিজে দেখার যোগ্য।

৩. এই ধর্ম কালাকাল বিহীন। যখনই এ ধর্ম পালন করা হয় তখনই ফল পাওয়া যায়।

৪. এই ধর্ম এসে দেখা বা নিজের বিচারবুদ্ধি দিয়ে বিবেচনার যোগ্য।

৫. এ ধর্ম নির্বাণ প্রাপক অর্থাৎ নির্বাণে উপনীত করে।

৬. এই ধর্ম বিজ্ঞগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষ ও জ্ঞাতব্য।

ভিক্ষুদের ঊনচত্বারিংশ(৩৯)পাচিত্তিয় অপরাধ।।  #পালি ভাষাঃ-যো পন ভিক্খু ভিক্খুম্স দুট্ঠুল্লং আপত্তিং অনুপসম্পন্নসস্স আরোচেয...
27/10/2025

ভিক্ষুদের ঊনচত্বারিংশ(৩৯)পাচিত্তিয় অপরাধ।।

#পালি ভাষাঃ-যো পন ভিক্খু ভিক্খুম্স দুট্ঠুল্লং আপত্তিং অনুপসম্পন্নসস্স আরোচেয্য অঞ্ঞত্র ভিক্খু সম্মুতিযা, পাচিত্তিযন্তি।।
#বঙ্গানুবাদ: ভিক্ষুর সম্মতি না লইয়া যে-কোনো ভিক্ষু অন্য ভিক্ষুর চারি পারাজিকা ও তেরোটি সঙ্ঘাদিশেষ আপত্তি সম্বন্ধে, ভিক্ষু-ভিক্ষুণী ব্যতীত অনুপসম্পন্নকে বলে তাহার #পাচিত্তিয় হয়।।

#বিস্তৃতার্থ: এখানে 'দুট্ঠল্ল' বলিলে ' #সঙ্ঘাদিশেষ' আপত্তিই জানিতে হইবে। 'এই ভিক্ষু শুক্রমোচন আপত্তি প্রাপ্ত হইয়াছে' এই প্রকার কোনো স্ত্রী-পুরুষ গৃহস্থ-প্রব্রজিতকে বলিলে ' #পাচিত্তিয়' হয়। অন্যান্য আপত্তি সম্বন্ধে বলিলে ' #দুক্কট'।।

যেই ভিক্ষু পারাজিকাপত্তি ব্যতীত অন্যান্য শিক্ষাপদগুলি নিত্য লঙ্ঘন করে, তাহা হইলে তাহার ভবিষ্যৎ মঙ্গলের জন্য শীলবান ভিক্ষু নির্দেশ করিয়া দিবেন যে 'এতগুলি আপত্তি সম্বন্ধে এতটা খুলিয়া বলো' ইহাই ভিক্ষু সম্মতি।।

#তিন অঙ্গ: সবৃত্তান্ত সঙ্ঘাদিশেষ আপত্তি বর্ণনা, অনুপসম্পন্নকে বলা, ভিক্ষুর সম্মতি না লওয়া।
#অনাপত্তি : বিষয় বলা আপত্তি না বলা, আপত্তি বলা বিষয় না বলা, ভিক্ষুর সম্মতি লইলে, উন্মত্তের ও আদিকর্মিকের।।

#রেফারেন্সঃ ভিক্ষু প্রাতিমোক্ষ- ১০২.পৃষ্ঠায়।।
#দুট্ঠুল্লারোচন কথা-সাবত্থিতে ছব্বগ্গিয।।
#৯২টি পাচিত্তিয় মধ্যে #দুট্ঠুল্লরোচন কথা নবম শীল।।
#ভিক্ষু প্রাতিমোক্ষ শীল নং-৩৯।।

মহামানব গৌতম বুদ্ধসদ্ধর্মশোভন দেবশ্রী মহাথের সহস্রাধিক শিষ্যসহ বুদ্ধের রাজগৃহে আগমনভগবান গয়াশীর্ষ পর্বতে যতদিন ইচ্ছা কাট...
26/10/2025

