03/09/2025
হেফাজত কেন জামায়াতের সাথে নয়
বিএনপির সাথে ঐক্যে আগ্রহী
সৈয়দ মবনু
হেফাজতে ইসলামের আমীর শ্রদ্ধেয় শায়েখ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী জামায়াতের সাথে ঐক্যের বিরুদ্ধে এবং বিএনপির সাথে ঐক্যের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন। এতে জামায়াত এবং প্র-জামায়াতের অনেক ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে গালাগালি করছেন। এ বিষয়ে দেওবন্দী এক আলেমকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, জামায়াতের কেউ আল্লামা মুহিবুল্লাহ, আল্লামা আহমদ শফি, কিংবা শায়খুল ইসলাম সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী (র.) কে গালি দিলেও আমি কষ্ট পাই না। কারণ যারা হযরত উসমান (রা.) এর মতো জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত সাহাবীকে আমানতের খিয়ানতকারী তোহমত দিতে পারে, তারা যে কাউকে মিথ্যা তোহমত দিয়ে গালাগালি করতে অসুবিধা হবে না। চিন্তা করুন কোথায় আহমদ শফি আর মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী আর কোথায় উসমান? আরে, উসমান তো ঐ ব্যক্তি যার কাছে রাহমাতুল্লিল আলআমিন হযরত নবী করিম (স.) তার দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে জিননুরাইন উপাধীর অধিকারী করে দিয়েছিলেন। উসমান তো ঐ সাহাবী যার জন্য আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন হিসাবের খাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। উসমান তো বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহাবী। সেই উসমানকে যে দলের প্রতিষ্ঠাতা আমানতের খিয়ানতকারী তোহমত দিতে পারেন, সেই দলের কর্মিরা শায়খুল ইসলাম সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী (র.) কিংবা আল্লামা আহমদ শফি, অথবা বাবুনগরীকে তোহমত দিচ্ছে, তা খুব বড় কিছু করছে না।
জানতে চাইলাম; কওমিতে পড়ুয়া অনেকে জামায়াতের পক্ষে কথা বলছেন,? তিনি বললেন, আমার আফসুস কওমি মাদরাসায় পড়ে কিংবা কওমি মাদরাসার আলেমদের সাথে চলাফেরা করেও যারা প্র-জামায়াত, বা প্র-মাওদূদী হয়ে কথা বলেন তাদের জন্য।
হেফাজতের আমির বলেছেন, জামায়াতের সাথে ঐক্য না করে তারা বিএনপির সাথে ঐক্য করতে রাজি। এজন্য কওমি ঘরের যারা আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সমালোচনা করছেন তাদের সংখ্যা যাতে কওমি ঘরে আর বৃদ্ধি না হয় সে জন্যই আল্লামার এই উদ্যোগ বা চেষ্টা। অনেকের প্রশ্ন; বিএনপির মতো সেকুলার দলের সাথে ঐক্যে অসুবিধা নেই, অথচ জামায়াতের মতো ইসলামী দলে অসুবিধা? সমস্যা তো এখানে। সাদা কাপড়ে রঙ লেগে যায় বলে আমরা সাদা কাপড়ের সাথে এমন কাপড় এক সাথে বিজাইনা যার রঙ পরিবর্তনের সম্ভবনা রয়েছে। এতে সাদা কাপড়ের রঙ নষ্ট হয়ে যায়। জামায়াতে ইসলামের অবস্থা সেই রঙ যাওয়া কাপড়ের মতো। তারা যেকোন কাপড়ের রঙকে নষ্ট করে দিতে পারে তার নিজের রঙ দিয়ে। এটাকেই বলে প্র-জামায়াত। জামায়াত কোনদিন নিজে কিছু করতে পারবে না, তবে অন্যকে তার নিজের রঙে রঙিন করার চেষ্টায় ধ্বংস করে দিবে। জামায়াত যখন বিএনপির সাথে মিশেছে, বিএনপিতে তাদের রঙ বিতরণ করে বিএনপির অস্থিত্ব ম্লাণ করে দিয়েছিলেো। বিএনপিকে সেই স্থান থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লেগেছে। তারা বেরিয়ে আসতে পেরেছে, যেহেতু তাদের রাজনৈতিক আদর্শ আর জামায়াতের রাজনৈতিক আদর্শে শুধু নয়, সংস্কৃতিতে, পোশাকে, কর্মসূচীতেও ব্যবধান রয়েছে। তারপরও বিএনপি তার অনেক কর্মিকে লষ্ট করেছে। নন-জামায়াতি ইসলামপন্থীদের জামায়াতের সাথে ঐক্যের পর আর নিজেদের ঈমান-আকিদা রক্ষা করা সম্ভব হবে না। কারণ সাধারণ মানুষ আকিদার গভীর তত্ত্ব তেমন বুঝেন না এবং তারা আকিদা নিয়েও তেমন লেখাপড়া করেন না। অথচ তারা জান্নাতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। আমার মাঝেমধ্যে প্রশ্ন জাগে মনে; কিয়ামতের মাঠে যদি মাওলানা মওদূদী সাহেবকে হযরত রাসুল (স.) প্রশ্ন করেন; মিস্টার, তুমি যে আমার মেয়ের জামাই উসমানকে আমানতের খিয়ানতকারী তোহমত দিলে, আমি কি না বুঝে আমার দুই মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দিয়েছি? আর আল্লাহ যদি প্রশ্ন করেন, ওহে নাদান, আমি যার উপর রাজি ও খুশি হয়ে জান্নাতের সুসংবাদ দিলাম, তুই তাকে তোহমত দিলে আমানতের খিয়ানতকারী? তখন মওদূদী সাহেব কি জবাব দিবেন? কি জবাব দিবেন এই দলের নেতা-কর্মীরা যদি তাদেরকে স্বয়ং রাসুল (স.) জিজ্ঞেস করেন, তোমরা আমার আমার মেয়ের জামাইকে তোহমতদাতাদের দলে গিয়ে কীভাবে আমার শাফায়াত আশা করো? কিংবা আল্লাহ যদি বলেন, আমি যাকে আমানতদার মনে করে জান্নাতি ঘোষণা দিলাম, রাসুল যাকে আমানতদার মনে করে দুই মেয়ে বিয়ে দিলেন, তাকে যারা আমানতের খিয়ানতকারী তোহমত দিলো তোমরা তার দলে থেকে কীভাবে আমার দয়া আশা করো? তখন কি জবাব দিবেন আমার জামায়াতি বন্ধুরা?
আকিদার এই জায়গাগুলোই আমাদেরকে জামায়াতে ইসলামীর সাথে ঐক্যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। জামায়াতের সাথে কিংবা তাদের নেতা-কর্মীদের সাথে আমাদের দেওবন্দীদের ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নেই। বিরোধ হলো আকিদাগত।
৬ এপ্রিল ২০২৫
©