জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর আমি লিখতে ভালোবাসি।আপনারা পড়তে ভালোবাসেন।তাই লিখে যাব লিখতেই থাকবো।

ইনবক্সে ভর্তি মেসেজ আপু লিখ না কেনো?কি হয়েছে?আবার অনেকে বলে দাম বেড়ে গেছে তাই লিখি না।আমি বলি কি লিখলে তাও আমারই লাভ তাই...
29/08/2025

ইনবক্সে ভর্তি মেসেজ আপু লিখ না কেনো?কি হয়েছে?আবার অনেকে বলে দাম বেড়ে গেছে তাই লিখি না।
আমি বলি কি লিখলে তাও আমারই লাভ তাই না আমার সাথে যারা এই প্লাটফর্ম এসেছে সবাই ইতোমধ্যে বই বের করে ফেলেছে কিন্তু আমি লাড্ডু হয়েই আছি।আমার কি ইচ্ছা করেনা নিজের নামটা আরও বড় করে ছড়িয়ে দিতে?
করে।কিন্তু পারছিনা।একটুও পারছিনা।
নিজের অসুস্থতা, স্বামীর অসুস্থতা, গ্রামের বাড়িতে পুরো একটা সংসার নিজের হাতে সামলানো, তার সাথে ছোট বাচ্চার দেখাশোনা সবকিছু আমাকে একাই করতে হয়।সবমিলিয়ে লিখার শক্তি, ইচ্ছা কোনোটাই থাকেনা।
আর লিখতে হয় শান্তপরিবেশে যেটা আমি অনেকদিন ধরে পাচ্ছিনা।কয়েকটা গল্প এক পর্ব দিয়ে আর দিতে পারিনি,কেন পারিনি যানেন?গ্যাপ পড়ে গেছে তাই আর ওওই তালটা পাই না আর লেখাও হয় না।
বলুন তো কি করা যায়?লিখক হওয়ার স্বপ্নটাকে এভাবে ম,রতে দেখতে পারছিনা,বুকে এতো যন্ত্রণা হচ্ছে।
কয়েকটা উপদেশ দিন তো।

ছবিটা অ,পারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগমুহূর্তের। আমি তখন বাহিরে অপেক্ষা করছি।তখন নিজেকে এতো অসহায় লাগছিলো,মনে হচ্ছিলো আমার দুন...
06/08/2025

ছবিটা অ,পারেশন থিয়েটারে ঢোকার আগমুহূর্তের। আমি তখন বাহিরে অপেক্ষা করছি।তখন নিজেকে এতো অসহায় লাগছিলো,মনে হচ্ছিলো আমার দুনিয়াটা ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে।নিজেকে বোঝাচ্ছিলাম কিচ্ছু হবেনা,যাস্ট কিছুক্ষণের ব্যাপার কিন্তু মন কি আর এত ধ্যান-জ্ঞান বুঝে না বোঝার তোয়াক্কা করে!চোখের পানি নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের দিকে তাকিয়ে ছিলাম।সে বোধহয় আমার অবস্থাটা বুঝতে পেরেছিলো,ওয়ার্ডবয় আসার সময় দরজার ফাঁক দিয়ে আমাকে দেখেছে,আর কিছুক্ষণ পরেই আমাকে ডেকে নিয়েছে।আমি তাকে সাহস দিচ্ছিলাম সে হেসে দেয় আর বলে আমি ভ,য় পাচ্ছি না,তুমি অযথাই চিন্তা করছো।কিন্তু আমি যানি সে ভেতরে ভ,য় পাচ্ছিলো। তার চোখের ভাষা বুঝিতো মুখে বলতে হবে কেন আমায়?

