25/02/2025
খাঁচার বন্দি মেছো বিড়াল: আমাদের মনুষ্যত্ব কোথায়?
বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে গেলে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেখা মেলে। সবুজ পাহাড়, মেঘের আনাগোনা আর স্বচ্ছ জলের লেক—সব মিলিয়ে এক অনন্য পরিবেশ। তবে এই সৌন্দর্যের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক করুণ চিত্র, যা হয়তো আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়, অথবা আমরাই ইচ্ছাকৃতভাবে তা উপেক্ষা করি।
একটি মেছো বিড়াল, খাঁচায় বন্দি। পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য তাকে আটকে রাখা হয়েছে সেখানে। দিনের পর দিন অসংখ্য মানুষ আসে, বিড়ালটিকে দেখে, ছবি তোলে, কেউ কেউ একটু আগ্রহ বাড়িয়ে খাঁচার গা ঘেঁষে দাঁড়ায়। কিন্তু কিছু মানুষ কেবল দেখেই সন্তুষ্ট হয় না। তারা বিড়ালটিকে উত্যক্ত করে, তার কষ্ট দেখেই যেন আনন্দ পায়। কেউ খাঁচায় ঢিল ছোড়ে, কেউবা লাঠি দিয়ে খোঁচা দেয়, যেন সে একটু নড়ে চড়ে ওঠে, কষ্টে চিৎকার করে। এক সময় হয়তো বিড়ালটি চেষ্টা করত পালানোর, চেষ্টা করত প্রতিবাদ করার, কিন্তু এখন আর করে না। অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে। খাঁচার এক কোণায় চুপটি করে বসে থাকে, তার ক্লান্ত চোখ দুটো যেন আমাদের সভ্যতার নগ্ন সত্যটা দেখিয়ে দেয়।
এই খাঁচার নিচে জমে থাকা ইটের স্তুপই বলে দেয়, কতবার সে এভাবে নৃশংসতার শিকার হয়েছে। একবার নয়, দুইবার নয়, প্রতিদিন!
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এই বিড়ালটিকে এখানে বন্দি করে রাখা হয়েছে? কীভাবে তার যত্ন নেওয়া হচ্ছে? আদৌ কি তাকে সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত যত্ন দেওয়া হয়? নাকি সে কেবল পর্যটকদের আনন্দের জন্য বন্দি এক জীব, যার অনুভূতি, কষ্টের কোনো মূল্য আমাদের কাছে নেই?
আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি, খাঁচার ভেতরের এই প্রাণীগুলো আমাদের বিনোদনের জন্য নয়? তারা কোনো শোপিস নয়, সার্কাসের জোকারও নয়, যাদের আমরা খেয়ালখুশি মতো কষ্ট দেবো আর মজা নেবো! তাদেরও অনুভূতি আছে, কষ্ট আছে, ভয় আছে। তবুও আমরা এসব ভাবি না, ভাবতে চাই না। আমরা কেবল আনন্দ চাই, বিনোদন চাই, আর সে আনন্দ পেতে যদি একটা প্রাণীকে বন্দি করে কষ্ট দিতে হয়, তাতেও যেন আমাদের কোনো দ্বিধা নেই!
এই ঘটনা শুধু বান্দরবানের মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ নয়, দেশের বহু পর্যটন কেন্দ্রে এভাবেই বন্যপ্রাণীদের বন্দি করে রাখা হয়। অথচ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, বন্যপ্রাণী ধরা, বন্দি করে রাখা বা কষ্ট দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা না করেই বছরের পর বছর এমন অন্যায় চলে আসছে।
কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রশ্ন রইল—এই মেছো বিড়ালটি কেন বন্দি? তাকে কি সঠিক যত্ন দেওয়া হচ্ছে? আদৌ কি এই বন্দিদশা তার জন্য উপযুক্ত? কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন আমাদের নিজেদের প্রতি—আমরা মানুষ হব কবে?
ছবি তুলেছেন: Syeda Anannya Faria