25/12/2024
কুমিল্লা প্রতিনিধি।
এক খুন লুকাতে আরো ৬ খুন!
এমভি আল-বাখেরা জাহাজ। ইনসেটে গ্রেফতারকৃত আকাশ মন্ডল ইরফান
দুর্ব্যবহার, বেতন-বোনাসে অনিয়ম এবং কর্মচারীদের প্রতি অবহেলার কারণে জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন আকাশ মন্ডল ইরফান। এ থেকেই প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর কিনে রাখেন ঘুমের ওষুধ। ঘটনার দিন ২২ ডিসেম্বর রাতে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সবাইকে খাইয়ে অচেতন করেন। পরে গভীর রাতে মাস্টারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেন। পরে অন্যরা টের পেয়ে যেতে পারে, এমন আশঙ্কায় একে একে ছয়জনকে হত্যা করেন ইরফান। এরমধ্যে মাস্টারসহ ৭ জনের মৃত্যু হলেও প্রাণে বেঁচে যান জাহাজের সুকানি জুয়েল।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে কুমিল্লায় র্যাব-১১ কুমিল্লা সিপিসি-২ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মেজর সাকিব হোসেন।
এর আগে, মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে ইরফানকে বাগেরহাটের চিতলমারী থেকে গ্রেফতার করা হয়।দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূলহোতা ইরফান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় হাইমচর থানায় মামলা করা হয়েছে। অজ্ঞাতদের আসামি করে মামলাটি করেছেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ।
গ্রেফতারকৃত আকাশ মন্ডল ইরফান বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার জগদীশ মন্ডল ও মনিকা রানীর ছেলে। তিনি পেশায় জাহাজের লস্কর। আট মাস ধরে এমভি-আল বাখেরা জাহাজে চাকরি করছিলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর সাকিব জানান, ইরফান প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জাহাজের মাস্টার গোলাম কিবরিয়ার দুর্ব্যবহার, বেতন-বোনাসে অনিয়ম এবং কর্মচারীদের প্রতি অবহেলা তাকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এ থেকেই আকাশ প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর ঘুমের ওষুধ কিনে রাখেন। ঘটনার দিন ২২ ডিসেম্বর রাতে ইরফান খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সবাইকে খাইয়ে অচেতন করেন। এরপর রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে মাস্টারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেন। পরে অন্যরা টের পেয়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কায় একে একে ছয়জনকে হত্যা করেন তিনি।
ইরফানের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, হত্যাকাণ্ডের পর নিজেই জাহাজ চালিয়ে মাঝিরচরে পৌঁছান তিনি। পরদিন সকালে ট্রলারে করে পালিয়ে যান এবং বাগেরহাটের চিতলমারীতে আত্মগোপন করেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ওই জাহাজে ৮ জন নন, ৯ জন ছিলেন। আর ওই ব্যক্তি হলেন আকাশ মন্ডল ইরফান। কথা বলতে না পারায় লিখে এ তথ্য জানান আহত সুকানি জুয়েল। এ ঘটনায় মামলা করেন জাহাজের মালিক মাহাবুব মুর্শেদ। মামলায় আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা ডাকাত দলকে।
বাদী মামলার এজাহারে আহত ও খুন হওয়া ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করেন। হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তিরা হলেন- মাস্টার গোলাম কিবরিয়া, গ্রিজার মো. সজিবুল ইসলাম, লস্কর মো. মাজেদুল ইসলাম, শেখ সবুজ, সালাউদ্দিন, আমিনুর মুন্সী ও বাবুর্চি রানা কাজী। এছাড়া আহত হয়েছেন সুকানি মো. জুয়েল।
মামলার বাদী মাহবুব মুর্শেদ এজহারে উল্লেখ করেন, জুয়েলের গলাকাটা থাকায় সে কথা বলতে পারেনি। ঘটনার বিবরণ দিতে পারেনি। সে সুস্থ হলে ডাকাতদল দেখলে চিনবে বলে ইশারায় জানায়। তবে জুয়েলের সঙ্গে ইরফান নামে আরেকজন ছিল বলে সে লিখে জানায়। তবে তার ঠিকানা দিতে পারেনি। ঘটনার পর ওই জাহাজ একটি রক্তাক্ত চাইনিজ কুঠার, একটি ফোল্ডিং চাকু, দুটি স্মার্ট ফোন, দুটি বাটন ফোন, একটি মানিব্যাগ, নগদ ৮ হাজার টাকা, একটি বাংলা খাতা, একটি সীল, একটি হেডফোন জব্দ করেছে পুলিশ।
নৌ পুলিশ জানিয়েছে, আহত জুয়েল বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাকে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মোহসীন উদ্দিন জানান, মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহতদের প্রতি পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা ও নৌ-পুলিশের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।