আলহামদুলিল্লাহ অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে,যারা মেসেজ দিয়েছেন রিপ্লাই দিতে পারিনি ক্ষমাসূলভ দৃষ্টিতে দেখবেন।

30/07/2025

ঝুমুর আপুর হাজবেন্ড মানে আমাদের ভাইয়া খুব অসুস্থ।
আপু খুবই ভেঙ্গে পরেছে।সবাই আপুর হাজবেন্ডের জন্য দোয়া করবেন।আমাদের হাসিখুশি আপুটা যেনো জীবনে সুখি থাকতে পারে।আল্লাহ সহায় হোক।

"আমার প্রেমিকা আছে আম্মা। এই মেয়েকে বিয়ে করা অসম্ভব। "রহিমা খাতুন নিচু স্বরে বলে, "আমি পাকাকথা দিয়ে ফেলছি।"মৃদুল কড়াগলায়...
14/07/2025

"আমার প্রেমিকা আছে আম্মা। এই মেয়েকে বিয়ে করা অসম্ভব। "

রহিমা খাতুন নিচু স্বরে বলে,

"আমি পাকাকথা দিয়ে ফেলছি।"

মৃদুল কড়াগলায় বলে,

"কার কাছে জিজ্ঞেস করে দিছ? বিয়ে আমি করবোনা হ্যাঁ? তাইলে আমাকে একবার জিজ্ঞেস করার দরকার ছিলো তাই না?"

রহিমা খাতুন স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে মৃদুলের দিকে।সেদিনের ছেলে তার,এখনি কি গজগজ করে ধমকে কথা বলে। মাকে চুপ করে যেতে দেখে মৃদুল বললো,

"আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি মা। "

রহিমা খাতুন ফের আবার বুঝাতে উদ্দত হয়।
তিনি যে ভরা মজলিসে বড় মুখ করে কথা দিয়েছেন আদুরীকে ছেলের বউ করে আনবেন।তখন অবশ্য সবাই বলেছিলো ছেলের মতামত নেওয়ার জন্য কিন্তু তিনি যানেন তার মৃদুল কতোটা বাধ্য আর লক্ষী ছেলে। ছেলের উপর সেও অগাধ বিশ্বাসের সুতোর রেশ ধরেই উপস্থিত মানুষের সামনে আদুরীকে পুত্রবধূ করা আশ্বাস দেন। এখন যদি মৃদুল বেঁকে বসে তাহলে বাপের বাড়ির কূলে তার মানসম্মান কি থাকবে? মৃদুলের বাপ বেঁচে থাকলে আর এইদিন দেখতে হতো না।উনি এবার ছেলের মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়।

"মায়ের মান রাখবা না আব্বা? মেয়েটা ভালো লক্ষী।"

মৃদুল বিরক্ত হয়ে বলে,

"কি বলি শোননা? আমি একটা মেয়েকে পছন্দ করি।"

"বিয়ের আগে ছেলেদের একটু আধটু পছন্দ থাকেই। বিয়ে হলে সব ভুলে যাইবা।"

"অসম্ভব। "

"মেয়েটার বাবা মা নেই,এতিম।আমি চাই এর দায়িত্ব তুমি নেবে, কারণ আমি কথা দিয়ে ফেলেছি।"

"এতিম তাতে আমার কি?এতিম মেয়ের দায়িত্ব নেওয়ার কথা আমার না।এমন হলে সারাদেশের সব এতিম মেয়েকে বিয়ে করে দায়িত্ব নিতে হবে। "

রহিমা খাতুন মৃদুলকে দেখে অবাক হলেন। ছেলে কোনোদিন তার সাথে গলা উঁচু করে কথা বলেনা আর এখন কিনা মুখে মুখে তর্ক করছে। সবকিছু হয়েছে আফজাল হকের কারণে,উনি এতো তাড়াতাড়ি তাকে ছেড়ে না গেলে কেউ তার সাথে এমন করার সাহস পেতো না।ছেলের কথায় উনি মনে বড়ো কষ্ট পেলেন।মৃদুলের কথার ফাঁকে ধমকে বললেন,

"মৃদুল!"

মৃদুলও তেড়েমেরে বললো,

"আমি বিয়ে করবোনা।"

