18/09/2025
আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করার জন্য কোরআন ও হাদিসের আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিচে তুলে ধরা হলো:
১. আল্লাহর প্রশংসা ও মহিমা বর্ণনা দিয়ে শুরু করুন:
প্রার্থনার শুরুতে আল্লাহর গুণাবলী ও প্রশংসা করা উত্তম। কোরআনে আল্লাহ বলেন, "আর যখন আমার বান্দারা আমার ব্যাপারে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন বলুন, আমি তো কাছেই আছি। আমি প্রার্থনাকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে।" (সূরা বাকারা, ২:১৮৬)। রাসুল (সা.) বলেছেন, "যখন তোমাদের কেউ প্রার্থনা করে, তখন যেন সে প্রথমে তার রবের প্রশংসা ও গুণাবলী বর্ণনা করে, এরপর আমার উপর দরূদ পড়ে, এরপর সে যা ইচ্ছা প্রার্থনা করে।" (সুনান আত-তিরমিযী)।
২. আল্লাহর নাম ও গুণাবলী উল্লেখ করে প্রার্থনা করুন:
আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে। যখন আপনি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে প্রার্থনা করবেন, তখন সেই বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত আল্লাহর নামগুলো উল্লেখ করে প্রার্থনা করা অত্যন্ত কার্যকরী। যেমন:
রিজিকের জন্য: ইয়া-রাযযাক (রিজিকদাতা)
ক্ষমার জন্য: ইয়া-গাফুর (ক্ষমাশীল)
রহমতের জন্য: ইয়া-রাহমান, ইয়া-রাহিম (পরম দয়ালু, করুণাময়)
কোরআনে আল্লাহ বলেন, "আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেই নামসমূহ দ্বারা ডাকো।" (সূরা আল-আ'রাফ, ৭:১৮০)।
৩. নিজের পাপের স্বীকারোক্তি ও ক্ষমা প্রার্থনা করুন:
আল্লাহর কাছে প্রার্থনার আগে নিজের ভুল ও পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং ক্ষমা চাওয়া উচিত। ইউনুস (আ.) মাছের পেটে থাকার সময় আল্লাহর কাছে এভাবেই প্রার্থনা করেছিলেন, "লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায-যালিমিন।" (সূরা আম্বিয়া, ২১:৮৭)। এর অর্থ, "আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি পবিত্র, নিশ্চয় আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।"
৪. ধৈর্য ও একাগ্রতার সাথে প্রার্থনা করুন:
আল্লাহর কাছে যখন কোনো কিছু চাওয়া হয়, তখন হতাশ না হয়ে বারবার চাইতে থাকা উচিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, "তোমাদের একজনের দু'আ কবুল করা হয়, যদি সে তাড়াহুড়ো না করে বলে যে, আমি দু'আ করলাম, কিন্তু কবুল হলো না।" (সহিহ বুখারী)।
৫. নামাজের পর ও অন্যান্য বিশেষ সময়ে প্রার্থনা করুন:
ফজরের পর, আসরের পর, শেষ রাতের দিকে, বৃষ্টি চলাকালীন এবং আযানের সময় দু'আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও সিজদার সময় আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা যায়, তাই এই সময়ে দু'আ করা খুবই উত্তম।
৬. রাসুল (সা.) এর উপর দরূদ পাঠ করুন:
প্রার্থনার শুরুতে ও শেষে রাসুল (সা.) এর উপর দরূদ পাঠ করা দু'আ কবুল হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
৭. দু'আর কয়েকটি উত্তম নমুনা:
"আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফিদ্-দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ।"
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা চাই। (সুনান আত-তিরমিযী)
"রাব্বানা আ-তিনা ফিদ্-দুনিয়া হাসানাতাওঁ ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাওঁ ওয়াকিনা আযাবান-নার।"
অর্থ: হে আমাদের রব! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন এবং আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করুন। (সূরা বাকারা, ২:২০১)
"আল্লাহুম্মা ইন্নি আ'উযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়াল আজজি ওয়াল কাসলি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দ্বালাইদিদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।"
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুশ্চিন্তা ও মনোকষ্ট থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও কাপুরুষতা থেকে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের চাপ থেকে। (সহিহ বুখারী)
এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনি আল্লাহর কাছে আপনার মনের কথাগুলো পেশ করতে পারেন। আল্লাহ আমাদের সকলের প্রার্থনা কবুল করুন। আমিন।