09/09/2025
“জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বুয়েট”
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ে বুয়েটে যে রেগুলার মাস্টার্স করার সুযোগ আছে এ বিষয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী অবগত নয় । আমিও জানতাম না কিন্তু অনার্স ২য় বর্ষে পড়াকালীন একটা ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানতে পারি, আশুতোষ নাথ নামের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স শেষ করা এক ভাই যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস এ ফুল্ড ফান্ড পিএইচডি অফার পেয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে তখন জাতীয় দৈনিক, মিডিয়া, স্যোশাল মিডিয়ায় সাড়া পড়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে অনার্স পড়েছেন সত্য, কিন্তু তিনি বুয়েট থেকে রসায়নে মাস্টার্স করেছেন !!
বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, কেবল রসায়ন নয়, অন্যান্য ইন্জিনিয়ারিং বিষয়গুলোর সাথে বুয়েটে গণিত, রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে রেগুলার মাস্টার্স করার সুযোগ রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত হতাশ ও বিধ্বস্ত মানুষিক অবস্থার মধ্যে যেন একটু আশার আলো দেখতে পেলাম। এর পর একটু একটু করে তথ্য সংগ্রহ করে এবং প্রস্তুতি নিয়ে মহান রবের অশেষ মেহেরবানীতে বুয়েটে রেগুলার মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি।
অনেকদিন থেকেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনুজদের জন্য দিকনির্দেশনা মূলক কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু নানা ব্যস্ততায় সে সময় হয়ে উঠেনি। এখন সেমিস্টার শেষে লিখতে বসলাম। যাদের ভবিষ্যতে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ইচ্ছা ও স্বপ্ন আছে তাদের জন্য ভালো মানের রিসার্চ অভিজ্ঞতা অর্জন করে বিদেশে স্কলারশিপ ম্যানেজ করার মতো প্রোফাইল রেডি করার জন্য বাংলাদেশে এর চেয়ে ভালো সুযোগ আর নেই।
বুয়েটের মাস্টার্স প্রোগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, মাস্টার্স থিসিস। এখানে থিসিস ম্যান্ডেটরি।
বুয়েটে মাস্টার্স প্রোগ্রাম টোটাল ৩৬ ক্রেডিট । এর ১৮ ক্রেডিট কোর্সওয়ার্ক , বাকি ১৮ ক্রেডিট থিসিস। এখানে থিসিসে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। থিসিস সম্পর্কে যাদের খুব বেশি ধারনা নেই তাদের বোঝার সুবিধার্থে এটাকে আমরা রিসার্চ হিসেবে ধরে নিতে পারি। খুবই ভালো মানের থিসিস এখানে হয়, এবং পরিশ্রমী, ডেডিকেটেড সকলেরই একাধিক রিসার্চ পেপার আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়। ভবিষ্যতে বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই রিসার্চ পেপারগুলো, এডমিশন এবং ফান্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বুয়েটে মাস্টার্স রিলেটেড বেসিক কিছু তথ্য আমি এখানে দিচ্ছি
১. উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মাস্টার্স প্রোগ্রাম রেগুলার প্রোগ্রাম কিনা?
=> জ্বি। উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মাস্টার্স সম্পূর্ণ রেগুলার মাস্টার্স প্রোগ্রাম।
২.ভর্তির প্রক্রিয়া কী?
=> বুয়েট পোস্ট গ্রাজুয়েশন এডমিশনে গণিত বিভাগে ১০০ মার্কস এর ভর্তি পরীক্ষা নেয়। অনার্সের রেজাল্টের উপর ৫০ মার্কস এবং রিটের পরীক্ষার ১০০, মোট ১৫০ মার্কস এর উপর মেধাতালিকা প্রস্তুত করা হয়।
৩. প্রতি সেমিস্টারে সাধারণত কতজন নিয়ে থাকে?
=> তুলনামূলক কম সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়। এজন্য এটি খুবই কম্পিটিটিভ । এমএসসি তে প্রতি সেশনে সাধারণত ২২-২৫ জন, এমফিলে ১০ - ১২ জন, পিএইচডিতে ৮ - ১০ জন নেওয়া হয়।
৪.বুয়েটে পোস্ট গ্রাজুয়েশনে কি শুধু এমএসসি করা যায়?
=> বুয়েট পোস্ট গ্রাজুয়েশনে এমএসসি /এমফিল/পিএইচডি/পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিপ্লোমা সহ বেশ কিছু ডিগ্রি অফার করে। একই প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা হয়।
৫.পরবর্তী সার্কুলার কবে হবে?
=> এ বছরের অক্টোবর কিংবা আগামী এপ্রিলে সার্কুলার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
৬.ভর্তির জন্য নুন্যতম সিজিপিএ কতো থাকতে হবে?
