পার্বত্য সংবাদ-Parbatta sangbad

পার্বত্য সংবাদ-Parbatta sangbad দৈনিক পার্বত্য সংবাদ-Parbatta sangbad

‘মা হত্যার বিচার চাওয়াও যেখানে মানা।’পাহাড়ের বাতাসে আজ শুধুই আর্তনাদ, স্বজনহারা কান্না আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। কতটা ভয়াবহ পরিস...
04/03/2025

‘মা হত্যার বিচার চাওয়াও যেখানে মানা।’

পাহাড়ের বাতাসে আজ শুধুই আর্তনাদ, স্বজনহারা কান্না আর নিঃশব্দ আতঙ্ক। কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হলে সন্তান তার মায়ের হত্যার বিচার চাইতে পারে না? কতটা ভয়ভীতির ছায়া বিস্তার করলে মানুষ রক্তের দাগ শুকানোর আগেই নীরবতার কারাগারে আবদ্ধ হয়? পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন আইনের শাসন নেই, আছে জেএসএস ইউপিডিএফ এর বন্দুকের শাসন, হত্যা, হুমকি আর বিচারহীনতার এক ভয়ংকর সংস্কৃতি।

গতকাল সকালে পানছড়ির হাতিমারা গ্রামে তিন বছরের শিশু বন্ধনা চাকমার সামনে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারালো তার মা রূপসী চাকমা (২৫)। জেএসএস ও ইউপিডিএফের অস্ত্রধারীরা যখন শক্তি প্রদর্শনে এই হত্যাযজ্ঞ চালালো, তখন তার স্বামী হেমন্ত চাকমা হয়তো বুঝতেও পারেনি যে তার সংসারের আশ্রয় ছিনিয়ে নেওয়া হবে এত সহজে।

এই প্রথম নয়—পাহাড়ে এ যেন এক নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ১৩ জানুয়ারি বান্দরবানে উমেপ্রু মারমা নিহত হলো জেএসএসের সন্ত্রাসী গুলিতে। ২০২৪ এর ১২ ফেব্রুয়ারি সাজেকে আঞ্চলিক দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে আহত সাত বছরের রোমিও ত্রিপুরা তিন মাস পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেল। এমনকি ২০০৪ সালে লোগাংয়ে ১৩ বছরের পুতুলী চাকমার জীবন কেড়ে নেওয়া হয় ইউপিডিএফের বুলেটে। এমন অনেক হত্যাকাণ্ড আছে।

কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডগুলোর কোনো বিচার হলো কি? একটিও থানায় মামলা পর্যন্ত গড়াল না! রূপসী চাকমার মৃত্যুর পর পানছড়ি থানার ওসি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন—কেউ অভিযোগ করেনি। স্বজনেরা সাহস পেল না, কারণ তারা জানে, বিচার চাইতে গেলেই পরিণতি হবে আরও ভয়ানক।

পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন আর রাষ্ট্রের শাসন নেই, আছে সন্ত্রাসীদের অলিখিত শাসন। এখানে মা-বাবার সামনে সন্তান খুন হলে তারা নিরব থাকে, সন্তানদের সামনে মা-বাবা খুন হলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। কারণ, পাহাড়ের মানুষ জানে—বিচার চাইতে গেলে পরিণতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে অসংখ্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সেগুলো নিঃশব্দে ধামাচাপা দিয়েছে। এসব নৃশংস হত্যার ঘটনা কখনো প্রকাশ্যে আসে না, আর ভয়ের কারণেই কেউ তা জানাতেও সাহস করে না।

সুশীল সমাজ যখন সন্ত্রাসীদের সুরে বলে পাহাড়ে সেনাশাসন চলছে, তখন প্রশ্ন ওঠে—যদি সত্যিই সেনাশাসন চলতো, তবে কি একটি হত্যাকাণ্ডের পর থানায় মামলা পর্যন্ত হতো না? তাহলে কেন পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষগুলো আজ নিরাপত্তাহীনতার এমন এক গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত যেখানে মৃত্যু অবধারিত, কিন্তু বিচার অনিশ্চিত? তাদের অসংখ্য অভিযোগের পরও বলতে হয়—পাহাড়ে সেনাবাহিনী আছে বলেই হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা এখনো কিছুটা নিয়ন্ত্রিত। যদি সেনাবাহিনী না থাকত, তাহলে এই সংখ্যা সীমা ছাড়িয়ে ভয়াবহ রূপ নিত।

আজকের পাহাড়ে কেউ জানে না, কে কখন রূপসী চাকমার মতো অনন্ত নীরবতার শিকার হবে। হয়তো কাল, হয়তো পরশু, হয়তো এক শিশু তার মায়ের রক্তাক্ত দেহের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করবে—আমার মায়ের কী অপরাধ ছিল? কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর কেউ দেবে না, কারণ এই পাহাড়ে উত্তর দেওয়ার মতো কেউ বেঁচে থাকে না।

আজ রূপসী চাকমার তিন বছরের কন্যা নিশ্চুপ বসে আছে, কিছুই বোঝার বয়স হয়নি তার। কিন্তু যখন সে বড় হবে, তখন জানবে—তার মায়ের হত্যার বিচার চেয়েও সে পায়নি। তখন এই পাহাড়ে ন্যায়বিচারের বুনিয়াদ আরও দুর্বল হবে, আরও গভীর হবে অরাজকতার শেকড়।

একবার ভাবুন, কতটুকু ভয় আর কতটা জিম্মি হলে একজন মা খুন হওয়ার পর তার স্বজনেরা থানায় পর্যন্ত যেতে পারে না? কতটা শাসনহীনতা থাকলে, কতটা বেনিয়ম চললে পাহাড়ের মানুষ এভাবে নিঃশব্দ মৃত্যুর মিছিল বানিয়ে বেঁচে থাকে?

এই নৈরাজ্য, এই বিচারহীনতা, এই রক্তাক্ত পাহাড় কি কখনো ন্যায়বিচার পাবে? নাকি পাহাড়ের প্রতিটি পরিবার একদিন রূপসী চাকমার পরিবারের মতো অনন্ত নীরবতার শিকার হবে?

