20/08/2025
অনন্য প্রতিভাদীপ্ত ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ
মহাথেরোর আজ ৭৫তম জন্মবার্ষিকী
=============
প্রদীপ্ত মহীমায় বুদ্ধগগণে প্রজ্ঞার আলোকচ্ছটা
শাসন রক্ষিত ভিক্ষু
তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ অনন্যাসাধারণ বৌদ্ধ পন্ডিত থেরবাদ বৌদ্ধধর্মের সাম্যবাদী চেতনায় অনুজাত মোদিয় ধর্মপিতা ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরোর ৭৫তম জন্ম বার্ষিকীতে তাঁর ত্যাগময় সাংঘিক জীবনের প্রতি বিণম্রশ্রদ্ধা ও নতশীরে বন্দনা জ্ঞাপন করতেছি।
বাংলা ও ইংরেজীতে বেশ কিছু গ্রন্থের লেখক ও অনুবাদক, বহু গুণী শিষ্যের জন্মদাতা, শ্রদ্ধেয় ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো।
এপার-ওপার বাংলার বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘের মধ্যে জাতীয় ও অন্তর্জাতিক ভাবে পরিচিত সৃজনশীল প্রতিভার এক উজ্জ্বল সাংঘিক ব্যক্তিত্ব ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো । তিনি অতি স্বল্প সময়ে ত্রিপিটকের বিভিন্ন খন্ডের বঙ্গানুবাদ সহ বিভিন্ন সাময়িকী স্মরনিকার বহু মূল্যবান প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে বিদগ্ধ পন্ডিতমন্ডলী ও সুধী সমাজে ইতিমধ্যে সমাদৃত হয়েছেন।
যে জনপদে তিনি পিতা-মাতার কোল আলোকিত করে ধরাধামে ভূমিষ্ট , বেড়ে ওঠা, শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং বামপন্থী উদার প্রগতিশীল শোষণমুক্ত ও দারিদ্রমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার নীতি আদর্শ, যে গ্রামের মাটি,পানি, প্রকৃতি ও উত্তরসুরীদের হতে পেয়েছেন সেই গ্রামটি বিশ্বনন্দিত জোবরা গ্রাম। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস এর হাত ধরে প্রতিষ্টিত গ্রমীন ব্যাংক’র জন্মজনপদ হচ্ছে জোবরা পাড়া এই গ্রাম। তারই সীমারেখায় প্রতিষ্ঠিত পাহাড়, সবুজ আর নৈসর্গিক পরিবেশে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর শিক্ষাক্ষেত্রে শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ।
কালে কালে এই পবিত্র ধরাধামে কিছু অসাধারণ পুণ্যপুরুষ জন্ম নেয় যাঁদের প্রজ্ঞা, মেধা, দূরর্দশী চিন্তা- চেতনা ও আত্মত্যাগের মহিমায় র্ধম, সমাজ, জাতি সমৃদ্ধ হয় এবং সঠিক দিক নির্দেশনা লাভ করতে এমনি আলোর মশাল নিয়ে বিংশ শতাব্দিতে বাঙালি বৌদ্ধ সমাজে যে সকল পূণ্য মহাপুরুষ জন্ম গ্রহন করেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন আর্ন্তজাতিক খ্যাতি সম্পন্ন বৌদ্ধ সংঘমনিষা, ত্রিপিটক অনুবাদকের অন্যতম পুরোধা, বাংলাদেশে প্রথম ভিক্ষু প্রশিক্ষন ও সাধনা কেন্দ্র, ফ্রান্স বুদ্ধগয়া প্রজ্ঞা বিহার ধ্যান কেন্দ্র, আমেরিকার ক্যালিফোর্ণিয়ার লজ এঞ্জেলেজ প্রজ্ঞা বিহার সহ জাতীয়- আর্ন্তজাতিক বহু প্রতিষ্ঠানের রূপকার, র্বতমান সুদূর ফ্রান্সে ধ্যান প্রশক্ষিণ ও সর্দ্ধম প্রচারে নিরত দীপ্ত চেতনার অধিকারী বৌদ্ধ গবেষক, সৃজনশীল প্রতিভার এক উজ্জ্বল আলোক বর্তিকা বাংলা ও ইংরেজীতে বহু গ্রন্থের লেখক ও অনুবাদক অধ্যাপক ভদন্ত-প্রজ্ঞাবংশ মহাথেরো।
