27/07/2025
মাইলস্টোন ট্রাজেডি: কী ঘটেছিল সেদিন?
আর্মি সব ছাড়লেও নিজের ইউনিফর্ম কখনোই ছাড়ে না। এইটা চরম অবমাননা হিসেবে গণ্য হয়। মেজর মেহেদী যখন এক তরুনীর অর্ধ-উদোম শরীরের উপর তার ইউনিফর্ম খোলে বিছিয়ে দিলেন, কমান্ডারকে অনুসরণ করে অনেক সৈন্য তাদের সম্মানের প্রতীক ইউনিফর্ম খোলে অনেক যুবতীর সম্ভ্রম ঢাকলেন। তাই তারা ছিলেন খালি গায়ে। একটা ভিডিওতে দেখবেন একজন অর্ধনগ্ন লোক ভ্যান চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তার নিচের দিকে তাকালেই দেখবেন কম্বেট ট্রাউজার পরিহিত। তিনি ভ্যান চালক নন, একজন সৈনিক। অথচ একদল ইউটিউবার নিজের ভিউ ব্যবসার জন্য মিথ্যাচার করেই যাচ্ছে।
আগুনের তাপ ও ধোয়ার কুন্ডলীর মাঝে উদ্ধারকাজ কতটা কঠিন তা কল্পনাও করতে পারবেন না। ফলে অনেক সৈনিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদেরকে সহকর্মীরা ধরাধরি করে বাইরে নিয়ে আসে। এ নিয়েও ট্রলের শেষ নাই। সৈনিক কেন অসুস্থ হবে? আমাদের নাই ইক্যুইপমেন্ট, নাই এমন প্রশিক্ষণ, নাই উপযুক্ত ফায়ার স্যুট (পোশাক)। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সৈনিকরা খালি হাতে, খালি শরীরে (তাপ নিরোধক পোশাক ছাড়া) উদ্ধারকাজ চালিয়েছে- এই কথাগুলো মাথায় রাখবেন।
এদের এগারোজন ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। তাদের সাথে দেখা করতে গেলে একজন ডুকরে কেঁদে উঠে বলতে থাকে "স্যার একটা ছেলে আমার হাতেই মরে গেছে, আমি বাঁচাইতে পারি নাই।" তার মাঝে না বাঁচাতে পারার যে আক্ষেপ, যে অনুতাপ তা সামনা- সামনি না দেখলে বুঝা যাবে না।
পরের প্রসঙ্গ লাশ গুম। আজ উদ্ধারকর্মে নিয়োজিত একজনকে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন যে, আজ থেকেই সকল শিক্ষক তাদের ক্লাসের সকল অভিভাবককে কল করে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর খোঁজ নেয়া শুরু করেছেন। আশাকরি ২/৩ দিনের মধ্যেই প্রকৃত হতাহতের সংখ্যাও জানা যাবে। সেদিন ঐ কুলাঙারগুলার মুখে জুতা পরার আগেই দেখবেন এরা নতুন ন্যারেটিভ তৈরী করে ভিউ ব্যবসা ঠিক রাখতে চাইবে, কিছু কুলাঙার আবার পোস্ট ডিলিট করবে। যে নেতারা বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন তাদের ধারণা ১০০ জন মারা গেছে সেই নেতাদের মুখেও কুলুপ পড়বে।
শুধু সময়ের অপেক্ষা...
