18/02/2023
📖 প্রিয় নবী(ﷺ)'র স্ব-শরীরে মিরাজ : তিনি আল্লাহ তায়ালাকে স্বচক্ষে দেখেছেন
==================================
মিরাজ রাসূলে আকরাম, সৈয়দুল মুরসালিন, খাতিমুন নবীয়্যিন (ﷺ) এর শ্রেষ্ঠতম মুজিযা। মহান রাব্বুল আলামিন নিজেই তাঁকে স্বশরীরে মিরাজ করিয়েছেন। তিনি মিরাজ রাতে রব তায়ালাকে নিজের চর্মচোখে দেখেছেন। এর দলিল নিম্নরূপ: পবিত্র কুরআনের আলোকে, আল্লাহ তায়ালা বলেন:
سبحان الذي اسري بعبده ليلا من المسجد الحرام الي المسجد الاقصي الذي باركنا حوله لنوريه من اياتنا إنه هو السميع البصير-
পবিত্র ও মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর খাস বান্দাকে রাত্রির কিয়দাংশে ভ্রমন করিয়েছেন মসজিদে হারাম (বায়তুল্লাহ শরিফ) থেকে মসজিদে আকসায়। যার চতুর্পার্শ্ব আমি বরকতময় করেছি। তাঁকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। [বনি ইসরাইল, ১৫ পারা।]
উক্ত আয়াতে কয়েকটি শব্দ দ্বারা স্বশরীরে মিরাজ প্রমাণিত হয়। যেমনঃ ১. সুবহান ২. আল্লাজি আসরা ৩. বিআবদিহি ৪. আয়াতিনা ৫. ইন্নাহু হুয়াস সামিউল বাসির।
এগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নরূপ:
১. আল্লাহ তায়ালা (সূরা বনী ইসরাইলের প্রথম আয়াতে) سبحان শব্দ দ্বারা মেরাজ ও ইসরার ঘটনাটি বর্ণনা দিয়ে আরম্ভ করেছেন। এর শাব্দিক অর্থ আল্লাহ যাবতীয় দোষ ত্রুটি থেকে পূত-পবিত্র। বর্ণনার শুরুতে এ শব্দ আনার দ্বারা আরবি বাকরীতি হিসেবে বিস্ময়ের বহিঃপ্রকাশ করা হয়েছে। এভাবে এ শব্দ এনে আল্লাহ তায়ালা এ কথাই বুঝিয়েছেন যে, মেরাজ ও ইসরার বিষয়টিকে কোনো জ্ঞানপাপী, নির্বোধ যতোই অসম্ভব মনে করুক না কেন, যেহেতু আল্লাহ তায়ালার নিকট কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। তাই মেরাজ ও ইসরার ঘটনাও তাঁর নিকট মোটেও অসম্ভব অসাধ্য নয়। আল্লাহ তায়ালা সব ধরণের দুর্বলতা, অক্ষমতা ও অপারগতা থেকে বিমুক্ত। তিনি সকল কিছুই করতে সক্ষম। জ্ঞানহীন মাথামোটা অবোধ সমাজ মেরাজের ঘটনাকে অসম্ভব ও অবাস্তব মনে করুক কিন্তু আল্লাহ তায়ালার অসীম ক্ষমতা ও ইচ্ছার সম্মুখে কোনো কিছুই অসম্ভব, অবাস্তব ও অসাধ্য নয়।
২. সেই সাথে এ শব্দ এসে বুঝিয়েছে, এ ঘটনা নৈমিত্তিক সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। বরং এটি অসাধারণ একটি ঘটনা। উল্লেখযোগ্য মুজেজা, অলৌকিক বিষয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধিকর এক বিশেষ দান। যা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত আর কারো জীবনে অর্জিত হয় নি। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা তাঁর অসীম কুদরতে হুযুরকে বিনিদ্র অবস্থায় পার্থিব কায়া ও দেহযোগে উর্ধ্বজগতের সকল ধাপ সফর করিয়েছেন। সকল সাহাবি, তবেয়ি এবং পূর্ববর্তী সকল ইমাম ও আলেমদের এটিই স্বীকৃত বিশ্বাস।
৩. এ আয়াতে اسرا শব্দটিও লক্ষ্যনীয়। শব্দটির অর্থ রাতের বেলায় সফর করা। সেই সাথে লক্ষনীয় যে, শব্দটি দৈহিকভাবে বিনিদ্র অবস্থায় সম্পাদিত সফরেই ব্যবহৃত হয়, স্বপ্নযোগে ভ্রমন বা কাশফ কারামতের মাধ্যমে পরিভ্রমনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় না। যেমন হযরত লুত আলায়হিস সালামের ঘটনা সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে:
