Islamic Quote BD

Islamic Quote BD Welcome to Islamic Quotes bd Our page is dedicated to sharing profound and uplifting quotes from the Holy Quran, the teachings of Prophet Muhammad (PBUH).

19/12/2024

যেসব পশু-পাখির গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ

মানুষ দুই ধরনের খাবার খেয়ে থাকে। তার একটি হলো আমিষ তথা পশুপ্রাণী ও পাখির গোশ্ত। আর নিরামিষ তথা উদ্ভিদ ও শাকসবজি। আমিষের প্রয়োজন পূরণে গোশ্‌তই বেশি পছন্দ করে মানুষ। আর গোশ্‌ত খেতে সুস্বাদু-মজাদার হওয়ায় খাদ্য তালিকার মধ্যে গোশ্‌তের প্রতি মানুষের আগ্রহও বেশি।
গোশ্‌তের চাহিদা পূরণে মানুষ পশু-প্রাণীর গোশ্‌তের সঙ্গে পাখির গোশ্‌তও পছন্দ করে থাকে। কিন্তু সব পশু-প্রাণী বা পাখির গোশ্‌ত খাওয়া ইসলামে বৈধ নয়।

যেসব পশুর গোশ্ত খাওয়া বৈধ নয়, তাহলো->> পশুপ্রাণী ও পাখির গোশ্‌ত খাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিদর্শন ও বিধানের দিকে তাকালেই হালাল-হারাম নির্ণয় করা সহজ হয়ে যায়। তাই যেসব প্রাণীতে হারামের কোনো চিহ্ন পাওয়া যাবে তা খাওয়া বৈধ নয়। আর তাহ হতে পারে হিংস্র দাঁতওয়ালা পশুপ্রাণী। যা খাওয়া হারাম। যেমন-‘বাঘ-সিংহ, নেকড়ে বাঘ, চিতা বাঘ, হাতি, কুকুর, শিয়াল, শূকর, বিড়াল, কুমির, কচ্ছপ, সজারু ও বানর ইত্যাদি।’

>> আবার এমন কিছু পাখি আছে যেগুলো হিংস্র হওয়ার কারণে সেগুলো খাওয়াও হারাম। যেমন-‘ঈগল, বাজ, শ্যেন, পেঁচা ইত্যাদি।’
গোশ্‌ত খাওয়ার ব্যাপারে ইসলামে যেসব পশু-পাখি খাওয়াকে হারাম করেছেন। সেসব পশুপ্রাণী ও পাখি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণাও দিয়েছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তাহলো-হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁতবিশিষ্ট প্রত্যেক হিংস্র পশুপ্রাণী এবং নখ দিয়ে শিকারকারী প্রত্যেক হিংস্র পাখি খেতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসলিম)

>> আবার এমন কিছু পশুপ্রাণী আছে যেগুলোর গোশ্‌ত খেতে নিষেধ করেছেন। সেগুলো খাওয়া হারাম। যেমন : গৃহপালিত গাধা। হাদিসে এসেছে-

হজরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খায়বারের যুদ্ধের দিন (গৃহপালিত) গাধার গোশ্‌ত খেতে নিষেধ করেছেন এবং ঘোড়ার গোশ্‌ত খেতে অনুমতি দিয়েছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
অন্য হাদিসে এসেছে-হজরত ইবনু আবি আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘খায়বারের যুদ্ধের দিন আমরা ভীষণ ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিলাম, আর তখন আমাদের পাতিলগুলোতে (গাধার গোশত) টগবগ করে ফুটছিল।তিনি (রাবী) বলেন, কোন কোন পাতিলের গোশত পাকানো হয়ে গিয়েছিল। এমন সময়ে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের ঘোষণাকারী এসে ঘোষণা দিলেন- ‘তোমরা (গৃহপালিত) গাধার গোশত থেকে একটুও খাবে না এবং তা ঢেলে দেবে।’(তখন) ইবনু আবি আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘ঘোষণা শুনে আমরা পরস্পর বলাবলি করলাম যে, যেহেতু গাধাগুলো থেকে খুমুস (এক-পঞ্চমাংশ) বের করা হয়নি এ কারণেই তিনি সেগুলো খেতে নিষেধ করেছেন।(আবার) কেউ কেউ বললেন, তিনি চিরদিনের জন্যই গাধার গোশত খেতে নিষেধ করেছেন। কেননা গাধা অপবিত্র জিনিস খেয়ে থাকে।’ (বুখারি)
কুরআনেও কিছু পশুপ্রাণীর গোশ্ত হারাম করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো শুকর। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তোমাদের জন্য মৃতপ্রাণী, রক্ত ও শূকরের গোশ্‌ত হারাম করা হয়েছে।’ (সুরা মায়েদা : আয়াত ৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন-‘(হে রাসুল!) আপনি বলে দিন, যা কিছু বিধান ওহির মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছেছে, আহারকারী যা আহার করে তাতে তার জন্য আমি কোনো হারাম খাবার পাই না; কিন্তু মৃত অথবা প্রবাহিত রক্ত অথবা শুকরের মাংস—এটা অপবিত্র অথবা অবৈধ। (সুরা আনআম : আয়াত ১৪৫)

>> নোংরা ও অপবিত্র কোনো কিছু খাওয়াও হারাম। তাই যে সব পশু ও পাখির মধ্যে নোংরা ও অপবিত্রতা পাওয়া যাবে তা খাওয়া যাবে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন-‘তাদের জন্য তিনি (রাসুল) পবিত্র বস্তু হালাল করেন আর অপবিত্র বস্তু হারাম করেন।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ১৫৭)
এ ঘোষণায় যা অন্তর্ভূক্ত, তাহলো-‘মৃত পশুপ্রাণী, পাখি, পোকা-মাকড়, কীট-পতঙ্গ, প্রবাহিত রক্ত এবং সেসব খাবারে কোনো ধরণের উপকাতিা নেই- বিষ, মদ, খড়কুটা, মাদকদ্রব্য, তামাক ও অন্যান্য নেশজাতীয় দ্রব্য ইত্যাদি।’

>> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব প্রাণী হত্যা করতে নিষেধ করেছেন কিংবা কোনো প্রাণীকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আবার হাদিসে যেসব পশুপাখীর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে সেগুলো খাওয়া বৈধ নয়। আর তাহলো-‘ইঁদুর, সাপ, টিকটিকি, বিচ্ছু, কাক, চিল, হুদহুদ, দোয়েল, ব্যঙ, পিঁপড়া ও মৌমাছি ইত্যাদি।’