মৃদুল হনহনিয়ে চারচালা ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
সে এমন হুটহাট গ্রামে আসে না।সেই যে মেট্রিক্স পাশ করে গ্রাম থেকে গেল এখন মাস্টার্স করে আর সাথে ছোটখাটো একটা চাকরি। হঠাৎ রাতে মৃদুলের বড়োভাই মিজান ফোন করে জানায় মায়ের শরীর হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে গেছে। এমন সংবাদ শুনে কি আর হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা চলে? কিন্তু এসে অবস্থা দেখছে ভিন্ন।মা টুনটুন করে দিব্যি হেটে বেড়াচ্ছে। এমন মিথ্যা তলব দিয়ে আনার কারণটা শুনেই মৃদুলের রাগে গা কাঁপছে।তারা কি আগের যুগ পেয়েছে নাকি যে ধরে বেধে বিয়ে দিলাম আর কাহীনি খতম! আজব।
সে মোটেও এই বিয়ে করবেনা।
যেই ভাবা সেই কাজ রাতে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে যায় নিজের বরাদ্দকৃত রুমে কিন্তু মাঝরাতেই ডাকাডাকি শুরু করে তার ভাবি নাছরিন।
সারাটাদিন সে বিরক্ত ছিলো নাছরিনের কাজে সেই বিরক্তের পরিমাণ আরও বাড়ে।
শ্যামলাবরন পুরুষ বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে দরজা খুলে বলে,

"কি সমস্যা ভাবি?"

নাছরিন আতংকিত চেহারা নিয়ে হাপিয়ে বলে,

"ভাই,আম্মা কেমন জানি করতেছে।"

এই কথা শুনে মৃদুল আর দেরী করেনি,একছুটে মায়ের ঘরে এসে হাজির হয়।
এসে দেখলো আসলেই মায়ের অবস্থা বেশ খারাপ।ছেলের অমত,মজলিসে জবান দেওয়া সব হিসাব গরমিল দেখে রহিমা খাতুনের অবস্থা খারাপ।
কয়েকমাস আগেই বাবা হারা হয়েছে এখন মায়ের এই অবস্থা দেখে মৃদুলের দুই ভ্রুয়ের ভাজের বিরক্তি উধাও হয়ে সেখানে ভর করে মাকে হারানোর ভয়।অতিরিক্ত চিন্তায় প্রেসার বেড়ে গেছে।সাথে শ্বাসকষ্ট আর বুকে ব্যথা।মিজান সেই বাজারের মোড় থেকে অতুল ডাক্তারকে নিয়ে আসে।এতো রাতে কি আসতে চায়? হাতে-পায়ে ধরে কোনমতে নিয়ে এসেছে।
মৃদুলের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে মিজান বলে,

"মায়ের কিছু হলে তোর খবর আছে হা,রামজাদা।"

মৃদুল জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজায়।
সে বুঝতে পারেনি তার সামান্য এই কথার ফেরে,অসম্মতিতে মায়ের এতোটা করুণ দশা হবে।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই মায়ের হার্টের দুর্বলতা প্রকাশ পায়। সবাই ভোর পর্যন্ত রহিমা খাতুনের পাশে বসে থাকে।
সকালের দিকে রহিমা খাতুনের শরীরের উন্নতি হয়। কিন্তু অভিমানে ছেলের দিকে তাকায় না।
মৃদুল অসহায়ভাবে মায়ের দিকে তাকায়।
সে আম্মা বলে ডাকতেই রহিমা খাতুন বলেন,

"তুমি এখনো ঢাকা যাওনি কেন? আমি তোমার জীবন নষ্ট করে দেব।এরচেয়ে দোয়া কর আমি যেনো তাড়াতাড়ি ম,রে যাই। তাহলেই ভালো হবে।
লোকটা আমাকে ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে কেউ র আমাকে মানুষ মনে করে না,আমার কথার দাম দেয় না । "

অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে মৃদুল বিয়েতে রাজি হয়।আর সেদিন বিকাল চার ঘটিকায় ফুলতলি গ্রামের মৃদুল আর মহিনপুর গ্রামের আদুরী আল্লাহর ইচ্ছায় বিবাহিত দম্পতি হিসাবে নতুন পরিচয় লাভ করে।
বাড়ি আসার পথে মৃদুল আদুরীর দিকে তাকায়।
তাকিয়েই তার বউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। মেয়ের চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠছে এটা অল্পবয়সী শিশু। এর সাথে আবাল মৃদুলের বিয়ে হয়েছে ভাবতেই তার দম আটকে আছে,তার উপর ঢাকার চিন্তা তো আছেই। সব মিলিয়ে মৃদুলের মেজাজ তরতরিয়ে বেড়ে যায়।আদুরীর ফ্যাসফ্যাসে কান্নায় বিরক্ত হয়ে বলে,

"আরেকবার এমন ভ্যা-ভ্যা করলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দেবো বেয়াদব মেয়ে।"

