07/11/2023
কাদিয়ানী সম্প্রদায় সত্যিই কি হাদীস মান্য করে?
অপ্রিয় হলেও সত্য যে, কাদিয়ানীরা মূলত হাদীসের উপর কোনো আস্থা রাখেনা। আপনি এর প্রমাণ তখনি পাবেন যখন মির্যা কাদিয়ানীর ইমাম মাহদী এবং মসীহ দাবীকে হাদীসগুলো দিয়ে রদ করতে থাকবেন। তারা প্রথমাবস্থায় হাদীসের বিরুদ্ধে আঙ্গুল উঠাবেনা, কিন্তু যখন দেখবে যে, মির্যাকে কোনোভাবইে রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছেনা, তখনি তাদের মুখোশ খুলে যাবে আর হাদীসের উপর আপত্তি উঠানো শুরু করে দিবে। তা্দের একটা ডায়লগ হচ্ছে, হাদীস আনুমানিক, এটি প্রকৃত দলীল নয়। অথচ হাদীস হচ্ছে পবিত্র কুরআনের সঠিক মর্মার্থ সংরক্ষণের প্রধান মাধ্যম। হাদীসের অস্তিত্ব অস্বীকার করার অর্থ দু্টি,
(ক) পবিত্র কুরআনের সঠিক মর্মার্থ আল্লাহ সংরক্ষণ করেননি মনে করা। নাউযুবিল্লাহ।
(খ) কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহকে “শিক্ষক” অমান্য করা।
আসলে কুরআনকে ইচ্ছেমত অপব্যাখ্যার নিশানা বানানোর পথে হাদীসই একমাত্র বাধা, তাই দুনিয়ার সকল বাতিল গোষ্ঠীর নিকট হাদীস দুশমনতুল্য। যুগে যুগে যারাই হাদীসের বিরোধীতা করেছে ইতিহাসের পাতায় তারা ইসলামের দুশমন হিসেবে চিহ্নিত। এদের আরো একটি ডায়লগ রয়েছে। এরা “হাদীস” এর উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বলে যে, হাদীস প্রায় ৪০০ বছর পরে লিখা হয়েছে। এগুলো বাজে কথা, তাদের এ সব কথাবার্তার পক্ষে কোনো দলীল নেই। সত্য ও প্রমাণিত কথা হচ্ছে, প্রথম দিকে বিশেষকারণে রাসূল (সা.) হাদীস না লিখে শুধু মৌখিকভাবে বর্ণনা করতে বলেছিলেন (মুসলিম)। কিন্তু নবুওয়তের ১৩-১৪তম বর্ষের মধ্যেই মুসলমানরা যখন কুরআন আর হাদীসের পার্থক্য স্পষ্টভাবে বুঝার যোগ্যতা অর্জন করে ফেললেন তখন তিনি (সা.) হাদীস লিখার সাধারণ অনুমতি দিয়ে দেন। তবে প্রথম থেকেই রাসূল (সা.) বিশেষ কয়েকজন সাহাবীর জন্য হাদীস লিখে রাখতে অনুমতি দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.)ও ছিলেন। যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে (অর্থ) “.....রাসূল (সা.) এ কথা শুনার সাথে সাথে নিজের দুই ঠোঁটের দিকে ইশারা করে বললেন, তুমি লিখতে থাক। যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, আমার এ মুখ হতে প্রকৃত সত্য কথা ছাড়া কিছুই বের হয় না। {এ কথা শুনে সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন} ((يَا رَسُوْلَ اللهِ أَكْتُبُ كُلَّ مَا أَسْمَعُ مِنْكَ؟)) “হে আল্লাহ’র রাসূল আপনার নিকট থেকে যা কিছু শুনতে পাই সবই কি লিখে রাখব? রাসূল (সা.) বললেন ((نَعَمْ فَاِنِّىْ لَا اَقُوْلُ فِىْ ذَالِكَ كُلُّهُ اِلَّا حَقًّا)) “হ্যাঁ, এ সকল অবস্থায়ও আমি প্রকৃত সত্য ছাড়া কিছুই বলিনা।” (আবূ দাউদ হা/৩৬৪৬ সনদ সহীহ, দারেমী, মুসনাদে আহমদ, মুস্তাদরাক হাকিম, জামে বায়ানুল ইলম-ইমাম ইবনে আব্দিল বার মালেকী)। সুতরাং হাদীস মূলত সাহাবীদের যুগ থেকেই লিখে রাখার প্রচলন ছিল, এটাই বাস্তবতা।
লিখক,
শিক্ষাবিদ ও গবেষক
#কাদিয়ানী
#হাদীস