মনে রাখা জরুরি>> যেসব পশুপ্রাণী ও পাখির গোশ্ত খাওয়াকে ইসলাম বৈধ ঘোষণা করেছে, সেসহ হালাল পশুপ্রাণী ও পাখি যদি আল্লাহর নামে জবাই করা না হয় তবে তা খাওয়াও হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘আর তোমরা তা থেকে আহার করো না যার উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়নি এবং নিশ্চয় তা সীমা লঙ্ঘন।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১২১)
যেসব পশুপ্রাণী ও পাখির শরীরের প্রবাহিত রক্ত নেই। সেগুলো খাওয়াও হারাম। যেমন- তেলাপোকা।

>> দুই ধরণের মৃত প্রাণী ও রক্ত (মাছ ও পঙ্গপাল এবং কলিজা ও প্লীহা) ছাড়া সব মৃত পশুপ্রাণী ও পাখির গোশ্ত এবং প্রবাহিত রক্ত খাওয়া হারাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘আমাদের জন্য দুই ধরণের মৃত প্রাণী ও দুই ধরণের রক্ত হালাল করা হয়েছে। মৃত প্রাণী হলো- মাছ ও পঙ্গপাল। আর রক্ত হলো- কলিজা ও প্লীহা।’ (মুসনাদে আহমদ, ইবনে মাজাহ)

>> হালাল প্রাণীর জবাই শুদ্ধ না হলে সে প্রাণীর গোশ্ত খাওয়াও হারাম। আবার জীবিত পশুকে জবাই করা ছাড়া তার গোশ্ত খাওয়াও মৃত প্রাণীর গোশ্ত খাওয়ার মতো হারাম।

>> >> পশু-পাখির মধ্যে যেগুলোর অধিকাংশ খাদ্য নাপাক, যেগুলোর ওপর আরোহন করা, সেগুলোর গোশ্ত ও ডিম খাওয়া এবং দুধ পান করাও হারাম।
উল্লেখ্য যে, কখনো কখনো হারাম পশুপ্রাণী ও পাখির গোশ্তা খাওয়া যাবে->> যদি কঠিন খাদ্য সংকট দেখা দেয় এবং কারো কাছে হালাল খাবার মজুদ না থাকে। আর খাবার না খেলে মারা যাবে তবে অনন্তর হারাম গোশ্তের প্রাণী থাকলে তার গোশ্ত খাওয়া যাবে।তবে এক্ষেত্রে শর্ত হলো-খাদ্য সংকটের এ অবস্থায় এমন পরিমাণ হারাম খাবার গ্রহণ করা যাবে, যতটুকু খেলে সে জীবিত থাকতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘সুতরাং যে বাধ্য হবে, অবাধ্য বা সীমালঙ্গনকারী না হয়ে, তাহলে তার কোনো পাপ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৭৩)

আল্লাহ তাআলা মানুষের জন্য যেসব পশু-প্রাণী ও পাখির গোশ্তে কল্যাণ ও উপকার রেখেছেন, তাই বান্দার জন্য হালাল করেছেন। তাই পবিত্র, স্বাস্থ্যসম্মত ও উপকারি সবধরনের খাবার গ্রহণে ইসলাম উৎসাহ দিয়েছে। যেসব খাবার অপবিত্র ও অবৈধ তা ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে।
আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার সব হারাম ঘোষিত পশুপ্রাণী ও পাখির গোশ্‌ত খাওয়া থেকে হেফাজত করুন। হালাল খাওয়ার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

18/12/2024

জ্বর-ব্যথায় করণীয় আমল ও দোয়া

সম্প্রতি সময়ে ডেঙ্গুর প্রভাবও বেড়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই জ্বর নিয়ে মানুষের মাঝে প্রবল উদ্বেগ ও দুঃশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে। তাই এ সময়ে সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই। যারা জ্বর ও ব্যাথ্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা। পাশাপাশি জ্বর ও ব্যাথ্যা মুক্তিতে আমল এবং দোয়া করা। জ্বর-ব্যাথ্যায় আমল ও দোয়া করার বিষয়টি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। জ্বর-ব্যাথ্যায় করণীয় আমল ও দোয়া কী?
জ্বরের সময় পড়ার দোয়াহজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্বর ও গলা ব্যাথায় এভাবে দোয়া করতে শিক্ষা দিতেন-বিসমিল্লাহিল কাবির, আউজুবিল্লাহিল আজিম, মিন শাররি কুল্লি ইরকিন নায়্যার, ওয়া মিন শাররি হাররিন নার।' (মুজামুল কাবির, তাবারানি, তিরমিজি)অর্থ : মহান আল্লাহর নামে, দয়াময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, শিরা-উপশিরায় শয়তানের আক্রমণ থেকে। শরীরের আগুনের উত্তাপের মন্দ প্রভাব থেকে।'

ব্যাথ্যামুক্ত থাকতে হাদিসের একাধিক দোয়া ও আমলের নির্দেশনা১. হজরত উসমান বিন আবুল আস আস-সাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে মারাত্মক ব্যথা নিয়ে উপস্থিত হলাম, যে ব্যথা আমাকে প্রায় অকেজো করে ফেলেছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেন-‘তুমি তোমার ডান হাত ব্যথার স্থানে রাখ, ৩ বার- بِسْمِ اللَّهِ বিসমিল্লাহ বল এবং ৭ বারবিসমিল্লাহি আউজু বিইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আঝিদু ওয়া উহাজিরু।অর্থ : আল্লাহর নামে আমি আল্লাহর অসীম সম্মান ও তাঁর বিশাল ক্ষমতার ওসিলায় আমার অনুভূত এই ব্যথার ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি।' (ইবনে মাজাহ)

নিয়ম : ব্যথার স্থানে ডান হাত রেখে ৩ বার বিসমিল্লাহ বলা এবং ৭ বার এ দোয়া পড়তে থাকা আর ব্যথার স্থান মর্দন করা।
২;হজরত উসমান ইবনু আবুল আস আস-সাকাফি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার কাছে এলেন। আমি তখন ধ্বংসাত্মক ব্যথার কারণে অস্থির ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ব্যথার জায়গাতে তোমার ডানহাত দিয়ে ৭ বার মর্দন কর এবং বল-বিসমিল্লাহি আউজু বিইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আঝিদু।'অর্থ : ‘আল্লাহর নামে আমি আল্লাহ তাআলার ইজ্জাত ও সম্মান, তাঁর কুদরাত ও শক্তি এবং তাঁর রাজত্ব, সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্বের কাছে আমার এই কষ্ট হতে মুক্তি প্রার্থনা করছি।'