আদুরী ভয়ে চুপ হয়ে যায়।আড়চোখে স্বামী নামক নিষ্ঠুর বান্দার দিকে তাকায় কিন্তু বলিষ্ঠ হাত ছাড়া ঘোমটার জন্য আর কিছুই দেখতে পায় না । আদুরীর মনে পরে তার চাচাতো বোনের বিয়ের সময় দেখেছে আপা কান্না করাতে দুলাভাই কত ভালো করে কান্না থামিয়েছে আর উনি!
মৃদুলকে আবার ধমকাতে দেখে আদুরী ঠোঁট উলটে নিঃশব্দে কাঁদে।
রহিমা খাতুন সইয়ের মেয়েকে ছেলের বউ করে আনতে পেরে কি যে খুশী সেটা উনার চেহারা দেখেই যে কেউ বুঝতে পারছে। একমাস আগে তার সই আর তার হাজবেন্ড রোড এক্সি,ডেন্টে মা,রা যায়।আর আদুরীকে নানীর বাড়ি নিয়ে আসা হয় কিন্তু অতি লাবন্যময়ী আদুরীকে নিয়ে খারাপ চিন্তার অভাব নেই। খারাপ চোখ পারেনা আদুরীকে গিলে খায়।কোনোভাবেই যখন আদুরীকে রক্ষা করা যাচ্ছিলোনা তখন একদিন আদুরীর ভবিষ্যত নিয়ে আদুরীর নানা মজলিস বসায়।রহিমা খাতুনের বাপের বাড়ি বলে উনিও ছিলেন। আদুরীকে দেখে এতোটা মায়া জন্মায় মনে যে সেই মজলিসেই ছেলের বউ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।আর তারপরের এতো কাহীনি হল।
নাছরিন তার একমাত্র দেবরের বিয়েতে পা ফেলার ফুসরত পাচ্ছে না। এই যে মৃদুলের অমত থাকা স্বত্তেও স্বামীকে দিয়ে বাজার থেকে তাজা ফুল আনিয়েছে। আর কয়েকজন মিলে ঝাকানাকা করে বাসর সাজিয়েও ফেলেছে। সে জানে বাসর ঘর নিয়ে প্রত্যেকটা নারী পুরুষের কতোটা আশা থাকে। তার বিয়েটা হঠাৎ করে হয়েছিলো বলে কোন আয়োজন ছিলো না, এই আক্ষেপ সে গত নয় বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছে তাই এবার দেবরেরটা ইচ্ছে মতো সাজায়।
রাত বারোটার দিকে মৃদুলকে টেনেটুনে তার ঘরের সামনে নিয়ে আসে। মৃদুল ঘাড় ফিরিয়ে মায়ের দরজার দিকে তাকায়, রহিমা খাতুন এখনো ঠায় বাহিরের জলচৌকিতে বসে আছে। উনার উদ্যেশ্য মৃদুল বুঝতে পারছে। মাকে দেখে আর মৃদুল কোন রা করলো না।
নাছরিন হেসে বলে,

"কি করবা দেওরজি বুচ্ছ না?"

"দুধের শিশুকে ফিডার খাওয়াবো আর কি করবো?"

নাছরিন দুষ্টু হেসে বলে,

"আদুরী কিন্তু আদুরীর মতোই।সাবধান।যা করবা ভেবেচিন্তে।"

"কিচ্ছু করার নাই ভাবি।ওওইটা একটা বাচ্চা, নাক দিয়ে ফেন পরা বাচ্চা।তোমরা কোন আক্কেলে এমন শিশু আমার সাথে বিয়ে দিলা বুঝলাম না।বাচ্চাকে ফিডারই খাওয়াবো নাকি আমি........ "

"শিশুকে হাতেকলমে শিখাই নাও দেখবা তোমার মাস্টার হয়ে যাবে। "

"ঠেকা পরে নাই।"

নাছরিন হেসে দরজা খুলে দেয়।
মৃদুল চুপচাপ ভেতরে যায়। নাছরিন আরেকবার সতর্কবার্তা ছুড়ে দিয়ে বলে,

"সাবধান,মেয়েটা কিন্তু বাচ্চা।"

মৃদুল বাঁকা হেসে বলে,

"তাতে আমার কি আমি স্বামী।"

