30/10/2025
দুর্বলের হাইকোর্ট
নিচের ছবিগুলো দিয়ে নিউজ ফিডে ঘুরেতেছে বড় অভিযানর খবর। বাহ কত বড় খবর 😭🤣।
দু বছর আগে আমি গিয়েছিলাম লক্ষীছড়ি। রুট ছিল নানিয়াচর ঘিলাছড়ি টু লক্ষীছড়ি পেক্কুয়া। পায়ে হাটা পথ একদিন।
সকাল ৭ টায় রওনা হয়ে গন্তব্যে পৌছি রাত সাড়ে আট টার দিকে। সেখান নেই কোন যন্ত্র চালিত যান।
সেখানে যেতে হলে পায়ে হাটতে হবেই। সেখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা কাঠ এবং বাঁশ। বিশাল বিশাল ডুলু বাঁশের চোঙায় গরম পানি কনে চা খেয়েছি। সে চায়ের স্বাদ জানিনা আর নিতে পারব কিনা।
কাঠ ও বাঁশ তাদের বাগানের। প্রকৃতি এত উর্বর সেখানে বাঁশগুলো এক বছরে বিরাট বিরাট হয়।
এ যে বাঁশের ভেলা দেখা যাচ্ছে এগুলোতে বসে আমি ছড়ার পানিতে গোসল করেছি। এ বাঁশগুলো যায় বর্মাছড়ি হয়ে চট্টগ্রামের হালদা নদী হয়ে গহিরা।
প্রত্যক পরিবারের সক্ষম পুরুষ প্রতি সপ্তাহের শুরুতে একটি বাঁশের ভেলা বানায়। এ ভেলা বানানোর কারুকাজ দেখলে মোহিত হবেন যে কেউ। বাঁশের ভেলা বানানোর আগে গ্রামের মানুষ ছড়ায় বাঁধ দেয়। বাঁধের পানি যখন ফুলে উঠে তখন ছড়ার পাড় থেকে বাঁশ কেটে বাঁশের ভেলা ভাসায়। ভেলা রেডি হলে তখন বাগান থেকে ১/২ টা সেগুন গাছ কাটেন।
উচু উচু সেগুন কাঠ কেটে লগ সিস্টেম করে ৫/৬/৭ লগ ভেলায় তুলেন। এরপর হাটের দিন বাঁধ ছেড়ে ভেসে ভেসে বর্মাছড়ি বাজারে পৌছায়।
বিক্রি করেন কাঠ। খুব সস্তায় বাঁশের ভেলা কিনে নেন বাঙালীরা।
পাহাড়িরা বাঁশের হিসাব করে না। এটা তাদের বোনাস। তাঁদের টার্গেট গাছগুলো গন্তব্য পৌছানো।
৫/৬ লগ কাঠ বিক্রি করে এ টাকা দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে তারা দল বেঁধে পায়ে হেটে ঘরে ফিরেন।
আর সেই ফিরার কষ্ট একবার ভেবে দেখুন। বাজারে যায় ভেলায় ভেসে ভেসে লগি মেরে। ঘরে ফিরে বোঝা নিয়ে পায়ে হেটে।
এভাবে চলে তাদের যুগের পর যুগ। এরা একটা গাছ কাটে ১ শ টা লাগায়। হাজারটা লাগায়।
ফলে সেখানে বন উজাড় হয় না। বাঁশ বন ধংস হয়না। কারণ এটাই তাদের প্রধান জীবিকা। আমি বিশাল প্রাকৃতিক বন ফুড়ে লক্ষীছড়ি পৌঁছেছি।
সেখানকার মানুষ জানে বাঁশ বন ধংস হলো তাদের কাঠ বিক্রির পরিবহন থাকবে না সো বাঁশবন রক্ষা হয় তাদের প্রধান কাজ।
এ কথা বলছি বলে মনে করবেন না গাছ কাটতে বাঁশ কাটতে উৎসাহিত করছি। আমি পরিবেশ সুরক্ষা চাই সেটার থিউরী কি?
আমাকে একজন পরিবেশ কর্মী বলতে পারেন। এ এলাকার মানুষদের কাছে আমরা শিখতে পারি কিভাবে বন ও বন্য প্রাণী রক্ষা করা যায়।
আমরা কাপ্তাই হাতি পালের কথা শুনি ও দেখি। মাঝে মাঝে হাতির আক্রমণে মানুষ মৃত্যুর কথা শুনি।
বরকল লংগদুর সম্প্রতি গোলাপি হাতি বাচ্চার কথা জেনেছি। কিন্তু এ বর্মাছড়িতে যে বিশাল এক হাতির পাল আছে আমরা কি জানি? যে পালের হাতির সংখ্যা বলা হয় ৩০ প্লাস। বন বিভাগ বা অন্য সংস্থাগুলো কি জানে? লক্ষ্যনীয় বিষয় কোনদিন এ পালের আক্রমণে কোন মানুষ মরেনি।
এ মানুষগুলোর কাঠগুলো আমরা সহজে অবৈধ বলতে পারি। তবে অবৈধ কাঠও যে সহজে বৈধ করা হয় সে খবরও জানি। কিন্তু এ নীরিহ মানুষরা জানে না তাদের নিজের হাতে সৃজন করা বাগানের কাঠগুলো কিভাবে বৈধ করতে হয়। রাঙামাটি খাগড়াছড়ি শহরে যে হাজার হাজার ফার্নিচার মাট আছে এগুলো তো সম্পুর্ন অবৈধ। এ কথার করউ চ্যালেঞ্জ করবেন?
এসব ফার্নিচার মাটগুলোর সেগুনকাঠের উৎস তো বন বিভাগ জানে না। সেগুন কাঠ যদি রিজার্ভ ফরেস্টের কাঠ হয় তাহলে এসব হাজার হাজার ফার্নিচার মাটের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া যায়। কাঠগুলো জব্দ করা যায়। কিন্তু আমাদের বন বিভাগ বা সেনা পুলিশ বিজিবি কি তা করছে?
এখন দোষ পড়ল বর্মাছড়ি গরীবদের ভাগে। এখন সেনাবাহিনীর আনসারের কাছে চোরাকারবারি হবে। পরিবেশ ধংস কারী হবে। এটাই কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের চিরচেনা রূপ।
যারা আইন জানে তাদের কাছে বন ধংসের সব থিউরী জানা আছে। যেটা জানে না লক্ষীছড়ির বাঁশের ভেলায় কাঠ পাচারকারীরা 😭।
Writer - সাংবাদিক হিমেল চাকমা