বর্ণনাকারী বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশনা অনুযায়ী ডান হাত দিয়ে ব্যথার স্থানে মর্দন করছিলাম আর ৭ বার এ দোয়া পড়লাম। তাতে আল্লাহ তাআলা আমার পুরো ব্যথাই নিরাময় করে দিলেন। আমি এর পর থেকে আমার পরিবারের লোকদের এবং অন্যান্যদেরও এ নিয়মে আমল করার জন্য বলে আসছি।' (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, মুসলিম, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ)

নিয়ম : ব্যথার স্থানে ডান হাত দিয়ে মর্দন করতে থাকা এবং ৭ বার এ দোয়া পড়া।

৩. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, কোনো ব্যক্তি তার শরীরের কোনো অঙ্গে যদি ব্যথা অনুভব করতো অথবা শরীরের কোনো স্থানে ফোড়া দেখা দিতো বা জখম হতো তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ব্যথার স্থানে) আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলতেন-
বিসমিল্লাহি তুরবাতু আরদিনা বিরিকাতি বাদিনা লি-ইউশফা সাক্বিমুনা বি-ইজনি রাব্বিনা।'অর্থ : ‘আল্লাহর নামে আমাদের জমিনের মাটি এবং আমাদের কারো থুথুর সংমিশ্রণে আমাদের রবের নির্দেশে আমাদের অসুস্থ ব্যক্তিকে আরোগ্য দান কর।' (বুখারি ও মুসলিম)
নিয়ম : মাটিতে থুথু ফেলে তা নিয়ে ব্যথার স্থানে মর্দন করা আর এ দোয়া পড়া।

৪. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ব্যথার স্থানে) ঝাড়-ফুঁক করতেন। আর এ দোয়া পড়তেন-আমসাহল বাসা রাব্বান নাসি বিয়াদিকাশশিফাউ লা কাশিফা লাহু ইল্লা আংতা।'অর্থ : ‘ হে মানুষের পালনকর্তা! ব্যথা দূর করে দাও। আরোগ্য দানের ক্ষমতা শুধু তোমারই হাতে। এ ব্যথা তুমি ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারে না।' (বুখারি)

নিয়ম : ব্যথা হলে এ দোয়া পড়তে থাকা।

৫. মাথা ব্যাথায় এ দোয়া পড়া-লা ইউসাদ্দাউনা আনহা ওয়া লা ইউনযিফুন।'

মাথা ব্যাথা এবং জ্বরের সময় যতবার ইচ্ছা এ দোয়া পড়লে মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে জ্বর ও মাথা ব্যাথা থেকে হেফাজত করবেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জ্বর ও মাথা ব্যাথায় যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি দ্রুত নিরাময়ে উল্লেখিত দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। জ্বর ও মাথা ব্যাথা থেকে মুক্তি দিন। আমিন।

15/12/2024

পরিবারের জন্য অভিভাবক যে দোয়া করবেন

প্রিয় সন্তান। স্বামী কিংবা স্ত্রী। ‍যিনিই পরিবারের অভিভাবক, তিনি তার অধীনস্তদের জন্য আল্লাহর কাছে হৃদয়ের আবেগ-অনুভূতি দিয়ে দোয়া করবেন। তাদের কল্যাণে দোয়া করবেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে দোয়া করবেন। যেভাবে নিজ স্ত্রী-সন্তানের জন্য দোয়া করেছিলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। কী সেই দোয়া?
মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি অভিভাবকই নিজ নিজ পরিবারের জন্য দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ কামনায় কোরআনের গুরুত্বপূর্ণ এ দোয়াটি করবেন-

রাব্বানা লিয়ুক্বিমুস সালাতা ফাঝআল আফ-ইদাতাম মিনান নাসি তাহ্‌ওয়ি ইলাইহিম ওয়ারযুক্ব্‌হুম মিনাছ ছামারাতি লাআল্লাহুম ইয়াশকুরুন।’

অর্থ : হে আমার প্রভু! তারা (পরিবারের লোকজন) যাতে নামাজ প্রতিষ্ঠা করে। কাজেই তুমি মানুষের অন্তরকে তাদের প্রতি অনুরাগী (দয়াময়) করে দাও। আর ফল-ফলাদি দিয়ে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দাও; যাতে তারা (আল্লাহ তাআলার) শুকরিয়া আদায় করতে পারে।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৩৭)

কত চমৎকার দোয়া-ই না করেছিলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। যখন তিনি নিজ স্ত্রী ও সন্তানকে জনমাবনবহীন মরুভূমি মক্কা প্রান্তরে রেখে এসেছিলেন। আর মহান রব তাদের দান করলেন কল্যাণময় পরিচ্ছন্ন জীবন।
মহান আল্লাহ চাইলে এখনো অভিভাবকদের এ দোয়া কবুল করে তাদের পরিবার-পরিজনকে দান করতে পারেন কল্যাণময় জীবন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব অভিভাবককে কোরআনের শেখানো দোয়াটি বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। নিজ নিজ পরিবার-পরিজনের দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ কামনা করার তাওফিক দান করুন। সবাইকে নিরাপত্তা, দয়া, উত্তম রিজিক ও কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

14/12/2024

স্বামী মারা গেলে নাক-কান-হাতে গহনা পরা কি নিষিদ্ধ?

নারীদের স্বামী মারা গেলে নাকফুল, কানের দুল, হাতর চুড়ি বা কাকন খুলে ফেলা হয় কিংবা খুলে রাখতে বলা হয়। অঞ্চলভেদে মৃত স্বামীর দাফন-কাফনের চেয়ে স্ত্রীকে বিধবায় রূপান্তরের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব পায়। স্বামীর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে নারীর জন্য এসব গহনা খোলা কি জরুরি? এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী? স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর করণীয়ই বা কী?