দরজা বন্ধ করার শব্দে আদুরী ধরমরিয়ে উঠে বসে। সারা দিনের ধকলে শরীর বেশ ক্লান্ত লাগছিলো।
সামনে লম্বাচওড়া সুঠামদেহের অধিকারী পুরুষটিকে দেখে,বুকটা ধক করে উঠে। লোকটা এতো লম্বা কেন? পালোয়ানের মতো শরীর কেনো।ডিপজলের একটা ছবিতে পাশা নামের একটা মা,স্তান ছিলো,দেখতে ওওইরকম বডি।আর এটাই তার স্বামী!
আদুরীর মন চাইলো সে কান্না করে দেবে কিন্তু হঠাৎ কান্না করা কেমন লজ্জার তাই সে কান্নাটা চেপেচুপে বসে থাকে।
আদুরীর অবস্থা দেখে মৃদুলের মজা লাগে।প্রথম চোখ তুলে তাকিয়েই যেই ভয় পেলো, সর্বাঙ্গে বিচরণ করলে এই মেয়ে ম,রে যাবে।সে এগিয়ে আসে। আদুরীকে আরও ভয় দেখানোর প্রয়াসে কাছাকাছি বসে।

"আজ থেকে আমি তোমার কি হই বল?"

আদুরী এমন প্রশ্নে ভেবাচেকা খেয়ে যায়। মৃদুল কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে। মৃদুল বলে,

"এখন আমি যা বলবো সবকিছু পাইটুপাই শুনবা।অকে?"

আদুরী ভয় পেয়ে যায়,হাতির মতো লোকটা এখন আবার কি না কি বলে ফেলে আর আগেই সে বলে উঠে,
"আপনি আমাকে ছুঁয়ে দিলে আমি কাঁদবো।"

মৃদুল নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পুরুষালী ধুমধাম রাগটা কন্ট্রোল করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। একটুপর কিছু একটা ভেবে ফিক করে হেসে দেয়। আদুরী অবাক হয়ে তাকালে মৃদুল বলে,

"তোমার বয়স কত?"

"চৌদ্দ বছর।"

মৃদুল বিষ্ফোরিত চোখে তাকিয়ে থাকে। বুক চিরবির করে রাগ ফনা তুলছে। কই যে এডাল্ট একটা মেয়েকে বিয়ে করে বাসরে আসার কথা তা না সে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে এখন অ আ ক খ শিখাবে। এদিকে সোনালী ইতোমধ্যে ভয়ে কাঁপা-কাঁপি শুরু করে দিয়েছে।সে বলে,

"বিয়ের আগে আমাকে দেখোনি?"

আদুরী অবুজপনা চেহারায় মাথা নাড়ায়,সে দেখেনি।
মৃদুল বলে,

"আমাকে এখন দেখে কি ভয় লাগছে?"

আদুরী সহয ভাষায় বলে,

"লাগছে, ভয়ে বুক কাঁপছে। "

"আমি তোমার হাজবেন্ড না?হাজবেন্ডকে কেউ ভয় পায় নাকি?"

মৃদুল আলতো করে আদুরীর হাটুতে রাখা হাতটা ধরতে গেলে সত্যিই আদুরী অবিশ্বাস্য ভাবে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে,

"আমি আম্মার কাছে যাবো।"

মৃদুল বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বলে,

"আমার সাথে বাসর আর তুমি আম্মার কাছে যাবা?অহ গড। "

শেষেকোন উপায় না পেয়ে মৃদুল তার ভাবীকে ফোন করে আসতে বলে। এতো রাতে কি আর মাকে ডাকা যায়।
নাছরিন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে। সে ভয় পাচ্ছে আজ রাতে না জানি আবার কোন এক্সিডেন্ট ঘটে যায়। মৃদুল বারান্দায়ই ছিল। ভাবীর চেহারা দেখে মৃদুল বললো,

"এক লাইন বেশী বুঝো তুমি।"

নাছরিন বলে,

"কি হয়েছে?"

মৃদুল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

"সে তার শাশুড়ী আম্মার কাছে যাবে।"

নাছরিন হেসে উঠে।

"ভয় পেয়েছে।হাতির মত জামাই দেখে সবাই ভয় পাবে স্বাভাবিক। "

"বাচ্চা এনে দিলা এখন আমার দোষ আমি হাতী?"