قالوا يا لوط إنا رسل ربك لن يصلوا إليك فأسر بأهلك بقطع من الليل ولا يلتفت منكم أحد الا امراتك إنه مصيبها ما أصابهم إن موعدكم الصبح أليس الصبح بقريب-
তারা লুতকে বললো, আমরা আপনার রবের নিকট হতে প্রেরিত।তাই তারা (আপনার ক্ষতি করার জন্য) আপনার কাছে আসতেই পারবে না। তাই আপনি রাতের কোনো অংশে আপনার পরিবার পরিজনসহ এ এলাকা থেকে চলে যান। (সূরা হুদ: ৮১)।
হযরত মুসা আ. এর আলোচনায় বলা হয়েছে, فاسر بعبادي ليلا তুমি আমার বান্দাদেরকে রাতের বেলায় (মিসর থেকে) নিয়ে চলে যাও।[সূরা বনি ইসরাইল]
তা ছাড়া মিরাজের ঘটনা যদি স্বপ্নযোগে সংঘটিত হতো তাহলে তা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মুজেজার অন্তর্ভুক্ত হতো না। কেননা, স্বপ্নযোগে উর্ধ্বাকাশে ভ্রমন বা জান্নাত-জাহান্নাম দর্শনতো ইহুদি, খৃষ্টান, অমুসলিম যে কারো সম্ভব হতে পারে। কেবল নবী এ রূপ স্বপ্ন দেখতে সক্ষম হবেন বিষয়টি তো এমন নয়। অন্য সকল নবী ও রাসূলের উপর আমাদের নবীর শ্রেষ্ঠত্বের যে সকল কারণ রয়েছে তন্মধ্যে দুটি কারণ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য।
এক. ইহজগতে মেরাজ সংঘটন এবং দুই. আখিরাতে শাফায়াত। মেরাজ যদি স্বপ্নযোগে সাধিত কোনো বিষয় হয়ে থাকে তাহলে তা নিশ্চয় এত অধিক মর্যাদার কারণ হবে না। দৈহিকভাবে সম্পাদিত হলেই কেবল তা অন্য নবীর তুলনায় উজ্জল এক বৈশিষ্ট্য বলে পরিগণিত হবে। অনুরূপ যখন কাফিররা মিরাজের কথা শ্রবণ করে রাসূলে দু’আলম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করার চেষ্টা করছিলো এমনকি কয়েকজন নও মুসলিমও যখন রাসূলের শান-মান ও মর্যাদা বুঝতে না পেরে বেঁকে গিয়েছিলো। আল্লাহ তায়ালা তাদের ধারণা নিরসনার্থে ইরশাদ করেন, তিনি (আল্লাহ) মিথ্যাবাদি রাসূল প্রেরণ করা থেকে পবিত্র এবং নিঃসন্দেহে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্বাধিক সত্যবাদী। এ জন্য তো হযরত সিদ্দিকে আকবর মিরাজকে স্বীকৃতি দেওয়ার কারণে সিদ্দিক উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।
৩. أسراء শব্দের অর্থ যদিও রাতের বেলা সফর করা, কিন্তু তারপরও আয়াতে ليلا শব্দটি এসেছে। শব্দটি আরবি বাক্যরীতি অনুয়ায়ি যেহেতু অনির্দিষ্টভাবে (نكره)এসেছে, তাই অল্প কিছু বুঝাবে। তাই আয়াতের অর্থ হবে : আল্লাহ তায়ালা তার অসীম কুদরতে রাতের অল্প কিছু সময়ের মধ্যে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত পৃথিবীতে এবং সপ্তাকাশেরও উপরে উর্ধ্বজগতে ভ্রমন করিয়ে পুনরায় নিজ আবাসে ফিরিয়ে দেন।
৪. بعبده এটাও রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের স্বশরীরে মিরাজ গমনের উৎকৃষ্ট প্রমাণ। আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াতে আবদিহি উল্লেখ করে এ কথাটি ব্যক্ত করেছেন যে, মিরাজ নিছক রূহানি বা স্বপ্নযোগে হয় নি বরং তা স্বশরীরেই হয়েছে। কুরআন, হাদিস ও আরবের পরিভাষায় এমন কোনো ব্যবহার বিদ্যমান নেই যাদ্বারা এ কথা প্রমাণ করা যায় যে, কারো জীবদ্দশায় তার রূহকে আবদ বা বান্দা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বরং এর বিপরীতে কুরআন, হাদিস ও আরবি পরিভাষায় এমন অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যে, যখন কাউকে তার জীবদ্দশায় আবদ বলা হয়েছে তদ্বারা রূহসহ শরীরকেই বুঝানো হয়েছে। দেখুন! আল্লাহ তায়ালা মুসা আলায়হিস সালামকে নির্দেশ দিয়েছেন:
