
02/10/2025
ভুয়া পুলিশের ভয় দেখিয়ে ওটিপি চাওয়া — নতুন ধরনের সাইবার প্রতারণা, ভুক্তভোগীর সর্তকবার্তা
লিখা:-
মেহেদী মাসুদ করিম ভুইয়া
এক অনলাইন-ভিত্তিক প্রতারণা চক্র নতুনভাবে বাংলাদেশী ব্যবহারকারীদের টার্গেট করছে—হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে নিজেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের (পুলিশ সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ এবং সেনাবাহিনীর ডি জি এফ আই) কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দান করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে ওটিপি/ভেরিফিকেশন কোড গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এক ব্যক্তি (নাম প্রকাশ না) দুইবার এমন ধাঁচের ফোন কল পেয়েছেন; প্রথম কলটি তিনি দাবি করেন পুলিশের সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে এবং দ্বিতীয়টি সেনাবাহিনীর ডি জি এফ আই থেকে। ঘটনার বিস্তারিত নথিভুক্ত করেছেন মেহেদী মাসুদ করিম ভুইয়া।
ভুক্তভোগী জানান, প্রথম কলটি গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আসে। ফোনে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি বলেন, হোয়াটসঅ্যাপে একটি গ্রুপ খোলা হয়েছে যেখানে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে অবমাননাকর লেখা যাচ্ছে এবং গ্রুপটির অ্যাডমিন হিসেবে ভুক্তভোগীর ফোন নম্বর দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, “আপনি এই গ্রুপ থেকে বের হয়ে যান”—এবং ভুক্তভোগীর ফোনে আনা ওটিপি কোড যাচাই করার কথা বলে স্পিকার চালু করতে বলেন। ভুক্তভোগী স্পষ্টভাবে বলার পর কল কেটে দেন এবং বিষয়টি পরিবারের সচেতন একজন সাবেক ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারের (ভুক্তভোগীর বউয়ের কাজিন) কাছে জানানো হয়। ওই কর্মকর্তা পরে মেসেজে লেখেন—“ভুয়া।”
ভুক্তভোগী বলেন, কিছুক্ষণ পর একই নম্বর থেকে আবার কল আসে এবং গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে অবিলম্বে সহযোগিতা না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এরপর তিনি আবার আজ মঙ্গলবার দুপুরে অন্য এক নম্বর থেকে কল পান—এবার কল দিয়ে ব্যক্তি নিজেকে সেনাবাহিনীর ডি জি এফ আইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন এবং একই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ওটিপি চাওয়া চেষ্টা করা হয়। ভুক্তভোগী দ্রুত প্রত্যাখ্যান করায় কলকারী হঠাৎ করেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
ঘটনার মূল ফাঁদটি হলো: ফোনে ভুক্তভোগীর ফোনে আসা একক ওটিপি (OTP) বা ভেরিফিকেশন কোডটি আদতে কখনোই কাউকে জানানো উচিত নয়। অপরাধী এই কোড পেলে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট, ব্যাংকিং বা অন্যান্য সেবা দখল করে নিতে পারে। একই সঙ্গে সরকারি পরিচয় ব্যবহার করে বাজে থানায় রিপোর্ট করার ভীতি দেখিয়ে মানুষকে দ্রুত সিদ্ধান্তে বাধ্য করা হচ্ছে।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, “মিনিট তিনেক পরই ওই নাম্বার থেকে আবার কল: ‘আপনি তো আর কল দেননি। আমাদের তো রিপোর্ট করতে হবে। আপনি সহযোগিতা না করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনাকে গ্রেফতার করা হবে।’ আমি তখন আমার বউয়ের কাজিন ডিআইজি মাজহারুল হক ভাইয়ের কথা বলতেই কলটা কেটে দেয়।” পরে মেসেজ করে তিনি জানিয়েছেন—“ভুয়া।”
কী করণীয় — বাধ্যতামূলক সতর্কতা ও উপদেশ
১. ওটিপি/ভেরিফিকেশন কোড কাউকে কখনো না দেখান বা বলবেন না। সরকারি কর্মকর্তা কখনোই ফোনে OTP বা পাসওয়ার্ড চায় না।
২. ফোনে ক্ষমতা-ভিত্তিক হুমকি মানবেন না। ফৌজদারি বা অ্যাকাউন্ট বিষয়ক জটিলতা হলে তারা অফিসিয়াল চ্যানেলে—অফিসে বা ইমেলে—নোটিফাই করবে; সরাসরি হোয়াটসঅ্যাপে হুমকি দিয়ে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা অনুচিত।
৩. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কল/মেসেজের স্ক্রিনশট সংরক্ষণ করুন এবং নম্বর ব্লক করুন।
৪. স্থানীয় থানায় ও সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চে রিপোর্ট করুন। (যদি সম্ভব, অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা ফোনলাইনে যোগাযোগ করুন—ফোনে কল করলে নম্বর যাচাই করুন)।
৫. অ্যাকাউন্ট সিকিউরিটি বাড়ান: দুই ধাপের শনাক্তকরণ (2FA) চালু রাখুন, শক্ত পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজন হলে লগইন সেশন লক আউট/চেঞ্জ করুন।
৬. পরিবার ও পরিচিতদের সতর্ক করুন। একই রকম কল/মেসেজ আসলে চেনাজানা কাউকে বিভ্রান্ত না হতে বলুন।
ভুক্তভোগী মেহেদী মাসুদ করিম ভুইয়া এই ঘটনাটি সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেছেন এবং জনসাধারণকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে এটি প্রচার করা হচ্ছে। প্রতারণা নতুন কৌশলে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন—যদিও এই ধরনের প্রতারণা ভারতে বেশি রিপোর্ট হয়, এখন বিদেশি প্রতারণা চক্র বাংলাদেশে নতুনভাবে সক্রিয় হচ্ছে বলে তাদের ধারণা।
পাঠকগণ কেউ যদি একই ধরনের কল বা মেসেজ পান, তাহলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করুন এবং অনলাইন নিরাপত্তা বিষয়ক পদক্ষেপ দ্রুত নিন।