ভারতের গণমাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার: ভূরাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা।সম্প্রতি ভারতের কিছু গণমা...
07/12/2024

ভারতের গণমাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার: ভূরাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা।

সম্প্রতি ভারতের কিছু গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য প্রচারিত হচ্ছে। এসব প্রচারণা শুধু উদ্দেশ্যমূলক নয়, বরং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিনষ্টের একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। এই ধরনের মিথ্যাচার শুধু দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, বরং এই অঞ্চলে ভূরাজনৈতিক অস্থিরতারও জন্ম দিচ্ছে।

মিথ্যাচারের মূল বিষয়বস্তু

ভারতের কিছু গণমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে উপজাতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনগোষ্ঠীর অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। বাস্তবে, বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে শান্তি ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম পার্বত্য চুক্তি, যা ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত হয়,

এই অঞ্চলের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার অন্যতম মাইলফলক হচ্ছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দিনরাত নিরাপত্তা বাহিনী পরিশ্রম করে যাচ্ছে । পার্বত্য চুক্তির ফলে একটি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের অবসানের কথা থাকলেও তার বিপরীতে অবস্থান করছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন প্রচেষ্ঠায় অঞ্চলটি ধীরে ধীরে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

কিন্তু এই ইতিবাচক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে ভারতের গণমাধ্যমগুলো যে মিথ্যাচার চালাচ্ছে, তা মূলত আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর একটি অপকৌশল। তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়কে আন্তর্জাতিক ইস্যু হিসেবে তুলে ধরে এই অঞ্চলে হস্তক্ষেপের পথ সুগম করার চেষ্টা করছে। এ সব কিছুর মূলে রয়েছে উপজাতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সন্ত্রাসী দলগুলো। যারা তাদের সাথে যোগসাজ করে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চায়।

ষড়যন্ত্রের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ এশিয়ার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক এলাকা। এটি ভারত, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের সীমানার কাছাকাছি অবস্থিত। এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা শুধু বাংলাদেশকেই নয়, বরং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারতের কিছু গোষ্ঠী পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়িয়ে এই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চায়। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এবং চীন-মিয়ানমার-ভারতের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এই ষড়যন্ত্রের পেছনে মূল প্রণোদনা হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশের দায়িত্বশীল অবস্থান

বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে সবসময় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে সচেষ্ট। পার্বত্য চট্টগ্রাম পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে সরকার সবসময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উপজাতি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি রক্ষার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তবে ভারতের গণমাধ্যমের এই ধরনের মিথ্যাচার বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।

ভারতের ভূমিকা ও প্রতিবেশী সম্পর্ক

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে উষ্ণ এবং ঘনিষ্ঠ। এই সম্পর্কের ভিত্তি হলো পারস্পরিক সম্মান, আস্থা এবং সহযোগিতা। কিন্তু ভারতের গণমাধ্যম যদি এই ধরনের ভিত্তিহীন প্রচারণা চালাতে থাকে, তাহলে তা দুই দেশের সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভারতের উচিত নিজেদের গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং এই ধরনের অপ্রচার বন্ধ করা। পাশাপাশি, ভারত সরকার যদি আন্তরিকভাবে এই ধরনের প্রচারণার নেপথ্যে থাকা গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিহত না করে, তাহলে এটি তাদের ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলবে।

সারবস্তু আলোকপাত

পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে ভারতের গণমাধ্যমে চালানো মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র শুধু বাংলাদেশকেই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। এই ধরনের অপপ্রচার বন্ধে ভারত সরকারের দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রয়োজন। একই সঙ্গে, বাংলাদেশকে এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক মহলে জোরালো অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের স্বার্থেই এই ধরনের ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করা জরুরি।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার, গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে। এ ধরনের চক্রান্তের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব।

খাগড়াছড়িতে ঘরে ঢুকে নারীকে নৃশংসভাবে হত্যা,স্বর্ণালঙ্কার চুরিখাগড়াছড়িতে ঘরে ঢুকে এক নারীকে হত্যা নৃশংসভাবে খুন করেছে দুর...
07/12/2024

খাগড়াছড়িতে ঘরে ঢুকে নারীকে নৃশংসভাবে হত্যা,স্বর্ণালঙ্কার চুরি

খাগড়াছড়িতে ঘরে ঢুকে এক নারীকে হত্যা নৃশংসভাবে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের অর্পণা চৌধুরী পাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতের নাম চুমকি রানী দাশ(৫০)। তিনি একই এলাকায় তপন কান্তি দাশের স্ত্রী।

খাগড়াছড়ি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: তফিকুল আলম জানান, ঘরের ভেতরে এক নারীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। নিহতের নারীর গলার হার, কানের দুল নিয়ে গেছে। নারীর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে কীভাবে এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা এখনো বলতে পারছি না। আমরা ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা করছি।

নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে আনা হয়েছে। খবর পেয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

চুমকি দাশের ব্যবসায়ী ছেলে প্রাপন্ত দাস পুলিশকে জানায়, সন্ধ্যায় তার ব্যবসায়ী বন্ধু বাড়ীতে এলে দুইজনই বের হয়ে যায়। রাতে আবার গরম কাপড় নিতে আসলে ঘরের মেঝেতে মায়ের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পেয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে।

07/12/2024

সাজেকের হাউজ পাড়ায় পর্যটকবাহী জীব খাদে পড়ে ৬ জন আহত!! আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে সেনাবাহিনী।

শিক্ষা উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় পার্বত্য চট্টগ্রামে অনগ্রসর জাতির আলোর প্রদীপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বা...
01/08/2024

