04/11/2025
মহেশখালীর কালারমারছড়া মস্ত বড় সমস্যার ভেতর
দিয়ে যাচ্ছে! তার পরেও সকলে চাই শান্তি।
দেশের এক মাত্র পাহাড়িদ্বীপ কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া এক সময় ছিল শান্তির তীর্থস্থান। খেলাধুলা,সাংস্কৃতি,রাজনীতি ইত্যাদি উপজেলার সব ইউনিয়নের চেয়ে ছিল এগিয়ে। এখানকার অধিকাংশ মানুষ পরিশ্রমী, কেউ পান চাষ, কেউ করেন লবণ ও চিংড়ি চাষ। এখানে সম্প্রীতির সকল ধর্মের মানুষের বসবাস।
কালারমারছড়া বাজারের ঐতিহ্য থাকায় অতীতে পাশ্ববর্তী উপদ্বীপ ধলঘাটা, শাপলাপুর ও হোয়ানক ইউনিয়নের মানুষ কেনাকাটা করতে কালারমারছড়া বাজারে আসতেন। যা আজ খুনাখুনির কারণে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই কালারমারছড়া অঞ্চলে কেউ নীজ গুণে রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বে উঠে আসলে তাকে থামিয়ে দিতে বিভিন্ন আতাঁতের তকমা লাগিয়ে দিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করার প্রয়াস রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। সাধারণ মানুষ এর থেকে উত্তরণ চাই।
আর খুন খারাবি মহড়া সহানুভূতি আর তার আলোকে দাবিয়ে রাখার রাজনীতি উপজেলার কালারমারছড়ার স্থায়ী আয়োজন থেমে নাই। এখানে এলাকার আধিপত্য বিস্তার ঘিরে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ সমর্থিত ঘোষ্টির প্রতিযোগিতায় শুরু হয় লাশের মিছিল। বেশির ভাগই লাশের মিছিলে বলি হয় প্রথম সারির নেতা কিংবা ভাড়াটিয়ারা। এখানকার পলাতক পাশ্ববর্তী পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামীলীগের গড়ফাদাররা নিজেদের কৃর্তৃত্ব জিইয়ে রাখতে এলাকা এলাকায় পাড়ায় পাড়ায় তরুণ যুবকদের উপ-গ্রুফ সৃষ্টি করেছে আবারও। কারোও হাতে দা, বন্দুক, বেশির ভাগের হাতে সিগারেট, ইয়াবা, গাঁজা নিত্যসঙ্গী। মোড়ে মোড়ে ঈগল দৃষ্টি। রাজনীতিতে যারা আছেন স্বকীয়তা নেই, স্বাধীনতা নেই। কারো না কারো গোলাম হয়ে কাজ করছে। দু‘চারজন যারা আছেন স্বাধীনভাবে কাজ করার পক্ষপাতী তারা এলাকা ছাড়া নিজেদের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও পারিবারিক লেজুড়বৃত্তিক স্বভাবের কারণে। আগে সশরীরে এলাকা দখল করে উপনিবেশ বানাতো। এখন পুঁজি খাটিয়ে দালাল সৃষ্টি করে উপনিবেশ বানায়।
