04/09/2025
একটা ইসলামী ব্যাংকে আমার সামান্য কিছু টাকা এফডিআর করা ছিল।
গত ১০-১৫ দিন আগে সেই ব্যাংকে চাকরী করা এক ছোট ভাই ফোন করে জানালো, মার্জিং প্রসেসে যাওয়াতে আপাতত ব্যাংক থেকে টাকা তোলা যাবে না। এবং পরবর্তীতে তুললেও সেই টাকা ইনস্টলমেন্টে তুলতে হবে।
আমার মত এরকম ছাপোষা লক্ষ লক্ষ আমানতদার ইসলামী ব্যাংকগুলোতে টাকা রেখে এক ঘোর অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। কার কারনে?
আপনারা জানেন কি না জানিনা, বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোতে বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংকগুলোতে আমানতদারদের প্রায় সবাই-ই ছাপোষা মানুষ। নিম্ন-মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা শ্রমিক।
ব্যাংক এই গ্রুপগুলো থেকে টাকা নিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়। আপনি আমি জুতার ক্ষয় করে ফেললেও কিন্ত দিবে না, বরং আমাদের কাছ থেকে আরও টাকা নিবে।
অন্যদিকে এই ধনীদের টাকা কখনো দেশের ব্যাংকে থাকে না। এরা আমার আপনার জমানো টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে বিদেশের ব্যাংকে জমা করে।
তাহাজ্জুতি এন্ড কোং এই দেশের ঠিক সেরকম একজন বড় ব্যবসায়ী।
যাকে অবৈধ ক্ষমতাবলে একটি ভয়ংকর উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোর পরিচালক করা হয়েছিল।
সেই পরিচালক হওয়ার সুযোগে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ লুটপাট করে বিদেশে পালিয়েছে এই তাহাজ্জুতি এন্ড কোং।
২০ আগস্ট ২০২৪ এর ডেইলি স্টার ও ৮ অক্টোবর ২০২৪ এর বিজনেস ইন্সপেকশান এ প্রকাশিত তথ্য মতে এরা ইসলামী ব্যাংক থেকেই ঋণের নামে তুলে নিয়েছে প্রায় ৮৮ হাজার কোটি টাকা। যা ব্যাংকটির দেয়া মোট পাবলিক ঋণের প্রায় ৫০%!!!
জনতা ব্যাংকের চট্টগ্রামের একটি শাখা থেকে নিয়েছে ১৩,৪০০ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ৪,২০০ কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ২,০০০ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫৭৪ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে ২৫৭ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ৪,৬১৯ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক থেকে ২,০০০ কোটি, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩,০০০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক থেকে ৫,০০০ কোটি সহ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রায় ২ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে।
কিভাবে নিয়েছে শুনেন তাহলে,
মুরাদ এন্টারপ্রাইজ, একটা নুন আনতে পান্তা ফুরায় মার্কা ঢেউটিন বিক্রেতা দোকান। ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম চাক্তাই শাখা থেকে এই টিন বিক্রেতাকে কোন প্রকার যাচাই না করেই ৮৯০ কোটি টাকা ঋণ পাশ করা হয়।
এক বছর পর আরও ১১০ কোটি টাকা ঋণ পাশ করে ১০০০ কোটির ফিগার পূরণ করে ব্যাংক। পরবর্তীতে কাগজ পত্র যাচাই করে দেখা যায় এইটা তাহাজ্জুতি এন্ড কোং-এর শ্যাডো দোকান।
এইভাবে ৪৭০ টা শেল কোম্পানি খুলে দুনিয়ার ৯ টা দেশে ২ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা পাচার করে দেয় এই এক তাহাজ্জুতি এন্ড কোং। যার প্রতিটা পয়সা আপনার আমার ঘাম ঝরার বিনিময়ে ব্যাংকে জমা হয়েছিল।
তাহাজ্জুতি এন্ড কোং এই টাকা পাচার করে সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, UAE, জার্সি, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস-এ হোটেল, ভিলা, ও বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে।
ওয়েট ২ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা মানে আসলে কত টাকা? কত?
ধরে নেন একজন মানুষ মাসে ৩০,০০০ টাকা আয় করে। তাহলে ২ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা আয় করতে ওনার কত বছর লাগবে?
বা, ধরেন আরেকজন মানুষ বড় অফিসার। মাসে ১ লক্ষ টাকা মানে সিক্স ডিজিট স্যালারী পায়। তো ওনার কত বছর লাগবে ২ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা আয় করতে?
এদের কারোরই এক জনম না, লক্ষ জনমে জন্ম নিয়েও ২ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব না।
৩০,০০০ টাকা আয় করা মানুষটার ৫৫ লক্ষ ৫৫ হাজার ৫৫৫ বছর লাগবে আর ১ লক্ষ টাকা আয় করা মানুষটা ১৬ হাজার ৬৬৬ বছর লেগে যাবে এই টাকা আয় করতে।
আপনি যদি জাস্ট কিচ্ছু না করে বসে বসে প্রতিদিন ১০ কোটি টাকা খরচ করতে থাকেন, তাও আপনার ৬০ বছর লেগে যাবে শেষ করতে।
আপনি বুঝতেছেন তাহাজ্জুতি এন্ড কোং আমাদের ঠিক কত টাকা নিয়ে চলে গেছে?
এই যে শুনতেছেন তাহাজ্জুতি এন্ড কোং দিল্লীতে নাকি শেখ হাসিনাকে ২৫০০ কোটি দিসে এই টাকা ২ লক্ষ ২৩ হাজার কোটি টাকার ৯০ ভাগের মাত্র ১ ভাগ।
ওদের হাতে এখনও ৮৯ ভাগ আছে। আর এতো গেল এক তাহাজ্জুতি এন্ড কোং। এরকম আরও বহু তাহাজ্জুতি এন্ড কোং দিয়ে গত ১৭ বছরে আমাদের নিঃস্ব করে লীগ এখন দিল্লীতে হিজরত করছে।
সেখানে বসে কোটি কোটি টাকা খরচ করে আবারও আমাদের লুটে খাওয়ার পরিকল্পনা করছে তারা, আর এখানে আমরা ক্ষমতার আশায় এক দল আরেক দলের মাথা খাচ্ছি। ©
বি:দ্র: একটা পুরো দেশকে খেয়ে দেওয়ার জন্য এরকম একটা পীরই যথেষ্ট।
Copied from Yeasin Reza...