07/06/2025
গল্প টা ভালো লাগলে পেইজ ফলো করুন 🥰
ছোট একটা গল্প একাকী জীবনের গল্প
জীবনের জ'ন্ম হয়েছিল এমন এক পরিবারে যেখানে ভালোবাসার চেয়ে বেশি ছিল দায়িত্বের বোঝা।
ছোট থেকেই সে পরিবারের সদস্যদের মুখে একটি কথাই শুনত তুমি তো আমাদের জন্য বোঝা। তার মা-বাবার মনে ছিল না কোনো আদর বা মমতার ছাপ। তাদের কাছে জীবন যেন এক অনাকাঙ্ক্ষিত বাস্তবতা।
জীবন যতই চেষ্টা করুক, তার বাবা-মায়ের চোখে কোনোদিনই সে প্রিয় সন্তান হতে পারেনি। তার চা'হিদা গুলো ছিল খুব সাধারণ একটু স্নেহ, একটু প্রশংসা।
কিন্তু তার সেই চা'হিদা গুলো পূরণ করার মতো কেউ ছিল না। তার ভাইবোনেরা তাকে দূরে রাখত যেন সে পরিবারের কোনো অংশই নয়। তাদের কাছে জীবন ছিল এক অদৃশ্য সত্তা যার উপস্থিতি যেন অপ্রয়োজনীয়।
স্কুলেও জীবন তেমন কোনো বন্ধু পায়নি। সহপাঠীরা তার উপর হাসাহাসি করত। একদিন স্কুলের মাঠে সে একা বসে ছিল। পাশের বেঞ্চে বসা এক দল ছেলে তাকে ডেকে বলল। তুমি এখানে কী করছ?
কেউ তোমার সাথে কথা বলে না? এই কথাটা শুনে জীবনের চোখে জল এসে গেল। কিন্তু সে কিছু বলল না। এটাই ছিল তার জীবনের আরেকটি বাস্তবতা সে কোনোদিন কারো আপন হতে পারেনি।
একবার জীবন এক শিক্ষককে বলেছিল স্যার, আমি কীভাবে বন্ধু পেতে পারি? শিক্ষক হেসে বলেছিলেন, আগে নিজেকে প্রমাণ করো, তারপর বন্ধু বানানোর কথা ভাববে।
সেই উত্তর শুনে জীবন আরো ভেঙে পড়েছিল। সে ভাবত, কেন তার অস্তিত্বই প্রমাণের অপেক্ষায় থাকবে? কেন তাকে সবসময় নিজের যোগ্যতা নিয়ে লড়াই করতে হবে?
জীবনের একমাত্র আশ্রয় ছিল বই। বইয়ের পাতায় সে এমন এক জগৎ খুঁজে পেত, যেখানে কেউ তাকে বিচার করত না।
সে প্রতিদিন বইয়ের মাঝে নিজের একাকিত্ব ভুলে থাকতে চাইত। কিন্তু বাস্তব জীবনের দুঃখ তাকে ক্রমাগত তাড়িয়ে বেড়াত।
একদিন খুব ভোরে, যখন পুরো পৃথিবী ঘুমিয়ে ছিল, জীবন চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে যায়। সে কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য না ভেবে হাঁটতে থাকে। নদীর ধারে গিয়ে বসে।
নদীর জলের শব্দ যেন তার মনের গভীর ব্যথাগুলোকে আরো তীব্র করে তোলে। সে নিজের সাথে কথা বলতে শুরু করে কেন আমায় কেউ ভালোবাসে না?
আমি কী এমন ভুল করেছি? তার মনের প্রশ্নগুলো নদীর জলের মতোই গভীর ছিল।
সেদিন জীবনের মন'স্থির হয়। সে ঠিক করল পৃথিবী তাকে ভালোবাসুক বা না বাসুক সে নিজেকে ভালোবাসবে।
সবার প্রত্যাখ্যানের মধ্যেও সে নিজের জন্য একটি নতুন পৃথিবী তৈরি করবে। যেখানে স্নেহ, ভালোবাসা আর মানসিক শান্তি থাকবে।
এরপর জীবন একটি ছোট চাকরি নিয়ে শহরে চলে যায়। শুরুতে তার জীবন ছিল খুবই সংগ্রামী। তাকে একবেলা খেয়ে দিন কাটাতে হয়েছে। কিন্তু তার মনোবল ছিল অটুট।
ধীরে ধীরে সে নিজের জন্য একটি ছোট বাসা বানায়। প্রতিদিন নিজের স্বপ্ন পূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে যায়। নিজের সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে গিয়ে সে শিখে গিয়েছিল কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করার কলা।
বহু বছর পর সেই পরিবার। যাঁরা তাকে বোঝা ভেবেছিল তার সাফল্যের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। তার বাবা-মা তার ছবি দেখে হতবাক হয়ে যান।
তারা ভাবেন সেই জীবন যাকে তারা অবহেলা করেছিল। কীভাবে এত বড় জায়গায় পৌঁছে গেল? কিন্তু জীবন আর ফিরে তাকায়নি। সে শিখে গিয়েছিল, কিছু সম্পর্কের জন্য অপেক্ষা করার মানে নেই।
জীবন এখন নিজের সৃষ্ট এক জগতে বাস করে। তার চারপাশে আছে এমন মানুষ যারা তাকে স্নেহ করে। সম্মান করে।
যারা তার এ'কা'কিত্বের গল্প শুনে অবাক হয়। সে এখন মা'নুষকে সা'হায্য করে, তাদের অনুপ্রাণিত করে। তাদের বলে আমি পারলে তুমিও পারবে। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো।
তবে জীবনের মনের গভীরে থাকা দুঃখের ক্ষ'ত কখনো পুরোপুরি মু'ছে যায়নি। একদিন ডায়েরির শেষ পাতায় জীবন লিখে রাখল
অবশেষে সবাই আমাকে ব্যবহার করেছে। দোয়া করি সবাই ভালো থাকুক। আমি চলে গেলাম না ফেরার দেশে।
সেই দিন থেকে আর কেউ জীবনের কোনো খবর পায়নি। তার শূন্যতা যেন এক গভীর শিক্ষা হয়ে রইল যা মনে করিয়ে দেয় প্র'ত্যেক মা'নু'ষ ভালোবাসা এবং বোঝাপড়ার অধিকারী।
অবশেষে লেখকের-মৃ-ত্যু
#একাকী_জীবনের_গল্প
#লেখাঃ #জীবন 🙂