27/03/2025
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার সময় আমার এক বন্ধু বাবা হবে। তার প্রেমিকা সন্ধ্যায় তাকে জানালো পিরিয়ডের ডেট চলে গেছে। পিরিয়ড হচ্ছে না। সেই সন্ধ্যায় বন্ধু ফোন বন্ধ করে প্রায় পালিয়ে যায়। প্রেমিক সমাজে সবচেয়ে ভয়ংকর কথা হচ্ছে "বাবু! আমার তো এ মাসে পিরিয়ড হয় নি এখনো!" তার ফোন বন্ধ। তার প্রেমিকা তাকে না পেয়ে আমাদের কয়েক বন্ধুকে ফোন দিলো। তার প্রেমিকা আমাদের পরিচিত। একই সার্কেলের বলা যায়। মেয়েটা সবাইকেই একই কথা বললো ভাইয়া শাহেদকে একটু ফোনটা ধরতে বলেন প্লিজ। জরুরী কথা আছে। "আমার পাশের মেসেই শাহেদ থাকে। আমি গিয়ে দেখি শাহেদ পড়ালেখা করছে। খুব সিরিয়াস। বললাম, রুবি আমাকে বলসে তুই ফোন ধরতে। সে বললো, আর কিছু বলসে?। আমি বললাম, না। কেন? কিছু হইসে নাকি?" শাহেদ একটা সিগারেট ধরিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে আমাকে বললো, দোস্ত রুবি নাকি মা হতে যাচ্ছে। পিরিয়ড আটকে গেছে।" আমি বললাম ভালো খবর। তুই বাবা হবি। বিয়ে করবি। সংসার হবে। "আরে বাল এই বয়সে এই চাপ কে নিবে। আমি পালাইয়া যাব গা। এগুলোর মধ্যে আমি নাই।" আমি বললাম "চ* সময় এগুলো মনে ছিলো না?। শালা লুজ কোনহানকার।" শাহেদ আরও ভেঙে পড়লো। সে এবার বিছানায় শুয়ে গেল। দোস্ত আমাকে কিছু টাকা দে। বাড়ী যাব। বাড়ী থেকে এসে টাকা দিয়ে দিব।" আমি বললাম একটা টাকাও নাই। তুই আগামীকাল রুবিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবি। সেই সময় রুবি আমাকে কল দিচ্ছে। শাহেদ আমাকে বললো, "ধরবি না। একদম ধরবি না। বাচ্চা আমার না। আমি রুবি নামে কাউরে চিনি না।" আমি কল ধরলাম। ধরে বললাম, শাহেদ রুমে নাই। বাড়ীতে চলে গেছে। রুবি বললো, ভাইয়া প্লিজ ফোনটা ওকে দিন। আমি জানি আপনি তার পাশেই আছেন এখন। আমি বললাম আমি তার পাশে নাই। আমি বাথরুমে। রুবি হতাশ হয়ে লাইন কেটে দিল।
শাহেদ আর ফোন খুলে নি৷ সারারাত বন্ধ ই ছিল। সকালে রুবি শাহেদের ক্লাসের সামনে গিয়ে শাহেদকে ধরলো। তাকে নিয়ে ঝুপড়ীতে আসলো৷ তখন ঝুপড়ীতে আমিও ছিলাম। ওরা এসে আমার পাশে বসে বসলো৷ আমি বললাম, তোরা একান্তে কথা বল আমি লাইব্রেরীতে যাব। লাইব্রেরীতে আমি কখনো পড়ালেখা করতে যাই নি। যেতাম হাগু মুতু করতে। তখন গোটা ক্যাম্পাসে একমাত্র লাইব্রেরীর বাথরুমটাই কিছুটা পরিস্কার পরিছন্ন ছিলো। আর বাদ বাকি সব বাথরুম ছড়ানো ছিটানো মল মুত্রের সমাহার৷ তাই হাগুমুতু যাই ধরতো লাইব্রেরীতে চলে যেতাম।
আমি লাইব্রেরী থেকে এসে দেখি তারা বসে নুডুলস খায়। খুব হাসাহাসি। আমি ভাবলাম মিচুয়াল হয়ে গেছে। শাহেদ তাহলে বাবা হবেই হবে। আমি তাদের পাশে বসে বললাম, সব ঠিক হইসে? শাহেদ আমাকে মাথায় ইশারা দিয়ে বললো সাইডে যেতে। আমি সাইডে আসলাম। শাহেদ বললো, "দোস্ত! আল্লাহ বাচাইয়া দিসে। তার নাকি পিরিয়ড হইসে রাতে। সেটা জানানোর জন্য ই তোদের ফোন দিয়ে বার বার আমাকে চাইতেসিলো। তোদের তো বলতে পারে না।" আমি বললাম, তোরে পিডায় নাই। শালা তুই একটা টাউট"!
শাহেদ রুবির আর প্রেম টিকে নি। দুই মাস পর একদম পাকাপাকি ভাবে সব শেষ হয়। রুবি বিয়ে করে ফেলে। শাহেদ হাসিমুখে মেনে নেয়। শাহেদের সাথে আজ দেখা হয়েছে প্রায় ১৩ বছর পর। শাহেদ বিবাহিত। ৮ বছরের সংসার। বাচ্চা কাচ্চা নেই। বাচ্চা হয় না। দুনিয়ায় সব ডাক্তার দেখানো শেষ। হুজুরের পানি পড়া থেকে শুরু করে আজমির শরিফ, কিছুই বাদ রাখে নি৷ তবুও নি:সন্তান সে। আমার ইচ্ছে করছিলো স্মরণ করিয়ে দিতে রুবির কথা। কিন্তু চেপে গেলাম। আল্লাহ মানুষকে বহু উছিলায় আগে পরিক্ষা করে দেখেন। যে যেটার যোগ্য তাকে সেটা ই দেন। যে যোগ্য নয় তাকে হয়তো তা দেন না।
Jayef Khan Nadim