নাছরিন রুমে গিয়ে আদুরীকে বুঝায়।তারপর চলে যাওয়ার সময় মৃদুলকে বলে যায়,

"এখন আর কিছু বলবে না যাও।"

মৃদুল মনে মনে হাসে।সে এই মেয়েকে ছুঁয়েও দেখবে না।অসহ্যকর।
আদুরী নেমে দাঁড়িয়েছে, মৃদুল যাওয়া মাত্রই ঝুকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে।
স্বাভাবিক হলে হয়ত মৃদুল বলতো,

"আহা কি করো,তোমার স্থান পায়ে নারে বউ তোমার স্থান আমার বুকে,কারণ বুকেই কলিজা থাকে।। কিন্তু এখন এটা বলবে না,বলার কোন ইচ্ছাও নাই।"

সে সরে যায়। আর আদেশমাখা কন্ঠে বলে,

"যাও ঘুমাও। আমি তোমাকে কিছুই করবো না, আর আমাকে ভয় পেয়ে আম্মার কাছেও যেতে হবে না।মানসম্মান যা আছে সব ডুবানোর পায়তারা,ফাজিল।"

আদুরী ঠিকই ঘুমিয়ে যায় কিন্তু মৃদুল ঘুমাতে পারে না। আস্ত এক নারী নিয়ে এক খাটে ঘুমানো কি সহয ব্যাপার? বুক কাঁপে না, ইচ্ছারা নাক ফুসে উঠে না? সব সামলে মৃদুল ফজরের দিকে চোখ বন্ধ করে। ঘুমের মাঝেই টুংটাং শব্দে তার চোখর ঘুম ছুটে যায়।চোখের উপরে হাত রেখে ঘুমিয়েছিলো শব্দে তাকিয়ে দেখে কোমড় ছাপানো চুল কোন নারী তোয়ালে দিয়ে ঝেড়ে মুছে দিচ্ছে। ব্যাপারটা কি বুঝে উঠতেই মৃদুল বিষ্ফোরিত চোখে আদুরীর দিকে তাকায়। অ মাই গড!
এই মেয়ে এত সকালে গোসল করেছে কেনো? সে বললো,

"তুমি কি গোসল করেছ?"

"হ্যাঁ। "

মৃদুল উঠে বসে বলে,

"কেনো?"

আদুরী আমতা-আমতা করে বলে,

"নানী বলে দিয়েছিলো,সকালে যেনো আগে গোসল করি।বিয়ের পরে গোসল করা ফরজ।এটা নাকি ফরজ গোসল।"

মৃদুল বুঝতে পারলো না সে হাসবে নাকি কাঁদবে।
সে শুকনো ঢোক গিলে বললো,

"মাশাআল্লাহ। "

চলমান.......

#অদৃশ্য_পায়রা
#পর্ব_০১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

❝মনে হচ্ছে কয়েক বছর পরে লিখলাম।যারা পড়েছেন অবশ্যই মন্তব্য করে যাবেন।এটা কোন অসাধারণ কাহীনি হবে না যাস্ট নিজের হাতটাকে আগের তালে ফিরানোর জন্য সহজ স্বাভাবিক একটা গল্প মাত্র।❞

❝পেজের রিচের কথা তো জানেনই,লাইক কমেন্ট করলে একটু রিচ টিচ আসতো।করবেন তো?
তাছাড়া লাইক কমেন্ট বেশী দেখলে আরেক পর্ব লেখার আগ্রহ বাড়বে।❞

❝সবার রিকোয়েস্ট এ নাম পালটে দিলাম।❞

13/07/2025

"আপনি আমাকে ছুঁলে আমি কাঁদবো।"

সিরাজ নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে পুরুষালী ধুমধাম রাগটা কন্ট্রোল করার আপ্রাণ চেষ্টা করে।একটুপর কিছু একটা ভেবে ফিক করে হেসে দেয়।সোনালী অবাক হয়ে তাকালে সিরাজ বলে,

"বিয়ের আগে আমাকে দেখোনি?"

সোনালী অবুজপনা চেহারায় মাথা নাড়ায়,সে দেখেনি।
সিরাজ বলে,

"আমাকে এখন দেখে কি ভয় লাগছে?"