শিক্ষা উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় পার্বত্য চট্টগ্রামে অনগ্রসর জাতির আলোর প্রদীপ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম, বাংলাদেশের অন্য ৬১টি জেলার চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির এটি। ‘শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন’ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারের পাশাপাশি শিক্ষা উন্নয়নে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দুর্গম পাহাড়ী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলার এক দৃশ্যদন্দিত চোখ জুড়ানো স্বপ্নীল ভূস্বর্গ হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম। অপার সম্ভাবনার এ ভূস্বর্গটি শান্তিচুক্তি সম্পাদনের পূর্বে ছিল অশান্ত দুর্গম প্রতিকূল এক ভয়ংকর জনপদ। এ অঞ্চল ঘিরে বাংলাদেশের যেকোনো সরকারকে উন্নয়নের কাজ সম্পাদনে ব্যাপকহারে হিমসিম খেতে হতো। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য দক্ষতায় ১৯৯৭ সালের ২ রা ডিসেম্বর সম্পাদিত হয় পার্বত্যচুক্তি। এর পর থেকেই পাল্টে যায় সকল প্রকার উন্নয়নের চিত্র। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ী জনপদে যখন আদিমযুগের মত পায়ে হেঁটে, বোট, নৌকা আর কলার ভেরালী দিয়ে চলতে হতো, পাহাড়ী দুর্গম এলাকাগুলোতে যখন শিক্ষার আলো ছড়ায়নি, বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে যখন কোন শিক্ষার আলো পৌছায়নি, স্বাস্থ্য সেবা ছিল মানুষের জন্য এক অনিশ্চিত বিষয়, যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য জনপদ ছিল চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে, এমন এক কালো অনিশ্চিত জীবনধারার বাস্তবিক অধ্যায়কে সামনে রেখে চলমান পাহাড়ে শিক্ষা উন্নয়নের সমস্যাকে নিরসন করার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ।

একটি জাতির উন্নতির চাবিকাঠি হচ্ছে শিক্ষা। মেধা ও মননে আধুনিক এবং চিন্তা-চেতনায় প্রাগ্রসর একটি জাতি তৈরি করাই শিক্ষার লক্ষ্য। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য মানবতার বিকাশ এবং জনমুখী উন্নয়ন ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, নীতিবান, সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং সম্প্রীতির বন্ধনের সৎ নাগরিক গড়ে তোলা। সরকারের এ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ত্বরান্বিত করার লক্ষে দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রান্তিক জনপদে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মান উন্নয়নে সর্বাত্মক কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দুর্গম এ অঞ্চলে সরকারের জনমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সম্প্রীতি উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী স্কুল, কলেজ, কারিগরি শিক্ষা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠাপূর্বক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করছে, এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়তা করছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্জনে আরো বেশি আগ্রহী করতে বিতরণ করা হচ্ছে নানার রকম শিক্ষা উপকরণ। দুর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল শ্রেণি-পেশার নাগরিকের সন্তানদের জন্য এ সকল প্রতিষ্ঠান উন্মুক্ত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠ্যসূচির পাশাপাশি খেলাধুলাসহ বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম, শৃঙ্খলা, নৈতিক শিক্ষা, দায়িত্ববোধ, দেশপ্রেম সম্প্রীতি উন্নয়ন ইত্যাদি বিষয়ে নিয়মিত প্রেষণা প্রদান করা হয়ে থাকে। বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শিক্ষার্থীগণকে ICT বিষয়ে ও কারিগরিসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা প্রদানে এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করছে। অনগ্রসর জাতিকে অগ্রসর করে একটি সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দূর্গম পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বেশি অবদান রাখছে।

যেভাবে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামকে,,,,,,
পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বত্র শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিয়ে শিক্ষার আলোয় অবহেলিত পার্বত্য চট্টগ্রামকে আলোকিত করার প্রয়াসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পশ্চাত্পদ ও দুর্গম অঞ্চলে প্রত্যেকটি সেনানিবাসে স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য সহায়তা করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদেরকে শৃঙ্খলা, নৈতিক মূল্যবোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, শিষ্টাচার সহজীবন-যাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্য, সহিষ্ণুতা, সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি,অধ্যাবসায় ইত্যাদি গুণাবলী অর্জন করে বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিমনস্ক, কুসংস্কারমুক্ত একজন সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হয়ে থাকে। পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বশীল তদারকি এবং প্রশিক্ষিত শিক্ষকগণের আন্তরিক পরিচর্যার কারণে এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় পরীক্ষাসমূহে ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করছে। এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পাঠ্যসূচির পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রমে জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। সমগ্র বাংলাদেশে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত এ জাতীয় মোট ৪৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৯৯,১২৩ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন সেনানিবাসে মোট ৩৯টি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল ও কলেজ রয়েছে। সেনাবাহিনী এবং সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তর-(ডিএমএলসি) এর সমন্বয়ে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানসমূহে বর্তমানে মোট ৫২,০৩৮ জন ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়নরত রয়েছে। তার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৩টি আর সেনাবাহিনী কর্তৃক সহায়তা প্রদান করা হয় ৫৮টির ও বেশি প্রতিষ্ঠানে। সেনাবাহিনীর সার্বিক অর্থায়নে সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পাহাড়ি-বাঙালি ছেলেমেয়েদের সুকোমল মনোবৃত্তির চর্চায় আগ্রহী করে তোলায় সেনাবাহিনী কার্যকর ভূমিকা রেখে চলেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে স্কুলের স্বল্পতা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অসুবিধার কারণেও অনেকেই শিক্ষা গ্রহণ কার্যক্রমের বাইরে থেকে যায়। সার্বিক পরিস্থিতি হতে উত্তরণের মাধ্যম হিসেবে সেনাবাহিনীর সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং অর্থায়নে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামজুড়েই অনেক ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যমের স্কুল (দিবা ও নৈশ) প্রতিষ্টা করে পরিচালনা করে আসছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো থেকে শুরু করে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, বই বিতরণ, শিক্ষাসামগ্রী প্রদান, ছাত্র-ছাত্রী পরিবহন, আর্থিক অনুদান, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন শিক্ষাসামগ্রী, ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ড্রেস ও খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ করে সর্বদা স্থানীয় পাহাড়ি-বাঙালিদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনী প্রতিবছরই শিক্ষাকে সর্বাগ্রে নিয়ে আসা, সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ মানসম্মত ও কর্মঠ শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরার জন্য শিক্ষা সেমিনারের আয়োজন করে।

এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের মেধার বিকাশ ও জ্ঞানের নানামুখী চর্চায় সুযোগ্য মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য আন্তঃস্কুল বিতর্ক, বানান ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সেনাবাহিনী। সেনা রিজিয়ন/জোন কর্তৃক পরিচালিত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পাহাড়ি-বাঙালি প্রশিক্ষণার্থী কম্পিউটার প্রশিক্ষণে দক্ষতা অর্জন করেছে, যা তাদের কর্মসংস্থান বা চাকরি পেতে সহায়তা করছে।
সর্বোপরি, পিছিয়ে পড়া জনপদের মানোন্নয়ন প্রক্রিয়া সমুন্নত করা এবং সকলের নিকট সর্বোচ্চ সুবিধা পৌঁছে দেওয়াও সেনাবাহিনী কর্তৃক সম্পাদিত কার্যসমূহের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে উন্নয়নমূলক প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কার্যক্রম, খাদ্য সমস্যা নিরসন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত স্থানীয় ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা, দরিদ্র ব্যক্তিদের স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, দুর্গম এলাকায় পানির কষ্ট লাঘবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং বেকার ব্যক্তিবর্গের কর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র কারখানা স্থাপন করে আসছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কতৃর্ক সকল প্রকার শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে রচিত হয়। পাহাড়ি-বাঙালিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পাড়া, মৌজা, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং সবশেষে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন, জনগোষ্ঠীর স্বকীয়তা ধারণ ও চর্চার উদ্দেশ্যে পাহাড়ি-বাঙালিদের সম্পৃক্ততায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সহজ হয়েছে। দুর্গম পার্বত্য এলাকার জনগণের সুষ্ঠু বিনোদনের জন্য সেনাবাহিনী কর্তৃক বিগত বছরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনের পাশাপাশি উন্মুক্ত চলচ্চিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
বিভিন্ন সেনা ক্যাম্পের সন্নিকটে অথবা উপজেলার সুবিধাজনক স্থানে সেনাবাহিনী হতদরিদ্র পাহাড়ি-বাঙালি মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার প্রয়াসে কম্বল ও ব্যাগ ফ্যাক্টরি, কুটির শিল্প ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে অনেক পাহাড়ি-বাঙালি মহিলাকে চাদর, থামি, লুঙ্গি ও গামছা তৈরির প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়ে থাকে। যা শিখার পর নিজেদেরকে আত্ম নির্বরতা করে তুলতে পেরেছে অনেকে।
এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী কর্তৃক বিভিন্ন তাঁত তৈরি ও কাঁচামাল ক্রয় বাবদ প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করা হয়। বিভিন্ন গুচ্ছগ্রামে মহিলাদের কর্মসংস্থান তৈরিতে উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে মুরগির ফার্ম পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান, মাশরুম, স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফল চাষের প্রশিক্ষণ ও প্রত্যক্ষ সহায়তা প্রদান করায় তাদের পারিবারিক ভরণপোষণ ক্ষমতা ও সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথমত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর পর অনাগ্রসর এলাকাতে দেখে দেখে বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে পরিচালনা করা হয়। বিভিন্ন দুর্গম এলাকাগুলোতে যতায়ত নিশ্চিত করে শিক্ষা বিস্তার করার লক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
বর্তমান সরকার ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় পার্বত্য চট্টগ্রামে নিজ নিজ ভাষায় এখন শিক্ষা লাভ করতে পারছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সম্প্রদায় শিক্ষার্থীরা। যা সংস্কৃতির এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে ২ শতাংশ শিক্ষার হার থেকে ৪৫.৫০ শতাংশে উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। যার অধিকাংশ অবদান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর।

আলোচনার টেবিল থেকে সরে গিয়ে কেএনএফ প্রমাণ করেছে তারা পাহাড়ে শান্তি চায়না এবং রাজনৈতিক উপায়ে সমাধান চায়না।জিহান মোবারক বি...
14/05/2024

আলোচনার টেবিল থেকে সরে গিয়ে কেএনএফ প্রমাণ করেছে তারা পাহাড়ে শান্তি চায়না এবং রাজনৈতিক উপায়ে সমাধান চায়না।

জিহান মোবারক বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক:

সাম্প্রতিক সময়ে কেএনএফ বান্দরবানে বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই উত্তাপ পাহাড়ের গন্ডি পেরিয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকারের শান্তি কমিটির আলোচনার টেবিল থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করেই গত এপ্রিল মাসের ২ ও ৩ তারিখ জেলার রুমা ও থানচি উপজেলা সোনালী ও কৃষি ব্যাংক ডাকাতি করে। ব্যাংকে হামলা ও অর্থ লুটপাটের পাশাপাশি পুলিশ ও আনসার সদস্যের ১৪টি অস্ত্র কেড়ে নেয় কেএনএফ৷ চলমান শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাপ্রাপ্ত করার বিষয়টি সকলকে হতবাক করেছে। আজকে যারা বলছে, "পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান সামরিক বাহিনীর অভিযানে সম্ভব নয়। এই সমস্যা রাজনৈতিক উপায়ে সমাধান করা উচিত৷" তাদের এটা জেনে রাখা উচিত সরকারের সঙ্গে কিন্তু কেএনএফ এর রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানে আলোচনার বৈঠক চলছিলো গত ৫/৬ মাস ধরে। স্বশরীরে বৈঠকসহ ৩ দফায় তাদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই শান্তি প্রক্রিয়া আলোচনার ফলপ্রসূ কেএনএফ এর দাবি অনুযায়ী কয়েকটি চুক্তি সমঝোতা করেন উভয় পক্ষ। বাদবাকি দাবিদাওয়া গুলো নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ চলছিলো। আলোচনা চলাকালীন সময় নিরাপত্তা বাহিনী কেএনএফ এর বিরুদ্ধে অভিযানও বন্ধ করে। এমন সময় কেএনএফ কোন একটি ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠী এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সূত্র ধরে সংগঠনের সভাপতি নাথান বমের নির্দেশে রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের শান্তি প্রত্যাখ্যান করে ব্যাংক ডাকাতি, অস্ত্র লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তাহলে শান্তি প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করলো কারা? নিঃসন্দেহে কেএনএফ লঙ্ঘন করেছে। যে কেএনএফ রাজনৈতিকভাবে দাবিদাওয়া ও সমস্যা সমাধানের পথ প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের সঙ্গে সামরিক উপায় ছাড়া সমস্যা সমাধানের পথ আর কী বা আছে? সরকার কী কেএনএফ কে সুযোগ দেয়নি? সরকার বরাবরই আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যা সমাধানে আন্তরিক ছিল৷ দুঃখজনক কেএনএফ কোনভাবেই পাহাড়ে শান্তি চায়নি৷ তারা চেয়েছিল সশস্ত্র ও চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে তাদের তথাকথিত দাবিদাওয়া পূরণ করবে আর পাহাড়কে অশান্ত করবে।

চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির জন্য নিম্নবর্ণিতরা সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে দোষারোপ করেছে। তারা বলছে রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানের জন্য। প্রকৃত সত্য ঘটনা না জেনে তারা এমন ঢালাওভাবে মন্তব্য করে যাচ্ছে। প্রকৃত সত্য হলো- কেএনএফ রাজনৈতিক উপায়ে শান্তি স্থাপনে অনিহা, তারা পাহাড়ে কোনভাবেই শান্তি চায়না। তারা বিচ্ছিন্নতাবাদ লালন করে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সঙ্গে তারা থাকতে চায়না। কেএনএফ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে চায় তাদের এই অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ অজুহাত এবং হীন উদ্দেশ্য। সেনাবাহিনী অনেক ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল তারা মানবাধিকার বিষয়টি সামনে রেখে কাজ করে। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে সেনাবাহিনীর ভূমিকা উজ্জ্বল। যা দেশের জন্য এক অর্জন। কেএনএফ যে অন্যায় করে আসছে তা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোন দেশের সেনাবাহিনী হলে কেএনএফ এর অপরাধের অভিযোগে সমগ্র বম জনগোষ্ঠীকে মাটিতে মিশিয়ে দিত। কিন্তু আমাদের সেনাবাহিনী মানবিক, দেশপ্রেমিক এবং উপজাতি জনগোষ্ঠীর প্রতি উদার ও আন্তরিক। যার প্রমাণ সেনাবাহিনী দিয়ে আসছে।

পাঠকমণ্ডলীর জ্ঞাতার্থে কেএনএফ এর দাবিদাওয়া ও লক্ষ্য উদ্দেশ্য এবং এই নিয়ে সরকারের ভূমিকা কী ছিল সেবিষয়টি পরিষ্কার করার প্রয়োজনীতা অনুভব করছি। তাই তার সংক্ষিপ্ত তুলে ধরছি-
প্রথমত কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) যেসকল দাবিদাওয়া সরকারের নিকট পেশ করেছিল, দাবিগুলো কতটা যুক্তিসঙ্গত বা সংবিধান সম্মত তা কী আমাদের সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণমাধ্যম ও প্রগতিশীলরা কখনো ভেবে দেখেছেন? তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা নিয়ে স্বশাসন বা স্বায়ত্তশাসন দাবি করছে। বাস্তবিক অর্থে কেএনএফ যেসকল দাবিদাওয়া পেশ করেছে তার অন্তরালে পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বৃহৎ অংশ আলাদা করার নীলনকশা। স্বায়ত্তশাসন দাবির অন্তরালে কী থাকে? সেটা বর্হির বিশ্বের কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে তাকালে অনুমেয়। এবং এই নিয়ে জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক কিংবা দেশীয় সংবিধান কী বলে। এমনকি এমন কিছু দাবি তারা পেশ করেছে যেসব দাবিদাওয়া সরকার বাস্তবায়ন করলে ১৯৯৭ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি লঙ্ঘিত হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য ভাষাভাষী উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার খর্ব হবে৷ কেএনএফ মাত্র ১৩ হাজার বম জাতির সংগঠন৷ কুকিভুক্ত ৬টি জাতি কেএনএফ কে সমর্থন করেনা। সামান্য ক্ষুদ্র জনসংখ্যা নিয়ে এই দাবিদাওয়া পেশ করা কতটুকু বাস্তবসম্মত? এই দাবিদাওয়া চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ অন্যান্য উপজাতি জনগোষ্ঠীর অধিকার, মর্যাদা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য খর্ব করে। কেএনএফ এর এমন সব অদ্ভুত ও সংবিধান পরিপন্থী দাবি সরকার তড়িঘড়ি বাস্তবায়ন করতে গেলে পার্বত্য চট্টগ্রামে জাতিগত সংঘাত, ভেদাভেদ ও হানাহানি বেড়ে যেত৷ এই অঞ্চলে দীর্ঘ সমস্যা সৃষ্টি হবে। তাই সরকার কেএনএফ এর দাবিদাওয়া গুলো বিচার-বিশ্লেষণ এবং সংবিধান সম্মত কীনা তা যাচাই-বাছাই করার মাধ্যমে তাদের ন্যায দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার দিকে হাঁটছিলেন। কেএনএফ বুঝে গেছে সরকার তাদের ন্যায দাবিদাওয়া বাস্তবায়ন করবে কিন্তু অযাচিত দাবি মেনে নিবেনা। ন্যায দাবি বাস্তবায়ন করলে তাদেরকে অস্ত্র ছাড়তে হবে। অথাৎ সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হতে হবে। মূলত কেএনএফ চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড টিকিয়ে রাখতে এবং পাশাপাশি স্বপ্নের কুকিল্যাণ্ড করতে শান্তি কমিটির চলমান আলোচনার টেবিলে থেকে নিজেদের প্রত্যাখ্যান করে। একটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলোচনার টেবিল থেকে সরে যাওয়ার উদ্দেশ্যকে যারা সহজভাবে নেয় তাদের রাজনৈতিক ও কূটনীতিক জ্ঞান সীমিত বলে মনে করি।

07/04/2024

সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) অন্যতম প্রধান সমন্বয়ক চেওসিম বমকে বান্দরবানের বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় রোয়াল লিন বম নামে আরো একজনকে গ্রেফতার করা হয়।

26/02/2024

রাঙামাটির জুরাছড়িতে নুরুল ইসলামের হাতের আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে উপজাতি সন্ত্রাসীরা।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলার জুরাছড়ি উপজেলায় উপজাতি সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি দায়ের কোপে কৃষি অফিসের বাঙালি কর্মচারী নুরুল ইসলামের হাতের আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। ঘটনাটি গতকাল (শনিবার) ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ রাত ৭টায় ঘটেছে। বর্তমানে আহত বাঙালি যুবক নুরুল ইসলাম চট্টগ্রাম হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। কৃষি অফিসের কর্মচারি নুরুল ইসলাম যে বাসায় ভাড়া থাকেন সে বাসার মালিকের উপর উপজাতি যুবকরা হামলা চালায়, এসময় বাসার মালিককে হামলাকারী উপজাতি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে অতর্কিত হামলার শিকার হন বাঙালি নুরুল ইসলাম। তার হাতের আঙ্গুলটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

