08/06/2025
#অন্তু
পর্বঃ০১
কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে এক ধারে ডেকে চলছে রাফিয়া, আজ তার শেষ পরীক্ষা ছিল সেই খুশিতে ধেই ধেই করে নেচে চলছে , মনের সুখে গুন গুনিয় গান গাইছে " স্বপ্ন আমার যাব শহর,আপার কাছে" সে উঠনে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো আগে ঘরে যাবে নাকি রান্না ঘরে। রান্না ঘর থেকে হাঁড়ি পাতিলের আওয়াজ ভেসে আসে, সে সোজা রান্না ঘরের সামনে আসে দরজা থেকে উঁকি মারে। দেখতে পায় তার মা রাঁধছে মাটির চুলায়, সে হেসে হেসে নিজের খুশির খবর দিল " আম্মা,আম্মা আমার পরীক্ষা শেষ "
" তোহ্" তিনি আবার বলেন " বিয়া দিয়া দেমু"
রাফিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে রান্নাঘরের ভিতরে আসে " কার লগে আম্মা? পোলা দেখতে সুন্দর? " রোকসানা এবার মাথা তুলে মেয়ের দিকে তাকান " তোর কি শরম বরম বলতে কিছু নাই" ভ্রু কুঁচকে রাফিয়া অবুঝের প্রশ্ন
" কেন? আমি কি করছি?" মায়ের তাকানোর ধরন দেখে রাফিয়া ভেবে নেয় বিয়ে বোধহয় ক্যানসেল, তাহলে তো তাকে শহর যেতে হবে, সে এবার শহর যাবেই যাবে " আম্মা আমি আপার কাছে যামু" 'আপা' শব্দ শুনা মাত্রই রোকসানা বেগম ছ্যাঁৎ করে উঠেন " কেন? তুই কেন ওর কাছে যাবি? "
" পরীক্ষা তো শেষ এখন তো আমার বেড়ানো সময় "
" কোথাও যাওয়া লাগবো না, বাড়িতেই বসে থাক,, বের হ এখান থেকে। নাইলে...." রান্না করার জন্য যে লাড়কি এনেছিলেন সেখান থেকে একটা নিলেন রাফিয়া মায়ের হাতে লাঠি দেখে এক লাফে বেরিয়ে গেল। রোকসানা বেগম সেই ফজর ওয়াক্ত উঠে কাজে লেগেছেন এখনো অনেক কাজ পড়ে আছে অথচ তার ছেলের বউ একবার ও উঁকি দেয়নি সারাদিন শুধু রূপচর্চা আর ছেলে কে নিয়ে পরে থাকে। এমনিতে ওনি রেগে ছিলেন রাফিয়া এসে আগুনে ঘি ঢেলে দিল।
সাধারণত এশার নামাজের পরে গ্রামের লোকেরা খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে যায় এখানে অল্প রাতকে মনে হয় গভীর রাত
শেখ বাড়ির মেজ ছেলের ঘরের সকলে খেতে বসে শুধু আসেনি রাফিয়া। সে কাঁথার নিচে নিজেকে আড়াল করে রাখে অভিমান জমিয়েছে বাবার উপর, পরীক্ষা শেষ হয়েছে সপ্তাহ খানেক হয় অথচ বাবা এখনো তাকে আপার কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। আব্বাস শেখ টেবিলে বসে দেখেন ছেলে, ছেলের বউ, নাতি এসেছে খেতে কিন্তু মেয়ে আজও আসেনি খেতে। কয়েক দিন যাবত তাদের সাথে খেতে বসছে না রাফিয়া, তিনি স্বস্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন " কি গো মনিরের মা মেয়ে কই? খেতে আসছে না কেন?"
রোকসানা বেগমের মুখে বিরক্তের ছাপ স্পষ্ট " সেই কথা নিয়া পইড়া আছে মাইয়া,, ইয়ানার কাছে যাইবো "
আব্বাস শেখ নিজেই মেয়ের ঘরে গেলেন, মেয়ের মুখ থেকে কাঁথা সরিয়ে দেখেন ঘুমিয়ে যায়নি তো, রাফিয়া বাবাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বাবা মেয়ের অভিমান বুঝতে পারে " রাফিয়া, মা আমার রাতে ভাত না খাইলে অসুস্থ হয়ে যাবি"
সে মুখ ফুলিয়ে রাখে " আব্বা আমি ভাত খামু না"
আব্বাস শেখ মেয়েকে বুঝান সামার্থ্য থাকলেও সব আবধার পুরন করা যায় না "দেখ মা ওইটা তোর আপার শশুর বাড়ি চাইলেই তো যখন তখন যাওয়া যায় না,, যতক্ষণ না ওনারা দাওয়াত দিবেন"
রাফিয়া তার বাবার বলা কথাটা কিছুক্ষণ ভাবে। মুখে হাসি জুলিয়ে
" আব্বা যদি ওনারা দাওয়াত দেয় তাহলে যেতে দিবেন?"