فاسري بعبادي ليلا হে মুসা! আমার বান্দাদের রাত্রিতে নিয়ে যাও। এখানে بعبادي দ্বারা শারিরিকভাবে ভ্রমনই উদ্দেশ্য।
এছাড়া আল্লাহ তায়ালা বলেন, أرايت الذي ينهي عبدا اذا صلي- তুমি কি তাকে দেখেছো যে, বান্দা বা আবদকে (মুহাম্মদ দ.) নামায পড়ার সময় বাঁধা প্রদান করে। এখানেও عبدا দ্বারা শরীর ও রূহ উভয়ের সমষ্টি বুঝানো হয়েছে। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: لما قام عبد الله يدعوه-....যখন আল্লাহর বান্দা (মুহাম্মদ (দঃ) দণ্ডায়মান হয়েছে যে অবস্থায় আল্লাহকে ডাকছেন অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদত করেছেন। এখানেও আবদ দ্বারা স্বশরীরই উদ্দেশ্য। [সাইদ আহমদ কাজেমি, মিরাজুন্নবি দ. ১২-১৩।]
সুতরাং উদ্ধৃত বর্ণনানুসারে আয়াতের অর্থ দাঁড়াচ্ছে: আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে স্বশরীরে জাগ্রতাবস্থায় রাতের কিয়দাংশে ভ্রমন করিয়েছেন। প্রমাণিত হলো যে, রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মিরাজ স্বশরীরেই হয়েছে। একে রূহানি বা স্বাপ্নিক বলা সম্পূর্ণ ভ্রান্তিমূলক।
৪. اياتنا: শব্দটি এ কথারই প্রমাণবহন করে যে, সকল নিদর্শন মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা স্বীয় হাবিব রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দেখিয়েছেন। আর এ সব হয়েছিলো জাগ্রতাবস্থায়। যদি স্বপ্নযোগে হতো তাহলে এ মুজেযা এবং নিদর্শনাবলি কেন অস্বীকার করা হয়েছিলো-স্বপ্নে তো অনেকে অনেক কিছু দেখে আর কিছু নও মুসলিমকে কেন মুরতাদ হতে হয়েছিলো?
৫. কতেক মুফাস্সির إنه এর সর্বনামকে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের জাত বা সত্তার দিকে ফিরিয়েছেন। সুতরাং এর অর্থ হবে-নিশ্চয়ই তিনি [প্রিয় নবী দ.] সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। নকবাতুল ইলিছে বর্ণিত আছে: রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথাবার্তা শুনেছেন যা তাঁর সাথে করা হয়েছিলো এবং সেসব জিনিস দর্শন করেছেন যা তাকে দেখানো হয়েছিলো। রূহুল বয়ান [উর্দু অনুবাদ, তাফসিরে ফুয়ুজুর রহমান] ২৭: ১৬১।]
হাদিস শরিফের আলোকে
1. রইসুল মুফাস্সেরিন হযরত ইবনে আব্বাস র. কে এ আয়াত.. وما جعلنا الرؤيا التي لريناه الا فتنة للناس-জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, هي رؤيا عين اريها رسول الله صلي الله عليه وسلم ليلة اسري به الي بيت المقدس-সমুদয় দৃশ্য স্বচক্ষে বাস্তবরূপে প্রত্যক্ষভাবে অবলোকন ও পরিদর্শন করাই উদ্দেশ্য। অর্থাৎ এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে পরিদর্শন করানোর যে কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা স্বশরীরেই পরিদর্শন ছিলো। রূপক বা স্বপ্ন দেখার অর্থ উদ্দেশ্য নয়। যে রাতে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বায়তুল মুকাদ্দাসে উপনীত হয়েছিলেন সে রাতেই আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক প্রিয় নবীকে পরিদর্শন করার ঘটনা ঘটেছিলো। [বুখারি, ৫৫০।]
এ থেকে বুঝা গেলো যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের মিরাজ স্বশরীরেই হয়েছিলো। যদি তা স্বশরীরে না হতো তাহলে হুযুর নিখুঁজ হলেন কিভাবে? আর আবু বকরের (র.) আশ্চর্য হওয়ারও বা কি ছিলো?
