18/09/2024                                                                            
                                    
                                                                            
                                            একদিন মাতামুহুরি থেকে শঙ্খে যাওয়ার সময়কার কথা,  বিকেলের প্রথম ভাগ, শরৎের অনবরত নানান রূপ, মাতামুহুরি উপত্যকা জুড়ে জুমের চিরল চিরল ধানচারা  সোনালী রোদে হেমন্তের সুরে তাল মিলিয়ে ঝিরি ঝিরি দুলছে, উপত্যকার গা চিরে একটি সরু মেঠো পথ পূর্বে ছোট ছোট বাক নিয়ে সুউচ্চ,অপার্থিব, অনন্য, চিম্বুকের  অরন্যানীর অন্তরালে রহস্য-কৌতুহল নিয়ে কোনদিকে যেন মিলিয়ে গেল, সবুজের ঘনত্বে মাতাল হয়ে মেঘেদের মিছিল দিকবিদিক ছোটাছুটি করছে, যেদিক সেদিক থেকে থেকে ভারী বর্ষন, উপত্যকা বেয়ে উপরে উঠতেই পশ্চিমের দৃশ্যতে চক্ষু শীতল হয়ে গেল, দক্ষিনে রোলিং তং এর ঘনসবুজ বৃষ্টিস্নাত অরণ্যে মেঘস্পর্শ করে কমলা রঙের সূর্যের আলোর বিশাল একটি টুকরো এসে খুব আলতো করে আছড়ে পড়েছে!! হায়!!কি চমৎকার অনুপম শোভাময় অরণ্য! মনটা ঘুড়ি উড়ানোর বয়সের কিশোরের মত উচ্ছলিত হয়ে উঠলো, চেয়েই রইলাম, ঘোর কেটে আসতেই মনে পড়লো, একটি মাতামুহুরি গ্রাম মাইলদুয়েক পেছনে রেখে এসেছি, চিম্বুকের ঘন অরণ্য ডিঙিয়ে শঙ্খ নামতে হবে বেলা ফুরোবার আগেই। উপত্যকা বেয়ে নিচে নামতেই একটি ঝিড়ি চিম্বুকের  বন থেকে নেমে মাতামুহুরী যাওয়ার পথে, সামনে নিস্তব্ধ ঘন অরণ্যের উপর অন্ধকার নীলাভ আকাশ কাত হয়ে পড়ে আছে, পদযুগল শীতল জল স্পর্শ করতেই মনে হলো একটি কথোপকথন হয়ে গেল তাদের সাথে, মনে মনে তাদের জানিয়ে দিলাম, এ মাতামুহুরি আমার চিরচেনা, আমার মাতামুহুরি। 
ঝিঁড়ি ছেড়ে বনের একটি সরুপথ ধরে উঠতেই চিম্বুক অরণ্যানীর চেহারার প্রথম ঝলক দেখেই ভেতর থেকে অজানা এক সত্বা আবেগেআপ্লুত হয়ে জেগে উঠলো, বনস্পতিগণের নটরাজের ভঙ্গিতে দাড়ানোর ভঙ্গি হৃদয়ের অবশ অনুভূতি গুলোকে জাগিয়ে তুলে স্বস্তি ও প্রানবন্তরূপে রূপান্তর করলো, বনের ভিতর সারাপথ জুড়ে কালচে সবুজ থোকা থোকা বনঝোপ,মাঝেমধ্যে গোলাপী, সাদা, হলুদ ফুলের উপস্থিতি ষষ্ঠইন্দ্রিয়তে গিয়ে টোকা দিচ্ছে,  টিপটিপ বৃষ্টি ঘন অরণ্য বেয়ে বনের মাটি স্পর্শ করতে না পারলে ও পত্রপল্লবের গা বেয়ে বেয়ে সামন্জস্য বজায় রেখে বারিধারা অনবরত নামছে, পশ্চিমে মেঘেদের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে বনের তরু, বনঝোপ, মা বৃক্ষের নিন্মভাগে এসে ছিটকে পড়েছে সূর্যের আলো,ভেজা সবুজে সোনালী আলো মিশে চমৎকার এক পরিবেশ তৈরী হয়ে গেল, মনে হয় চিম্বুকে স্বাগতম বার্তা পেলাম। বনে প্রবেশের আগেই বুঝলাম এ এক অন্য আলো, অন্যঘ্রাণ, অন্য জগত, চেহারা দেখেই আনন্দ-স্বস্তিতে কুপোকাত হৃদয়, না জানি বনে পদচারনের পরের সময়ের অনুভূতি কি তা হবে ভাবতে ভাবতে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলোর একটি উপভোগ করতে অগ্রসর হলাম।