আব্বাস শেখ মেয়েকে খুশি করার জন্য হ্যাঁ বলে দেন।
পরের দিন দুপুর বেলা আশ্চর্য কান্ড ঘটে, ফরহাদ সিকদার কল করে জানান ইয়ানার নাকি রাফিয়া কে দেখতে ইচ্ছে করছে সে মন খারাপ করে বসে আছে, তাই তিনি রাফিয়া কে তাদের বাড়ি যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আব্বাস শেখ নির্বাক হয়ে উঠনের পেয়ারা গাছের নিচে বসে। ওনার বিষয়টা খারাপ লাগে কারন ইয়ানার দেখতে ইচ্ছে হয়েছে তিনি তাকে না পাঠিয়ে রাফিয়া কে যেতে বললেন। অন্য দিকে তার মেয়ে নেচে পাড়া প্রতিবেশীদের খবর দিতে গেছে সে শহর যাবে। সব শেষে গেল দাদির কাছে, ওনার তিন ছেলে ছিল, বড় ছেলে মারা যাওয়ার পর দুছেলের মধ্যে ঠেলাঠেলি লেগে যায় তার থাকা নিয়ে। তাই তারা দুজন মিলে দুই রুমের একটা ঘর তুলে দিয়েছে তিনি সেই ঘরে একা থাকেন অবশ্য ইয়ানা শহর যাওয়ার আগে দাদির সাথে থাকতো,,, এখন ওনাকে একা থাকতে হয়। তিনি নামাজ পরে দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাফিয়া দাদি দাদি ডেকে ওনার হাত ধরে সোজা বসিয়ে দিলো বয়স্ক মহিলা হঠাৎ করে এভাবে ঘুম থেকে ওঠানোর কারণে শরীর অনেক খারাপ লাগা শুরু হয় চোখে ঘোলাটে দেখছেন তিনি । রাফিয়া নিজের খুশির খবর দিতে এসেছে
" দাদি আমি যাচ্ছি আপার কাছে "
তিনি তেতে উঠেন
" কেন? তুই কেন যাবি আমার নাতনির কাছে?"
রাফিয়া গায়ের ওড়নাটা দুহাত নিয়ে ঘুড়ছে
" আরে দাদি বেড়াতে যামু"
দাদি সন্দিহান হয়ে " বেড়াইতে যাবি নাকি ব্যা'ডা খুজতে যাবি"
দাদির কথা শুনে রাফিয়ার ঘুড়া বন্ধ হয়ে যায়
" দাদি তুমি আমাকে এতো হিংসা করো কেন? তোমার নাতনির কাছে যাইতাছি এইজন্য? "
" হিংসা করি না ভয় করি যদি আবার আমার পাখিটার জীবন ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেছ "
" দাদি" রাফিয়া আর একমুহূর্তও থাকে না বেরিয়ে আসে সেখান থেকে বরাবরই দাদি তাকে কম ভালোবাসে কিন্তু কেন সে বুঝে উঠতে পারে না,কি এমন দোষ করেছে সে খুঁজে পায় না
পরেরদিন সকালেই রওনা দিলো মনির ভাইয়ের সাথে। তাকে রেলস্টেশনে ইয়ানার কাছে ছেড়ে অন্য কোনো কাজের উদ্দেশ্যে যাবেন মনির ভাই। এতোদিন শহরে যাওয়ার জন্য নাচলো রাফিয়া কিন্তু এখন এই গ্রাম তার প্রকৃতি ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। সে তো বাবা মাকে ছাড়া এক রাতও ছোট চাচার ঘরেও থাকেনি এত দূরে কি করে থাকবে। মন খারাপ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শহরের উদ্দেশ্যে। ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণ পরই তার মন খারাপ ধুয়ে মুচে গেলো। সে এতটা চঞ্চল যে আশেপাশে বসে থাকা অচেনা মানুষ গুলোকেও মাতিয়ে রেখেছে। মনির তাকে বারংবার নিষেধ করে যাচ্ছে এতো দুষ্টুমি না করার জন্য কে শোনে কার কথা। পুরোটা সময় সে বকবক করে আসে।
ইয়ানা ইউনিভার্সিটির ক্লাস শেষ করে বাইরে এসে দেখে ক্লান্ত মুখে হাসি টেনে কবির দাঁড়িয়ে। সে মনে মনে খুশি হলেও সামনাসামনি অবাক হওয়ার চেষ্টা করে।
" আপনি এখানে?"