ভদন্ত প্রজ্ঞাবংশ একটি নাম নয়, এক সুবিশাল ইতিহাস এবং কালের প্রতিধ্বনি বঙ্গীয় বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘে জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে সু-পরচিত সৃজনশীল প্রতিভার এক অনন্য উজ্জ্বল সাংঘিক ব্যক্তিত্ব।
তিনি স্বল্পতম সময়ে বৌদ্ধদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ মহান ত্রিপিটক এর বিভিন্ন খন্ডের সুক্ষভাবে বঙ্গানুবাদ সহ বিভিন্ন সাময়িকী, স্মরণিকায় মহা মূল্যবান প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে বিদগ্ধ পন্ডিত মন্ডলী ও সুধী সমাজে ইতিমধ্যে সমাদৃত হয়েছেন। ওনার জন্ম না হলে বর্তমান বাংলার ভূমিতে সম্পূর্ন ত্রিপিটক খন্ড অনুবাদ হত কিনা সন্দেহ।
জাপানের নাগোয়া মহানগরীর প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ আই চি গাকুইন বিশ্ববিদ্যালয়,
দক্ষিণ কোরিয়ার ওন-গাং বিশ্ববিদ্যালয়, জার্মানির শতবর্ষীয় হামর্বুগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বৌদ্ধর্ধম ও বৌদ্ধ দর্শন বিষয়ক ভাষণদান সহ ১৯৯০খৃস্টাব্দ হতে অধ্যাবধি বিশ্বের বিভিন্নি দেশে আন্তর্জাতিক সভা সম্মলনে তিনি এযাবত সক্রিয় অংশগ্রহন করে আসছনে।
১৯৫০ খৃষ্টাব্দে ২০শে আগষ্ট, বৃহস্পতিবার চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জোবরা বৌদ্ধ পল্লীতে এই পুণ্যময় প্রতিভার জন্ম। পিতা যতীন্দ্র বড়ুয়া এবং মাতা রাজলক্ষ্ণী বড়ুয়ার ৯ সন্তানের মধ্যে তিনি সপ্তম যার গৃহী নাম সুব্রত বড়ুয়া।
গৃহী জীবনে তিনি চট্রগ্রামে পলিটেকনিকেল কলেজে অধ্যয়নকালে ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে কক্সবাজার রাংকুট বনাশ্রমের তৎকালীন অধ্যক্ষ বিদর্নাচার্য্য ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথেরো’র অনুপ্রেরনায় প্রব্রজ্যা জীবন গ্রহন করেন। তাঁরই শিক্ষা ও দীক্ষায় ১৯৭৩ খৃষ্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারী বৃহ্স্পতিবার দু'শতাব্দীর প্রাচীন কদলপুর সুর্ধমানন্দ বিহারে দানবীর হেমেন্দু বিকাশ বড়ুয়া কর্তৃক আয়োজিত পরিবাসব্রতে উপমহাদেশের প্রখ্যাত পন্ডিত ও বিদগ্ধ সংঘের উপস্থিতিতে পবিত্র উপসম্পদা গ্রহন করেন।