স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর করণীয়
ইসলামিক স্কলারদের মতে, স্বামীর মৃত্যুতে নারীর ব্যবহৃত কোনো গহনা খোলা কিংবা গহনা ব্যবহার না করা বাধ্যতামূলক নয়। এ রকম কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনাও ইসলাম দেয় না। বরং স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রীর জন্য করণীয় মুল বিষয় হলো- ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করা। আর ৩ দিন শোক পালনের পাশাপাশি ইদ্দত পালনকালীন সময়ে সাজ-সজ্জা থেকে বিরত থাকা।
তাই নারীরা স্বামীর মৃত্যুর পর ৩দিন শোক পালন করবে। হাদিসের বর্ণনা অনুযায়ী ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করবে। অনেকে ৪০ দিন ইদ্দত পালনের কথা বলে থাকেন। না, ৪০ দিন নয় বরং ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন করতে হবে। আর ইদ্দত পালনকালীন পুরো সময়ে সাজ-সজ্জা থেকে নিজেকে বিরত রাখাও জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন-
আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে, তখন সে স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। তারপর যখন ইদ্দত পূর্ণ করে নেবে, তখন নিজের ব্যাপারে নীতি সঙ্গত ব্যবস্থা নিলে কোন পাপ নেই। আর তোমাদের যাবতীয় কাজের ব্যাপারেই আল্লাহর অবগতি রয়েছে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৩৪)
তবে শোক পালন ও সাজ-সজ্জা থেকে বিরত থাকার নির্দেশনা মানে এটি নয় যে, স্বামীর মৃত্যুর আগে থেকে ব্যবহৃত নাকফুল, কানের দুল, হাতের চুড়ি-কাকন কিংবা গলায় ব্যবহৃত গহনা খুলে ফেলতে হবে। আর এগুলো নাক-কান-গলা কিংবা হাতে থাকতে পারবে না। ইদ্দত পালন, শোক পালন ও সাজ-সজ্জা থেকে বিরত থাকা সম্পর্কে একাধিক হাদিসে এসেছে-

১. ইদ্দত-শোক পালনের নির্দেশ
হজরত উম্মে হাবিবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতিত অন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি সময় হিদাদ (শোক করা ও সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা) বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে (স্ত্রী) ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে।’ (বুখাবি)

২. রঙিন পোশাক
হজরত উম্মে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো স্ত্রীর স্বামী ব্যতিত অন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের অধিক শোক প্রকাশ করবে না। অবশ্য স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন শোক পালন করবে। আর এ সময় কোনো রঙিন কাপড় পরবে না। অবশ্য হালকা রংবিশিষ্ট পোশাক পরতে পারে। আর সুরমা ব্যবহার করবে না, এবং কোনরূপ সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহার করবে না। অবশ্য হায়েজ (মাসিক ঋতুস্রাব) থেকে পবিত্র হওয়ার পর সামান্য সুগন্ধি বস্তু ব্যবহার করতে পারে।’ (আবু দাউদ)

৩. সাজ-সজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
হজরত উম্মে সালামা রাদয়িাল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে স্ত্রীর স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙিন এবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিজাব ও সুরমা ব্যবহার না করে।’ (আবু দাউদ)

স্বামীর মৃত্যুর পর করণীয় ও ইদ্দত সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা কুরতুবি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-
হিদাদ পালনের অর্থ হলো- নারীরা তার ইদ্দতকালীন সময়ে সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদি, গহনাসহ পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে যাবতীয় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে।’ (তাফসিরে কুরতুবি)
স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর গহনা ব্যবহারে স্বামীর কবর আজাব হয় কিংবা ছেলে সন্তানের আয়ু কমে যায় আবার স্বামী জীবিত থাকাকালীন সময়ে গহন না পরলে স্বামীর আয়ু কমে যায়; এসবই ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু নয়। এসব ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার থেকে বিরত থাকাও নারীর জন্য একান্ত জরুরি।
সুতরাং স্বামী মারা গেলেই নারীকে গহনা খুলে ফেলতে হবে এটিকে ইসলামের নির্দেশ মনে করে তা বাস্তবায়নকে আবশ্যক মনে না করা। বরং কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা মোতাবেক ৪ মাস ১০ দিন ইদ্দত পালন, শোক পালন ও সাজ-সজ্জা থেকে বিরত থাকাই হলো ইসলামের বিধান।
আল্লাহ তাআলা ইসলামের বিধান ও বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

12/12/2024

জুমার রাত ও দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল

জুমা সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর থেকে শুক্রবার সূর্যাস্ত পর্যন্ত জুমার পরিধি। শুধু জুমার নামাজ আদায় করাকেই জুমার একমাত্র আমল মনে করার কোনো অবকাশ নেই, বরং জুমার রাত ও দিন জুড়ে রয়েছে আরো অনেক আমল।

১. বেশি ইবাদত করা
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার ইবাদতের জন্য জুমার দিনকে নির্বাচন করেছেন।
তাই এদিনে একটু বেশিই ইবাদত করা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমরা পৃথিবীতে সর্বশেষ আগমনকারীরাই কিয়ামতের দিন অগ্রবর্তী থাকব। তবে পার্থক্য হলো তাদের আমাদের পূর্বে আল্লাহর কিতাব প্রদান করা হয়েছে আর আমাদের তা প্রদান করা হয়েছে তাদের পরে। অতঃপর তাদের ইবাদতের জন্য এ দিনটি অর্থাৎ জুমার দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল।
কিন্তু তারা (ইহুদি-খ্রিস্টানরা) এ দিনটির ব্যাপারে মতবিরোধ করল। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে আমাদের সঠিক পথ প্রদর্শন করলেন। ইহুদিরা পরের দিন (শনিবার) আর খ্রিস্টানরা তার পরের দিন (রবিবার)-কে গ্রহণ করল। (বুখারি, হাদিস : ৮৩৬; মুসলিম, হাদিস : ২০১৫)

২. মাগরিব ও এশায় বিশেষ কিরাত
জুমার রাতে মাগরিব নামাজে সুরা কাফিরুন ও সুরা ইখলাস তিলাওয়াত করা আর এশার নামাজে সুরা জুমা ও সুরা মুনাফিকুল তিলাওয়াত করার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
জাবির ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার রাতে মাগরিব নামাজে সুরা কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন ও সুরা কুলহু আল্লাহু আহাদ তিলাওয়াত করতেন। আর এশার নামাজে সুরা জুমা ও সুরা মুনাফিকুল তিলাওয়াত করতেন। (আস-সুনানুল কুবরা, হাদিস : ৫৯৪০; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৮৪১)
উল্লেখ্য যে ইবনে হিব্বান (রহ.) হাদিসটির সনদকে দুর্বল বলেছেন।

