17/09/2025
ফ্রান্সে যাচ্ছে দেশী মুড়ি ও সুগন্ধি চাল #দেশী মুড়ি ও সুগন্ধি চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে। গুণে মানে ও স্বাদে অনন্য হওয়ায় বিদেশে এ দুই পণ্যের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এবার উন্নত দেশ হিসেবে খ্যাত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যাচ্ছে মুড়ি-সুগন্ধি চালের চালান। তবে, সুগন্ধি চাল ও লাকড়ির চুলায় কড়াই দিয়ে হাতে ভাজা মোটা সাইজের দেশীয় মুড়ির কদর দেশেও ব্যাপক। দেশে চাহিদা থাকলেও বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক আয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হিসেবে ভুমিকা রাখছে এ দুই পণ্য।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে কনটেইনারে ফ্রান্সে রপ্তানি হচ্ছে ড্রাই ফুডের একটি চালান। বাংলাদেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘ওয়াক অ্যান্ড এসএ লিমিটেড’ ১৮ হাজার কেজি ওজনের এক কনটেইনার ড্রাই ফুডের চালান ফ্রান্সে পাঠাচ্ছে। এ চালানের ৪০ ফুটের একটি কনটেইনার আগামী কয়েকদিনের মধ্যে জাহাজে তোলার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে পণ্যচালানটি ফ্রান্সে পাঠানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের বেসরকারি কনটেইনার ডিপো ইনকনট্রেড ডিপোতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে মঙ্হলবার ( ১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পণ্য চালানের প্যাকেট কাভার্ড ভ্যান থেকে কনটেইনারে ভর্তি করা হয়। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস ও বন্দরের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বা শুল্কায়ন শেষে কনটেইনারটি জাহাজে তোলা হবে। আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে অথাৎ আগামী অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখে এ পণ্য চালান ফ্রান্সের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের হাতে পৌঁছবে।
ফ্রান্সের প্যারিসে অবস্থিত “ওয়াক ফুড লিমিটেড” বাংলাদেশ থেকে ১৮ হাজার কেজির এ পণ্য চালান আমদানি করছে। এ চালানে রয়েছে মুড়ি, সুগন্ধি চাল. তেজপাতা, শুকনা মরিচ, শুকনা শীমের বিচি ও ধনিয়া। এর মধ্যে চিনিগুড়া বা সুগন্ধি চাল ১৩ হাজার ৫০০ কেজি, মুড়ি রয়েছে ১৫শত কেজি, শীমের বীজ রয়েছে প্রায় এক হাজার কেজি, শুকনা মরিচ রয়েছে প্রায় এক হাজার কেজি। অন্যান্য পণ্য রয়েছে আরও এক হাজার কেজির মতো।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ করে ড্রাই ফুড বিশ্বের অন্যান্য দেশেও পাঠানো সম্ভব। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে কোয়ালিটি পণ্য পাঠাতে হয়। পণ্যের গুণ ও মানের ক্ষেত্রে এসব দেশ কোন ধরণের ছাড় দেয় না। তাই সঠিক মান নিয়ন্ত্রণ রেখে কোয়ালিটি পণ্য ফ্রান্সে পাঠাতে হবে। কোন পণ্য চালান যেন ওই দেশ থেকে ফেরত না আসে। চালান ফেরত আসার সাথে তারা ওই পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয়। তাই সতর্কতার সাথে অবাধ বাণিজ্যের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
এ পণ্য চালান ফ্রান্সে পাঠানের জন্য চট্টগ্রামের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট (সিঅ্যান্ডএফ) প্রতিষ্ঠান স্পিড লিংক লিমিটেড রপ্তানির কার্যক্রমটি পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার হাফিজুর রহমান মিন্টু জানান, ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশী নানা পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এর আগে আমরা মাটির তৈরি জিনিস পত্র পাঠিয়েছিলাম। সবজির চালান পাটিয়েছিলাম। এবার যাচ্ছে চিনিগুড়া চাল বা সুগন্ধি চাল ও মুড়ি। এর সাথে অন্যান্য কিছু পণ্য রয়েছে শুকনা লাল মরিচ, তেজপাতা, শীমের বিচি ইত্যাদি। বিশ্বের নানা দেশে বাঙ্গালিরা থাকেন। তাদের থেকে দেখে বিদেশিরাও এ খাবার খেতে অভ্যস্ত হচ্ছেন।
