09/11/2025
পৃথিবীর সবচেয়ে অপ্রতিরোধ্য প্রাণী কোনটি? বাঘ সিংহ? হাঙর? নাকি অন্য কিছু? উত্তরটি শুনলে চমকে উঠবেন । এটি একটি ক্ষুদ্র, অণুজীবের মতো প্রাণী, যার নাম 'টার্ডিগ্রেড', সাধারণত ‘ওয়াটার বেয়ার’ বা ‘মস পিগলেট’ নামে পরিচিত। এই অণুবীক্ষণিক জীব, যার আকার মাত্র ০.৫ থেকে ১.৫ মিলিমিটার, পৃথিবীর সবচেয়ে চরম পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে! একে আপনি যেখানেই রাখেন না কেন, সেখানেই দিব্যি টিকে থাকবে! কোথায় বাঁচতে পারে না এই টার্ডিগ্রেড? হিমায়িত তুষারময় অ্যান্টার্কটিকা থেকে শুরু করে উত্তপ্ত মরুভূমি, এমনকি মহাশূন্যের জিরো গ্র্যাভিটিতেও টিকে থাকতে পারে!! কি অবাক হচ্ছেন? কিন্তু কীভাবে সম্ভব এমন অসাধারণ ক্ষমতা?
এরা প্রাণীজগৎ বা Animalia রাজ্যের অধীনে পড়লেও, এদের একটি পূর্ণাঙ্গ পর্ব বা Phylum আছে — যার নাম Tardigrada। এই নাম এসেছে ল্যাটিন শব্দ tardus (ধীর) এবং gradus (পদক্ষেপ) থেকে — কারণ এরা আট পায়ে ধীরে ধীরে হাঁটে। বর্তমানে প্রায় ১,৩০০ প্রজাতির টার্ডিগ্রেড চিহ্নিত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এদের দেহে রয়েছে এক অনন্য জৈবিক প্রক্রিয়া, যা এদের অস্বাভাবিক সারভাইভিং করে তোলে । টার্ডিগ্রেডের এই অসাধারণ টিকে থাকার ক্ষমতার পেছনে রয়েছে ‘ক্রিপ্টোবায়োসিস’ নামক একটি বিশেষ অবস্থা — বিশেষ করে অ্যানহাইড্রোবায়োসিস। এই অবস্থায় তারা তাদের শরীরের জল ৯৯% পর্যন্ত হারায়, দেহ সঙ্কুচিত হয়ে একটি শুকনো বলের মতো হয়ে যায়।
এই সময় বিপাক প্রক্রিয়া প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে যায় —হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস, হজম, সব বন্ধ। এরা তৈরি করে বিশেষ প্রোটিন, যেমন Tardigrade Damage Suppressor (TDS) এবং LEA প্রোটিন, যা কোষের ক্ষয় রোধ করে। এই অবস্থায় তারা টিকে থাকতে পারে –২৭২° সেলসিয়াস (পরম শূন্যের কাছাকাছি! ভাবুন একবার! ) থেকে +১৫০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, ৬,০০০ বায়ুমণ্ডল চাপে (মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চেয়েও গভীর), এবং মানুষের তুলনায় ১,০০০ গুণ বেশি বিকিরণেও। ২০০৭ সালে নাসার FOTON-M3 মহাকাশযানে টার্ডিগ্রেড পাঠানো হয়েছিল — সেখানে ১০ দিন ধরে খোলামেলা মহাশূন্যে থেকেও এরা বেঁচে ফিরে এসেছিল এবং ডিম পেড়েছিল!
এরা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই বাস করে — শ্যাওলা-লাইকেনের উপর, সমুদ্রের তলদেশ, হিমবাহের ভিতর, মরুভূমির বালুকণা, গাছের ছাল, এমনকি পাহাড়ের চূড়া ও গুহার অন্ধকারেও। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টার্কটিকার বরফে ৩১ বছর ধরে জমাট বাঁধা একটি টার্ডিগ্রেড পানি দিয়ে পুনর্জাগরিত হয়ে হাঁটতে শুরু করেছিল! তবে, তাদের এই অসাধারণ ক্ষমতা সত্ত্বেও, পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন তাদের বাসস্থানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই এই সুপারপাওয়ার প্রাণীকে রক্ষা করতে আমাদের প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।
লেখা: জাওয়াদ ওসমান,