৩. রাতে সুরা দুখান তিলাওয়াত : জুমার রাতে সুরা দুখান তিলাওয়াত করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি জুমার রাতে সুরা দুখান তিলাওয়াত করে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন।

৪. ফজর নামাজে বিশেষ কিরাত
জুমার দিন ফজরের ফরজ নামাজের প্রথম রাকাতে সুরা সিজদা আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা দাহর তিলাওয়াত করা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিন ফজর নামাজের প্রথম রাকাতে আলিফ লাম মিম তানজিল (সুরা সিজদা) আর দ্বিতীয় রাকাতে হাল আতা আলাল ইনসানি হি-নুম মিনাদ দাহরি লাম ইয়াকুন শাইয়াম মাযকুরা (সুরা আদ-দাহর) তিলাওয়াত করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৮৫১; মুসলিম, হাদিস : ২০৭২)

৫. সুরা কাহফ তিলাওয়াত
জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, যে জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় বিশেষ আলো দ্বারা আলোকিত হয়। (সুনানুল-বায়হাকি আল-কুবরা, হাদিস : ৫৭৯২)

৬. কিয়ামতের ভয়াবহতা স্মরণ
জুমার দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে। এ জন্য প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য দিনটিতে কিয়ামতের ভয়াবহতা স্মরণ করে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। আবু লুবাবা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) জুমার প্রসঙ্গ বলতে গিয়ে বলেন, জুমার দিন কিয়ামত সংঘটিত হবে। প্রত্যেক সম্মানিত ফেরেশতা, আকাশ, জমিন, বাতাস, পাহাড়-পর্বত ও সমুদ্র সব কিছুই জুমার দিন ভীতসন্ত্রস্ত থাকে। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১০৮৪)

৭. দরুদ পাঠ
সকাল-বিকাল সময় করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা উচিত। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জুমার দিন তোমরা আমার প্রতি বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা এটি উপস্থিতির দিন। এদিনে ফেরেশতারা (আল্লাহর বিশেষ রহমত নিয়ে) উপস্থিত হয়। তোমাদের যে কেউই আমার প্রতি দরুদ পাঠ করে তার দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত সে দরুদ থেকে অবসর না হয়। বর্ণনাকারী বলেন, আমি বললাম, মৃত্যুর পরেও কি দরুদ আপনার কাছে পেশ করা হবে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, মৃত্যুর পরও দরুদ আমার কাছে পেশ করা হবে। কারণ, আল্লাহ তাআলা নবীদের দেহ ভক্ষণ করা মাটির প্রতি হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর নবী সর্বদাই জীবিত, তাঁকে রিজিক দেওয়া হয়। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৬৩৭)

৮. দান-সদকা
জুমার দিন সাধ্যমতো দান-সদকা করা উচিত। এদিনের দান-সদকা অন্যদিনের চেয়ে ফজিলতপূর্ণ। কা’ব (রা.) বলেন, আমি কি তোমাদের জুমার দিন সম্পর্কে বলব না? জুমার দিন দান-সদকা করা অন্যান্য দিনে দান-সদকা করার চেয়ে অতি উত্তম। [জাদুল মায়াদ ফি হাদয়ি খায়রিল ইবাদ (বৈরুত : মুয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪১৫ হি., ১৯৯৪ খ্রি.), পৃষ্ঠা-৪১২]

৯. পিতা-মাতার কবর জিয়ারত
পিতা-মাতা মারা গিয়ে থাকলে কমপক্ষে জুমার দিন তাদের কবর জিয়ারত করা উচিত। মুহাম্মদ ইবনে নুমান মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক জুমার দিন তার পিতা-মাতা অথবা কোনো একজনের কবর জিয়ারত করে তাকে ক্ষমা করা হয় এবং সে পিতা-মাতার আনুগত্যশীল হিসেবে পরিগণিত হয়। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৭৯০১)

১০. আসর থেকে মাগরিব দোয়া-মোনাজাত
জুমার দিন একটি সময়ে আল্লাহ তায়ালা বান্দার দোয়া কবুল করে থাকেন। এ সময়টির ব্যাপারে বিভিন্ন মত থাকলেও বেশির ভাগের মতে—সময়টি আসর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। (দ্র. তিরমিজি, হাদিস : ৪৮৯)

সূর্যাস্তের মাধ্যমে জুমার দিনের সমাপ্তি ঘটে। কাজেই এই প্রান্তিক পর্যায়ে বেশি বেশি দোয়া, ইস্তিগফার এবং আল্লাহর কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করা খুবই জরুরি। যেন তা কবুল হয়ে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের আলোচনায় বলেছেন, জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলমান বান্দা নামাজ অবস্থায় সে সময়টি লাভ করে এবং আল্লাহর কাছে কোনো কল্যাণ প্রার্থনা করে আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দান করেন। আর তিনি হাত দ্বারা সে সময়ের স্বল্পতার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৩৫; মুসলিম, হাদিস : ৮৫২)

জুমার দিন আসরের পর থেকে মাগরিব নামাজের অপেক্ষায় থেকে মাগরিব পর্যন্ত আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও কল্যাণ প্রার্থনা করলে তা কবুলের আশা করা যায়।

09/12/2024

আনন্দ-বেদনায় মুমিনের দোয়া

হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা এবং সুখ ও দুঃখ প্রতিটি মানুষের জীবনের নিত্যসঙ্গী। মুমিন সব সময় আল্লাহর প্রতি রাজি এবং খুশি। সে সব সময় মহান রবের কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করে। হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা এবং সুখ-দুঃখে মুমিন আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতায় দোয়া করে। কী দোয়া করে মুমিন?
আনন্দ ও বেদনার পুরো সময়টিতে নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হাদিসে দিকনির্দেশনা এসেছে। সব সময় আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা ও আশ্রয় চাওয়ার দোয়া শেখানো হয়েছে। তাহলো-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আদলা ফিল গাদাবি ওয়ার রিদা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্রোধ ও সন্তুষ্টি উভয় অবস্থায়ই মধ্যমপন্থা কামনা করি।

কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনা হলো, সব সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রন করা। মহান রবের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। কোরআনে এসেছে-
সুন্নায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে উপদেশ দেয়া হয়েছে। আবেগ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-
এটা এ জন্য যে, তোমরা যা হারিয়েছ তাতে যেন তোমরা বিমর্ষ না হও এবং যা তিনি তোমাদেরকে দিয়েছেন তার জন্য তোমরা আনন্দিত না হও। ‌গর্বকারী ও অহংকারীদের আল্লাহ পছন্দ করেন না।’ (সুরা হাদিদ : আয়াত ২৩)

