06/07/2025
কারবালা,,,
এমন এক বিপ্লব যার কারনে অনেক বড়ো বড়ো গভর্মেন্ট পর্যন্ত কেঁপে উঠেছে। কিন্তু কি ঘটেছিল সেদিন কারবালার ময়দানে?
কিভাবেই বা ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু শহিদ হলেন?
আজ আমরা সে বিষয়ে জানবো ইনশাআল্লাহ।
মৃত্যুর আগে মুয়াবিয়া তার সন্তান ইয়াজিদ কে সতর্ক করে যে, ইমাম হোসাইন থেকে তুমি সাবধান থেকো ,যদি সে তোমার বিরুদ্ধে যায় তবে তোমার পতন নিশ্চিত।
ইয়াজিদ এক জালিম শাষক ছিলো। সে জানতো যে লোকেরা তার বাইয়াত গ্রহণ করবে না।তাই সে মানুষকে তলোয়ারের ভয় দেখিয়ে বাইয়াত নেয়া শুরু করে। তখন মদিনার গভর্নর ওয়ালিদ বিন উতবা রাঁতের আঁধারে ইমাম হোসাইন কে ডেকে ইয়াজিদের বাইয়াত নিতে বলেন।কিন্তু ইমাম হোসাইন তা অস্বীকার করে পরিবার নিয়ে মক্কায় চলে যান।
সেখানে তিনি কয়েক মাস অবস্থান নেন। সে সময় কুফার লোকেরা ইমাম হোসাইন কে চিঠি লিখে বলেন যে, আপনি চাড়া আমাদের কোন ইমাম নেই। আপনি কুফায় চলে আসেন আমরা আপনার পক্ষ থেকে লড়াই করবো।
এরপর ইমাম হোসাইন মুসলিম বিন আকিল কে কুফায় প্রেরণ করেন।
কুফার আঠারো হাজার মুসলিম ইমাম হোসাইন এর বাইয়াত এবং ইয়াজিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ওয়াদা করে। এ খবর পেয়ে ইয়াজিদ দ্রুত কুফার গভর্নর কে সরিয়ে, ওবায়দুল্লা বিন জিয়াদ কে গভর্নর বানায়।
ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ খুবই চতুরোতার সাথে ইমাম হোসাইন সেজে রাতের অন্ধকারে কুফায় প্রবেশ করে।কুফার মুসলিমরা তাকে ইমাম হোসেন মনে করে তার হাতে বাইয়াত গ্রহন করে।ঠিক তার পরের দিন সে সকলের সামনে এসে ঘোষনা করে ,যেই ইমাম হোসাইনের পক্ষে থাকবে তার পরিনতি ভয়াবহ হবে।
এবং এই জালিম মুসলিম বিন আকিলকে মহলের উপর থেকে ফেলে শহিদ করে ফেলে।যারা ইমাম হোসাইন এর পক্ষে চিলেন তাদের অনেক কেই হত্যা ও বন্ধী করে অন্যদিকে ইমাম হোসাইন তার পরিবার নিয়ে কুফার দিকে রাওয়ানা হয়ে যান। তিনি যুদ্ধের জন্য নয় বরং কুফার মুসলিমদের সাথে দেখা করার জন্য যাচ্ছিলেন।
কিন্তু তিনি এটা জানতেন না যে ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ কুফা দখল করে নিয়েছে।পরবর্তীতে মুসলিম বিন আকিলের শাহাদাতের খবর পেয়ে তার সাথিদের মনোবল ভেঙে যায়। তখন ইমাম হোসাইন বলেন আামরা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছি ,আমাদের তার কাছেই ফিরে যেতে হবে।
পথিমধ্যে ইমাম হোসাইন রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সপ্নে দেখেন। এবং নিজের শাহাদতের বিষয়ে অবগত হন। এরপর নিজ সাথিদের এ বিষয়ে জানালে কিছু লোক মক্কার দিকে ফিরে যায় ,আর বাকিরা কুফার দিকে রাওয়ানা হন।পথে জুহাইর বিন কাইনের কাফেলার সাথে দেখা হয়।
সবকিছু জানার পর জুহাইর বিন কাইন তার স্ত্রীকে তালাক দেন এবং বলেন ,তুমি ফিরে যাও কারণ আমি ইমাম হোসাইন এর সাথে সাহাদাতের দিকে রাওয়ানা হবো।
অন্যদিকে ইয়াজিদ এ বিষয়ে জানলে, সে হুর বিন ইয়াজিদকে এক হাজার সেন্য নিয়ে ইমাম হোসাইন এর কাফেলার দিকে পাঠায়। সে ইমাম হোসাইন এর কাফেলাকে ফোরাত নদির ধারে মরুভূমিতে অবরুদ্ধ করে।
ইমাম হোসাইন যখন জানতে পারেন যে এটাই কারবালা তখন তার চোখে পানি চলে আসে ,এবং তিনি ঘোষণা করেন। তোমরা এখানেই তাঁবু লাগাও, কারন এখানেই আমাদের রক্ত জরানো হবে।
এসময় ইয়াজিদ চার হাজার সৈন্য নিয়ে আমর বিন সাদ কে হুর বিন ইয়াজিদ এর নিকট পাঠায়। এছাড়াও ইয়াজিদ আরো পঁচিশ হাজার সৈন্য পাঠায়। ফলে তাদের সৈন্য সংখা মোট ত্রিশ হাজারে পৌচায়। অন্যদিকে ইমাম হোসাইন এর সাথে মহিলা এবং শিশু সহ সত্তর জন সাথি চিলেন।
কিন্তু কেন ৭০ জনের বিরুদ্ধে ত্রিশ হাজার সৈন্য দাঁড় করালো ইয়াজিদ?