সোনালী সহয ভাষায় বলে,

"লাগছে, ভয়ে বুক কাঁপছে। "

"আমি তোমার হাজবেন্ড না?হাজবেন্ডকে কেউ ভয় পায় নাকি?"

সিরাজ আলতো করে সোনালীর হাটুতে রাখা হাতটা ধরতে গেলে সত্যিই সোনালী অবিশ্বাস্য ভাবে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে,

"আমি আম্মার কাছে যাবো।"

সিরাজ বিষ্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বলে,

"আমার সাথে বাসর আর তুমি আম্মার কাছে যাবা?অহ গড। "

#পায়রা
#নতুন কিছু পেলে মন্দ লাগবে না আশাকরি?
চান নাকি এই মিষ্টি গল্পটা।রাইটিং ব্লক ছাড়ানোর জন্য আবলতাবোল লিখবো।পড়বেন?
পড়লে সাড়া দিন আমি কন্টিনিউ করবো।

 #সোনার_হরিণ #পর্ব_১৩ সমাপ্ত  #জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুরকয়েকদিন কেটে যাওয়ার পরেও জাহিদ তিতলির সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।মেয়েট...
09/07/2025

#সোনার_হরিণ
#পর্ব_১৩ সমাপ্ত
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পরেও জাহিদ তিতলির সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।মেয়েটাকে কোনোভাবেই লাইনে আনতে পারছেনা।
এর মাঝেই জাহিদ তার চাচাতো ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারে তাদের বাড়িরই এক কাকার সাথে তিতলির বিয়ে ঠিক হয়েছে।কাকার দুটো মেয়ে আছে,আর তিতলিরও যেহেতু একটা বিয়ে হয়েছে তাই কেউ আর দ্বিমত করেনি।শুনে জাহিদের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।
এদিকে তিতলির মা তাকে ফোন করে তার আব্বার অসুস্থতার কথা জানায়।তাড়াতাড়ি বাড়ি না গেলে বাপের জেন্ত মুখটা আর নাও দেখতে পারে।এমন খবর শুনলে কোন সন্তানই ঠিক থাকতে পারেনা,তিতলিও সকল মান-অভিমান ভুলে বাড়ির উদ্যেশ্য নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। কিন্তু পথিমধ্যেই জাহিদ তার পথ আটকে দেয়।তিতলির ফুলে উঠা মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে ঘটনা অন্যভাবে ঘটছে।সে তিতলিকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে উঠায়।তিতলি এতোটা অবাক হয়েছিলো যে সে কথা বলতেই ভুলে গিয়েছে।তারপর সে বলে,

"কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?"

"এখানেই।"

"আমার গ্রামে যেতে হবে।"

জাহিদ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,

"যাবে।"

তিতলি ফুপিয়ে উঠে। রুদ্ধগলায় বলে,

"ফাজলামি না, আব্বা অসুস্থ।"

জাহিদ শান্তভাবে তিতলির দিকে তাকিয়ে বলে,

"জানিতো।"

"তাহলে যেতে দিন।"

"বললাম তো যাবে সমস্যা নেই তার আগে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজটা সারি।"

তিতলি বুঝতে পারে না জাহিদের সাথে তার কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকতে পারে।সে ভ্রু কুচকে বলে,

"কি কাজ?"

ততক্ষণে গাড়ি কাজি অফিসের সামনে চলে এসেছে।সেখানে জাহিদের বন্ধুরা আগে থেকেই সব রেডি করে রেখেছে।বিচক্ষণ তিতলিকে আর বুঝাতে হলো না জাহিদ কি করতে যাচ্ছে।সে মুচরিয়ে উঠে

"আমি করব না "

জাহিদ মুচকি হাসে। তিতলির হাতটা শক্ত করে নিয়ে যায় কাজি অফিসের ভেতরে।মুখে বলে,

"কি করবে না?"

"বিয়ে।"

"আমি করবো।"

তিতলি অবাক হয়ে বলে,

"কি?"