=> ২.৫০/৪ থাকলেই আবেদন করতে পারবেন তবে ডিপার্টমেন্ট থেকে সর্ট লিস্ট করে রিটেন পরীক্ষার জন্য তালিকা প্রকাশ করে। সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলেই রিটেন পরীক্ষার জন্য শর্টলিস্টেড হওয়া যায়।
৭.এমএসসি করতে কত বছর লাগে?
=> এমএসসি ১.৫ বছরের কোর্স। যত তাড়াতাড়ি থিসিস শেষ হবে তত তাড়াতাড়ি ডিগ্রি পাওয়া যাবে। বেশিরভাগই ২ বছর লেগে যায়, তবে সিরিয়াস থাকলে এর আগেও সম্ভব, থিসিসের কাজে অবহেলা করলে এর চেয়ে বেশিও লাগতে পারে।
১০.এমএসসির খরচ, হল সুবিধা,বিদেশে উচ্চ শিক্ষা ও বৃত্তির সুযোগ সম্পর্কেঃ
প্রথমে আসি খরচঃ
১ম সেমিস্টারে, ভর্তি ফি কোর্স রেজিষ্ট্রেশন ফি সহ সব খরচ মিলিয়ে দিতে হবে ৩২৩৭ টাকা
২য় সেমিস্টারে, কোর্স রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ মোট দিতে হবে ১৭৩৭টাকা
৩য় সেমেস্টারে ,কোর্স রেজিষ্ট্রেশন ফি বাবদ ১৭৩৭ টাকা
মোট খরচঃ ৬৭১১টাকা
যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর কোন সরকারি কলেজ বা দেশের যে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে কম।
হল সুবিধা:
বুয়েটে "ফুলটাইম স্টুডেন্ট" হলে রেজাল্টের ভিত্তিতে আপনি হলে থাকার সুযোগ পাবেন। রেজাল্ট কিছুটা কম হলেও ২য় সেমিস্টার পর্যন্ত প্রায় সকলেই হল পেয়ে যায়। আমি প্রথম সেমিস্টার থেকেই আল্লাহ রহমতে হল পেয়েছি।
বুয়েটে পড়াকালীন বিভিন্ন আর্থিক সুবিধাসমূহ:
১. রিসার্চ ফেলোশিপঃ-
এমএসসি, এমফিল, পিএইচডি তে বুয়েটে প্রথম সেমিস্টারের রেজাল্টের ভিত্তিতে ফেলোশিপ দেয়া হয়।
ফেলোশিপ কি সহজ কথায় বলি,আপনি বুয়েটে গবেষণা করবেন যার জন্য বুয়েট প্রতি মাসে আপনাকে এমএসসির এমফিলের জন্য ৩০,০০০/- এবং পিএইচডি এর জন্য ৪৫০০০/ করে ভাতা প্রদান করা হবে।
২.টিচিং এসিস্ট্যান্টঃ
বুয়েটের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফলের ভিত্তিতে ১৩-১৫ জনকে টিচিং এসিস্ট্যান্টশিপ দেওয়া হয়। যা একজন ৯ম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তার ব্যাসিকের সমপরিমান, ২২০০০ টাকা।
টিচিং এসিস্ট্যান্ট সহজ কথায় বললে আন্ডারগ্যাডের এক্সাম ডিউটি, খাতা দেখা, রেজাল্ট শিট তেরি এবং ডিপার্টমেন্টের রিলেটেড আরো কিছু কাজ করতে হয় সাধারণত। টিএশিপের সার্টিফিকেট খুবই ভ্যালু এড করে ওভারওল প্রোফাইল। বিদেশের মাস্টার্স, পিএইচডিতে ফান্ডিংগুলো বেশিরভাগ টিএশিপের মাধ্যমে হয়।
৩.রিসার্স এসিস্ট্যান্টঃ-
কোনো প্রফেসরের রিসার্চ প্রজেক্ট রিসার্স এসিস্ট্যান্টশিপ হিসেবে কাজ করলে রিসার্স ফান্ড থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে স্যালারি দেওয়া হয়।
আরো কিছু জানার থাকলে পেইজের প্রিভিয়াস পোস্টগুলো দেখতে পারেন, সেখানে সিলেবাস সহ প্রয়োজনীয় গাইডলাইন দেওয়া আছে প্রয়োজনে ম্যাসেজ করতে পারেন। পেইজের লিঙ্ক প্রোফাইলে, বায়ো তে পাবেন (গ্রুপে পেইজে লিংক শেয়ার করা যায় না)।
মহিন উদ্দিন
বি.এস.সি , গণিত ( জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় )
এমএসসি স্টুডেন্ট, এপ্রিল-২৪ সেশন
টিচিং এসিস্ট্যান্ট (TA)
গণিত বিভাগ (বুয়েট)