![📜 ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পূর্ণ ইতিহাস: এক গৌরবোজ্জ্বল উত্তরাধিকার 🇧🇩✍️ সংকলনে: [ Mostafa sohag ]---🗺️ ভূগোল ও অবস্থানব্র...](https://img5.medioq.com/562/355/1066010145623553.jpg)
03/06/2025
📜 ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পূর্ণ ইতিহাস: এক গৌরবোজ্জ্বল উত্তরাধিকার 🇧🇩
✍️ সংকলনে: [ Mostafa sohag ]
---
🗺️ ভূগোল ও অবস্থান
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্গত। পূর্বে এটি কুমিল্লা জেলার অংশ ছিল এবং ১৯৮৪ সালে স্বাধীন জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে ত্রিপুরা (ভারত), পশ্চিমে নরসিংদী, উত্তরে কিশোরগঞ্জ ও দক্ষিণে কুমিল্লা জেলা অবস্থিত।
---
🏛️ প্রাচীন ইতিহাস ও নামকরণ
‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামটি এসেছে ‘ব্রাহ্মণ’ এবং ‘বাড়ি’ শব্দ দুটি থেকে। কথিত আছে, বহু পূর্বে কিছু ব্রাহ্মণ পরিবার এখানে বসবাস শুরু করে, এবং ধীরে ধীরে অঞ্চলটি “ব্রাহ্মণদের বাড়ি” হিসেবে পরিচিতি পায়।
এই অঞ্চলের ইতিহাস বহু প্রাচীন। এটি গৌড়, সমতট ও কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় এখানে প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে, যা ইঙ্গিত করে এখানে হিন্দু ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির সমন্বয় ছিল।
---
🕌 ইসলামের আগমন ও সুফি প্রভাব
১৩শ শতকে মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির অভিযানের মাধ্যমে এই অঞ্চলে ইসলামের প্রচার শুরু হয়। পরে বহু সুফি সাধক ও দরবেশ এই অঞ্চলে আসেন। সরাইল, আশুগঞ্জ ও নবীনগরে তাদের মাজার আজো মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার পাত্র।
---
🏰 মুঘল ও সুলতানি যুগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া
মুঘল আমলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও সামরিক এলাকা ছিল। সরাইল পরগনার শাসক ঈসা খাঁ এখানকার ইতিহাসে কিংবদন্তি। তিনি বারো ভুঁইয়ার একজন ছিলেন এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেন। সরাইলের “বড় পুকুর পাড়” ও ঈসা খাঁর কেল্লা ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে আজো রয়ে গেছে।
---
🇬🇧 ব্রিটিশ শাসন ও জনজাগরণ
১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আসে। এই সময়ে জমিদারি প্রথা চালু হয় এবং কৃষকদের উপর শোষণ বৃদ্ধি পায়।
এই জেলার অনেকে ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ (১৮৫৭) এবং পরবর্তী বিভিন্ন আন্দোলনে অংশ নেন। ১৯২০ সালের অসহযোগ আন্দোলনে এবং ১৯৪৭ সালের দেশভাগের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনগণ সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
---
🕊️ ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিক্ষার্থী ও জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় চেতনার বীজ বপিত হয়।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে, এই জেলা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
👉 আখাউড়া রেলস্টেশন, যা ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর সংযোগপথ, সেখানে বীর মুক্তিযোদ্ধারা দুঃসাহসিক আক্রমণ চালায়।
👉 আশুগঞ্জে ব্রিজ ধ্বংস করে শত্রুর রসদ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
👉 অনেক মুক্তিযোদ্ধা সরাসরি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন ও শহীদ হন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত হয় ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে।
---
🎶 সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়া হল বাংলাদেশের সঙ্গীত রাজধানী।
এই জেলার গর্ব:
উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ – বিশ্ববিখ্যাত সরোদবাদক ও ‘মাইহার ঘরানা’র প্রবর্তক
পণ্ডিত রবি শংকর – তাঁর শিষ্য
আলা উদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন এখনো দেশজুড়ে সঙ্গীতচর্চার অন্যতম কেন্দ্র।
এছাড়া পালাগান, জারি-সারি, মুর্শিদী গান এখানকার লোকসংস্কৃতির অঙ্গ।
---
🏙️ আধুনিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া
বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া একটি ব্যস্ত শিল্প ও বাণিজ্যিক জেলা। এখানে রয়েছে:
আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন – জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ
বিসিক শিল্প নগরী
উন্নত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ও রেল যোগাযোগ
জনপ্রিয় স্থান: কসবা, নবীনগর, সরাইল, বিজয়নগর
---
🧑🎓 বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা
উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ – সঙ্গীতজ্ঞ
সৈয়দ আতর আলী – রাজনীতিবিদ
আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ – স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত
মেজর শওকত আলী – মুক্তিযোদ্ধা
মাওলানা আবুল হাশেম – ভাষা সৈনিক
---
🏁 উপসংহার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শুধু একটি জেলা নয়, এটি একটি জীবন্ত ইতিহাসের নাম। সংগ্রাম, সংস্কৃতি ও সাধনার এক অমূল্য গাঁথা।
এই জেলার প্রতিটি পথ, প্রতিটি নিদর্শন বহন করে আমাদের গর্ব, আমাদের শেকড়ের গল্প।
---
📌 আমাদের মতো গর্বিত ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীই পারেন এই ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। শেয়ার করুন, জানুন, জানান।
#ব্রাহ্মণবাড়িয়া #ইতিহাস #মুক্তিযুদ্ধ #ঐতিহ্য #বাংলাদেশ #সঙ্গীতের_শহর