29/01/2025
🔥ইমাম ইবনে তাইমিয়ার উপর চরম মিথ্যারোপ এবং তার জবাবঃ
1️⃣ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ছিল, তার সবগুলোই ছিল মিথ্যা ও বানোয়াট। সমকালীন স্বার্থান্বেষী মহল, এক শ্রেণীর সুফী সম্প্রদায়, কালামশাস্ত্রবিদ এবং বিদআতীরা শত্রুতার বশবতী হয়ে মনের জ্বালা মেটানোর জন্য এবং পার্থিব ফায়দা হাসিল করার জন্যই অভিযোগগুলো করেছিল। হকপন্থীদের বিরুদ্ধে বাতিলপন্থীদের মিথ্যা অভিযোগ নতুন কিছু নয়। আজও চলছে সেই ধারাবাহিকতা। কিন্তু বিরোধী ও বিদআতীরা তাঁর উপর যেসব মিথ্যারোপ করেছে, তার মধ্যে আশ্চর্যজনক হলো বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার মিথ্যাচার। তিনি লিখেছেন, আমি ৭২৬ হিজরীর রামাযান মাসের নয় তারিখ বৃহস্পতিবার দিন দামেস্ক শহরে পৌঁছলাম। তখন দামেস্ক শহরে হাম্বলী আলেমদের মধ্যে তকীউদ্দীন ইবনে তাইমীয়া ছিলেন অন্যতম। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলতেন, তবে তার মস্তিস্কে কিছু সমস্যা ছিল!! দামেস্কবাসীরা তাঁকে খুব সম্মান করতো। তিনি জামে উমুবীর মিম্বারে লোকদেরকে উপদেশ দিতেন। পরের দিন (জুমআর দিন) আমি মসজিদে গিয়ে দেখি, তিনি আলোচনা করছেন। সেদিন তাঁর আলোচনার মধ্যে এইও ছিল যে, তিনি বলে যাচ্ছিলেন,إن الله ينزل إلى سماء الدنيا كنزولي هذا নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন আমার এই নামার মতই। এই কথা বলে তিনি মিম্বারের সিঁড়িসমূহের একটি সিঁড়িতে নেমে আসলেন। তখন মালেকী মাজহাবের ফকীহ ইবনে যাহরা তার বিরোধীতা করলেন। এতে জনগণ উত্তেজিত হয়ে মালেকী ফকীহকে প্রচুর মারপিট করলো। মারপিটের কারণে ফকীহর মাথার পাগড়ী পড়ে গেল......। এই ছিল ইবনে বতুতার মিথ্যাচার।
ইবনে বতুতার এই কথা যে মিথ্যা, তার প্রমাণ হলো, সে উল্লেখ করেছে, ৭২৬ হিজরীর রামাযান মাসের নয় তারিখে দামেস্কে প্রবেশ করল। ঐতিহাসিকদের ঐক্যমতে শাইখুল ইসলাম তখন দামেস্কের কারাগারে বন্ধী ছিলেন। নির্ভরযোগ্য আলেমগণ উল্লেখ করেছেন, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া ৭২৬ হিজরীর শাবান মাসে কারাগারে প্রবেশ করেছেন। আর ৭২৮ হিজরী সালের যুলকাদ মাসে লাশ হয়ে সেখান থেকে বের হয়েছেন।
(তাবাকাতুল হানাবেলা, বেদায়া ওয়ান নেহায়া)
2️⃣ লক্ষ্য করুন এই মিথ্যুকের প্রতি। সে বলছে যে, রামাযান মাসের কোন এক জুমআর দিন ইমামকে জামে উমুবীর মিম্বারে আলোচনা করতে দেখল। এখন প্রশ্ন হলো জামে উমুবীর মিম্বার কি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছিল? বিশাল জামে উমুবী কি উপস্থিত সকল মানুষসহ কারাগারে প্রবেশ করেছিল? যাতে করে ইমাম সেখানে ভাষণ দিতে পারেন?
এখন কথা হলো, যারা বলে ইমাম ইবনে তাইমীয়া আল্লাহর সিফাতকে মানুষের সিফাতের সাথে তুলনা করেছেন এবং তিনি ছিলেন মুশাবেবহা সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত তারা কি ইবনে বতুতার সেই মিথ্যা তথ্যের উপর নির্ভর করেছে?