মহামানব গৌতম বুদ্ধ
সদ্ধর্মশোভন দেবশ্রী মহাথের

সহস্রাধিক শিষ্যসহ বুদ্ধের রাজগৃহে আগমন

ভগবান গয়াশীর্ষ পর্বতে যতদিন ইচ্ছা কাটিয়ে মগধরাজ বিম্বিসারের কাছে যে অঙ্গীকার করেছিলেন, এখন তা পালন করার অভিপ্রায়ে রাজগৃহ অভিমুখে যাত্রা করলেন, সঙ্গে বৃহৎ ভিক্ষুসংঘ—এক হাজার ভিক্ষু—যাঁরা সবাই আগে জটিল ছিলেন। ভগবান ক্রমাগত পর্যটন করে রাজগৃহে পৌঁছালেন এবং সেখানে যষ্ঠিবন উদ্যানে সুপ্রতিষ্ঠ-চৈত্যে অবস্থান করতে লাগলেন।

মগধরাজ শ্রেণিক বিম্বিসার শুনলেন যে শাক্যকুল-প্রব্রজিত শ্রমণ গৌতম রাজগৃহে গিয়ে রাজগৃহের কাছে যষ্টিবন উদ্যানে সুপ্রতিষ্ঠ-চৈত্যে অবস্থান করছেন। তাঁর এরূপ কল্যাণ-কীর্তিশব্দ প্রচারিত হয়েছে, ‘তিনি ভগবান অর্হৎ, সম্যকসম্বুদ্ধ, বিদ্যাচরণসম্পন্ন, সুগত, লোকবিদ, অনুত্তর দম্যপুরুষসারথি, দেবমনুষ্যদের শাস্তা, বুদ্ধ, ভগবান।’ তিনি দেবলোক, মারলোক, ব্রহ্মলোক এবং দেবমনুষ্য, এই সব লোক নিজ অভিজ্ঞার দ্বারা সাক্ষাৎ করে এর স্বরূপ প্রকাশ করেন। তিনি ধর্মোপদেশ দেন যার আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ ও অন্তে কল্যাণ। তিনি অর্থযুক্ত, ব্যঞ্জনযুক্ত, সমগ্র পরিপূর্ণ এবং পরিশুদ্ধ ব্রহ্মচর্য প্রকাশিত করেন। এরূপ অর্হত্ত্বের দর্শন লাভ করা উত্তম হবে মনে করে মগধরাজ শ্রেণিক বিম্বিসার এক লাখ বিশ হাজার মগধবাসী ব্রাহ্মণ-গৃহপতি কর্তৃক পরিবৃত হয়ে ভগবানের কাছে গিয়ে তাঁকে বন্দনা করে একপাশে বসলেন। ওই এক লাখ বিশ হাজার ব্রাহ্মণ-গৃহপতিগণও কেউ ভগবানকে বন্দনা করে, কেউ-বা তাঁর সঙ্গে আনন্দদায়ক কথাবার্তা প্রসঙ্গে কুশলপ্রশ্নাদি বিনিময় করে, কেউ-বা হাতজোড় করে, কেউ-বা ভগবানের কাছে নামগোত্রে আত্মপরিচয় দিয়ে, আর কেউ-বা মৌনভাব অবলম্বন করে বসলেন। তখন এক লাখ বিশ হাজার মগধবাসী ব্রাহ্মণ-গৃহস্থদের মনে এই চিন্তা উদয় হলো : ‘মহাশ্রমণই কি উরুবেলাকাশ্যপের অধীনে অথবা উরুবেলাকাশ্যপই মহাশ্রমণের অধীনে ব্রহ্মচর্য আচরণ করছেন?’

তখন ভগবান স্বচিত্তে তাঁদের চিত্তপরিবিতর্ক জানতে পেরে উরুবেলাকাশ্যপকে গাথাযোগে সম্বোধন করে বললেন :

‘ওহে উরুবেলবাসী, কৃশতনু, জটিলের গুরু তুমি ছিলে,

বলো তুমি কি দেখে, হে কাশ্যপ, হে তপস্বী, অগ্নিরে ত্যজিলে?