তিনি ১৯৮১ খৃষ্টাব্দে বাংলা সাহিত্যে বি,এ (অর্নাস)সহ এম,এ দ্বিতীয় শ্রেণীতে উর্ওীণ হন। ১৯৯৪ খৃস্টাব্দে পালি সাহিত্যে এম,এ-প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৮১ হতে ১৯৮৫ খৃষ্টাব্দে শ্রীলংকার বিখ্যাত বিদ্যাপীঠ মহরাগামা ভিক্ষু ট্রেনিং সেন্টারে সাফল্যের সাথে চার বছররে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সমাপ্তির পর স্বদেশে প্রত্যার্বতন করনে।
১৯৭৬ খৃস্টাব্দে তিনি ত্রয়োদশ সংঘরাজ ভদন্ত জ্ঞানশ্রী মহাথেরো প্রমূখ হিতৈষীদের নিয়ে
সংঘরাজ ভিক্ষু মহামণ্ডল র্ধমীয় শিক্ষা পরিষদ গঠন করনে।
১৯৮৭ খৃস্টাব্দ হতে তিনি ক্রমান্বয়ে রাউজান থানার অর্ন্তগত কদলপুর গ্রামে প্রয়াত দানবীর হেমেন্দু বিকাশ বড়ুয়ার সহায়তায় বাংলাদশে ভিক্ষু প্রশিক্ষণ ও সাধনা কেন্দ্র,
বাংলাদেশ শাসন সবেক সংঘ পালি কলজে,
প্যারীমোহণ-সুমনতিসস দু:স্থ ও অনাথালয়,
গৌরচন্দ্র -যতীন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়
চট্রগ্রাম মহানগরীর নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে র্ধমবংশ ইনষ্টিটিউিট,
রামুর রাংকুটে জগতজ্যোতি শিশু সদন,
বিশ্বশান্তি প্যাগোডায় গৌবিন্দ-গুণালঙ্কার বৌদ্ধ ছাত্রাবাস,
চট্রগ্রাম মহানগরীর মোগলটুলী শ্মশাভূমি শাক্যমুণি বুদ্ধ বিহার - প্রজ্ঞাজ্যোতি ধ্যান কেন্দ্র,
রাঙ্গামাটি বেতবুনয়িায় অভয়ারণ্য ধ্যান কেন্দ্র
বাংলাদেশ-জাপান মৈত্রী কেজি প্রাথমকি বিদ্যালয়,
জোবরা এমডব্লিউও - ওন বুড্ডিজম সন্মেলন কেন্দ্র,
বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ যুব এর আঞ্চলিক শাখা মহামণ্ডল কল্যাণ সংস্থা-বাংলাদেশ,
বুদ্ধজ্যোতি আর্ন্তজাতিক সংস্থা -বাংলাদেশ শাখা,
ঢাকা রাজধানীর পাশে নারায়নগঞ্জ কেন্দ্রীয় বুদ্ধ বিহারের উন্নয়ন
প্রাচীন ও ঐতিহাসিক রাউ- রাংকূট(রামু) বৌদ্ধ বিহারের উন্নয়ন
প্রজ্ঞাবংশ একাডেমী
‘শরণ’ নামে আর্ন্তজাতিক মানের বেশ কিছু সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং বহু জনহিতকর র্কমকান্ডের সাথে র্দীঘ সাংঘকি জীবনকে করেছেন মহিমান্বিত।
এমনই একজন কর্ম উদ্যম, বিচিক্ষণ পন্ডিতের শুভ জম্মদিন, যাঁর সৃষ্টি র্কমতেই বাংলাদেশী বৌদ্ধ সমাজ গর্বিত। যাঁর সৃষ্টিকর্ম আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেছে।
তাঁর লিখিত, অনুদিত গ্রন্থসহ প্রজ্ঞাবংশ একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত বইসমূহ;;;;;;;
১। বুদ্ধের জীবন,ধর্ম ও ইতিহাস।
২। ভিক্খু পাতিমোক্খ পালি ও বাংলা।
৩। মহাবর্গ পরিক্রমা।(বিনয় পিটকিয় খন্ড।)
৪। বিদর্শন ভাবনায় প্রজ্ঞাধুর ও কর্ম নির্দেশ।
৫.পরমার্থ শীল ধুতাঙ্গ অনুশীলন ও গৃহী কর্তব্য।
৬.পরমার্থিক জীবন চর্যা।
৭.মহাসতিপট্ঠান সূত্র অট্ঠকথা।
৮.হস্তরত্ন সতিপট্ঠান
৯.maha satipatthan sutta in english.