মুমিন মুসলমানের উচিত নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের উপর আমল করা। তিনি বলেছেন, ‘আমাকে দু’টি শব্দ উচ্চারণ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। তাহলো-
দুঃখের সময় বোকামিসুলভ (হায়! হায়!) শব্দ
আর অন্যটি হলো (আনন্দের অতিমাত্রায়) পাপসুলভ (হুররে! বা হাহ্হা) শব্দ।
(আল্লাহর পক্ষ থেকে) নেয়ামত পেলে (পাপ হয় এমন শব্দে) ‘হুররা বা হাহ্হা’ করা। আর বিপদের সময় বোকিামিবশতঃ হায়!, আফসোস করা। অর্থাৎ বড় নিঃশ্বাস ফেলা।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা এবং সুখ ও দুঃখ সর্বাবস্থায় আল্লাহর ওপর ভরসা ও ধৈর্য ধারণ করার মাধ্যমে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার তাওফিক দান করুন। গর্ব ও অহংকার থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। দুঃখ ও আনন্দের অতিশয্যে তাঁর অবাধ্যতা থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

08/12/2024

ঘরে শয়তানের আক্রমণ ঠেকানোর আমল ও দোয়া

কুরআনুল কারিমের ঘোষণা- ‘নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’। এটি মহান আল্লাহর বাণী। আসলেই শয়তান মানুষের চিরশত্রু, যে ঘরে বা যে মজলিশে সে প্রবেশ করে ঐ ঘরের পরিবেশকে সমূলে বিনষ্ট করে দেয়। পরিবারের সদস্যদের মাঝে সৃষ্টি করে শত দ্বিধা-বিভক্তি। যা মানুষের সুখ-শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দেয়। ধংস করে দেয় সুন্দর আত্ম-সামাজিক অবস্থান।
তাই নিজ নিজ ঘরকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজত করতে প্রয়োজন ইসলামের দিকনির্দেশনা মেনে জীবন-যাপন করা। যে আমল ও দোয়ায় নিজ নিজ ঘরকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হেফাজত করা যাবে তা তুলে ধরা হলো-

> ঘরে সালামের প্রচলন করা বাহির থেকে ঘরে প্রবেশ করতেই ঘরে অবস্থানরত পরিবারের লোকদের সালাম দেয়া। আল্লাহ বলেন-- ‘যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করবে তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম করবে অভিবাদন স্বরূপ যা আল্লাহর কাছ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র। (সুরা নূর : আয়াত ৬১)- ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- তুমি যখন তোমার ঘরে প্রবেশ করবে তখন সালাম দেবে তা তোমার জন্য এবং তোমার পরিবারের জন্য বরকত হবে।’ (তিরমিজি)

> ঘরে প্রবেশের সময় এ দোয়া পড়াبِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا وَ بِسْمِ اللهِ خَرَجْنَا وَ عَلَى اللهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَاউচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি ওলাজনা ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।’ (আবুদাউদ
খাবারের সময় দোয়া পড়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ’যখন কোনো ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করার সময় এবং খাবার খাওয়ার সময় দোয়া পড়ে, তখন শয়তান বলে আজ এখানে তোমাদের রাতযাপন এবং রাতের খাবারের কোনো সুযোগ নেই। (মুসলিম)

> সুরা বাকারা তেলওয়াত করারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ‘সবকিছুরই একটি চুড়া থাকে আর কুরআনের চুড়া হল সুরা আল-বাক্বারা। শয়তান যখন সুরা আল-বাকারার তেলাওয়াত শোনে তখন সে ঐ ঘর থেকে বের হয়ে যায়। যেখানে তা তেলওয়াত করা হয়।’ (মুসতাদরেকে হাকেম)
অশ্লীল বিনোদন থেকে বিরত থাকানিজ নিজ ঘরকে গান-বাজনা এবং গান-বাজনার সরঞ্জাম থেকে মুক্ত রাখা। কেননা গান-বাজনা হলো শয়তানের আওয়াজ। আল্লাহ তাআলা বলেন-’আল্লাহ বলেন চলে যা, অতপর তাদের মধ্য থেকে যে তোর অনুগামী হবে, জাহান্নামই হবে তাদের সবার শাস্তি-ভরপু র শাস্তি। তুই সত্যচ্যুত করে তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস স্বীয় আওয়াজ (বাদ্য-বাজনা) দ্বারা, স্বীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদেরকে আক্রমণ কর, তাদের অর্থ-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে শরিক হয়ে যা এবং তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দে। ছলনা ছাড়া শয়তান তাদেরকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয় না।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৬৩-৬৪) আল্লাহর জিকির যেমন শয়তানকে দূরে রাখে তেমনিভাবে গান এবং বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ রহমতের ফেরেশতাগণকে দূরে রাখে। আর ঘর থেকে যখন ফেরেশতা বের হয়ে যায়, তখন সেখানে শয়তান তার রাজত্ব কায়েম করে।
ঘরে কুকুরের প্রবেশ থেকে সাবধান থাকানিজ নিজ ঘরকে কুকুরের প্রবেশ থেকে হেফাজত করা। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ’যে ঘরে ছবি এবং কুকুর থাকে সেঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (বুখারি)
ঘরে ছবি ও জীব-জন্তুর মূর্তি না থাকাছবি এবং বিভিন্ন জীব জন্তুর মূর্তি থেকে ঘরকে পরিচ্ছন্ন রাখা। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ঘরে মূর্তি বা ছবি থাকে সেখানে ফেরেশতা প্রবেশ করে না।’ (মুসলিম)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত ঘরে অবস্থানকালীন সময়ে ইসলামের দিকনির্দেশনা মেনে জীবন-যাপন করা। তাতে শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে মুমিন। কুরআন ও সুন্নাহর দিকনির্দেশনায়ও তা ফুটে ওঠেছে।
তাই উপরোল্লিখিত কর্মগুলো পরিহার করে রহমত বরকত লাভে সচেষ্টা হওয়াই মুমিন মুসলমানের একান্ত জান।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ নৈকট্য অর্জন করার জন্য হাদিসের ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

