06/08/2025
হায়াত থাকলে মৃত্যু নেই—
৬ আগষ্ট ২০২৪
(৫ আগষ্ট শেষ হয়ে ৬ আগষ্ট শুরু হয়েছে) রাত প্রায় ২ টার সময়ে আদাবর ছাত্রলীগের অফিসের সামনে দাড়িয়ে আমার শৈশবের কত শত স্মৃতি প্রিয় অফিস টার ধ্বংসাবশেষ রুপ টা দেখছিলাম খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার অফিসটার দিকে তাকিয়ে,এমন সময় একটা ছেলে অফিসের কোন একটা গ্রীল খোলার চেষ্টা করছিলো আমাকে দেখতে পেয়ে চলে গেছে এমন সময় আমার যে বন্ধু আমাকে বিমানবন্দর নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছে (*) ও বলল গাড়ীতে উঠে বসতে গাড়ীতে বসলাম গাড়ী যাওয়ার সময় আদাবর থানার সামনে দেখলাম কিছু লোক জব্দকৃত গাড়ির বিভিন্ন অংশ ও থানার টেবিল চেয়ার বের করছে আমি তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করলাম তারমধ্যে গাড়ী অনেকদুর চলে গিয়েছে তারপর আমার শ্যামলীর অফিসের সামনে আমার বন্ধু কে অনুরোধ করলাম একটু ধীরে যাওয়ার জন্য কারন আর কবে দেখবো জানি না তারপর ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছলাম, রাত ৩ টার আগেই ভিতরে প্রবেশ করলাম আমার ফ্লাইট ছিলো ৬ আগষ্ট ভোর ৫.৩০ মিনিটে আমি বিমানবন্দরে প্রবেশ করেই জানলাম ফ্লাইট ডিলে হয়েছে সকাল ১০.৩০ মিনিটে আমার পরিচিত প্রায় ৫০/৬০ জন তখনও পর্যন্ত বিমানবন্দরে ছিল বিভিন্ন দেশের ফ্লাইটে যাওয়ার জন্য অপেক্ষারত ছিল যত সময় যাচ্ছিল পরিচিত সবাই ফ্লাইটে উঠে যাচ্ছিল এবং যত দেরী হতে থাকে পরিচিত মানুষদের সংখ্যাও বাড়তে থাকলো,(নাম পদবী লিখলাম না) অনেক পরিচিত মানুষদের দেখলাম তারাও যাচ্ছে তাই সাহস বাড়লো যে কোন সমস্যা নেই,
হটাৎ সকাল ৭ টার দিকে জানতে পারলাম ফ্লাইট আবারও ডিলে বিকেল ৫ টায় ছাড়বে, বিমানবন্দরে অনেকেই চিনতে পেরেছিলো আমাকে অনেকে দেখাচ্ছিল আমাকে আমি বুঝতেছিলাম তারপরও অপেক্ষা করছিলাম, ১২ টার পর বোর্ডিং পাশ নিয়ে ইমিগ্রেশনে ঢুকলাম এক এসবি অফিসার কে হয়ত কেউ আগে বলে দিয়েছে আমার বিষয়ে আমি যাওয়ার সাথে সাথে প্রশ্ন করলেন আপনি যেন ছাত্রলীগের কি .?