১০.ভিক্ষুনী বিভঙ্গ
১১.ভিক্ষুনী পাতিমোক্ষ
১২.সম্যক দৃষ্টি সূত্র ও অট্ঠকথা
১৩.অগ্নিস্কন্ধোপমো সূত্র
১৪.বোধিপ্রিয় শিশু শিক্ষা
১৫.প্রবন্ধ সংগ্রহ
১৬.বিনয় পিটকে পরিবার পাঠো।
১৭.জীবনের বিবর্তন
১৮.বৌদ্ধিক চিন্তায় আদর্শ সমাজ
১৯.বনভন্তের জীবনালেখ্য।
২০.বুদ্ধের ধ্যান পদ্ধতি
২১.বনবন্তের বাণী
২২.বুদ্ধ গুনাবলী গাথা
২৩.বিনয় পিটকে পারাজিকা
২৪.বিনয় পিটকে পাচিত্তিয়া
২৫.ভিক্ষু-শ্রামন ও গৃহী কর্তব্য
২৬.খুদ্দক নিকায় সচিত্র ধর্মপদ
২৭.হস্তসহায়
২৮.অভিধর্ম পিটকে ধর্মসঙ্গনী।
২৯.চতুরার্য্য সত্যের ব্যবহারিক নিদর্শন।
৩০.খুদ্দক নিকায়ে নেত্তিপ্রকরন
৩১.বিদর্শন ভাবনা অভ্যাস
৩২.ইতিহাস ও ঐতিহ্য সন্ধানে রাং-উ-কূট।
৩৩.খুদ্দক নিকায়ে থেরগাথা অট্ঠকথা
৩৪.সূত্র পিটকে সঙ্ঘায়ন প্রশ্ন
৩৫.অভিধর্ম পিটকে সঙ্ঘায়ন প্রশ্ন
৩৬.বিনয় পিটকে সঙ্ঘায়ন প্রশ্ন
৩৭.বুদ্ধের প্রধান ও প্রথম দুইটি বানী।
৩৮.গল্পে গল্পে মহামঙ্গল
৩৯.ভারতরত্ন ড.ভীমরাও আম্বেদকর।
৪০.মৈত্রী ভাবনার সুফল
৪১.খুদ্দক নিকায়ে ধর্মপদ অট্ঠকথা
৪২.খুদ্দক নিকায়ে চরিয়া পিটক ও দশ পারমী।
৪৩.সূত্র পিটকে দীর্ঘ নিকায়
৪৪.সূত্র পিটকে মধ্যম নিকায়।
আগামীকাল ২০ আগষ্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়, ফ্রান্স, আমেরিকাসহ শিষ্য- প্রশিষ্যদের আয়োজনে পূজ্য গুরু ভন্তের নিরোগ-দীর্ঘায়ু জীবন কামনায় কৃতজ্ঞ পূজাসহ বন্দনা করা হবে।
তাঁর মহানত্যাগময় বর্ণাঢ্য জীবনকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরার জন্যে এবং স্মরণীয় ও বরণীয় করে রাখতে বিশাল কর্মের সংক্ষিপ্ত জীবনের অবতারনা আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াসসহ কৃতজ্ঞপূজা।
তিনি আমাদের সবার জীবনে এক অনুপম অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। আমাদরে হৃদয়ের অলিন্দে পরশীলতা সমাজ বিবর্তন ধারায় অফুরন্ত প্রেরনার উৎস। পুষ্পতি ব্যঞ্জনায় অবারিত শ্রদ্ধা ও বিণম্র বন্দনায় বার বার নত হই পূজ্য গুরুদেবের শ্রীচরনে
কির্তিমান এই সাংঘকি ব্যক্তিত্বের ৭৫ তম শুভ জন্মদিনে সশ্রদ্ধ বন্দনা নিবেদন করে তাঁর সুস্বাস্থ্য র্দীঘজীবন কামনা করছি।
পরম শ্রদ্ধেয় ভান্তের নিরোগ দীর্ঘায়ু জীবন কামনা করছি এবং অন্তরের অন্থস্থল হতে শ্রদ্ধা ও বন্দনা জ্ঞাপন করছি।