07/10/2023
্রোধ
ক্রোধের শাব্দিক অর্থ রাগ। এটা একটি খুবই শক্তিশালী নেতিবাচক আবেগ। মানুষের আশা ভঙ্গ, নিষ্ফলতা ও ব্যর্থতায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলো ক্রোধ। সাধারণত ঝগড়া, তিরস্কার ও অহংকারের ফলে ক্রোধের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। এই ক্রোধের ফলে জীবনে নেমে আসতে পারে চরম বিপর্যয়।
#বিজ্ঞানের_ভাষায়:- তীব্র অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ কে ক্রোধ বলে। এই আবেগের প্রকাশে মুখভঙ্গী বিকৃত হয়ে যায় এবং অপরের কাছে তা ভীতির সঞ্চার করে। ক্রোধ ষড়ঋপুর মধ্যে অন্যতম।অতিরিক্ত ক্রোধের ফলে বাড়তে পারে রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন। হার্টঅ্যাটাক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরনের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। রেগে থাকলে একজন ব্যক্তির শরীরে স্ট্রেস হরমোনের নি:সরণ বেড়ে যায়। রক্তের সুগারের তারতম্য শুরু হয়। যারা প্রায়ই রেগে যান তাদের শুভ বুদ্ধির চর্চাও কমে যায়। অতিরিক্ত ক্রোধের ফলে পাকস্থলীয় কোষ উজ্জিবিত হয়ে পরে এবং এসিড নির্গমনের পরিমাণ বেড়ে যায়। চিকিৎসকগন ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ক্রোধ বা রাগ, একটি স্বাভাবিক তীব্র মানসিক অবস্থা যা অনুভূতিতে আঘাত প্রাপ্তির ফলে একটি শক্তিশালী অস্বস্তিকর এবং অসহযোগী প্রতিক্রিয়া। ক্রোধের সম্মুখীন একজন ব্যক্তি মানসিক অবস্থার পাশাপাশি প্রায়ই শারীরিক প্রভাব অনুভব করেন। যেমন হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, এবং অ্যাড্রেনালিন এবং নোরাড্রেনালিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। কেউ কেউ রাগকে একটি আবেগ হিসাবে দেখেন যা অস্বস্তিকর উত্তেজনার সৃষ্টি করে এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাগের বাহ্যিক অভিব্যক্তি মুখের অভিব্যক্তি, শরীরের ভাষা, শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া এবং মাঝে মাঝে জনসাধারণের উপর আগ্রাসনের মধ্যে পাওয়া যায়। যদিও যারা রাগ অনুভব করেন তাদের বেশিরভাগই রাগের কারণ উল্লেখ করেন। তবুও একজন রাগান্বিত ব্যক্তির খুব বড় ভুল হতে পারে কারণ রাগ স্ব-পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা এবং বস্তুনিষ্ঠ পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার ক্ষতিসাধন করে। অনিয়ন্ত্রিত রাগ ব্যক্তিগত বা সামাজিক সুস্থতার উপর নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। ["ক্যাম্ব্রিজ ডিকশোনারি"]
#ক্রোধের_অপকারিতা: মানুষের নিন্দনীয় চরিত্রের অন্যতম হলো ক্রোধ। ক্রোধের সময় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। তাই সে অসংযত হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটায়। এ কথা সত্য যে রাগ জীবন থেকে কিছু না কিছু কেড়ে নেয়। ক্ষেত্র বিশেষে রাগ প্রদর্শন প্রয়োজন হয়। তবে এর অপব্যবহারে এমনকি এই ক্রোধ আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ ইমানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। যেমন- মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘সিরকা মধুকে যেমন নষ্ট করে, ক্রোধও ইমানকে নষ্ট করে।’(বায়হাকি) একদা এক সাহাবি আমাদের প্রিয় মহানবি (সা.) কে বলেছেন, ‘আপনি আমাকে কিছু ভালো কাজের নির্দেশনা দিন। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগ করো না”। এই ব্যক্তি (সাহাবি) কয়েকবার এই পরামর্শ চাইলেন কিন্তু নবিজি (সা.) প্রতিবারই বলেলেন, রাগ করোনা।' (বুখারি)
#ক্রোধ_সংবরণের_উপকারিতা: মুমিন জীবনের সফলতা হলো আখিরাতে মুক্তির মাধ্যমে অর্জিত হয়। যারা নিজেদের ক্রোধকে সংবরণ করতে পারে তাদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াদা হলো জান্নাত। যেমন- মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল, আল্লাহ সৎকর্ম পরায়ণদের ভালোবাসেন।' (আল ইমরান, আয়াত: ১৩৪)। এছাড়া ক্রোধ সংবরণ করা একটি সাহসিকতাপূর্ণ কাজ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
لَيْسَ الشَّدِيدُ بِالصُّرَعَةِ، إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ
অর্থ: ‘সে প্রকৃতবীর নয় যে কুস্তিযুদ্ধে খুব লড়তে পারে। বরং সেই প্রকৃত বীর যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।' (বুখারি ও মুসলিম) এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা ক্রোধ লালন করে না তাদের শারীরিক রোগ-ব্যাধি কম হয় ।
#ক্রোধ_দমনের_উপায়: পবিত্র হাদিসের আলোকে ক্রোধ দমনের উপায়গুলো নিম্নরূপ,
১। অযু করা। মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘ক্রোধ শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। শয়তান হলো আগুনের তৈরি। আর আগুনকে ঠান্ডা করে পানি। যদি কারও ক্রোধ বা রাগ আসে তার উচিত অযু করে নেওয়া।' (বুখারি)
২। স্থান পরিবর্তন করা। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তোমাদের কারও রাগ আসে, তখন দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে বসে পড়বে। তাতেও যদি রাগ না কমে, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে।'
৩। আউজুবিল্লাহ পড়া। মহানবি (সা.) রাগ কমানোর জন্য আউজুবিল্লাহ পড়ার উপদেশ দিতেন, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।
৪। চুপ থাকা। মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো। দ্বীনের বিষয়ে কঠিন করো না। যখন রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো, যখন রাগান্বিত হও চুপ থাকো, যখন রাগান্বিত হও চুপ থাকো।' (মুসনাদ আহমদ)
অতএব আমরা ক্রোধের ভয়াবহতা উপলব্ধি করব। ক্রোধ বর্জন করে সুখে থাকব।
👉জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।