আহত বাঙালি নুরুল ইসলাম রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মাইনীমূখ ইউনিয়নের গাথাঁছড়া (সিলেটি পাড়া) মোঃ আলীর ছেলে। সে জুরাছড়ি উপজেলার কৃষি অফিসের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত আছে।

উপজাতি সন্ত্রাসীরা কতটা হিংস্র ও উশৃংখল হলে এভাবে হাতের আঙ্গুল বিচ্ছিন্ন করতে পারে? বিষয়টিকে দুঃখজনক এবং অমানবিক বলেছেন স্থানীয়রা।

প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে নিহত নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ এর ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার মত কর্মসূচী।গত...
12/12/2023

প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে নিহত নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ এর ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করার মত কর্মসূচী।

গত ১১ ডিসেম্বর আনুমানিক রাত-১০ টায় খাগড়াছড়ি পানছড়ি উপজেলার ৯ নং ওয়ার্ড ফতেপুর একটি বাড়িতে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে ৪ ইউপিডিএফ নেতাকর্মী নিহত হয় এবং তিনজন অপহৃত হয়। নিহত এবং অপহৃতরা হলেন, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল চাকমা ও খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি লিটন চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি সুনীল ত্রিপুরা ও ইউপিডিএফ সংগঠক রুহিন ত্রিপুরাকে হত্যা এবং ইউপিডিএফ-এর সংগঠক হরি কমল ত্রিপুরা, নীতি দত্ত চাকমা, মিলন চাকমাকে অপহরণ করা হয়।

উপরোক্ত ঘটনার প্রতিবাদে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীরা নিম্ন কর্মসূচী ঘোষণা করে। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর নামে বিভিন্ন কুৎসা এবং অপপ্রচার ও মিথ্যা তথ্য জনমতে ছড়াতে পারে। এরই মধ্যে নানান কুৎসা রটিয়ে আসছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি।

কর্মসূচী সমূহ- ১৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর প্রতিবাদ সমাবেশ ও শোক সভা। বিভিন্ন স্থানে কালো পতাকা উত্তোলন।

১৫ ডিসেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত পানছড়ি বাজার বয়কট। প্রয়োজনে বয়কটের মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে বলে জানা যায়।

১৭ ডিসেম্বর পানছড়ি উপজেলাব্যাপী সাধারণ ধর্মঘট।

১৮ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি জেলাব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ।

এর আগেও ইউপিডিএফ হরতাল অবরোধের নামে নাশকতা করে মানুষদের জানমাল ধ্বংস করেছে। ইউপিডিএফ এর মাধ্যমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারে।

রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর, রাঙামাটি সদর কতুকছড়ি এবং কাউখালীতে ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর এর মধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী করতে পারে বলে জানা যায়। ইউপিডিএফ সমর্থিত সহযোগী অঙ্গসংগঠন পিসিপি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লোকজনের আনা-গোনা রাঙ্গামাটি জেলার বর্ণিত উপজেলা গুলোতে লক্ষণীয়৷ বিক্ষোভ মিছিল এবং কালো পাতা উত্তোলনের মত কর্মসূচী ইউপিডিএফ করতে পারে।

এছাড়াও চট্টগ্রাম চেরাগীপাহাড় তারা নানান কর্মসূচী করতে পারে বলে জানা যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বিরোধী ইউপিডিএফ প্রসিত গ্রুপের চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি এবং খুন-গুমে এবং দলীয় কোন্দলের পরিপ্রেক্ষিতে ইউপিডিএফ এর একটি অংশ ইউপিডিএফ ত্যাগ তপন জ্যোতি বর্মার নেতৃত্বে ২০১৭ সালে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা করে। এর পর থেকে দুইটি সন্ত্রাসী সংগঠন চাঁদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাতে লিপ্ত হয়। ২০১৭-২০১৮ সালে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাতাসহ ৬জনকে ইউপিডিএফ প্রসিত মূলদল হত্যা করে। এরপর হতে এক পক্ষ অন্যপক্ষের সদস্যদের চোরাগোপ্তা হামলার মাধ্যমে হত্যা করে আসছে।

06/12/2023
দুই যুগ পেরিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি: শান্তি কতদূর?একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তখনই অর্থবহ হয় যখন রাজনৈতিক ও অর্থন...
02/12/2023

দুই যুগ পেরিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি: শান্তি কতদূর?

একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তখনই অর্থবহ হয় যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয়। স্বাধীনতার পর দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা জটিল হয়ে দেখা দিয়েছিল।
প্রায় দুই যুগ ধরে আত্মঘাতী তৎপরতায় লিপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি (জেএসএস) কথিত শান্তিবাহিনীর সাথে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামক এক ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পাদিত হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অনেক ধারা-উপধারা সাংঘর্ষিক। তাই এই চুক্তির সংবিধান বিরোধী ধারা-উপধারা গুলো সংশোধনের দাবি তীব্র হয়েছে। এই দাবিতে রাষ্ট্রের স্বপক্ষের শক্তি বরাবরই আন্দোলন করে আসছে।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা নিয়ে নতুনভাবে আলোচনা শুরু করে। তারা এ সমস্যা সমাধানের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সময় সল্পতার কারণে শেষ পর্যন্ত জনগণের মতামত এবং বাংলাদেশ সংবিধানকে পাশকাটিয়ে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সংবিধান পরিপন্থী ধারা চুক্তিতে যুক্ত করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্তরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবগত করেন নি। যার কারণে চুক্তিতে অসংখ্য অসাংবিধানিক ও বৈষম্যমূলক ধারা যুক্ত হয়েছে। এই চুক্তিতে সরকার পক্ষে স্বাক্ষর করেন, তৎকালীন জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসনাত মুহাম্মদ আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য জন সংহতি সমিতির পক্ষে সংগঠনের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। এ চুক্তির অসাংবিধানিক ধারা যুক্ত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় এক কালো অধ্যায় সূচিত হয়। এই নিয়ে নানান তর্ক-বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কারণ রাষ্ট্রের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙ্গালী এই চুক্তিতে সাংবিধানিক অধিকার হারিয়েছে। চুক্তির অসাংবিধানিক ধারার কারণে প্রথাগত ভূমি আইন পার্বত্য বাঙ্গালীদের ভূমি অধিকার কেড়ে নিয়েছে৷ এই নিয়ে বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে৷ সরকারের কাছে পার্বত্যবাসীদের প্রাণের দাবি সংবিধান পরিপন্থী চুক্তির ধারাগুলো সংশোধন করে পার্বত্য চট্টগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশে বাঙ্গালীদের ভূমি অধিকার ফিরে দেওয়া হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখহাসিনার একান্ত প্রচেষ্ঠাই তা সম্ভব বলে পার্বত্যবাসী মনে করে।

