11/10/2023
গতকাল থেকে চুয়াডাঙ্গায় একজন ছাত্র কর্তৃক পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষককে থাপ্পড় মারার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যা দেখে সত্যিই মর্মাহত হয়েছি।
এখন,কথা হলো হঠাৎ ছাত্র-শিক্ষকের এমন বিরূপ সম্পর্কের কারণ কেনো!
নিজের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু কথা শেয়ার করি।
শিক্ষা জীবনে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়েছি। স্যাররা কত যে স্নেহ করতো তা বলে লিখা যাবেনা। কখনো বেত দিয়ে মেরেছে এমন কথা মনেও পরেনা। কিন্তু, সেই স্যারদের রাস্তায় দেখলে আমরা ভুলেও কখনো ঐ রাস্তা দিয়ে যেতাম না। শাহা আলম স্যার, অনন্দ বডুয়া স্যার, ফরিদ স্যার, রুস্তম আলী স্যার, এবং আমার নানু নূর আহমেদ। এর মধ্যে কয়েকজন আবার আমার মায়েরও শিক্ষক। আরেকজন ছিলো বড় ভাই জনাব জয়নাল। আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ফাউন্ডেশন যিনি সযত্নে ভিত্তি প্রস্তর করেছেন। ওনাদের মধ্যে শাহা আলম স্যার আর জয়নাল ভাই বেঁচে আছেন। উনাদের দেখলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।
পঞ্চম শ্রেণীর পর আমার পরবর্তী গন্তব্য হলো কক্সবাজারের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে।
সবকিছু অচেনা, তারমধ্যে সবচেয়ে বড় অচেনা হলো উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কক্সবাজারের তৎকালীন সবচেয়ে ভালো স্কুলগুলোর ছাত্রদের পাশাপাশি যে গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এই স্কুলে ছাত্ররা চান্স পেয়েছেন বেশিরভাগ শিক্ষকরাই সেটা ভুলে যান।
ফলাফল, পড়া না পারলেই টেবিলের নিচে মাথা ঢুকাও আর পশ্চাৎদেশে চপাত চপাত বেতের বারি! খুব কম ছাত্রদের দেখেছি যারা না বুঝার পর স্যারদের পড়া বুঝিয়ে দিতে বলতে পেরেছে। আমরাও সম্মিলিত সুরে বুঝেছি বলে সহমত জানাতাম! আর ক্লাসে স্যাররা আসলেই উনি কোন কোন স্যারদের থেকে ভালো পড়াতেন, আর উনি কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়েছেন সেগুলো বলার সাথে সাথে উনি ছাড়া যে পাশ করার কোন বিকল্প নেই সেটাও স্বযত্নে মনে করিয়ে দিতেন। হাই স্কুলে দু'জন শিক্ষক হিংসাত্বক ভাবে প্রহার করেছেন। কারণ ছিলো উনি ছাড়া কোন গতি নেই মনে করিয়ে দেয়ার পরও অন্যের কাছে পড়তে যাওয়ার সাহস করা।
কিন্তু, কয়েকজন স্যার ছিলেন ব্যতিক্রম। যার মধ্যে রুহুল আমিন স্যার, মোস্তফা স্যার, মোক্তার স্যার, তাহের স্যার, নাজিমউদ্দীন স্যার প্রমুখ।
দিক হারিয়ে যখন এই হাল তখন আশার আলো দেখান আরেক জয়নাল স্যার। মাধ্যমিকের ছাঁদ ঢালাইটা উনার হাত ধরে শেষ হয়।
এরপর শুরু হয় উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতকোত্তর। এখানেও কয়েকজন পথপ্রদর্শক পেয়েছি। যারা সবসময় শিক্ষার্থীদের বিপদে বা সমস্যার এগিয়ে আসতো। উনাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোয়াজ্জেম স্যার, রিপন স্যার, শাহেনা ম্যাডাম, মং থোয়েন স্যার প্রমুখ। আবার, এমন কয়েকজনকে দেখেছি যাদের কারণে শিক্ষার্থীদের চোখে সব সময় আতঙ্ক বিরাজ করতো।
আর, এখন সবচেয়ে বড় উদ্যেগের বিষয় হচ্ছে স্কুল ভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অনেক সময় অনিচ্ছা সত্ত্বেও না বুঝে বিপথগামী হচ্ছে। আর, আরেকটি মারাত্মক ব্যাপার হচ্ছে শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক রাজনীতি!
পরিশেষে, কিছু কথা বলি। সন্তাদের ফাউন্ডেশনের ভিত্তিটা মজবুত করা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই এবং তার চূড়ান্ত পর্যায় শেষ হবে শিক্ষক, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সামাজিক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে। এর কোনটায় ব্যত্যয় হলে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনার আরো সাক্ষী হতে হবে।