উদ্ধারকারী একজন কর্মীর জবানীতে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরলাম।
১৯ জুলাই ২০২৪ থেকে ২১ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত দীর্ঘ এক বছর দুই দিন অতিক্রান্ত হয়েছে সেনাবাহিনীর রাস্তায় নামার। আর্মির ডিপ্লয়মেন্ট নিয়ে অনেক কথা বলার ছিল, কিন্তু কখনো বলা হয় নাই। ভেবেছিলাম, মানুষ নিজের চোখে দেখে বুঝে নিক, কী ভূমিকা ছিল আর্মির ১৯ জুলাই ২০২৪ থেকে শুরু করে ২২ জুলাই বা ৩/৪ আগস্ট, ৫ আগস্ট, কিংবা তারও পরে ৬ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত। এ যেন এক বছরের এক মহাকাব্য, যেটা হয়তো অন্য কোনো একদিন বলা যাবে। কিন্তু আজ শুধু ২১ জুলাই ২০২৫ এর গল্পটুকু বলি।
সময় দুপুর ১:১৮। লাঞ্চের টেবিলে খাবার সাজানো, হয়তো আর ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই খাওয়া শুরু করবো ঠিক তখনই একটা ফোন এলো “মাইলস্টোন কলেজে একটা বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে।” শুধু এইটুকুই জানতাম, কিছুই স্পষ্ট না। এটা কি হেলিকপ্টার, না ফাইটার জেট, না কমার্শিয়াল ফ্লাইট—কিছুই জানতাম না।
এই সময়টা সাধারণত সবাই যোহরের নামাজ পড়ে। আমার পাশের মসজিদে জামাত শুরু হয় ১:১৫-তে, অর্থাৎ জামাত তখনো চলছিল। সর্বোচ্চ সংখ্যক সৈনিক তখন নামাজে, কেউ কেউ হয়তো দুপুরের খাবার খাচ্ছিল, কিন্তু অধিকাংশই তখনও লাঞ্চ শুরু করেনি। শুধু একটি কল, আর তারপরই আদেশ আসে—যে যেমন অবস্থায় আছে, গাড়িতে উঠে পড়ো। সেদিন কর্মদিবস ছিল, তাই সবাই ইউনিফর্ম পরা অবস্থায়ই ছিল। আদেশের সাথে সাথেই সবাই দৌড়ে এল, বারবার বাঁশি বাজানো হচ্ছে, গাড়ি প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সময় ১:৩০—আমরা মাইলস্টোন কলেজের দিকে রওনা দিলাম। দূরত্ব প্রায় ৫ কিমি, স্বাভাবিক সময়ে লাগার কথা ১৫ মিনিট। কিন্তু সেদিন আমরা পৌঁছে যাই মাত্র ১০ মিনিটেই।
১:৪০ - গাড়ি থেকে নামার পর সরাসরি ঘটনাস্থলে চলে যাই। আর সেখানেই শুরু হয় আমাদের যুদ্ধ। এটা কোনো সীমানার যুদ্ধ না, এটা আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ। এটা জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ। কিছুই জানি না—বিমানটা কোথায় পড়েছে, ভিতরে কে ছিল—শুধু জানি, কিছু জীবন বাঁচাতে হবে। বিমানটা তখনো দাউ দাউ করে জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস এখনো আসেনি।
আমাদের আগেই, দুপুর ১:২০ মিনিটে, সেখানে পৌঁছে গেছে কিছু মানুষ—আমাদের মতোই জলপাই রঙের পোশাকে। কারো শরীর ঘামে ভিজে, কারো ইউনির্ফম খুলে সেটা দিয়ে ঢেকে রাখা দগ্ধ লাশ।
হঠাৎ খেয়াল করলাম এক মহিলার লাশের উপর ছিল শাপলা ফুল সম্বলিত জলপাই রঙের উর্দি—যেটা দিয়ে সে মহিলার সম্ভ্রম বাঁচানো হচ্ছে।
ততক্ষণে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছাত্র, সাংবাদিক আর কিছু ভদ্র লোক—যারা সেই মহিলার লাশ না ঢেকে ভিডিও করতে ব্যস্ত। এরপর আমরা শুরু করলাম আমাদের আসল কাজ—জীবন বাঁচানো। প্রথমেই নিচতলার ক্লাসরুমগুলো থেকে জীবিত ছাত্রদের বের করে আনতে শুরু করলাম। কেউ ৮/৯ বছরের শিশু, কেউ শিক্ষক, কেউ আবার ১৩/১৪ বছরের কিশোর-কিশোরী।