জিজ্ঞাসি তোমারে, কহ এ বিষয়, জটিলের গুরু তুমি ছিলে,

কী কারণে অগ্নিহোত্র, অগ্নিচর্যা, ইষ্টযজ্ঞ, সকলি ত্যজিলে?’

কাশ্যপ—

‘রূপে শব্দে আর রসে, সুবাখানে ইষ্টযজ্ঞে সুকামিনিগণ,

এই মল উপাধিতে, জানি তা-ই, যজ্ঞহোত্রে রত নাহি মন।’

ভগবান—

‘রূপে শব্দে আর রসে, হে কাশ্যপ, যদি হেথা রত নাহি মন,

তবে বলো, হে কাশ্যপ, কোথা এবে, কোন লোকে রত তব মন?’

কাশ্যপ—

‘হেরি সেই শান্তপদ, নিরুপাধি, কামমুক্ত, যা আকিঞ্চন,

অন্যথা যার নাই, ভুততা তথতা যা, অনন্যগমন।

সেই শান্তিপদে রত, নিরুপাধি, অনাসক্তি, যা আকিঞ্চন,

ইষ্টযজ্ঞে, অগ্নিহোত্রে, রূপে শব্দে আর রসে রত নাহি মন।’

—উরুবেলায় ঋদ্ধি প্রদর্শন, মহাস্কন্ধ, মহাবর্গ

উরুবেলা কাশ্যপের শিষ্যত্ব প্রকাশ

এরপর উরুবেলাকাশ্যপ আসন হতে উঠে নিজের শ্রাবকত্ব প্রকাশের জন্য উত্তরাসঙ্গ একাংশ করে পরে ভগবানের পায়ে মাথা রেখে ভগবানকে তিনবার বললেন, ‘ভন্তে, আপনি বুদ্ধ, আমি শ্রাবক।’ তারপর তিনি এক তালগাছপ্রমাণ, দুই তালগাছপ্রমাণ ইত্যাদিক্রমে সাতবারে সাত তালগাছপ্রমাণ ঊর্ধ্ব আকাশে উঠে ও নেমে বুদ্ধকে আবার বন্দনা করলেন এবং একপাশে বসলেন। এই অলৌকিক কাণ্ড দেখে সেই বিশাল জনসংঘ একবাক্যে বুদ্ধের গুণকীর্তন করতে লাগল। তারা বলল, ‘আহা, বুদ্ধ কী মহানুভব!’ যে উরুবেলাকাশ্যপের নিজের ধর্মমতে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল এবং যিনি নিজেকে অর্হৎ বলে মনে করতেন, তথাগত ভুল ভেঙে দিয়ে তাঁকেই আত্মবশ করেছেন। তখন মগধবাসী ব্রাহ্মণ-গৃহপতিদের মনে হলো : ‘কাশ্যপই মহাশ্রমণের অধীনে ব্রহ্মচর্য আচরণ করছেন।’

‘হে বুদ্ধ, বহুজন রূপ, রস, শব্দ, গন্ধ ও স্পর্শ, এই পঞ্চ কামগুণের আকর্ষণে রমণীসম্ভোগসহ যাবতীয় ক্লেশকামে নিমজ্জিত থেকে লৌকিক সুখ সম্ভোগ যজ্ঞ ও পূজা করে থাকেন। আচার্যগণ শিষ্যপরম্পরা এই লৌকিক সুখভোগের উপদেশ দিয়ে আসছেন। আমিও ভুল করে সেই পঞ্চ কামকে যজ্ঞ ও পূজার দ্বারা আচরণ করেছি। বর্তমানে আপনার উপদেশে সেই যাবতীয় কামসুখে স্কন্ধ নামে উপাধি ময়লা-আবর্জনা বলে প্রত্যক্ষ করেছি এবং আমার আচরিত ক্ষুদ্র-বৃহৎ যজ্ঞ প্রত্যাহার করে আপনার কল্যাণ ধর্মে আশ্রয় নিয়েছি।’