ওয়াক অ্যান্ড এসএ লিমিটেডের অপারেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ হাসান মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘ ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে ড্রাই ফুডের চালান পাঠানো একটি বড় সফলতা। চট্টগ্রামে কোনো আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান না থাকায় নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে প্যাকেজিং করা হয়েছে। প্রত্যেকটি পণ্য আমদানিকারকের চাহিদা ও নির্দেশনা মতে প্যাকেট করা হয়েছে। পণ্যের প্যাকেটে যাতে বাতাস না থাকে সে ভাবে প্যাকেজিং করা হয়। এ পণ্য ক্রেতাদের হাতে পৌঁছলে টাটকা মনে হবে। বিশেষ করে মুড়ি কুড়কুড়ে মচমচে রাখার ব্যবস্থা থাকতে হয়। এছাড়াও কোয়ালিটি পণ্য অবশ্যই নির্বাচন করে পাঠাতে হয়। এ পণ্য চালানটি কনটেইনারে ভর্তি করা হয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে জাহাজে উঠে যাবে। এই পণ্য চালান প্রায় দেড়মাস পর ফ্রান্সে পৌঁছাবে।
ওয়াক এন্ড এসএ লিমিটেডের হেড অব ফাইন্যান্স মোনাজের মো. মিনহাজ খবরের কাগজকে বলেন, আমরা সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করেছি। সঠিক পণ্য নির্বাচন করে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। দেশের কোন প্রতিষ্ঠান পণ্য চালান ফ্রান্সে পাঠাতে চাইলে আমরা অবশ্য সহযোগিতা করবো। আমরা চাই বিদেশের পণ্য চালান রপ্তানির মাধ্যমে দেশের রাজস্ব বৃদ্ধি পাক, আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। আমাদের রপ্তানি করা পণ্য ফ্রান্সের বিভিন্ন মার্কেট ও সুপার শপের বিক্রি হয়। আমাদের বায়াররা যখন যেটি পাঠাতে বলে তখন সেটি আমরা পাঠায়। এতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, খাবারের পণ্য চালানে সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে খুবেই গুরুত্ব দিতে হবে কোয়ালিটি কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে। সঠিক পণ্য গুণগত মান ঠিক রেখে রপ্তানি করতে হবে। আমাদের দেশ থেকে আরও বেশি পণ্য ইউরোপে পাঠানো গেলে দেশের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেত। দেশের উন্নয়নে অবদান থাকতো রপ্তানিকারকদের। এছাড়া বিশ্বের অন্যান্যে দেশেও যাতে ড্রাই ফুড রপ্তানি করা যায় সে উৎস খোঁজতে হবে আমাদের। কারণ বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে একটি দেশের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না। যে প্রতিষ্ঠান এ পণ্য চালান ফ্রান্সে পাঠাচ্ছে তারা অন্য দেশেও পাঠানোর উদ্যেগ গ্রহণ করুক। রপ্তানিকারকদেরও যাবতীয় সুযোগ সুবিধা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হোক।
এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান ও কুয়েতে বিস্কুট মুড়ি ও বিভিন্ন ড্রাই ফুড রপ্তানি হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ কার্যালয়ের উপ পরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম খবরের কাগজকে বলেন, ড্রাই ফুডের একটি চালান ফ্রান্সে যাচ্ছে। সেখানে সুগন্ধি চাল, মুড়ি, মরিচ সহ নানা পণ্য রয়েছে। ওই চালানে ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সঠিক মানের পণ্য না হলে ফ্রান্সের বন্দরে আনলোড করতে দেয় না চালান। রপ্তানিকারকরা এগিয়ে এলে আমরা পণ্য চালান রপ্তানির বিষয়ে সহযোগিতা করে থাকি। সঠিক মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ল্যাব পরীক্ষা আমাদের কার্যালয়ে হয়। আমরাও চাই আরও বেশি পরিমাণ ড্রাই ফুড রপ্তানি হোক।
#আবদুসসাত্তার, 01819979338, 16.9.25