১৯০০ সালের পহেলা মে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক পাহাড়ের ক্ষুদ্র- নৃগোষ্ঠী জাতিসত্তাগুলোর সংস্কৃতি ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় এবং প্রশাসনিক অন্য পুনর্গঠনের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে ‘শাসন বহির্ভূত এলাকা’ হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। এরপর ১৯২০ সালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সমিতি’ গঠিত হয় যারা ১৯৪৭ সালের ২০ আগস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের পাকিস্তানি শাসন কায়েমের বিপক্ষে ছিল। অতঃপর ১৯৫৭ সালে র‌্যাডক্লিফ মিশন পার্বত্য চট্টগ্রামকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করে। ১৯৬০ সালে পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পর কাপ্তাই কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি হলে বিপুল সংখ্যক উপজাতীয় পরিবারকে পাহাড়ে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় কিছু সংখ্যক পাহাড়ী জনগোষ্ঠী দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকার উপজাতীয়দের মধ্য থেকে রাজাকার, ওসি, এ.এফ, হওয়ার জন্য লোক রিক্রুট করে এবং চাকমা রাজা ত্রিদির রায় মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান করে। যার ফলে পাহাড়ীরা মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সরকারকে মেনে নিতে পারেনি। এরপর ১৯৭২ সালে উপজাতীয় নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (এমএন লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বিশেষ মর্যাদা ও স্বায়ত্তশাসনের জন্য বাংলাদেশ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির কাছে দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হন। এই ব্যর্থতার ফলে ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে এম.এন লারমার নেতৃত্বে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি’ বা জেএসএস নামে উপজাতি জনগণের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন গড়ে ওঠে। কথিত আছে তৎকালীন রাষ্ট্র প্রধান তাদের বাঙালি হয়ে যাবার পরামর্শ দেন। উপজাতিরা এ পরামর্শ গ্রহণ না করে ১৯৭৩ সালের ৭ জানুয়ারি তাদের আর্মড ক্যাডার ফোর্স ‘শান্তিবাহিনী’ গঠন করে। পরবর্তীতে এ বাহিনী প্রথমে স্বাধিকার, পরে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও জুমল্যান্ড প্রতিষ্ঠার দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম চালাতে শুরু করলে উপজাতি-বাঙ্গালী মিলিয়ে প্রায় ৩৫ সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়।

শান্তিবাহিনীর গেরিলা কার্যক্রম ও সরকারি পদক্ষেপ:

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান-এর হত্যাকান্ডের ফলে জন সংহতি সমিতির সংকটময় অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং সন্তু লারমা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে যান। ১৯৭৫-১৯৭৭ সালের মধ্যে শান্তিবাহিনী সামরিক দিক দিয়ে অধিকতর সংগঠিত হয়। ১৯৭৬ সালে সংগঠিত শান্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন সরকার সামরিক পথেই উপজাতিদের এ দেশদ্রোহী চক্রান্তকে দমন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে দরিদ্র ভূমিহীন কিছু মানুষকে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনর্বাসন করেন।সরকারের মানবিক এ সিদ্ধান্ত ঘটনা উপজাতিরা মেনে নিতে পারেনি। ৬০, ৭০ ও ৮০-এর দশকে মানবেন্দ্র লারমা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মু উগ্র জাতীয়তাবাদের বিকাশে যারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেন তারা হলেন বিহারী খাসা, জ্ঞানেন্দু বিকাশ চাকমা, বীরেন্দ্র কিশোর রোয়াজা প্রমুখ।

পার্বত্য সশস্ত্র সংঘাত অবসানের জন্য প্রথম জনসংহতি সমিতির সাথে আলোচনা করা হয় ১৯৮৫ সালে জেনারেল এইচএম এরশাদের শাসনামলে। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এই শান্তি আলোচনা চলে। এই সময় ১৯৮৯ সালের ২- জুলাই তিন পার্বত্য জেলায় (রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি) চট্টগ্রাম স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনের অধীনে স্থানীয় সরকার পরিষদ গঠন করা হয়। এই পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের ব্যবস্থা রাখা হয় উপজাতীয়দের মধ্য থেকে। নিয়ম করা হয় প্রতি জেলায় ৩০ জন সদস্য রাখা হবে। যার এক-তৃতীয়াংশ বাঙালি এবং দুই তৃতীয়াংশ বিভিন্ন উপজাতি জনগোষ্ঠী। কিন্তু দেশদ্রোহী চক্রান্তে লিপ্ত সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন শান্তিবাহিনী এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করে। ফলে এই পরিষদের হাতে যে ২২ ধরণের ক্ষমতা হস্তান্তর হওয়ার কথা ছিল তা ব্যর্থ হয়।

পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এলে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত শান্তি বাহিনীর সঙ্গে ১৩ দফা বৈঠক হয়। তারপর ১৯৯৬ সালের ২২ জুন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় বসার পর শান্তিবাহিনীর সাথে আবার নতুন করে আলোচনার উদ্যোগ নেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি স্থাপন এবং রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ১১ সদস্যবিশিষ্ট একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রধান হিসেবে মনোনীত হন তৎকালীন চীফ হুইফ আবুল হাসনাত মুহাম্মদ আবদুল্লাহ।