এখানে অল্পসংখ্যক (প্রায় ৫%) অপরাধপ্রবণ লোকের কর্মকাণ্ডের কারণে কালারমারছড়া আজ কলঙ্কিত হচ্ছে বছরের পর বছর। অথচ বাস্তবতা হলো- কালারমারছড়ার শতকরা ৯৫% মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চায়, সন্তানদের ভালো ভবিষ্যৎ চায়, এলাকার উন্নতি চায়। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করতে চাই। বলছিলাম সুযলা -সুফলা, শস্য -শ্যামলা প্রকৃতির রুপে ভরা আমাদের পাহাড়ি সৌন্দর্যে ঘেরা কালারমারছড়া। এখানে ছিল গোলাভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, নদী ভরা জল, ভ্রাতৃত্বের টান, মায়া আর অভিমান। কালের বিবর্তনে এই অঞ্চলে মায়া, মমতা,স্নেহ ভালবাসা আর নেই । তলিয়ে গেছে অন্ধকারে।
হিংস্রতা, হীনমন্যতা ও ঈর্ষাকাতরতায় ভরে গেছে মেটোপথ। কোথাও আর বিশুদ্ধ বাতাস নেই! নেই বিরহের যন্ত্রণা! নেই মিলনের আকুতি! নেই পাখির কলগান! এখানকার স্থানীয় সাধারণ মানুষের আতংকে কাটে রাত! পাহাড়ে আস্তানা গেড়েছে পেশাদার সন্ত্রাসীরা। তাঁরা মাঝে মধ্যে লোকালয়ে এসে মহড়া চালিয়ে হুংকার ছুড়ে! পাহাড়ে সন্ত্রাস বিরুদ্ধী অভিযান না করে যৌথ বাহিনী ও রয়েছে নিস্ক্রিয়। চারদিকে মাদকের সয়লাব! রক্তের দুর্গন্ধ করে বসবাস! এক প্রকার পাহাড়ের সন্ত্রাসীরা জিইয়ে রয়েছে। লোকালয়ে একেবারে নাই বললেও বেমামান। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের লাগাম এখন থেকে টেনে না ধরলে উক্ত জনপদ অশান্ত লেগেই থাকবে। এলাকার সাধারণ মানুষকে এ ব্যাপারে প্রশাসনের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে।
আর যে মানুষ গুলো আপনাকে দেখলে জড়িয়ে ধরতো মলিন কাপড়ে হারিয়ে গেছে তারা অসভ্যদের ভীড়ে। কতনা ভালবাসা ছিল! কতনা সুখ ছিল! কতনা শান্তি ছিল সেই সময়! এই লোকালয়ে সরল হয়েছে জঠিল, জঠিল হয়েছে সহজ। শীতের দিনে সবাই মিলে, খড়ের আগুন জ্বালিয়ে পোহাতো আগুন। সেই আগুন পরিণত হয়েছে গোলাবারুদের আগুনে! এই অঞ্চলে ভালোবাসা মানে টাকা আর ক্ষমতা। রক্তের বন্ধন হয়েছে ছিন্ন, আত্মীয়তার রুপ পেয়েছে ভিন্ন ভিন্ন,স্বার্থপরতা করেছে গ্রাস। বর্বরতায় ছেয়ে গেছে মন -মানসিকতা, হারিয়েছে মানবতা। গুনীদের নেই কোন কদর, মুরব্বিদের নেই কোন মর্যাদা। ছাত্রদের হয়রানি, নিরীহদের দৌড়ানি, দুর্বলের উপর সবলের চাকা
চলে বারোমাস! স্বাক্ষরতার হার দেখলে মনে হয় আমরা এখনো আদিম! সাম্য,সমতা ও উদারতা বিলুপ্ত হয়েছে ডাইনোসরের মতো..! যোগ্যরা অযোগ্যদের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। অযোগ্যদের কারণে যোগ্যরা দিন দিন নিজ জন্মভূমি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করতে শুরু করেছে। এর মানে চারদিক অন্ধকারে ঢাকা। এই অঞ্চলে সুফল কবে হবে সাধারণ মানুষের প্রশ্ম।