ও হ্যাঁ, একটা কথা বলা হয়নি—আমরা তো সেই ‘বেকার উর্দিধারী’ লোক, যাদের হাতে নেই কোনো সরঞ্জাম, নেই কোনো অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, নেই কোনো রেসকিউ টুলস। আমাদের আছে শুধু একটা রাইফেল আর মানুষ মারার ট্রেনিং—তাও যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য। তবুও, অবাক করা ব্যাপার—সবার মতো আমিও ঝাঁপিয়ে পড়লাম। রাইফেল রেখে খালি হাতে শুরু করলাম উদ্ধারের কাজ। আগুনের যতটুকু কাছে যাওয়া যায়, যতোজনকে বের করা যায়, বের করছি।
আমাদের মধ্যে ছিল ২০–২২ বছরের কিছু তরুণ সৈনিক, যাদের নিয়ে মাঝেমাঝে হাসি-তামাশা করা হয়, বলা হয় তাদের বুদ্ধি হাটুতে। তারা সেই উর্দি খুলে একেবারে আগুনের মধ্যে ঝাঁপ দিলো—রুমের ভিতরে ঢুকে ৪/৫ জনকে একসাথে উদ্ধার করলো তাদের একজন সৈনিক বেরিয়ে এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে, প্রচন্ড তাপে। অথচ তখনো আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা তথাকথিত “১৬০ IQ” জনগণ, ছাত্র, সাংবাদিক—তারা ব্যস্ত ভিডিও করতে, ব্যস্ত কনটেন্ট বানাতে।
অবশেষে ফায়ার সার্ভিস এলো।
তারা এসে পানি ছিটাতে শুরু করলো, কিন্তু তখনো সেই জলপাই উর্দির মানুষগুলোই আগে এগিয়ে গেলো। নিজ হাতে পাইপ নিয়ে আগুনের সামনে ছুটে গেলো। ফায়ার সার্ভিস আসার পরে আমরা দ্বিতীয় তলা থেকে আরও মানুষ উদ্ধারে মনোনিবেশ করি।
ততক্ষণে ৩০ মিনিট কেটে গেছে। তখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি আমাদের আরেক সহযোদ্ধার, যিনি এই যুদ্ধ বিমানের পাইলট হিসেবে বিমানটি চালাচ্ছিলেন। তিনি আমাদেরই একজন ভাই, একজন সহকর্মী। আমরা ভাবছিলাম হয়তো তিনি ককপিটের ভেতরে পুড়ে যাওয়া কোনো দেহ হয়ে পড়ে আছেন।কিন্তু না কিছুক্ষণ পর হঠাৎ মানুষের চিৎকারে বাঁ পাশে তাকালাম। দৌড়ে গেলাম কিছুটা দূরের একটি টিনশেড বিল্ডিংয়ের দিকে। দেখলাম—আমাদের সেই সহকর্মী পড়ে আছেন, তার দেহটা ধুলায় মলিন, অজ্ঞান। বেঁচে আছেন কি না জানি না।
এক পা ভেঙে গেছে, মাথায় প্রচণ্ড আঘাত। সেই মুহূর্তেই একটা রেসকিউ হেলিকপ্টার এসে পৌঁছায়। তাঁর শরীরটাকে দ্রুত হেলিকপ্টারে তুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয় সিএমএইচে। আর এদিকে আমরা নিজেরাই ভুলে যাই আমাদের ব্যথা, ক্লান্তি, ক্ষুধা-পিপাসা—উদ্ধার অভিযান আবার শুরু হয়।
এই মাঝখানে আগুন, ধোঁয়া, আর উত্তাপে আমাদেরই ৫–৭ জন জলপাই উর্দি পরা লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে। উদ্ধার অভিযান চলতে থাকে বিকেল ৩:৩০ পর্যন্ত। অর্থাৎ প্রায় ২ ঘণ্টা, ততক্ষণে আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিছু সৈনিক দাঁড়িয়ে আছে পাশে-পুরো শরীর ঘামে আর পানিতে ভেজা। কারো মাথা নুয়ে আছে হাঁটুর উপর, কেউ মাটিতে বসে পড়েছে, কেউ আবার ভেতরে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে কারো হাতে জীবিত কেউ, কারো হাতে নিথর দেহ, আবার কেউ শুধু হাড়ের অংশ উদ্ধার করছে —যেখানে গোশত গলে গিয়েছে। যারা কাজ করছিল, তাদের সবার চোখেই পানি। কিন্তু এর মধ্যেই কিছু “ভদ্র”, “শিক্ষিত” লোক এসে হাজির। তাদের তখন মনে হলো, আগুন নিভে গেছে, এখন ভেতরে ঢোকা যায়। তারা ঢুকতে চাইল। সেখানে উপস্থিত কিছু উর্দি পরা লোক তাদের বাধা দিল। বললো, “ভিতরে এখনো প্রচণ্ড তাপ। ভিতরে যাওয়া যাবে না। আপনারা দয়া করে একটু দূরে থাকুন, আমাদের উদ্ধার কাজ শেষ করতে দিন।” কিন্তু ভদ্রলোক বলে কথা, এসব তারা শুনবে না। তারা বললো, “আমরা ছাত্র, আমরা যেখানে খুশি যেতে পারি।” এ কথা শোনার পর, পাশে দাঁড়ানো এক উর্দি পরা ব্যক্তি নরম ধমকের সুরে বললো, “এই ছেলে, তুমি এমন কথা বলছো কেন? আমাদের কাজটা শেষ করতে দাও।”
এইটুকু শোনার পরই সেই ভদ্র ছাত্র আরো ভদ্র হয়ে উঠলো। সে শুধু না, সঙ্গে থাকা ৮–১০ জনকে নিয়ে এগিয়ে এল, আর ওই উর্দি পরা লোককে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলো। তারপর কীই বা করবার থাকে? এইসব উর্দি পরা লোকদের তো নাকি বুদ্ধি হাঁটুর নিচে—তাই কিছু না ভেবে লাঠিচার্জ করলো। আর এতেই যেন শুরু হলো নতুন নাটক—সব দোষ এখন এই উর্দি পরা লোকদের।
তারপর সেই ‘ভদ্র’, ‘শিক্ষিত’ ছাত্র সবার সামনে দাঁড়িয়ে গলা চড়িয়ে বললো "উর্দি পরা লোকেরা নাকি লাশ গুম করছে! তারা নাকি ইচ্ছে করে জীবিতদের উদ্ধার করছে না!” এই কথা শুনে জনতার রক্ত যেন গরম হয়ে গেল। উদ্ধার অভিযান, মৃত্যু, দুঃখ—সব যেন ছাপিয়ে গেল।
তাদের তখন একটাই উদ্দেশ্য—এই উর্দি পরা লোকদের ‘শিক্ষা’ দিতে হবে। তারা রাস্তায় বসে পড়লো, ব্যারিকেড দিলো, পাথর ছোড়া শুরু করলো, ইট পটকেল দিয়ে বলিং প্র্যাকটিস শুরু করলো। তারা বুঝতেও পারলো না—এর ফলে তাদের ছোট ভাই-বোনদের ঝলসে যাওয়া দেহ আর হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে না। কোনো অ্যাম্বুলেন্স আসতে পারছে না।
এই পরিস্থিতিতে আবার লাঠিচার্জ করতে হলো। উর্দি পরা লোকেরা আবার সেই ভদ্র, শিক্ষিত মানুষদের ঠেলে সরিয়ে দিতে বাধ্য হলো— কারণ তাদের ভদ্র আচরণ রুখতে না পারলে উদ্ধারকাজ পুরোপুরি থেমে যাবে।
আর পরে জানা গেলো— যে ছেলেটি উর্দি পরা লোকদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করছিল, যে ভিতরে ঢুকতে মরিয়া ছিল, সে আসলে ভিডিও বানাতে চাচ্ছিল। কিছু উর্দি পরা লোক তার ‘মহামূল্যবান’ ভিডিও বানানোর পথে দাঁড়িয়ে ছিল, তাই সে ঢুকতে চাচ্ছিল, আর তাই এই কান্ড ঘটিয়েছিলো।
এই হলো সেই দিনের গল্পের শেষ অধ্যায়। মানুষ যখন চোখে দেখে না, কানে শোনে না, তখন মিথ্যা আর বিভ্রান্তি সত্যের মতো গর্জে উঠে।
তবু আমরা, যারা সেই আগুনে পুড়ে, ধোঁয়ায় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে, জলে-ঘামে ভিজে উদ্ধারকাজ চালিয়েছিলাম, তারা জানি কী সত্য, কী মিথ্যা। আর সেই সত্যই একদিন ইতিহাস হবে—ইন শা আল্লাহ।
এর পর এভাবেই চলতে থাকে আমাদের উদ্ধার অভিযান, বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যার পর, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। এখন আমি নিজের চোখে দেখা কিছু বাস্তবতা বলি—সেখানে কতগুলি লাশ পাওয়া গিয়েছিল? কতজন আহত বা দগ্ধ হয়েছিল?