আসল কথা হলো ইমাম কখনোই আল্লাহর কোন সিফাতকে মানুষের সিফাতের সাথে তুলনা করেন নি; বরং তিনি মুশাবেবহাসহ অন্যান্য সকল বাতিল ফির্কার জোরালো প্রতিবাদ করেছেন। তার লেখনীগুলোই এর উজ্জল প্রমাণ। তিনি কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে আল্লাহর সিফাত সাব্যস্ত করেছেন এবং বলেছেন তাঁর সুউচ্চ সিফাতগুলো সৃষ্টির সিফাতের মত নয়। দুনিয়ার আকাশে তাঁর নেমে আসা মাখলুকের নামার মত নয়। তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার শানে যেভাবে নেমে আসা শোভনীয়, তিনি সেভাবেই নেমে আসেন। এটিই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহ। আকীদাহ আল ওয়াসেতীয়ার বহু স্থানে তিনি এই মূলনীতিটি সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ তাঁর সদৃশ কোন কিছুই নেই। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।
[শরহুল আকীদাহ আল-ওয়াসেতীয়া]
3️⃣ প্রথমতঃ ইমাম ইবন তাইমিয়া হেদায়েতের ইমামদের মধ্যে যারা কোরান ও সুন্নাহ এবং পূর্বসূরীদের অনুসারী, এবং তাঁর লেখাগুলি এর সাক্ষ্য দেয়, পণ্ডিতরা তাঁর প্রশংসা করেন, তাঁর সুপারিশ করেন এবং তাঁর প্রতিরূপ এবং নৃতাত্ত্বিকতার অভিযোগ থেকে খালাস করেন এবং তাঁর বিরোধীরা তাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয় এমন অন্যান্য মিথ্যা অভিযোগ থেকে।
★আল-হাফিজ ইবনে হাজারের কথা বিবেচনা করুন, আল্লাহ তার প্রতি রহম করুনঃ
"শেখ ইমাম ইবনে তাইমিয়ার খ্যাতি সূর্যের চেয়েও বেশি বিখ্যাত, এবং তাঁর সময়ে "ইসলামের শেখ" হিসাবে তাঁর ডাকনামটি আজও বিশুদ্ধ ভাষায় রয়ে গেছে এবং এটি গতকালের মতো আগামীকালও অব্যাহত রয়েছে, এবং কেউ অস্বীকার করে না তারা ছাড়া যারা এর পরিধি সম্পর্কে অজ্ঞ, বা ন্যায্যতা এড়িয়ে চলে ...
যদি শেখ ইবনে তাইমিয়ার কোন গুণ না থাকত, তার বিখ্যাত ছাত্র, শেখ শামস আল-দীন ইবনে কাইয়িম আল-জাওযিয়াহ, ব্যাপক উপকারী বইয়ের লেখক, যা থেকে একমত এবং দ্বিমত উভয়েই উপকৃত হতেন, তবে এটি একটি দুর্দান্ত কাজ হবে। তার মর্যাদার মাহাত্ম্যের ইঙ্গিত। তখন কিভাবে, যখন বিজ্ঞানে তার অগ্রগতি এবং যা বলা ও বোঝা যায় তার শ্রেষ্ঠত্ব তার সময়ের ইমামগণ, হাম্বলী ছাড়াও শাফেয়ী ও অন্যান্যদের দ্বারা প্রমাণিত হয়েছিল।
★মোল্লা আলী আল-কারী বলেন, “এবং যে কেউ নাদিম আল-বারী, শেখ আবদুল্লাহ আল-আনসারী আল-হাম্বলির দ্বারা ওয়াকারদের ঘরের ব্যাখ্যা পাঠ করে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তার স্পষ্ট পবিত্রতা দান করুন। গোপন, এবং সে সময়কার সুফিদের মতে তিনি ইসলামের শাইখ, সর্বসম্মতিক্রমে = এটা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে তারা সুন্নাহ এবং সম্প্রদায়ের লোক এবং এমনকি এই জাতির থেকেও ছিল।"
