
08/09/2025
🕯সত্যিই কি ভুত বলতে কিছু আছে?🕯
রাত তখন প্রায় বারোটা। আকাশে চাঁদ আধো, চারপাশে অন্ধকারে মোড়া নীরবতা। রাজীবকে গ্রামের বাড়ি পৌঁছাতে হলে পুরনো শ্মশানঘেঁষা পথ দিয়ে যেতে হবে।
লোকেরা বলে, সেই পথে নাকি অদ্ভুত আওয়াজ শোনা যায়—কান্না, হাসি আর ফিসফিসানি।
কিন্তু রাজীব এসবকে গুজব ভেবেই হাঁটা শুরু করল।
হঠাৎ বাতাস থেমে গেল। চারপাশের ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে গেল। রাজীবের মনে হলো কেউ তাকে অনুসরণ করছে। পেছনে তাকিয়ে কিছু না দেখে আবার হাঁটতে লাগল। ঠিক তখনই সামনে দেখা দিল—একটা সাদা শাড়ি পরা মেয়ে। কুয়াশার ভেতরে দাঁড়িয়ে আছে, ধীরে ধীরে হাত নাড়ছে।
রাজীব ভেবেছিল সাহায্যের আবেদন। কিন্তু কাছে যেতেই তার হৃদয় থমকে গেল।
মেয়েটির মুখে কোনো চোখ নেই—দুটি বড় ফাঁকা গর্ত। গর্তের ভেতর থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। তার ঠোঁট ছিঁড়ে ঝুলে আছে, আর পা উল্টো ঘোরানো। হঠাৎ কর্কশ কণ্ঠে সে ফিসফিস করে বলল—
“এত রাতে… এখানে কেন?”
রাজীব ভয়ে পিছিয়ে যেতে গিয়েও দৌড় দিল। কিন্তু সে যতই দ্রুত দৌড়ায়, মেয়েটি তার সামনে এসে হাজির হয়। একবার ডান দিকে, একবার বাঁ দিকে—মনে হলো কুয়াশার ভেতর থেকে অগণিত ছায়া তাকে ঘিরে ফেলছে।
শ্মশানের মাঝখানে পৌঁছাতেই চারপাশ থেকে আওয়াজ উঠল—একসাথে শত শত গলার কান্না। রাজীব দেখল কবরের মাটি ফেটে হাত বের হচ্ছে। কঙ্কালসার দেহ উঠে আসছে, আর তাদের ফাঁপা চোখগুলো তার দিকে তাকিয়ে আছে।
দশ, কুড়ি নয়—অসংখ্য সাদা শাড়ির নারী একসাথে হাসতে হাসতে এগিয়ে এলো। তাদের চুল মাটিতে লুটিয়ে আছে, আর লাল চোখ অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছে।
হঠাৎ রাজীব শুনল নিজের নাম—“রাজীইইভ…”
সে চারপাশে তাকাল—প্রতিটি ভূত একইসাথে তার নাম ডাকছে।
রাজীব দৌড়াতে চেষ্টা করল, কিন্তু মাটি যেন তার পা চেপে ধরেছে। তখন প্রথম মেয়েটি হাওয়ার ঝাপটায় তার সামনে ভেসে এলো। তার মুখ হঠাৎ খুলে গেল—অন্ধকারের গভীর এক গহ্বর, ভেতর থেকে শ্মশানের দগ্ধ দেহের গন্ধ বের হচ্ছে।
রাজীবের শরীর কেঁপে উঠল। হঠাৎ সে অনুভব করল—বরফশীতল আঙুল তার কাঁধ ধরে ফেলেছে।
সে চিৎকার করতে গেল, কিন্তু তার মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হলো না। কুয়াশা ঘন হয়ে তাকে ঢেকে ফেলল।
পরদিন সকালে গ্রামের লোকেরা শ্মশানের কাছে একটা জিনিস পেল—একটা ভেজা জুতা, আর মাটিতে আঁকাবাঁকা হাতের দাগ, যেন কেউ মৃত্যুর আগে মরিয়া হয়ে পালাতে চাইছিল।
কিন্তু রাজীবকে আর কখনো খুঁজে পাওয়া গেল না।
লোকেরা বলে, আজও মধ্যরাতে শ্মশানের রাস্তা দিয়ে গেলে কুয়াশার ভেতর থেকে শোনা যায়—
“বাঁচাও… রাজীব… বাঁচাও…”