৪/৫টি একেবারে গলিত লাশ পাওয়া যায়, যাদের চিনে ফেলা বা পরিচয় নির্ধারণ করা ছিল অত্যন্ত কঠিন। এর বাইরে প্রায় ১৫–২০ জনের লাশ পাওয়া যায়। এই হিসেবটা কমবেশি হতে পারে, তখন হয়তো গোনার মতো সময় ছিল না, হয়তো সময় ছিল শুধু ভিডিও করতে ব্যস্ত লোকদের।
এর মাঝেই আবার কিছু অর্ধদগ্ধ দেহ পাওয়া যায়—যাদের শরীরে তখনো প্রাণ ছিল, তাদের সাথে সাথেই অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয়। এমন অনেক দেহ ছিল, যেগুলোকে দেখে মৃত মনে হলেও, পরে দেখা যায় হৃদস্পন্দন তখনো ছিল। তাদের দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়। আমরা সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাই, তারপর সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বিমানটির অবশিষ্টাংশ উদ্ধারের কাজ।
কিন্তু সবশেষে কিছু কথা না বললেই নয়। কিছু ছাত্র, কিছু সাধারণ মানুষ ছিল, যারা সত্যিই অনেক পরিশ্রম করেছে, আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করেছে। তারা উদ্ধার কাজে সাহায্য করেছে, রাস্তা পরিষ্কার করেছে অ্যাম্বুলেন্স যাওয়ার জন্য, আহত বা দগ্ধদের গাড়িতে তুলে দিয়েছে। আর যারা এসব করেছে, সত্যি বলতে তাদের হাতে এক মুহূর্তও ছিল না ভিডিও করার বা উর্দি পরা লোকদের গায়ে ধাক্কা দেওয়ার মতো। তারা নীরবে কাজ করেছে, আর কাজ শেষে কোনো প্রতিদান না নিয়েই চলে গেছে।
আর এদিকে কিছু ভিডিও ব্লগার, ইউটিউব আর ফেসবুক থেকে ইনকামের ধান্ধাবাজ এসেছে—এইসব নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে, যাতে করে ফেসবুক বা ইউটিউব থেকে কিছু টাকা আয় করতে পারে।
আমার প্রশ্ন—যদি লাশ গুম করতেই হয়, তাহলে সেই সকল অভিভাবকরা কোথায় গেলেন?
চারপাশে হাজার হাজার মানুষ ভিডিও করেছে, রাস্তা ব্লক করে রেখেছে—তাদের কাছে ভিডিও বা ছবি কোথায়? কেউ কি একটা ভিডিও পর্যন্ত করতে পারলো না লাশ গুম করার?
একটা ছেলে, যিনি ছাত্র পরিচয় দিয়েছেন, সেনাবাহিনীর গায়ে হাত তুলেছে, কাজে বাধা দিয়েছে—সে কে? তার পরিচয় কি #? সে কিভাবে সবাইকে উস্কে দিলো?
এখনও হাসপাতালে ছোট ছোট বাচ্চারা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে—তাদের জন্য কিছু না করে কিছু নামধারী অ্যাক্টিভিস্ট মিথ্যা তথ্যের সুযোগ নিচ্ছে, মানুষের আবেগ নিয়ে খেলা করছে।
আমরা কি এভাবে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েই যাব? আমরা কি নিজের সামান্য ইনকামের জন্য এভাবেই জাতীয় সংকটেও নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি করেই যাব?
Collected
© Misbah Javed