2. হযরত আনাস (র.) থেকে বর্ণিত। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন সকালে মুশরিকদেরকে মিরাজের ঘটনা বর্ণনা করলেন, তারা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (র.০ এর নিকট গিয়ে বললো, হে আবু বকর! তোমাদের নবী বলছেন যে, তিনি না কি গতরাতে এক মাসের দূরত্বের সফর করে পুনরায় ফিরে এসেছেন। এখন তুমিই বলো তিনি এগুলো কি বলছেন? হযরত আবু বকর (র.) বললেন, তিনি যদি সত্যিই এরূপ বলে থাকেন তবে সত্য বলছেন? হযরত আবু বকর (র.) বললেন, তিনি যদি সত্যিই এরূপ বলে থাকেন তবে সত্য বলেছেন। আমি তা বিশ্বাস করি। আমি তাঁর এর চেয়েও অসম্ভব কথাও বিশ্বাস করি। তিনি আসমান থেকে আগত বিষয়ের সংবাদ দেন আর আমি তাও বিশ্বাস করি। [ইবনে কাসির, ৪: ২৪৮।]
3. বায়হাকির বর্ণনায় আছে, মুশরিকদের এক ব্যক্তি বললো, বায়তুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে আমি সবেচেয় অধিক জ্ঞাত। সে বললো, হে মুহাম্মদ! আপনি বলুন, বায়তুল মুকাদ্দাসের দালান, অবস্থা, স্বরূপ ও সেটি পাহাড়ের কতটুকু নিকটে? তখন আল্লাহ তায়ালা বায়তুল মুকাদ্দাসকে তুলে এনে তাঁর সামনে রাখলেন তিনি চোখে দেখে দেখে বাইতুল মুকাদ্দাস সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেন। লোকটি শুনে বললো, মুহাম্মদ নিজের দাবীতে সত্য প্রমাণিত হয়েছে। [বায়হাকি, দালায়েলুন নবুয়ত, ২: ৩৯৬।]
4. ইমাম বুখারি হযরত জাবির র. থেকে বর্ণনা করেন, নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন কুরাইশরা আমার মিরাজকে অস্বীকার করলো তখন আমি কাবার মিজাবে রহমতের নিচে দাঁড়িয়ে গেলাম।আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য বায়তুল মুকাদ্দাসকে উন্মুক্ত করে দিলেন। অতঃপর দেখে দেখে আমি এর নিদর্শনসমূহের সংবাদ দিলাম। [বুখারি, ১: ৫৪৮।]
সুতরাং উক্ত হাদিসসমূহ হতে প্রমাণিত হলো যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র মিরাজ স্বশরীরে জাগ্রতাবস্থায় হয়েছিলো।
দিদারে ইলাহি: মেরাজে প্রিয় নবী আল্লাহ তায়ালাকে স্বচক্ষে দেখেছেন
১. আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ولقد راه نزلة اخري [তিনি (রাসূল দ.) আল্লাহ তায়ালাকে দু’বার দেখেছেন। উক্ত আয়াতে هসর্বনামের مرجع হলেন আল্লাহ। [রূহুল বয়ান, ২৭: ২৪৬।] তাহলে উক্ত আয়াতের অর্থ হবে তাই যা আমি বর্ণন করেছি।
হাদিস শরীফে আছে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালাকে দু’বার দেখেছেন। একবার অন্তরের চোখে আর একবার চর্ম চোখে। [রূহুল মাআনি, ২৭: ৪৬। মাওয়াহেবে লাদুনিয়া, ২: ৩৭।]
হযরত হাসান বসরি শপথ করে বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন।
ইমাম বুখারি এ আয়াতের ব্যাখ্যায় একটি বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- حتي جاء سدرة المنتهي ودنا للجبار رب العزة فتدلي حتي كان منه قاب قوسين او ادني অর্থাৎ এমন কি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছেন এবং রাব্বুল ইজ্জত জাব্বার তাঁর নিকটবর্তী হলেন, অতঃপর আরো নিকটবর্তী হলেন, ফলে তিনি তাঁর থেকে দুই ধনুকের কিংবা এর চেয়ে অধিক নিকটবর্তী হলেন।