দ্বিতীয়তঃ ইবনে তাইমিয়া, আল্লাহ তার উপর রহম করুন, সিংহাসনে আরোহন প্রমাণ করেছেন, যেমনটি কুরআন দ্বারা প্রমাণিত এবং পূর্বসূরিদের দ্বারা সর্বসম্মতভাবে সম্মত, এবং তিনি তাদের কথার অর্থ বর্ণনা করেছেন এবং এটি হল উচ্চতা এবং উচ্চতা।
তাদের কারো কারো কাছ থেকে এটাও বর্ণিত হয়েছে যে, এটিকে বসা বা বসা বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং সেই বসাকে সুন্নাতে উল্লেখ করা হয়েছে এবং হাদীসটি একদল গৃহীত হয়েছে।
ইস্তিওয়া-এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত ছিলাম না, আল্লাহ তাঁর উপর বসা এবং বসা হিসাবে রহম করুন, তবে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে এই সম্পর্কিত বর্ণনা থেকে যা বর্ণিত হয়েছে তা বসাকে বোঝায়, যা সৃষ্ট প্রাণীদের বসার মতো নয়।
তিনি বলেন: "যদি এটা জানা যায় যে ফেরেশতা এবং মানুষের আত্মা যা বর্ণনা করা হয়েছে যেমন নড়াচড়া, আরোহণ, অবতরণ ইত্যাদি, মানুষের চলাফেরার অনুরূপ নয়। দেহ এবং অন্যান্য জিনিস যা আমরা এই পৃথিবীতে দৃশ্যের সাথে সাক্ষ্য দিই, এবং তাদের মধ্যে যা সম্ভব তা মানুষের দেহে সম্ভব নয়, তবে এটিই প্রভুর সাথে বর্ণনা করা হয়েছে , এবং দেহের বংশধরের অনুরূপ হওয়া থেকে অনেক দূরে, বরং এর বংশধর ফেরেশতাদের বংশধর এবং আদম সন্তানদের আত্মার অনুরূপ নয়, এমনকি যদি তা তার চেয়েও কাছাকাছি হয়।
[সূত্র: ইসলাম প্রশ্নোত্তর ওয়েবসাইট]
4️⃣ একটি ক্যাসেটের শিরোনাম হলো উপদেশ দিয়ে কোন লাভ/উপকার নেই উক্ত ক্যাসেটে শায়খ মুহাম্মাদ আল জামী বলেন; যারা দাবী করেন যে, অধিকাংশ যুবক আমাদের হাতে থাকা আকীদার বই থেকে বিমুখ হচ্ছে এটা একটা অপবাদ যা ইবনে বতুতার অপবাদের সাথে মিলপূর্ণ। ইবনে বতুতা ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) কে না দেখা সত্ত্বেও তার উপর অপবাদ আরোপ করেছিল। ইবনে বতুতা দাবি করেছে যে, একদা সে দামেষ্কে প্রবেশ করে ইবন তাইমীয়া (রহ.) কে জুমুআর খুতবা প্রদান করতে দেখলো। অতঃপর ইমাম মিম্বারের সিঁড়ি থেকে নেমে বললেন আমি যেভাবে মিম্বর থেকে অবতরণ করলাম/নীচে নামলাম আমাদের প্রতিপালকও এভাবে অবতরণ করেন।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর একদল আলিমকে নিয়োজিত রেখেছেন যারা ইবনে বতুতার অপবাদকে ঐতিহাসিক মিথ্যাচার বলে সাব্যস্ত করেছেন।
শায়খুল ইসলামের জীবনী তে প্রমাণ করেছেন যে ইবনে তাইমীয়া ও ইবনে বতুতার মাঝে কখনো সাাৎ ঘটেনি। ইবনে বতুতা কখনো ইবনে তাইমীয়া (রহ.) কে দেখেনি। সে যখন বাগদাদ ভ্রমণ করে তখন ইবনে তাইমীয়া (রহ.) কারারুদ্ধ ছিলেন এবং অন্তরীণ অবস্থাতেই ইনতিকাল করেছেন। এই অপবাদ লেখকেরা ছড়িয়েছে। আকীদা সম্পর্কে আরোপিত বর্তমানের অপবাদগুলো খণ্ডন ও মূলোৎপাটন করা প্রয়োজন।
[বাহজাতুল বাইতার হায়াতু শায়খিল ইসলাম]
✍️ ইমরান খান।