02/10/2024
জাতির আশা আকাঙ্খার প্রতিফল ঘটে শিক্ষা ও সঠিক পাঠক্রম অনুসরণের মাধ্যমে। আগামী ১০০ বছর পরে আপনি যেমন জাতি দেখতে চান তা নিষ্ঠার সাথে আগে থেকেই নির্ধারণ করা সম্ভব যদি আপনার পরিকল্পনা গুছানো থাকে। শিক্ষা যদি টেকসই হয় সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হয় তাহলে দেশপ্রেমিক সম্প্রদায় গড়ে উঠে এবং তারাই আগত-অনাগত অনেক সমস্যা চিহ্নিত করার মাধ্যমে সমাধানে ভূমিকা রাখেন। সুশিক্ষা আর শিক্ষিত জনবল বৈষম্য-অত্যাচারের মাঝখানে মজবুত দেয়াল তৈরী করে। তাই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈতিকতার সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশপ্রেমিক জাতিগোষ্ঠি বিনির্মানে টেকসই ও সর্বগ্রহণযোগ্য শিক্ষাপদ্ধতি প্রণয়নের ধারা অব্যাহত রাখা সমিচীন বলে মনে করি।
বিগত সময়ে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত বিভিন্ন টানাপোড়নে আমাদের বিভিন্ন সেক্টরে দুর্ভোগের অন্ত ছিলনা। শিক্ষাকে সার্বজনিন করার অজুহাতে জনদুর্ভোগের একটি অন্যতম মাধ্যম ও ব্যায়বহুল একটি খাতে পরিণত করা হয়েছিল। মৌলিক চাহিদা পূরণে যেখানে জনগণ হিমশিম খাচ্ছিল সেখানে শিক্ষার উর্দ্ধমুখী ব্যায় ক্রমেই মানুষকে করে তুলেছিল আরো শোকাতুর।
সমাজে ভিন্ন ভিন্ন পেশা শ্রেনীর মানুষ বসবাস করে। সকলের আয় সমান না হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যায় প্রায় সমান করা হয়েছিল যার দরুন সবাই তা পূরণ করতে পারেনি। কিন্তু সন্তানদের নিয়ে সব শ্রেনী পেশার মানুষের সমান আকাঙ্খা। সবাই চায় তার সন্তান মানুষের মতো মানুষ হোক, সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুক। অথচ এই আকাঙ্খা পূরণের জন্য আয়ের একটা বিরাট অংশ ব্যায় করতে হয়েছিল বিভিন্ন গেজেট তৈরীর উপকরণ, মোবাইল ক্রয়, ইন্টারনেট সংযোগ, ওয়াইফাই সংযোগ ইত্যাদির আয়োজনযজ্ঞে। সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণ শিক্ষার এই ব্যায়ভার বহন করতে পারবে কি না পারবে তা নিয়ে নীতি নির্ধারক মহলে কোন জল্পনা কল্পনা দৃশ্যমান ছিল না। যার ফলে অভিভাবক মহলে চাপাক্ষোভ গভীর হতে থাকে আর গেজেট তৈরী ও ইন্টারনেট ব্যবহারের অজুহাতে চোখের সামনেই সন্তানদের মেধার অপব্যবহার দেখতে থাকে অসহায় অভিভাবক মহল। একই সাথে পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসের বিকৃতি, নৈতিক শিক্ষার অনুপস্থিতি অভিভাবক ও শিক্ষার্থী মহলে আরো দুশ্চিন্তার রেখা তৈরী করেছিল।
এমনই এক মূহুর্তে দেশ ও জাতির ক্রান্তি লগ্নে হাজারো ছাত্র-জনতার আত্নত্যাগ আর রক্তদানের ইতিহাস গড়ে উদিত হলো নতুন সূর্যোদয়। জাতি আশায় বুক বাঁধলো এই ভেবে যে, সকল বৈষম্যের জানাযা সম্পন্ন হয়ে কবর রচিত হবে। সকল সেক্টর জনবান্ধব ও জনতার আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন প্রকাশ করবে এমনটাই আশা করা হচ্ছিল। যার মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্থাও বাদ যাবে না। সকলের জন্য সহজ শিক্ষা গ্রহণ পদ্ধতি প্রণয়ন, নৈতিক শিক্ষার চর্চা ও বাস্তবায়ন, শিক্ষার্থীদেরকে বই মুখী ও অনুশীলনমুখী করা, শিক্ষার উপকরণসমূহের ক্রয়মূল্য হাতের নাগালে রাখা, শিক্ষায় সঠিক ইতিহাস ঐহিহ্যের ভাবধারা প্রণয়ন ও চালু করার মতো বিষয়গুলোকে শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত করা হবে মর্মে জনসাধারণ আশায় বুক বেধেঁছে। ইতোমধ্যে জনবান্ধব সরকার এলক্ষ্যে তার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেও। কমিটি গঠন করা হয়েছে যদিও উক্ত কিমিটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আমরা সাধারণ জনগণ ও সন্তানদের অভিভাবকগণ সরকারের কাছে প্রত্যাশা করবো সকলের মতামতের ভিত্তিতে গ্রহণযোগ্য শিক্ষা কমিটি গঠন পূর্বক কাজে হাতে যেন দেয়া হয়। সরকারের কাছে বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন দাবী-চাওয়া-পাওয়া আছে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় সবচেয়ে বড় দাবী হওয়া উচিত উপযুক্ত শিক্ষা পদ্ধতি চালু করা। এলক্ষ্যে সকলের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। গুরুত্ব দিতে হবে নৈতিক, ধর্মীয় মহল, ইতিহাসবিদগণের মতামতকে।
তা যা হোক না কেন, শিক্ষা যেন হয় সহজলভ্য আর এতে যেন থাকে নৈতিকতার অনুশীলন।
মোঃ খুরশীদ আলম
০২/১০/২০২৪ ঈসায়ী।