২. আল্লাহ তায়ালা বলেন: عند سدرة المنتهي-এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরকারকগণ বলেছেন: ان المراد انه راي ربه سبحانه অর্থাৎ বস্তুত এ মতের পক্ষেই সিদ্ধান্ত যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে দেখেছেন।[ নাওভী, শরহে মুসলিম, ৯৭।]
৩. আল্লাহ তায়ালা বলেন:
ثم دني فتدلي فكان قاب قوسين او ادني অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হয়েছেন, এমন কি তার ও আল্লাহর মধ্যবর্তী দুই ধনুক অথবা এর চেয়েও নিকটবর্তী। [সূরা নাজম, ১৩]
আল্লামা আলূসি এ আয়াত থেকে দিদারে ইলাহি প্রমাণ করেছেন। এর সমর্থনে তিনি বুখারির এ হাদিসটি পেশ করেনঃ فتدلي حتي كان منه قاب قوسين او ادني অর্থাৎ অতঃপর আল্লাহ তায়ালা নিকটবর্তী হয়েছেন। এরপর তিনি অতি নিকটে ডেকেছেন। এমন কি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম দু’ ধনুকের অথবা এর চেয়েও নিকটবর্তী হয়েছেন। অতঃপর রাসূলের প্রতি ওহী করা হলো যাতে ৫০ ওয়াক্ত নামাযও শামিল ছিলো। [রূহুল মাআনি ২৭ পারা, ৪৫, বুখারি, ২: ১১২০, মুসলিম, ১: ৯২।]
অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালার দিদার প্রমাণকারী ওলামায়ে কেরাম এ আয়াত থেকে দিদারে ইলাহি প্রমাণ করেছেন। যেমন হযরত ইবনে আব্বাস ও অন্যন্য ওলামায়ে কেরাম।
৪. আল্লাহ তায়ালা বলেন: ما كذب الفواد وما راي তিনি যা কিছু দেখেছেন তার অন্তকরণ তা অস্বীকার করে নি। [সূরা নাজম, ১১]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় অনেক মুফাস্সেরিনে কেরাম বলেছেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ কে যে দেখেছেন তা তার অন্তঃকরণ অস্বীকার করে নি। অর্থাৎ তিনি যে আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করেছেন তা বাস্তবিকই ছিলো।ইমাম নবভি এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ذهب الجمهور من المفسرين الي ان المراد انه راي به سبحانه অর্থাৎ অধিকাংশ মুফাসসেরিনে কেরামের মতে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছেন। [নাওভী, শরহে মুসলিম, ৯৭।]
দিদারে ইলাহি : হাদিস শরিফের আলোকে
১. হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ان محمدا صلي الله عليه وسلم راي ربه مرتين مرة ببصره ومرة بفواده অর্থাৎ নি:সন্দেহে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তার রবকে দুইবার দেখেছেন একবার কপালের চোখ দ্বারা আর একবার অন্তরের চোখের দ্বারা।খাসায়েসে কুবরা, 1: 161]
২. হযরত আবদুর রহমান আয়িশ বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, رايت ربي عز وجل في احسن صورة অর্থাৎ আমি আমার প্রতিপালককে সুন্দরতম আকৃতিতে দেখেছি। [খতিব তিবরিজি, মিশকাত, পৃ. 69.]