এরপর বুদ্ধ কাশ্যপকে তাঁর বর্তমান আচরিত ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করতে উদ্যত হলেন। কাশ্যপ বসা থেকে উঠে বুদ্ধের পায়ে মাথা রেখে বললেন, ‘ভন্তে, আপনি উপদেষ্টা, আমার পরম গুরু, আমি আপনার পদসেবক শিষ্য, আমাকে প্রশ্ন করার কোনো প্রয়োজন নেই।’ তখন সবাই বুঝতে পারলেন যে উরুবেলাকাশ্যপই বুদ্ধের শ্রীচরণে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছেন এবং নিজেই স্বীকার করছেন।

ঋষিদের কী কী ধর্মদেশনা করেছিলেন এবং কী কী উপদেশ দিয়েছিলেন সেসব (যাবতীয়) বিষয়াবলি প্রশংসাসহকারে বুদ্ধ পুনর্ব্যক্ত করলেন এবং প্রসঙ্গক্রমে অতীত জন্মকথা উপস্থাপন করে বললেন ‘উরুবেলাকাশ্যপ প্রমুখ সব ঋষিকে আমি শুধু এই জন্মে উপদেশ দিয়ে তাঁদের মিথ্যাদৃষ্টি ধ্বংস করেছি তা নয়, পূর্বজন্মে নারদ ঋষি জন্মেও তাঁদের মিথ্যা মতবাদ সর্বতোভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিলাম’ এই বলে বুদ্ধ পূর্বজন্ম-বৃত্তান্ত অবতারণা করে একশো নব্বইটি গাথাসংবলিত নারদ-জাতক দেশনা করলেন।—উরুবেলায় ঋদ্ধি প্রদর্শন, মহাস্কন্ধ, মহাবর্গ

রাজা বিম্বিসারের ধর্মজ্ঞান ও দীক্ষালাভ

ভগবান স্বচিত্তে ওই মগধবাসী ব্রাহ্মণ-গৃহপতিদের চিত্তপরিবিতর্ক জেনে তাঁদের পর্যায়ক্রমে ধর্মকথা বলতে লাগলেন। যথা : দানকথা, শীলকথা, স্বর্গকথা। ভগবান কামের উপদ্রব, অবকর, সংক্লেশ এবং নৈষ্ক্রম্যের সুফল প্রকাশ করলেন। যখন জানতে পারলেন যে তাঁদের চিত্ত সুস্থ, কোমল, আবরণমুক্ত, প্রফুল্ল ও প্রসন্ন হয়েছে, তখন তিনি বুদ্ধদের সংক্ষিপ্ত উৎকৃষ্ট ধর্মদেশনা ব্যক্ত করলেন। যথা : দুঃখ, দুঃখসমুদয়, দুঃখনিরোধ ও দুঃখনিরোধের উপায়। যেমন শুদ্ধ ও ময়লাহীন কাপড় সম্যকভাবে রং গ্রহণ করে, তেমনই রাজা বিম্বিসার প্রমুখ মগধবাসী এক লক্ষ দশ হাজার ব্রাহ্মণ-গৃহস্থদের সেই আসনে বিরজ, বিমল ধর্মচক্ষু উৎপন্ন হলো; ‘যা-কিছু সমুদয়ধর্মী সেসবই নিরোধধর্মী।’ দশ হাজার ব্যক্তি ভগবানের উপাসকত্ব গ্রহণ করেছেন বলে জানালেন।

তখন মগধরাজ শ্রেণিক বিম্বিসার ধর্ম প্রত্যক্ষ করে, ধর্মতত্ত্ব লাভ করে, ধর্ম জেনে, ধর্মে প্রবেশ করে এবং ধর্মে সন্দেহমুক্ত হয়ে, ধর্মে বৈশারদ্য প্রাপ্ত হয়ে, বুদ্ধের শাসনে আত্মবিশ্বাস লাভ করে ভগবানকে বললেন, ‘ভন্তে, কুমার অবস্থায় আমার পাঁচটি কামনা ছিল, তা এখন পূর্ণ হলো। প্রথম, আমি রাজ্যে অভিষিক্ত হবো; দ্বিতীয়, আমার রাজ্যে অর্হৎ সম্যকসম্বুদ্ধ অবতীর্ণ হবেন; তৃতীয়, আমি সেই ভগবানের পর্যুপাসনা করব; চতুর্থ, ভগবান আমাকে ধর্মোপদেশ দেবেন; পঞ্চম, আমি ভগবানের ধর্মোপলব্ধি করব। ভন্তে, কুমার অবস্থায় আমার এই পঞ্চ কামনা ছিল যা এখন পূর্ণ হয়েছে।’

