13/09/2025
কার ফতোয়ায় কে সঠিক?
আশরাফ আলী থানভী সাহেব ছিলেন উপমহাদেশে কওমি ঘরানার প্রসিদ্ধ আলেম, যাকে তারা হাকিমুল উম্মত হিসেবে নির্দ্বিধায় মান্য করেন ।
তিনি বছর রবিউল আওয়াল মাসে মিলাদ মজলিশের আয়োজন করতেন। তাঁর রচিত কিতাব ইরশাদুল ইবাদ ফি ঈদিল মিলাদ- প্রারম্ভেই তিনি লিখেছেন— “السرور بظهور النور”, অর্থাৎ “নূরের প্রকাশে আনন্দ”। এর মধ্য দিয়েই তিনি নবী করিম ﷺ-এর শুভাগমনের মাহাত্ম্যকে প্রকাশ করেছেন।
কিতাবটি রচনার সেই বছর তিনি চেয়েছিলেন মাহে রবিউল আওয়ালের সোমবারে মিলাদ মাহফিল আয়োজন করতে। কারণ, সে বছর ৮ই রবিউল আওয়াল সোমবার পড়েছিল। কিন্তু ছাত্রাবাস নির্মাণের কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি বিলম্বিত হয়ে পড়েন। অবশেষে মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় ১২ই রবিউল আওয়াল তারিখে।
তখন তিনি আফসোস করে বলেছিলেন—
“যদি সোমবারের দিনেই এই বয়ান করতে পারতাম, তবে আমরা সেই দিনেরও বরকত পেতাম। কেননা, হুজুর ﷺ-এর মুবারক বিলাদত সোমবারেই হয়েছিল।”
এরপর তিনি জন্মতারিখ প্রসঙ্গে লিখেন—
“কিছু মুহাক্কিক আলেমের মতে, নবী করিম ﷺ-এর শুভাগমন ৮ই রবিউল আওয়ালে হয়েছিল এবং সেটিও ছিল সোমবার। সেই হিসেবে আমরা দিন (সোমবার) ও তারিখ (৮ রবিউল আওয়াল) উভয়েরই বরকত লাভ করতে পারতাম। অন্যদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের (জমহুর) মতে, ১২ই রবিউল আওয়ালই নবীজির ﷺ জন্মতারিখ। অতএব, আমরা সেই বরকত থেকেও বঞ্চিত হইনি; বরং দুই দিক থেকেই বরকত অর্জিত হয়েছে— দিনের নিয়তের সওয়াবও মিলল, আবার ১২ তারিখের ফজিলতও পাওয়া গেল। কারণ, নিয়তের উপর মুমিনকে সওয়াব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।”
এ থেকে প্রতীয়মান হয়—
আশরাফ আলী থানভী সাহেব রবিউল আওয়ালে মিলাদ মজলিশকে সওয়াবের কাজ হিসেবে গণ্য করতেন।
১২ রবিউল আওয়ালে মিলাদ করাকেও তিনি বিশেষ বরকতের কাজ বলে মনে করেছেন।
আবার সোমবারে মাহফিল আয়োজনের নিয়তকেও তিনি সওয়াবের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
সর্বোপরি, রবিউল আওয়াল মাসে প্রিয় নবী ﷺ-এর বিলাদতের খুশি প্রকাশ করাকেই তিনি সুন্নতের অনুসরণের একটি বরকতময় রূপ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন
এখন প্রশ্ন হলো— যখন কওমি ঘরানার হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভী সাহেব-এর মতো একজন বড় আলেম নিজে ঈদে মিলাদুন নবি ﷺ উপলক্ষে নিয়মিত মিলাদ মাহফিল আয়োজন করতেন, তা সওয়াবের কাজ বলে উল্লেখ করেছেন, এবং ‘নূরের প্রকাশে আনন্দ’কে বৈধ,বরকত নেক আমল খুশি/ঈদ হিসেবে ঘোষণা করেছেন—
বর্তমান যুগে যারা প্রিয় নবীজির ﷺ শুভ আগমনে ঈদ খুঁজে পান না, বরং একে অনর্থক বা বিদআত বলে রায় দেন, তাদের ও স্বীয় মুরুব্বিদের ব্যাপারে কি ফতোয়া হবে?
বি.দ্র.নীচে থানভীর সাহেবের লেখাগুলো পড়ুন!
তিনি কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ ঠিকই খুঁজে পেয়েছেন আর আপনি???