আমাকে ইমিগ্রেশন রুমে নিয়ে যায় আর আমি ইমিগ্রেশনে যাওয়ার মাত্র ৫/১০ মিনিট আগে পলক ভাই ইমিগ্রেশনে গেছেন, রুমে গিয়ে তাকে দেখতে পাই এবং সেনাবাহিনী তাকে সাথে করে নিয়ে যায়, আমার প্রথম বিদেশ সফর ছিল আমি বুঝতে পারিনি কি হচ্ছে এবং আমাকে নিয়ে অনেক তদন্ত করছিলো একটা সময়ে বললো আমাকে অপেক্ষা করতে আমার পাসপোর্ট রেখে দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে আমি উপরে লাউন্জে গিয়ে অপেক্ষা করছিলাম এবং হাঁটাহাঁটি করছিলাম প্রায় ৩/৪ ঘন্টা পরে আমার বন্ধু যে আমার সাথে ছিলো আমাকে ফোন দিয়ে জানালো সৈকত কেও আটক করেছে,তখন প্রায় ৩.৩০ থেকে বিকেল ৪ টা আমি সৈকত কে সিড়ি তে ডাকলাম কথা হলো, সৈকত এবং আমি ২ জনই আমাদের আটকের কারন জানতে চাইলাম এবং আমাদের সাথে কোন এক মন্ত্রীর পিএস ও ছিলো ইমিগ্রেশন রুমে, আমরা বলতেছিলাম আমাদের যেতে দেওয়া না হলে পাসপোর্ট টা যেন ফেরত দিয়ে দেয়, সৈকত ইমিগ্রেশন রুমের বাহিরে অপেক্ষা করছিলো আমি উপরে ছিলাম আমার ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে বলে আমি নিচে নেমে আসি এটা বলতে যেন আমাকে যেতে দেয়া হয় তখনই দেখতে পাই কিছু মিডিয়া ও এসবি সৈকত কে ঘিরে আছে এবং আমাকে কারা যেন হাত দিয়ে দেখাচ্ছিলো কিছু মিডিয়া আমাকে প্রশ্ন করেছে ছবিও নিয়েছিলো তারপর আমি তাদের এড়িয়ে সামনের দিকে এক দম্পতি (স্বামী-স্ত্রী) ও বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছিলো তাদের পিছনে হেঁটে নিজেকে আড়াল করে ইমিগ্রেশন রুমে চলে যাই,(অনেকেই যোগাযোগ মাধ্যম আমার স্ত্রী বাচ্চা বানানোর চেষ্টা করেছেন তাদের জন্য এই লাইন টা লিখা আমি তখনও অবিবাহিত ছিলাম এখনও অবিবাহিত আছি)
ইমিগ্রেশন রুমে অনেকে ছিলো পরিচিত অপরিচিত যাদের আটক করা হয়েছে তখন ফোন আসলো টিভির স্কলে লিখা যাচ্ছে আমাকে আটক করা হয়েছে,
সৈকত আর আমাকে বলা হলো আপনাদের আমাদের সাথে যেতে হবে আপনারা আটক
তখন আমি কিছু প্রশ্ন করেছিলাম যার উত্তর বিশেষ এক বাহিনীর সে দিতে পারেনি, প্রশ্নগুলো এমন- আমার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ রয়েছে, আমি কি কোন এমপি মন্ত্রী বা সরকারী অর্থ রয়েছে বা আমি কি সরকারী চাকরীজীবি এবং গ্রেফতার করার কোন অধিকার কি এখনও আপনার রয়েছে, আমার নামে কি কোন মামলা আছে আপনাদের কাছে, এই প্রশ্ন গুলো শুনে জনাব খুব রাগ করে বললেন এক পারা দিয়ে ভুরি বের করে ফেলবো, সৈকত রাজি হলেন তাদের সাথে যেতে আমি আর কোন এক মন্ত্রীর পিএস যেতে রাজি না হওয়ায় তারা বললেন এখানে আপনাদের ছাড়া যাবে না মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলবে বললো আমরা নিয়ে যাবো আপনাদের, সৈকতে বুঝানোর চেষ্টা করলাম সৈকত শুধু বললো আমার সাথে চলেন গ্রেফতার হন বেঁচে থাকবেন আমি ওরে বললাম হায়াত থাকলে কেউ মরে না, সৈকতের চলে যাওয়া টা আজও চোখে ভাসে তার কিছুক্ষন পরই আমাদের লাইফ জ্যাকেট ও হেলমেট পড়িয়ে নিয়ে যায় কথা ছিল কিছুদূর নিয়ে নিরাপদ জায়গাতে নামিয়ে দিবে গাড়িটি রেডিসন হয়ে ঘুরছে আমি বললাম আমাকে এখানে নামিয়ে দিতে পারেন বিশেষ এক বাহিনীর একজন মুচকি হেসে বলল এখনও যাওয়ার চিন্তা করছেন .?