" তোমার সাথে সময় কাটানোর চান্স পেয়েছি তাই চলে এসেছি। "
" খালি বাহানা খুজেন তাইনা "
গাড়ির ভিতরে বসে দুজন,, কবির গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছে না দেখে ইয়ানা ডান ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করে " কি হয়েছে? আপনি কি বেশি ক্লান্ত? ক্লান্ত হলে ড্রাইবার নিয়ে আসেননি কেন? আমি কিন্তু ড্রাইব করতে পারবো না,, আমি এখনো ঠিকঠাক করে চালাতে পারি না"
ইয়ানার বিরতিহীন কথা গুলো শুনে কবির হাসে।
" হয়তো একটা উম্মা দেও নাহলে জড়িয়ে ধরো দেখবে আমার সকল ক্লান্তি চলে যাবে"
সে জানে ইয়ানা একটাও করবে না সে তাকে লজ্জা দেওয়ার জন্য বলে। ইয়ানার গাল দুটো লাল হয়ে যায় সে নিজের লজ্জা ডাকার অযথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সে কবির কে মনে করিয়ে দিতে
" ও হ্যালো মিস্টার আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি। আর আপনি খুব ভালো করে জানেন দুটোর একটাও আমি করবো না"
" আজ না হয় কাল তো হবেই"
" চলুন তো আপনি"
মনির লোকেশন অনুযায়ী রাফিয়াকে নিয়ে যায়, গিয়ে দেখতে পায় ফরমাল ড্রেসআপে সানগ্লাস পরে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে কবির তাকে দেখে তারা দুজন এগিয়ে যায় গাড়ির কাছে। রাফিয়া কবির কে দেখে মনে মনে প্রশংসা করে কুল পাচ্ছে না এক পযার্য়ে সে ঠুস করে বলে ফেলে
" ওয়াও,,, কবির ভাই আপনি কত্তো হ্যান্ডসামমম"
কবির রাফিয়ার কথায় কি জবাব দিবে বুঝতে পারে না বিনিময়ে শুধু মুচকি হাসলো। মনির রাফিয়াকে চোখ রাঙায়। রাফিয়া কথা ঘোরানো চেষ্টা করে
" আচ্ছা আপা কই? "
" তোমার আপা গাড়ির ভেতরে "
" বের হতে বলেন"
" আসলে ও ঘুমাচ্ছে ক্লান্ত অনেক"
রাফিয়া গাড়ির দড়জা খুলে আপা বলে চিৎকার করে উঠে। ইয়ানা ধরফরিয়ে উঠে, সে ভয় পায়। রাফিয়ার কাজে কবির বিরক্ত হয়। কয়েকটা কথা শুনাতে ইচ্ছে করল কিন্তু কিছু বলল না ইয়ানার জন্য। মনির রাফিয়াকে ইয়ানার কাছে দিয়ে চলে গেল। তবে বিশেষ ভাবে বলে গেল" ইয়ানা রাফিয়ার খেয়াল রাখবি" তার এক মাত্র আদরের বোন বলে কথা।
রাফিয়ার কাজে আবারো বিরক্ত হলো কবির। সে ইয়ানাকে উঠিয়ে পিছনে পাঠিয়ে দিলো নিজে কবিরের পাশে বসে পড়ে কবির ড্রাইবিং সিটে বসে। বোকা মেয়ে ইয়ানা কিছুই বললো না সেটা ভেবে মুখ ফুলিয়ে রেখেছে কবির।
চলবে......…
ভুলত্রুটির জন্য সরি 😊। কপি রাইট করা কঠিন ভাবে নিষিদ্ধ 🚫