পাঁচ দফা পেশ:
কমিটির প্রধান শান্তি আলোচনার পাশাপাশি ১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্র বিরতি শুরু করেন। তখন জনসংহতি সমিতি সরকারের সাথে আলোচনা করে ৫ দফা দাবি পেশ করে। দাবিগুলো নিম্নরূপ-

১. বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে একটি নির্বাচিত আঞ্চলিক পরিষদের কর্তৃত্বাধীন পৃথক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা প্রদান, যার নাম হবে জুম্মুল্যান্ড।

২. পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তাসমূহের জাতিগত সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান।

৩. ১৯৪৭-এর ১৪ আগস্টের পর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশকারী বহিরাগতদের প্রত্যাহার। পার্বত্য ভূমির ওপর পাহাড়ি স্বত্ত্বের স্বীকৃতি।

৪. বিডিআর ক্যাম্প ব্যতীত পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর সকল ক্যাম্প ও সেনানিবাস তুলে নেয়া।

৫. ১৯৬০ সালের পর থেকে যে সব পাহাড়ি চট্টগ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা। জনসংহতি সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সকল আইনি অভিযোগ প্রত্যাহার এবং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির বিষয়বস্তু:
পার্বত্য শান্তি চুক্তির প্রধান বিষয়বস্তু হলো দ্বিস্তর বিশিষ্ট পরিষদ। যার প্রথমটি আঞ্চলিক পরিষদ, পৃথক তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। স্থানীয় সরকার পরিষদের পরিবর্তে জেলা পরিষদ গঠিত হবে। আঞ্চলিক পরিষদের সমন্বয় করবে পার্বত্য জেলা পরিষদগুলো। তাছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে এ তিনটি জেলা পরিষদ। যা দুই যুগের বেশি সহিংসতার অবসান ঘটিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবে।

পার্বত্য শান্তি চুক্তির দিকসমূহ:
মোট ২৬টি বৈঠক শেষে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অর্থাৎ দীর্ঘদিনের অশান্ত পার্বত্য অঞ্চলকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এ নীতিমালার প্রধান প্রধান দিকগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো-

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করে এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জনের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
স্বাক্ষরের পর থেকেই চুক্তি বলবৎ হবে।
বিডিআর ও স্থায়ী সেনানিবাস (তিন জেলা সদরে তিনটি এবং আলী কদম, রুমা ও দীঘিনালা) ব্যতীত সামরিক বাহিনী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সকল সরকারি, আধা সরকারি, পরিষদীয় ও সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে সকল স্তরে নিয়োগে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করা হবে। একজন উপজাতীয় এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হবেন।
রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইনসমূহ পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন ও অবলোকন করা হবে।
পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্যগণের দ্বারা পরোক্ষভাবে এই পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। যার পদমর্যাদা হবে একজন প্রতিমন্ত্রীর সমান এবং তিনি অবশ্যই উপজাতীয় হবেন।
পরিষদে মহিলাদের জন্য ৩টি আসন সংরক্ষিত রাখা হবে। দুই-তৃতীয়াংশ উপজাতীয় হবে।
পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর হবে।
পরিষদের সাথে আলোচনা ছাড়া কোনো জমি, পাহাড় ও বনাঞ্চল অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর করা যাবে।

কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাসা জমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমির মূল মালিকদের বন্দোবস্ত দেয়া হবে।
মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা চালু হবে।
তিন জেলা সমন্বয়ে ২২ সদস্যবিশিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে ৫ বছর।
সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থা বহাল থাকবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে চাইলে সরকার পরিষদের সাথে আলাপ করবে।
উপরিউক্ত নীতিমালার ভিত্তিতেই সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ফলাফল :

পার্বত্য চুক্তির ফলে পাহাড়ি এলাকায় বিদ্যমান যে হানাহানি তা মোটেও বন্ধ হয়নি বরং চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে সশস্ত্র সংগঠন ছিল একটি এখন চুক্তির ফলে তা বৃদ্ধি পেয়ে চার-পাঁচ টিতে রুপান্তরিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়িতে সন্তু লারমা দলের ৭৩৯ জন অকেজো কিছু অস্ত্রসহ কথিত আত্মসমর্পণ করে। প্রায় ৬৪,০০০ জন শরণার্থী দেশে ফিরে আসে। অবশ্য এই পার্বত্য চুক্তির ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ পুরুস্কার পেয়েছে। যেমন,‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকা মন্তব্য করে, ‘এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের একটি বিদ্রোহের অবসান ঘটিয়েছে।’ ইউনেস্কো বাংলাদেশের এই পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে স্বীকৃতিস্বরূপ শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করেছে। কিন্তু চুক্তির মৌলিক প্রধান শর্ত ছিল, অবৈধ অস্ত্র পরিহার পরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। দুঃখজনক যে, চুক্তির ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও সন্তু লারমার জেএসএস সম্পূর্ণ অবৈধ অস্ত্র সরকারের নিকট আত্মসমর্পণ করেনি। বরং পূর্বের ন্যায় অবৈধ অস্ত্র নিয়ে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, হানাহানি ও খুন-গুম এবং অরাজকতা করে সমগ্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে নরকের পরিণত করেছে। এটা একপ্রকার রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল। তাদের প্রতি রাষ্ট্রের সহনশীল নীতিকে তারা যদি রাষ্ট্রের দূর্বলতা মনে করে তাহলে এটা তাদের ভুল চিন্তাধারা।

করণীয়:
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির সাথে যেহেতু বাংলাদেশ সংবিধানের সাংঘর্ষিক অবস্থান রয়েছে এবং চুক্তির পরেও উপজাতি সন্ত্রাসীরা তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেনি। সুতরাং এই সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ধারা সংবলিত চুক্তি সংশোধন পূর্বক পাহাড় এবং সমতলের জন্য একই নিয়ম চালু করতে হবে।
এক কেন্দ্রীক রাষ্ট্রব্যবস্থার বাংলাদেশে পাহাড়ের জন্য ভিন্ন আইন অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
কোন প্রকার সহানুভূতি না দেখিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীদের নির্মূলের জন্য সামরিক অভিযান চালু করতে হবে।

Address

Chittagong . Bangladesh
Chittagong

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when পার্বত্য সংবাদ-Parbatta sangbad posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Share