গাড়িটি যখন ৩০০ ফিট রোডে প্রবেশ করলো এক অজানা ভয় কাজ করছিলো, অনুরোধ করে বলার পরও গাড়িটি একদম নির্জন জায়গা খুঁজছে বলে ভয় আরো চেপে ধরলো আমি বলছিলাম আমার একহাত বাঁ পা ভেঙে দিন অকেজো করে দিতে পারেন তবুও জানে মারবেন না আমি মায়ের একটাই ছেলে, তারা আমার নামে অনেক মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ বললেও আমার কথা শুনে তারা বুঝতে পারে হয়ত,
এরমধ্যে একদম নির্জন অন্ধকার একটা জায়গায় গিয়ে গাড়ী থামে কোন একটা নদীর পাড়ে, আমার বুজতে আর কিছু বাকী নেই আমি শুধু বললাম আমি আমার মায়ের সাথে এক মিনিট কথা বলতে পারি ভিডিও কলে তারা আমার ফোন নিয়ে নেট অফ করে দিলো আমি অনেক অনুরোধ করে শেষবারের মত একটা ম্যাসেজ দেওয়ার অনুমতি নিলাম—
“তোমরা সবাই ভাল থেকো, আমার জন্য দোয়া করো”
লিখে পাঠালাম, তারপর আমার ফোন নিয়ে গেলো এবং আমি তারমধ্যেই চিৎকারের শব্দ পেলাম মন্ত্রীর পিএস(তখন জানতাম না কার আওয়াজ কিছুদিন আগে বললো সেই ছিলো এখন নিরাপদে এবং সুস্থ হয়েছেন)
(ধন্যবাদ ও আমৃত্যু কৃতজ্ঞতা প্রানের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা আপা কে ও কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম কে আল্লাহ আমার হায়াত দেওয়ার জন্য ফেরেশতা করে দিয়েছিলেন, হয়ত তাদের জন্যই আমাকে গুলি করেনি,এই সংক্রান্ত আরেকদিন লিখবো )
আমাকে গাড়ী থেকে নামানোর পরে আমি (কালিমা শাহাদত পাঠ করছিলাম) সাথে সাথেই অমানুষিক নির্যাতন শুরু করা হয় এবং আমি মূহুর্তের মধ্যেই অজ্ঞান হয়ে যাই এবং আমাকে আবারো তোলা হয় আরেক দফা নির্যাতনের পরে যখন বলছিলো যে মারা গেছে আমার গলায় বুটের চিহ্ন দেখে বুঝতে পারবেন তারা আমার ফোন ২ টা ভেঙ্গে পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে দেয় আমাকে সহ পাশের নদীর পানিতে,
সেভাবে আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়ত মরে যেতাম কিছু ছেলে আসে কিছুক্ষন পরে এবং আমার মুখে লাইট মেরে আমাকে চিনতে পারে( তখন ওরা উত্তরার ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আমার কাছের এক ছোট ভাই কে ফোন করে এবং সে বলে ভাইকে ট্রলারে করে নিয়ে আয়)
ওরা আমাকে ট্রলারে উঠায় এবং মৈনারটেক হসপিটালে প্রথমে নিয়ে যায় সেখানে আমার বন্ধু ও আত্মীয়রা আমাকে ৬ তারিখ রাতে এভার কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যায় আমার জ্ঞান ফিরে ৭ তারিখ আমার সারা শরীরে ক্ষত চিহ্নসহ বুকের ডান পাশের পাঁজরের হার ভেঙ্গে গেছে জানতে পারি আমাকে জরুরী চিকিৎসা প্রদানের পর আমি কয়েকবার কেবিনে হাঁটার চেষ্টা করি এবং একটু হাঁটতে পারার পর ৭ তারিখ রাতে ৮ তারিখ শুরু হয়ে গেছে তখন হসপিটাল থেকে রিলিজ নেই অনেক টা জোর করে (কারন এভারকেয়ার হাসপাতালে তখন প্রচুর বিএনপির কর্মীরা যাতায়াত করছিলো) আমি আরোও জানতে পারি পাশের কেবিনে মতিয়া চৌধুরী আপা ও আমির হোসেন আমু ভাই কে রাখা হয়েছে কেবিনের বাহিরে প্রশাসনের লোক রয়েছে
হসপিটাল এর বাহিরে এক বন্ধু গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছিলো তার সাথে তার বাসায় যাই এবং চিকিৎসা নেই তখন প্রায় ১০ দিন পর নিউজে দেখতে পাই পলক ভাই ও সৈকত কে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে
সুস্থ হতে প্রায় মাস খানেক লেগে গিয়েছিলো,
সেই সময়ে পাশে থাকা সকলের প্রতি ধন্যবাদ,কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসা যতদিন বাচবো,
আমি ছোট থেকেই ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি দীর্ঘদিন কারো কখনও ক্ষতি করিনি বা অর্থের জন্য চরিত্রে দাগ লাগতে দেইনি তা বিশেষকরে আদাবরের প্রতিটি মানুষ স্বাক্ষী, আমি বিশ্বাস করতাম আমার সাথে আল্লাহর রহমত,আমার মায়ের ও মানুষের দোয়া রয়েছে এবং আমি তার প্রমান পেয়েছি বহুবার ❤️
৬ আগষ্ট তৃতীয় বারের মতন জীবন পেয়েছি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এর কাছে কোটি গুন শুকরিয়া,
আল্লাহ না চাইলে, কেউ কাউকে মারতে পারে না ।
Riaz Mahmud Ridoy Bangladesh Students' League Bangladesh Awami League বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ Bangladesh Awami Jubo League চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ Highlight ⊕