‘ভন্তে, অতি সুন্দর! অতি মনোহর! যেমন কেউ নিচের দিকে মুখ করে থাকা পাত্রটাকে ওপরের দিকে মুখ করে, পথ-হারানো ব্যক্তিকে পথ দেখায়, আঁধারে বাতি জ্বালিয়ে দেয় যাতে চক্ষুষ্মান ব্যক্তি দৃশ্য বস্তুগুলো দেখতে পায়, সেরূপ ভগবান অনেক প্রকারে ধর্ম প্রকাশিত করেছেন। আমি ভগবান বুদ্ধের, তাঁর প্রচারিত ধর্মের ও তাঁর প্রতিষ্ঠিত সংঘের শরণ গ্রহণ করছি। ভগবান আজ থেকে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত আমাকে আপনার শরণাগত উপাসক হিসেবে গ্রহণ করুন। ভন্তে, আগামীকালের জন্য ভিক্ষুসংঘসহ আপনি আমার বাড়িতে অন্নভোজন করতে সম্মত হোন।’ ভগবান মৌনভাবে সম্মতি জানালেন।

এরপর রাজা শ্রেণিক বিম্বিসার ভগবান সম্মত হয়েছেন জেনে, আসন হতে উঠে, ভগবানকে বন্দনা করে এবং তাঁকে সামনে রেখে ডান পাশ দিয়ে ধীরপদে চলে গেলেন।

রাজগৃহবাসী লোকদের মধ্যে যাঁরা বুদ্ধকে দেখেছিলেন এবং যাঁরা দেখেননি পরদিন সকালে সবাই বুদ্ধকে দেখার ইচ্ছায় রাজগৃহ হতে তাল-অরণ্য (মতান্তরে যষ্টিবনে) এলেন। সমগ্র উদ্যানে আর কোথাও তিল ধারণের জায়গা রইল না। ভগবানের বত্রিশ মহাপুরুষ লক্ষণ, আশিটি অনুব্যঞ্জন ইত্যাদি এবং রূপশ্রী ও দৈহিক মাঙ্গল্য লক্ষণ এবং শ্রীমণ্ডিত অবয়ব পুনঃপুন দেখেও দর্শনার্থী নরনারীগণ তৃপ্তি মেটাতে পারল না। দর্শনেচ্ছু লোকদের চাপ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলে উদ্যানভূমি হতে বের হওয়ার পর পথ বন্ধ হয়ে আসল।

রাজা বিম্বিসার সেই রাতের শেষে উত্তম খাদ্যভোজ্য প্রস্তুত করালেন। তিনি আগের দিনের নিমন্ত্রণ অনুযায়ী শ্রাবকসংঘসহ বুদ্ধকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আমার জন্য একজন মন্ত্রীর মাধ্যমে ভগবানকে সময় জানালেন, ‘ভন্তে, এখন ভোজনের সময়, অন্ন প্রস্তুত হয়েছে।’ ভগবান সকালবেলায় বাইরে বের হবার উপযোগী চীবর পরে ভিক্ষাপাত্রটা হাতে নিয়ে রাজগৃহে প্রবেশ করলেন, সঙ্গে বৃহৎ ভিক্ষুসংঘ-এক হাজারসংখ্যক ভিক্ষু, যাঁরা আগে জটিল ছিলেন।

দর্শনেচ্ছু জনগণের চাপে উদ্যানভূমি হতে বের হওয়ার পথ বন্ধ হলে বুদ্ধ শ্রাবকসংঘসহ রাজপ্রাসাদে গিয়ে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে পারবেন না, তাঁদের আহারের ব্যাঘাত হবে, তাই দেবরাজ ইন্দ্রের আসন উত্তপ্ত হয়ে উঠল। এর কারণ জেনে তিনি মানুষের ছদ্মবেশ ধারণ করে দৈবশক্তি বলে এসে তথাগত বুদ্ধের সামনে বুদ্ধ, ধর্ম ও সংঘের গুণকীর্তন করতে করতে পথ ধরে চলতে লাগলেন এবং নিম্নোক্ত গাথা ভাষণ করলেন :