07/12/2024

ফেতনামুক্ত মৃত্যু ও ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া

নবিজি বিশ্ববাসীন জন্য রহমত। উম্মতের মায়ায় নবিজি কেঁদেছেন। তাদের দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণে উপদেশ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। দুনিয়ার সব অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার দোয়া শিখিয়েছেন। এসবই ছিল উম্মতের জন্য ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এমনকি তিনি উম্মতকে ফেতনামুক্ত মৃত্যু এবং ক্ষমা প্রার্থনায় চমৎকার একটি দোয়ায় সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন। কী সেটি?
নবিজি ক্ষমার দোয়া করেছেন এবং দারিদ্রদের ভালোবাসাও কামনা করেছেন। যখন কোনো জাতির ওপর পরীক্ষাস্বরূপ কোনো ফেতনা আসে, সে ফেতনা থেকে বাঁচার দোয়াও করেছেন। নবিজির দোয়াটি হলো-
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ফিলাল খাইরাতি ওয়া তারকাল মুনকারাতি ওয়া হুব্বাল মাসাকিনি ওয়া আন তাগফিরালি ওয়া তারহামানি ওয়া ইজা আরাদতা ফিতনাতা ক্বাওমিন ফা-তাওয়াফ্ফানি গাইরা মাফতুন। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুব্বাকা ওয়া হুব্বা মান ইয়ু হিব্বুকা ওয়া হুব্বা আমালীন ইয়ুক্বাররিবু ইলা হুব্বিকা।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমাকে সৎ কাজ করার, অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার ও দরিদ্রদের ভালোবাসার তাওফিক দিন। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। আমার উপর দয়া করুন। আর আপনি যখন কোনো জাতিকে কোনো ফেতনায় (পরীক্ষা) ফেলার ইচ্ছা করেন, তখন আমাকে ফেতনাহমুক্ত মৃত্যু দান করুন।

হে আল্লাহ! আমি আপনার ভালোবাসা প্রার্থনা করি। যাঁরা আপনাকে ভালোবাসে, তাঁদের ভালোবাসাও প্রার্থনা করি এবং এমন আমলের ভালোবাসা প্রার্থনা করি, যেই আমল আমাকে আপনার ভালোবাসার কাছে পৌঁছে দেবে।’ (তিরমিজি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ফেতনার জামানায় দারিদ্রের জামানায় আমলের কমতির জামানায় তারই ওপর ভরসা করার তাওফিক দান করুন। উল্লেখিত বিষয়গুলোতে তারই সাহায্য লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

06/12/2024

হিজরি দ্বিতীয় মাস ‘সফর’ কি অশুভ?

সফর হিজরি সালের দ্বিতীয় মাস। তিনটি হারাম বা যুদ্ধ-নিষিদ্ধ মাস অর্থাৎ জিলকদ, জিলহজ ও মহররমের পরের মাসটি সফর। সফর অর্থ শূন্য বা খালি। ইসলামপূর্ব যুগে আরবরা বিরতির পর এই মাসে আবার যুদ্ধ-বিগ্রহে বা সফরে বের হয়ে যেতো। শহরগুলো হয়ে যেতো অধিবাসী শূন্য। এ কারণে এই মাসের নাম ‘সফর’ রাখা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
জাহেলি যুগে আরবরা মনে করতো, সফর অশুভ মাস। এ মাসে বিপদ-আপদ আসে, যুদ্ধ-বিগ্রহ হয়। ইসলামের আবির্ভাবের পর রাসুল (সা.) এ ধারণা বাতিল করে দিয়ে বলেন, لا طِيرة ولا هامة ولا صَفَر‘শুভ-অশুভ লক্ষণ বলে কিছু নেই। পেঁচায় কুলক্ষণ নেই এবং সফর মাসে অকল্যাণ নেই।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭৫৭)
ইসলামের দৃষ্টিতে সব সময়ই ভালো ও বরকতময়। মানুষের খারাপ কাজে সময় খারাপ হতে পারে। সময় নিজে নিজে অশুভ বা অকল্যাণকর হতে পারে না।
রাসুল (সা.) সময়কে মন্দ বলতে বা গালি দিতে নিষেধ করে বলেছেন, لا يسب أحدكم الدهر فإن الله هو الدهر ‘তোমরা কেউ যেন সময়কে গালি না দাও, কারণ আল্লাহই সময়।’ (সহিহ মুসলিম: ৫৮২৭)অর্থাৎ সময়ের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক আল্লাহ নিজেই। যা হয়, আল্লাহর ইচ্ছায় হয়। সময় অশুভ হয় না বা সময়ের কোনো ক্ষমতাও নেই।
ইসলামের ইতিহাসে মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাফল্য ও বিজয় অর্জিত হয়েছিল সফর মাসে। সপ্তম হিজরির সফর মাসে নবিজির (সা.) নেতৃত্বে মুসলমানরা খায়বার বিজয় করে। ষোড়ষ হিজরির সফর মাসে হজরত ওমরের (রা.) খেলাফতকালে মুসলমানরা পারস্য বা সসনীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী মাদায়েন বিজয় করেছিল।
অন্য সব মাসের মতো সফর মাসেও ইবাদত ও নেক আমলের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। প্রতি চন্দ্রমাসের মধ্যবর্তী তিন দিন অর্থাৎ ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজা রাখা মুস্তাহাব। সফর মাসেও রোজাগুলো আমরা রাখতে পারি।
মিলহান আল কায়সী (রা.) বলেন, كان رسولُ اللهِ -صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ- يأمُرُنا أنْ نصومَ البيضَ: ثلاثَ عشْرةَ، وأربعَ عشْرةَ، وخمسَ عشْرةَ وقال هنَّ كهيئةِ الدهرِরাসুল (সা.) আমাদের আইয়ামে বিজ অর্থাৎ তেরো, চৌদ্দ ও পনেরো তারিখে রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং বলতেন এটি সারাবছর রোজা রাখার সমান। (সুনানে আবু দাউদ: ২৪৪৯)
রাসুল (সা.) প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন। রোজাগুলোও আমরা রাখতে পারি। এ ছাড়া নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত ও আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে সফর মাসের দিনগুলোকে বরকতময় করে তুলতে পারি।