আর বর্তমানে মহেশখালী চীন-জাপান সিঙ্গাপুরের উপনিবেশে পরিণত হতে যাচ্ছে। এখানে আ'লীগের দোষরদের রয়ে যাওয়া দালালের অভাব নেই। ওদের পুঁজি এখন অনেকের পকেটে ঢুকে গেছে এবং তাদের গোলামী করে টাকার মালিক বনে গেছে যারা তারা ক্ষমতার পালা বদল হওয়ার পর পলাতক। নতুন বাংলাদেশে এখনোও মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা নেই। চারিদিকে তাকিয়ে কথা বলতে হয়। মোড়ে মোড়ে ঈগল দৃষ্টি ছু মারতে পারে সহজেই। ১৬ বছর আগে যে পুরো পাড়া বাড়ি হারা। বাড়ি যা ছিল বিলীন করা হলো। আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছিল। ছেলেমেয়েদের খেলার মাঠ। একদিন এই জমিতে লোক ছিল। বাচ্চা জন্মাতো, গাছপালা ছিল। পুরো পরিবার ঘর হারা, ঘর ছাড়া। স্বাধীন দেশে ইহুদি যাযাবর বেদুঈন। এরা ইহুদি ছিল না। বড় ধরনের নেতৃত্ব এদের নেই, পাকিস্তানি বিহারীও ছিল না, তারপরও এরা ঘর হীন স্বাধীন দেশে। সরকারের কোন আইনে নয় শুধু পেশীশক্তির কার্যকর প্রয়োগে। তবে বাড়িহারা লোকজন জুলাই অভ্যুথানের পর নতুন বাংলাদেশে বাড়ি ফিরেও ঘর করতে পারছেনা তাদের রয়ে যাওয়া দালালদের কারনে।
আর খুনের মহড়া চলে প্রতিবছর। পশ্চিম দিকে লবণের মাঠ চিংড়ি ঘের জোর জবরদস্তির আখড়া। মূল মালিকরা সে সময় জমির ইজারা পেয়েছে খুব কম। নানা সিন্ডিকেটে জিম্মি করে রেখেছিল। আবার অনেকে পায়নি সে সময় বছরের পর বছর। আর যারা নেতৃত্ব আছেন কিংবা আগামীতে নেতৃত্বে আসতে পারেন বলে ভাবা যায় তাদের অধিকাংশ পেশীশক্তির ধারক-বাহক। তাদের কাছে নম্রতা ভদ্রতা বলে কিছু একটা আশা করা যায়না। কালারমারছড়ার জনগণ শান্তির জন্য বয়সে ছোট হোক বড় হোক ত্যাজি শক্তিমান কাউকে ভাবতে শিখেছে। তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার ফল শক্তিমান কে হারাতে শক্তিমানের দরকার। যেখানে শক্তির মহড়া সেখানে অন্য শক্তিই কাম্য।
মুলত আগামী সংসদ নির্বাচনের পর তড়িৎ যারা নিরাপরাধ শুধু তাদের নিয়ে সহ-অবস্থানের মাধ্যমে সমাধান জরুরী। যে পক্ষ ক্ষমতারমোহে এলাকায় নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করুক না কেন উভয় পক্ষকে এলাকায় বসবাস করতে হবে। তা হলে শান্তির সু-বাতাস বইবে। না হয় অযোগ্য নেতৃত্ব হিংসার জন্ম দেয় এবং এলাকায় পেশী শক্তির মহড়া দেখা দেয়।
আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে কালারমারছড়া মস্ত বড় সমস্যার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কর্ম এগুনো কঠিন কাজ। এই কঠিন সময়ের ভেতর সহজ-স্বাভাবিক সুন্দরকে ধারণ করতে পারে এমন লোকের সম্ভাবনা নিকট ভবিষ্যতে বিরল। তার পরেও সকলে চাই শান্তি।
লেখকঃ-
হোবাইব সজীব
সভাপতি
মহেশখালী অনলাইন প্রেসক্লাব।
সাধারণ সম্পাদক
কক্সবাজার উপকূলীয় সাংবাদিক ফোরাম।
সভাপতি
মহেশখালী লবণ চাষী ও ব্যবসায়ী সংগ্রাম পরিষদ।
সভাপতি
কাদেরীয়া মজিদিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা, কালারমারছড়া, মহেশখালী।