29/01/2025
মুক্তিযুদ্ধ মানে বাংলাদেশ
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান মানে বাংলাদেশ
মুক্তিযুদ্ধের পর কি হয়েছে, তা নিয়ে সমালোচনা করুন। ইতিহাস পর্যালোচনা করুন। কোন সমস্যা নেই। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে কি কি ঘটেছে, তা নিয়েও তর্ক উঠতে পারে। কিন্তু, সেসবই হবে মুক্তিযুদ্ধকে মেনে নিয়ে।
যেমন, শেখ মুজিবের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠা নিয়ে আমরা বলব। উনি ফ্যাসিস্ট ছিলেন। কিন্তু, বাংলাদেশের জন্মে অনেক জাতীয় নেতৃত্বের মতন উনার অবদান অনস্বীকার্য। তাই, আমরা '৭২ পূর্ব শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রাপ্য গুরুত্ব দিব।
মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক কারনে জামায়াত ইসলামি যে মোটা দাগে স্বাধীনতার বিরোধী ছিলো সেটা মেনে নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ পুনরুদ্ধারে তাদের ভূমিকা কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের পজেটিভ কর্মকাণ্ডকে ছোট করে দেখবেন না।
রণাঙ্গনের বীর যোদ্ধা, স্বাধীনতার অন্যতম ঘোষক জিয়াউর রহমানের অবদানকে কোনভাবেই রাজনৈতিক কারণে কোনঠাসা করে রাখা যাবে না। একই ভাবে ৭৫ থেকে ৮১ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সামরিক বাহিনীতে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো সেটা নিয়েও তর্ক হবে। স্বাধীনতা সার্বভৌম রাষ্ট্রের এটাই বিউটি।
দেশ ও দেশের আপামর জনসাধারণের মুক্তি ও মোঙ্গলে যাদের ঠিক যতটা ভূমিকা তাদের ততটা সম্মান দিয়ে এগিয়ে যেতে না পারলেই আবার নতুন কেউ ক্ষমতায় আসবে আমজনতা নিয়ে খেলবে লুটপাট করবে আবারও বহু মায়ের কোল খালি হবে রক্ত বইবে.....
মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক কারণে পুরো সংগ্রামটাকে কুক্ষিগত করে শুধু একটি বিশেষ দলের সকল অবদানকে মহিমান্বিত করে তোলা হয় যার চুড়ান্তরুপ ছিলো বাকশাল। তখন যারা বাকশালের বিরোধিতা করেছিল তাদেরকে রাজাকার, স্বাধীনতা বিরোধী তকমা দিয়ে কখনো কোনঠাসা কখনো তথাকথিত বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে ২৪ এর মুক্তিযুদ্ধকে এককভাবে আলোচনায় রাখলে জাতি আবারও মুখথুবড়ে পড়বে বরং বিষয়টি এভাবে আলোচনা করা যেতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী ১০ বছরের ইতিহাস ছিল, ফ্যাসিস্ট মুজিববাদী মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতবিরোধী, দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যকার লড়াইয়ের ইতিহাস। বাকশাল বিরোধী জাতীয় স্বার্থরক্ষার এক মহান লড়াই।
২৪ এদেশের আপামর জনগণের লড়াইটা হয় বাকশাল ২.০ এর বিরুদ্ধে যার চূড়ান্ত ফসল স্বাধীনতা ২.০। কিছু মানুষ ৭১ কে গন্ডগোলের বছর বলে অথচ গোটা জাতির মুক্তির জন্য তাজাপ্রানের বিসর্জন হয়েছিলো। আমি বা আমরা বিশ্বাস করতে চাই মুক্তিযুদ্ধের আমরা একটি রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী ও দখলদারত্বের হাত থেকে নিজেকে স্বাধীন করেছিলাম আর ২৪ সেই স্বাধীনতার সূর্য ও সূফলকে পায়ে মাড়িয়ে একটি ফ্যাসিবাদী শাসকের হাত থেকে জাতি স্বাধীন হয়েছে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে পুরো সংগ্রামটা বেহাত হয়ে প্রথমে একটি দলের হাতে এবং পরবর্তীতে ধীরে ধীরে একটি পরিবারের হাতে যার শেষ কর্ণধার হয়ে উঠেছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা।
২৪ এর বিপ্লবের দেশের প্রতিটি মুক্তিকামী মানুষ তার অবস্থান থেকে এগিয়ে এসেছিল, বাংলাদেশের ধর্ম বর্ণ লিঙ্গ নির্বিশেষে ছাত্র নেতৃত্বে সর্বজনের অভ্যুত্থান। এখানে কোন গোষ্ঠী কিংবা দল একক অধিকার ফলাতে চাইলে আপনি নিশ্চিত থাকুন তার অন্তরেও ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠার তীব্র বাসনা সুপ্ত।
বাংলাদেশপন্থীদের অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধপন্থী হতে হবে, তবে এটাও সত্য যে, মুক্তিযুদ্ধ করা অনেকেই ফ্যাসিস্ট ও তাবেদার হয়ে উঠেছিলেন। আজ তারা ছাত্র-জনতার কাছে পরাজিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা যাবেন, তারা ও মজলুম বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে অতীতে পরাজিত হয়েছেন, সামনেও পরাজিত হতে বাধ্য।
জুলাই সুযোগ নিয়ে এসেছে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার। লীগের সাথে বিচারকার্য সম্পন্ন করে রিকন্সাইল করতেও আমরা আগ্রহী ছিলাম। অথচ, দিল্লীর আশ্রয়ে থেকে দেশবিরোধী চক্রান্ত করাকেই তারা বেছে নিল। আপনারাও ইতিহাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন না। জাতিকে বিভাজন থেকে রক্ষা করতে অবশ্যই '৭১ ও '২৪ কে নি:শর্ত ও নিরঙ্কুশ মেনে এগুতে হবে।
জুলাই গণের লাইনে আছে, ইতিহাসের পক্ষে আছে, আপনারা জুলাইয়ের ছাত্র নেতৃত্বকে হুমকি দেয়া ব্যক্তিরা ইতিহাসের উল্টোদিকে হাঁটছেন। আসুন, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখি এবং রাষ্ট্র সংস্কার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই মিলে অংশগ্রহণ করি।