05/12/2024

অধিক সম্মান ও মর্যাদা লাভের আমল

হাদিসে পাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তাআলার ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি এ গুণবাচক নামগুলোর জিকির করবে; সে জান্নাতে যাবে।’
দৈনন্দিন জীবনে আল্লাহ তাআলার এ গুণবাচক নামগুলোর জিকির আজকার ও আমলে রয়েছে আলাদা আলাদা ফজিলত ও উপকারিতা।
আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম সমূহের মধ্যে (اَلْمَاجِدُ) ‘আল-মাঝেদু’ একটি। আল্লাহ তাআলার নূর লাভে এবং অধিন সম্মান ও মর্যদা লাভের গুরুত্বপূর্ণ আমল এটি।
আল্লাহর গুণবাচক নাম (اَلْمَاجِدُ) ‘আল-মাঝেদু’-এর জিকিরের আমল ও ফজিলত তুলে ধরা হলো-
উচ্চারণ : ‘আল-মাঝেদু’অর্থ : ‘অত্যাধিক মর্যাদাসম্পন্ন; বড় দাতা’
আল্লাহর ‍গুণবাচক নাম (اَلْوَاجِدُ)-এর আমল

ফজিলত>> যে ব্যক্তি একাকী আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْمَاجِدُ) ‘আল-মাঝেদু’-এর জিকির করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে; ওই ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহ তাআলার নূর পয়দা হয়।
>> যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার পবিত্র গুণবাচক নাম (اَلْمَاجِدُ) ‘আল-মাঝেদু’-এর জিকির নিয়মিত বেশি বেশি করে; ওই ব্যক্তি সৃষ্টি জীবের কাছে অধিক সম্মান ও মর্যাদা লাভ করে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়া ও পরকালে তাঁর ভালবাসা লাভে এবং দুনিয়ায় মানুষের নিকট অত্যাধিক সম্মান ও মর্যাদার সৌভাগ্য অর্জনে তাঁর গুনবাচক নাম (اَلْمَاجِدُ) ‘আল-মাঝেদু’-এর জিকির বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

04/12/2024
04/12/2024

নেক সন্তানের জন্য যেসব আমল করবেন

বাবা-মার জন্য সন্তান মহান আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। নিঃসন্তান দম্পতিই সন্তান না থাকার সঠিক উপলব্ধি করতে পারেন। আল্লাহ বড়ই মেহেরবান। তিনি যাকে ইচ্ছা সন্তান দান করতে পারেন। এজন্য সুস্থ ও উত্তম সন্তান পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে রহমত কামনা করা। তার রহমতেই মানুষ সন্তান পেয়ে থাকেন। এজন্য কিছু আমল করা যেতে পারে। কোরআন-সুন্নাহতে যে আমলগুলো করার দিকনির্দেশনা ও উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তাহলো-

দোয়া করা
আল্লাহর কাছে সন্তান চেয়ে বেশি বেশি দোয়া করা। এ দোয়ার বরকতে নবি-রাসুলগণ বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান পেয়েছিলেন। সে দোয়াগুলো আল্লাহ তাআলা হুবহু কোরআনুল কারিমে এভাবে তুলে ধরেছেন-
رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ اَزۡوَاجِنَا وَ ذُرِّیّٰتِنَا قُرَّۃَ اَعۡیُنٍ وَّ اجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِیۡنَ اِمَامًا
উচ্চারণ: ‘রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াঝিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আইয়ুনাও ওয়াঝআলনা লিলমুত্তাক্বিনা ইমামা।’
অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন; যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদের মুত্তাকিদের নেতা বানিয়ে দিন’।’ (সুরা ফুরকান: আয়াত ৭৪)
আবার যাদের সন্তান হয় না, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত সুন্দর একটি দোয়া। বার্ধক্যে হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালামের সে আবেদনও মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলা এভাবে তুলে ধরেছেন-
رَبِّ لَا تَذَرۡنِیۡ فَرۡدًا وَّ اَنۡتَ خَیۡرُ الۡوٰرِثِیۡنَ
উচ্চারণ: ‘রাব্বি লা তাজারনি ফারদাও ওয়া আংতা খায়রুল ওয়ারিছিনা।’
অর্থ: ‘হে আমার রব! আমাকে একা রেখো না, তুমি তো শ্রেষ্ঠ মালিকানার অধিকারী (অতএব আমাকে উত্তম ওয়ারিশ/সন্তান দান করুন)।’ (সুরা আম্বিয়া: আয়াত ৮৯)

হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম সন্তানের জন্য আরো একটি দোয়া করেন। সেই দোয়ায় আছে আল্লাহর প্রতি বিনয় ও নেক সন্তান পাওয়ার আশা। তাহলো-
رَبِّ هَبۡ لِیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ ذُرِّیَّۃً طَیِّبَۃً ۚ اِنَّکَ سَمِیۡعُ الدُّعَآءِ
উচ্চারণ: ‘রাব্বি হাবলি মিল্লাদুংকা জুররিয়াতান ত্বাইয়েবাতান; ইন্নাকা সামিউদ দোয়া।’
অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! আমাকে তোমার পক্ষ থেকে পবিত্র সন্তান দান করো, নিশ্চয়ই তুমি দোয়া শ্রবণকারী।’ (সুরা আল-ইমরান: আয়াত ৩৮
নেক সন্তান পাওয়ার সুন্নত আমল
নেক সন্তান পাওয়ার জন্য শয়তানের আক্রমণ থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। তাই সহবাসের আগে সব সময় আল্লাহর কাছে এভাবে আবেদন করা-
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্বতানা।’
অর্থ: ‘আল্লাহর নামে, হে আল্লাহ, আমাদেরকে শয়তান থেকে দূরে রাখুন এবং আমাদের যা রিজিক (সন্তান) দেবেন তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন।
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দাম্পত্য মিলনের আগে যদি কেউ এ কথা বলে তবে তাদের মিলনে সন্তান জন্ম নিলে তাকে শয়তান ক্ষতি করবে না। (বুখারি)

গুনাহ থেকে বিরত থাকা
নেক সন্তান বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় অনুগ্রহ। তাই নেক সন্তান পেতে স্বামী-স্ত্রীকেও নেককার হতে হবে। তাদের উভয়কে নেক আমল করতে হবে। গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। তবেই মহান আল্লাহ তাদের দান করবেন নেক সন্তান।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সবাইকে নেক সন্তান দান করুন। নিঃসন্তান দম্পতিকেও দান করুন নেক সন্তান। নেক সন্তান পেতে কোরআন-সুন্নাহর আমলগুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Address

Chokbazar
Chittagong
47600

Telephone

60176958629

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when Islamic Quote BD posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Videos

Share