‘দান্ত সঙ্গে দান্ত পূর্ব-জটিলের দল,

বিমুক্তের সঙ্গে যাঁরা বিমুক্ত সকল।

সুবর্ণবিগ্রহরূপে হয়ে শোভমান,

রাজগৃহে প্রবেশিছে ভন্তে ভগবান।

শান্ত সঙ্গে শান্ত পূর্ব-জটিলের দল,

বিমুক্তের সঙ্গে যাঁরা বিমুক্ত সকল।

সুবর্ণবিগ্রহরূপে হয়ে শোভমান,

রাজগৃহে প্রবেশিছে ভন্তে ভগবান।

তীর্ণ সঙ্গে তীর্ণ পূর্ব-জটিলের দল,

বিমুক্তের সঙ্গে যাঁরা বিমুক্ত সকল।

সুবর্ণবিগ্রহরূপে হয়ে শোভমান,

রাজগৃহে প্রবেশিছে ভন্তে ভগবান।

দশ আর্যবাসে বাস, দশবলধর,

দশধর্মবিদ, দশগুণে গুণধর।

দশশত-পরিবৃত বুদ্ধ সুমহান,

রাজগৃহে প্রবেশিছে ভন্তে ভগবান।’

দান্তা (দমনকারী) দান্ত (দমিত প্রাচীন জটিল সন্ন্যাসী) দ্বারা পরিবৃত হয়ে ভগবান বুদ্ধ রাজগৃহে প্রবেশ করলেন। এ গাথা সুমধুর আকারে ভাষণ করে দেবরাজ ইন্দ্র ভগবান বুদ্ধের গুণকীর্তন করতে করতে সমাগত জনতার মাঝে পথ করে নগরের অভিমুখে চললেন। অপার বিভূতিসম্পন্ন তথাগত বুদ্ধের শরীর হতে ষড়্‌রশ্মি বিকীর্ণ করে মহিমান্বিত বুদ্ধলীলায় সহস্র শ্রাবকের আগে আগে রাজপ্রাসাদের দিকে অগ্রসর হলেন।

মানবরূপী দেবরাজ ইন্দ্র তথাগতের গুণগান করতে করতে অগ্রসর হতে থাকলে সমবেত জনতা এই অদৃশ্যপূর্ব মানবের রূপসৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে ভাবলেন, ‘আমরা এর আগে এরূপ সুপুরুষ কখনো দেখিনি।’ তখন অনেকে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কে এবং কোথা থেকে এসেছেন?’

তার উত্তরে দেবরাজ ইন্দ্র গাথায় বললেন :

‘যেবা জ্ঞানী আত্মজয়ী সংযম তার পর

যাঁর সমতুল্য নেই, যেবা লোকোত্তর

অর্হৎ সুগত যিনি ভুবন ভেতর—

অধম সেবক আমি তাঁর অনুচর।’

এই বলে দেবরাজ ইন্দ্র নিজের পরিচয় দিলেন।

সমাগত জনতা তথাগত বুদ্ধের প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধান্বিত হয়ে বিভিন্নভাবে পূজায় নিরত হলে বুদ্ধ ছদ্মবেশী ইন্দ্রের অনুসরণ করে রাজপ্রাসাদের কাছাকাছি হলে দেবরাজ ইন্দ্র অন্তর্হিত হলেন। রাজা বিম্বিসার প্রাসাদ হতে নেমে কিছুদূর এগিয়ে এসে পথিমধ্যে বুদ্ধের চরণবন্দনা ও অভ্যর্থনা করে শ্রাবকসংঘসহ বুদ্ধকে রাজপ্রাসাদে আনলেন।—উরুবেলায় ঋদ্ধি প্রদর্শন, মহাস্কন্ধ, মহাবর্গ।

Address

Bhodderhat , Chandgho , Chattogram
Chittagong
4400

Telephone

+8801833087557

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when বুদ্ধ -Buddha posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to বুদ্ধ -Buddha:

Share

Category