07/07/2025
আম্মা, মাগরিবের পর ফিরব...😥
এই কথাটা আর কোনোদিন বাস্তবে ফিরবে না! 💔
গল্পের শুরুটা ছিল খুবই সাধারণ। এক বিকেলের ছোট্ট কথা।
ছেলে এসে বলল,
আম্মা, একটু পর বের হব, কাছেই যাব, মাগরিবের পর ফিরে আসব!
রুমা আখতার তখন আসরের নামাজে বসেছিলেন। নামাজ শেষ করে জানালা দিয়ে দেখলেন! ছেলে বাইকের পেছনে উঠে যাচ্ছে। একটু খটকা লাগল মায়ের মনে। মনে হলো, এতো তো কাছাকাছি না! তাহলে কোথায় যাচ্ছে তার তামিম?
কিন্তু তখনো কি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এটাই ছেলের সাথে তার শেষ দেখা?
সেই সন্ধ্যার মধ্যে ঘটে গেল এক পরিবারকে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া এক ভয়ংকর দুর্ঘটনা।
চট্টগ্রামের মাইলের মাথা এলাকায়, রোববার বিকেলে একটি সিএনজির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে যায় দুই বন্ধু! আতাউর রহমান তামিম ও সাফায়েত। ঘটনাস্থলেই মারা যায় তামিম। আহত হয় সাফায়েত।
তামিমের মা জানতেন না, তিনি যে নামাজে বসেছিলেন, সেটা আরেকটি বিদায়ের নামাজ হয়ে যাবে।
আতাউর রহমান তামিম! পরিবারের সবচেয়ে আদরের সন্তান।
দুই বোনের পর তার জন্ম। ভাইদের মধ্যে বড়। তাই ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া সব যেন তামিমকেই ঘিরেই ছিল বেশি।
পড়ত হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজে, দ্বিতীয় বর্ষে। খেলাধুলা, ঘোরাঘুরি, বন্ধুবান্ধব! সবমিলিয়ে প্রাণবন্ত একটি জীবন ছিল তার।
তার বন্ধুরা বলছে!
"কীভাবে বিশ্বাস করব, তামিম আর নেই? দুই দিন আগেই তো একসাথে খেলতে গিয়েছিলাম, ছবি তুলেছিলাম। সেই ছবিই এখন একমাত্র স্মৃতি...
যে ছবি এখন আর শুধু হাসি নয়, সে ছবি এক জীবনের গল্প বলে।
বন্ধু শাহরিয়ার মুঠোফোনে চোখে জল নিয়ে ছবিটা দেখাচ্ছিল, যেন বলছে, "তামিম তো এখানেই আছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেলের লাশঘরের সামনে কাঁদছিলেন মা!
"আমার ছেলে, আমার তামিম... নামাজের আগে যে কথাগুলো বললাম, এটাই কি তাহলে শেষ কথা ছিল?"
বাবা নিজামুল ইসলাম জানালেন!
"আজ আশুরা, সবাই বাসায় ছিলাম। বিকেলে সে বের হলো। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে খবর এল! ছেলে দুর্ঘটনায় পড়েছে। দৌড়ে গেছি। আর তখনই জানলাম! আমার ছেলে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। কারও প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই।"
এই যেন কতটা বিশ্বাস, কতটা হাহাকার আর নিরব অভিমানের একসাথে প্রকাশ!
ছোট ভাই তাওফিকও কাঁদছে... তবুও মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
একটি ভাই হারানো মানে তার জীবনের সবচেয়ে বড় বন্ধুটা হারিয়ে যাওয়া। চেয়ারে বসে চোখ মুছছে তাওফিক! ভেতরে ভাঙচুর, বাইরে কষ্ট লুকানোর চেষ্টা।
এই গল্প শুধু তামিমের না, এই গল্প প্রতিটি সন্তানের, প্রতিটি মায়ের! যাদের সন্তানেরা "কাছেই যাচ্ছি" বলে বেরিয়ে আর ফিরে আসে না।
এই গল্প একটুখানি সময় নেওয়ার,
একটু সাবধান হওয়ার,
একটু দয়াময় আল্লাহর প্রতি ভয় রাখার,
একটু ট্রাফিক আইন মানার,
একটু 'মাগরিবের পর ফিরব' কথার মূল্য বোঝার।
শেষ বিদায়ের গল্পটা যেন বারবার মনে করিয়ে দেয়:
জীবন অনেক ছোট, মায়া অনেক বড়,
আর দুর্ঘটনা কখনো সময় দেখে আসে না।
এই রকম ঘটনা নিয়মিত ঘটেই চলছে
তবে এখনই শিক্ষা নিতে হবে:
হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেলে ওঠা মানেই জীবন নিয়ে খেলা।
পরিবারকে না জানিয়ে দূরে কোথাও যাওয়া বিপদের দাওয়াত হতে পারে।
প্রতিটি সন্তান যখন বাইরে যায়, তখন বাবা-মায়ের চোখে ভেসে ওঠে হাজার দুশ্চিন্তা।
কেবল প্রযুক্তি নয়, সচেতনতা, সহনশীলতা ও দায়িত্বশীল আচরণই বাঁচাতে পারে জীবন।
তামিমের বিদায়ে শুধু এক পরিবার নয়, কাঁদছে পুরো সমাজ।
তার জানাজায়, বিদায়ে, কবরের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে শত বন্ধু, আত্মীয়, প্রতিবেশী।
কিন্তু সবচেয়ে কষ্টের হলো!
"আম্মা, মাগরিবের পর ফিরব..."
এই কথাটা আর কোনোদিন বাস্তবে ফিরবে না।
(আল্লাহ তামিমকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান দান করুন। আমিন।)
এই লেখাটি উৎসর্গ করা হলো সব সেই সন্তানদের উদ্দেশে, যারা মা-বাবাকে কথা দিয়ে ফিরতে পারেনি। এবং সেই মা-বাবাদের জন্য, যাঁরা এখনো অপেক্ষায়...😥🏍️⚠️
( ছবিগুলো সংগৃহীত)
লেখক : আব্দুল করিম সাইফী