এর কারন হলেন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু , যুদ্ধের ময়দান যার বীরত্ব, সাহসিকতা, ও গর্জন শুনে মনে হয় যেন আল্লাহর সিংহ হযরত আলি সয়ং যুদ্ধে নেমেছেন।
এর পর ইমাম হোসাইন কুফায় চিঠি পাঠান তার অবস্থান বর্ননা করে। কিন্তু সেই চিঠি কখনোই কুফায় পৌঁছায় নি।
আমর ইবনে আস পাঁচশত সৈন্য দিয়ে নদি ঘেরাও করলো।যাতে কেউ নদী থেকে পানি পান করতে না পারে।মরুভূমির ভয়াবহ গরমে নারী এবং শিশুদের বেহুশ হওয়ার উপক্রম।এ অবস্থা দেখে ইমাম হোসাইন শত্রুদের পত্র পাঠান ,যে তোমাদের শত্রুতা আমার সাথে কিন্তু নারী এবং শিশু দের পানি পান করতে দাও। শত্রুপক্ষ তাতে অশ্বিকৃতি জানালে তিনি তার সাথিদের বললেন ,তোমরা চলে যাও।শত্রুপক্ষ আমাকে হত্যা করতে চায় ,আমি চাইনা কেউ আমার জন্য জীবন দিক।এইবলে তিনি আলো নিভিয়ে দেন।কিন্তু আলো জালানোর পরেও কেউ সেখান থেকে যায়নি। অন্যদিকে হুর বিন ইয়াজিদ যখন জানতে পারেন যে আমর বিন সাদ ইমাম হোসাইন এর সাথে যুদ্ধ করবেন তখন তিনি ইমাম হোসাইন এর পক্ষে যোগ দেন।
অবশেষে দশ মহর্রমের সূর্যোদয় হয়। ইমাম হোসাইন শত্রুদের সামনে এসে বললেন, হে মানু্ষেরা
আমি কি তোমারদের নবীর বংশধর নই? তোমরা কি আমাকে হত্যা করতে চাও? কারন আমি ইয়াজিদের বাইয়াত নিতে অস্বীকার করেছি।
শত্রুদের পক্ষ থেকে কোন উত্তর নেই।
তাই তিনি নিজেদের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করলেন। তিনি সৈন্যদের তিন ভাাগে ভাগ করলেন। যার মধ্যে একভাগের নেতৃত্ব দিয়েছেন সয়ং আাব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু।
যুদ্ধ শুরু হলো, একে একে ইমাম হোসাইন এর অনেক সাথি সহিদ হলেন। এরপর হযরত আলি আকবর সামনে এসে বললেন, হে মুসলিম গন আমি আলি আকবর। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশধর। আমরা কখনোই বাতিলের সামনে ঝুঁকবো না। তখন শত্রুসেনারা কেউ মুখ ফিরিয়ে নেয় আর কেউ বা চোখ লুকানো শুরু করে।যেন মনে হলো স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন।
এরপর তিনি খুবই বীরত্বের সাথে শত্রুদের হত্যা করতে লাগলেন। কিন্তু দূর থেকে ভল্লম ছুঁড়ে হযরত আলি আকবরকে শহিদ করা হলো। ইমাম হোসাইন শত্রুদের পথচিরে দ্রুত তার কাছে পৌঁচালেন। আর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলললেন হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থেকো এরা তাকেও হত্যা করলো যার সাথে তোমার নবীর চেহারার মিল ছিলো। এরপর ইমাম হোসাইন এর দুই ভাতিজা ও শহিদ হয়ে যান। অন্যদিকে হযরত আাব্বাস একাই শত্রুদের বুক চিরে পানির জন্য নদীতে পৌছান। কিন্তু পানি নিয়ে ফিরার সময় শত্রুরা তার দুই হাত কেঁটে তাকে হত্যা করেন। ইমাম হোসাইন হযরত আাব্বাস এর নিকট গেলে তিনি বললেন ,
ভাই আমাকে ক্ষমা করবেন আমি পানি আনতে পারিনাই।এরপর হযরত ইমাম হোসাইন তার ছোট্ট শিশু আলি আজগর কে দেখিয়ে বললেন আমার জন্য নয়, আমার ছোট্ট শিশুটার জন্য হলও একটু পানি দাও।
কিন্তু সে সমসয় এক জালিম তীর ছুঁড়ে হযরত আলি আজগর কে হত্যা করে। তখন ইমাম হোসাইন চিতকার করে বলেন হে আল্লাহ আমার এই ক্বোরবানিকে তুমি মনে রেখো। এই বলে তিনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
একের পর এক শত্রুর বুক চিরে সিংহের মতো এগোতে লাগলেন। যা দেখে শত্রুসৈন্যরা থরথর কাপতে শুরু করে।সৈন্যদের মনোবল ভাঙতে দেখে আমর বিন সাদ তির নিক্ষেপের নির্দেশ দেয়।অগনিত তীরের আঘাতে ইমাম হোসাইন রাদিআল্লাহু আনহু শাহাদাত বরন করেন।
অতপর শুরু হলো বিপ্লবের এক নতুন সুচনা। মক্কা ,মদিনা ,কুফা সহ সমগ্র আরবে শুরু হলো এক ভয়াবহ লড়াই। সে সম্পর্কে আমরা পরবর্তী ভিডিওতে জানবো ইনশাআল্লাহ।
কোন শব্দ বাদ না দিয়ে ভিডিও স্ক্রিপ্ট ,ইডিটিং প্ল্যান তৈরী করে দাও