৩. হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ان الله اصطفي ابراهيم بالخلة واصطفي موسي بالكلام واصطفي محمدا بالرؤية অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহিম আলায়হিস সালামকে বন্ধুত্ব, মুসা আলায়হিস সালামকে আলাপ এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দিদার বা সাক্ষাৎ দ্বারা স্বাতন্ত্র্য দান করেছেন। যুরকানি আলাল মাওয়াহেব, 6: 117]
৪. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: ان محمدا صلي الله عليه وسلم راي ربه عز وجل অর্থাৎ নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহিয়ান গরিয়ান রবকে দেখেছেন।[যুরকানি আলাল মাওয়াহেব, 6: 118]
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল বলেন, انا اقول بحديث ابن عباس بعينه راي ربه راه راه حتي انقطع نفسه অর্থাৎ আমি ইবনে আব্বাসের হাদিস অনুযায়ি আকিদা পোষণ করে বলছি, তিনি স্বীয় রবকে এ চক্ষু দ্বারা দেখেছেন। দেখেছেন দেখেছেন এমনকি এটা বলতে বলতে তাঁর শ্বাস বন্ধ হয়ে গেলো। [শেফা শরিফ, ১: ১২০]
হযরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আল্লাহাকে দেখছেন? তিনি বললেন, আমি তাকে যেখানেই দেখেছি তিনি নূরই।
ইকরামা হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, رايت ربي تبارك وتعالي অর্থাৎ আমি আমার মহান রবকে দেখেছি। [আহমদ, আল-মুসনাদ, ১: ২৮৫]
হযরত ইবনে আব্বাস থেকে অনুরূপ হাদিস ইমাম তিরমিযি, ইমাম মুসলিম, ইবনে হিব্বান, ইবনে জরির তাবারি, ইমাম হাকেম, ইমাম হাফিজ নূরুদ্দিন হায়ছমি প্রমুখ বড় বড় মুহাদ্দিসগণ বর্ণনা করেছেন।
দিদারে ইলাহি সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের অভিমত
সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের মধ্যে কেবল প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় দিদার ও দর্শন দ্বারা ধন্য করেছেন। এ ব্যাপারে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম একমত।
হযরত সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম প্রিয়নবী কর্তৃক দিদারে ইলাহির পক্ষে। এদের মধ্যে হযরত ইবনে আব্বাস, হযরত আনাস এবং ইকরামা প্রমুখের বর্ণিত হাদিস আমি পেশ করেছি।
এ ছাড়া হযরত আবু যর, হযরত হাসান র. ও হযরত আনাস ইবনে মালিক থেকেও এ সম্পর্কে বর্ণনা পাওয়া যায়।
ইবনে আব্বাসের সকল শিষ্যই আল্লাহ তায়ালাকে দেখার মতাবলম্বি ছিলেন।
হযরত কাবুল আহবার ইমাম জাহেরি ও মুয়াম্মার প্রমূখ সকলে আল্লাহকে দেখার দৃঢ় মত প্রকাশ করেছেন। বিখ্যাত তাবেয়ি হযরত হাসান বসরি শপথ করে বলেছেন যে, لقد راي محمد صلي الله عليه وسلم ربه অর্থাৎ মেরাজ রাতে আল্লাহর প্রিয় মাহবুব সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দিদার লাভ করেছেন। [শেফা শরিফ, ১: ১২০।]
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ইরশাদ করেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে দেখেছেন, আল্লাহকে দেখেছেন, আল্লাহকে দেখেছেন, এভাবে বলতে বলতে তাঁর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসলো। [শেফা শরিফ, ১: ১২০।]
আমি উপরে উল্লেখ করেছি, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: رايت ربي عز وجل في احسن صورة আমি আমার রবকে সুন্দরতম সূরতে দেখেছি। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মোল্লা আলী কারী দিদারের ইলাহির পক্ষে বিভিন্ন দলিল দিয়েছেন। হযরত ওয়াফি র. হযরত কাব আহবার র. হতে বর্ণনা করেন, হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহ তায়ালাকে দুইবার দেখেছেন। কাশফুল আসরারে রয়েছে কতেক ওলামায়ে কেরাম বলেছেন হুযুর আকরাম (দ.) আল্লাহ তায়ালাকে চর্ম চোখে দেখে নি। তাদের একথা হাদিস ও বিশুদ্ধ সত্যের পরিপন্থী। কেননা, বিশুদ্ধ সত্যানুযায়ি রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালঅকে দেখেছেন। আবুল হাসান আলী ইবনে ইসমাইল আল আশরাফি র. বর্ণনা করেন, সাহাবাযে কেরামের এক বিরাট অংশের অভিমত যে, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে স্বচক্ষেই প্রত্যক্ষ করেছেন। এরপর বলেন, আম্বিয়ায়ে কেরামের মধ্যে এক এক জনকে এক একটি নিদর্শন প্রদান করা হয়েছে। অনুরূপ আমাদের নবীকেও আল্লাহর দর্শন দ্বারা মহিমাম্বিত ও মর্যাদাবান করা হয়েছে। মোটকথা, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দিদার লাভ করা তাঁর জ্ঞানের শেষ স্তর। [তাফসিরে রূহুল বয়ান, উর্দু তরজমা-ফয়ুজুর রহমার ২৭: ১৫৯।]
আইনুল মানীতে রয়েছে যে, আমরা স্বচক্ষে দর্শন এজমা দ্বারা প্রমাণ করেছি। [তাফসিরে রূহুল বয়ান, উর্দু তরজমা-ফয়ুজুর রহমার ২৭: ১৫৯।]
দেওবন্দের শীর্ষ আলেম আনোয়ারা শাহ কাম্মিরি লিখেছেন: আমার মত হলো-সূরা আননাজমে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর জন্য আল্লাহর দর্শনই উদ্দেশ্য যা ইমাম আহমদের মাযহাব। [ফয়যুল বারি ২: ২০।]
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি র. বলেন, মিরাজের রাতে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ালা কপালের চোখে দেখেছেন কিনা তা সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। হযরত আয়েশা তা অস্বীকার করেন। কিন্তু ইবনে আব্বাস এর পক্ষে মত দিয়েছেন। এ দু’জনের প্রত্যেকের সাথে একদল সাহাবি যোগ দিয়েছেন। এভাবে তাবেয়িদের মধ্যেও দু’দলে বিভক্ত হয়েছেন। আবার একদল এ ব্যাপারে নিরাবতা পালন করেছেন। তবে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম হযরত ইবনে আব্বাসের মত গ্রহণ করেছেন। ইমাম নওবি বলেন, অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের পছন্দনীয় মত হলো প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মিরাজের রাতে নিজে চোখে আল্লাহ তায়ালার দর্শন লাভ করেছেন। আর ইবনে আব্বাস এ মত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনে বলেছেন। পক্ষান্তরে হযরত আয়িশা এটাকে কেবল নিজস্ব ইজতিহাদ দ্বারা অস্বীকার করেছেন। ইবনে ওমর ইবনে আব্বাসের কাছে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, হ্যাঁ। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তায়ারাকে দেখেছেন আর ইবনে ওমর তার কথাটি মেনে নিয়েছেন। অধিকাংশ সুফিয়ায়ে কেরাম মতও অনুরূপ। [আশয়াতুল লুমআত, ৪: ৪৩১।]
কেউ ইমাম আহমদ বিন হাম্বলকে জিজ্ঞাসা করলেন, হযরত আয়িশা বলেছেন, যে ব্যক্তি মনে করে যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বীয় রবকে দেখেছেন তাহলে সে আল্লাহর উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। এখন কোন দলিল দ্বারা হযরত আয়িশার মত খণ্ডন করা যাবে? উত্তরে তিনি বলেন, স্বয়ং রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র বাণী দ্বারা খÐন করা হবে। কেননা, তিনি বলেছেন, আমি আমার রবকে দেখেছি। রাসূলের বাণী আয়েশার বাণীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। [মাদারেজুন্নবুয়ত, ১: ২০৮। সীরাতে হালবিয়া, ৪৫২।]
মোট কথা, ইমাম হাসান বসরি, ইবনে দাইইয়া, ইমাম আহমদ, আবুল হাসান আশয়ারি, ইমাম নওভী, ইমাম কাযি আয়াজ, শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি, শায়খ আবদুল কাদির জিলানি, শিহাবউদ্দিন সোহরাওয়ার্দি, সাহল ইবনে আবদুল্লাহ তাশতারি, মুজাদ্দিদে আলফে সানি প্রমুখ ওলামা মাশায়েখ ইবনে আব্বাসের মত গ্রহণ করেছেন। [শেফা শরিফ, পৃ. ১২০৩, ১২২০, শরহে মুসলিম, ৯৭, সিরাতে হলবিয়া, ৪৫২, মাদারেজুন্নবুয়ত, ১: ২০৮-২০৯।]
[অপরিবর্তীতভাবে শেয়ার করুন]