"বিয়ে, তোমাকে।"

তারপর জাহিদ গ্রামের সব ঘটনা তিতলির সামনে তুলে ধরে।তিতলি বিশ্বাস করতে না চাইলে আরও প্রমান সামনে এনে তিতলির প্রখর সাহস দমিয়ে দেয়।বাবা মা তার সাথে জীবনের প্রথম থেকেই কঠিন ছিলো কিন্তু এবার তারা কিভাবে পারছে নিজের মেয়েকে এমন এক পরিস্থিতিতে ঠেলে দিতে যেখানে দুঃখ ছাড়া কখনো সুখ হবে না।
তারপরও জাহিদকে বিয়ে করার জন্য রাজি করাতে খুব বেগ পেতে হয়েছিলো। অবশেষে একটা ঘোরের মাঝেই জাহিদ আর তিতলির বিয়েটা হয়েই গেলো।বিয়ের পরেও তিতলি থ মে,রে বসে আছে।জাহিদ সন্তপর্ণে তিতলির হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে রেখেছে।
গ্রামে আসার পুরোটা রাস্তা তিতলি জাহিদের সাথে একটুও কথা বলেনি।
বাড়ি এসে ঠিকই দেখলো তার বাবা সুস্থ আর তোড়জোড় করে বিয়ের আয়োজন চলছে।তাকে সবাই বুঝাতে ব্যস্ত পুরুষ মানুষের দুই একটা বাচ্চাকাচ্চা থাকলে সেটা দোষের কিছু না। তিতলি কোন কথা না বললে তার মা তাকে কসম দিয়ে বলে আজকে তুই এই বিয়ে না করলে আমাদের দুজনের ম,রা মুখ দেখবি।
কথা কাটাকাটিতে এতোক্ষণ কেউই লক্ষ করেনি উঠানের একপাশে জাহিদ দাড়িয়ে আছে।সে এবার এগিয়ে এসে বলে,

"যার বিয়ে হয়েছে,হাজবেন্ড সহিসালামত আছে।তাকে আবার বিয়ে দেওয়ার কোন মানে দেখিনা।"

সবাই অবাক হলেও তিতলিকে চুপ থাকতে দেখে বুঝতে পারে পানি অনেকদূর গড়িয়েছে।তারপর বিস্তারিত জানতে পেরে তিতলির মা বাবা প্রথমে রেগে গেলেও ভালো পাত্র হাতে পেয়েছে ভেবে দমে যায়।তাদের মুখ দেখেই বুঝা যায় তারা নিমরাজি।এদিকে জাহিদের বাড়িতে খবর চলে যায় এতো বড় ডাক্তার সে কিনা দিতিয়া মেয়ে বিয়ে করেছে।এক কথা,দুই কথা চালাচালি হয়ে ঝামেলা লেগে যায়।জাহিদের মা কয়েকবার মূর্ছা যায়।দুই পক্ষের কথা-কাটাকাটি হয়ে শালিশ বসে।
শালিশে বলা হয় যেহেতু দুই পক্ষের কেউই রাজী না তাই এই বিয়ে মেনে নেওয়ার কোন কারণ নেই।জাহিদ এতোক্ষন চুপচাপ সবার তামাশা দেখছিলো এবার সে বলে,
"বিয়ে আমি করেছি,সংসারও আমি করবো এতে আপনাদের মতামত চেয়েছে কে?আমার জীবনের সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে দিন,যার ভালো লাগবে সে আমাদের মেনে নেবে ভালো না লাগলে কিছুই করার নেই।সবার আগে হলো আমার সুখ।"

তারপর সে তার বাবা মাকে উদ্যেশ্য করে বললো,

"আপনারা যখন তিতলিকে মেনে নেবেন তখনই না হয় সে আপনাদের বাড়িতে পা রাখবে,এখন আমার সাথেই থাকুক।"

জাহিদ স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকা তিতলির দিকে হাত বাড়িয়ে বলে,

"চল,আমাদের দেরী হয়ে যাবে।"

তিতলি জলে টলমল চোখ নিয়ে জাহিদের দিকে তাকায়।তারপর বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছা পূরণ করে,জাহিদের হাত ধরে উঠে দাঁড়ায়। দুজন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বেরিয়ে যায়।সারা রাস্তা তিতলি জাহিদের সাথে তেমন কোন কথা বলেনি।ঢাকায় ফিরে তিতলি জানায় সে তার আগের বাসায়ই যাবে। জাহিদ তিতলির মনের অবস্থা বুঝে আর কথা বাড়ায় না।যাওয়ার আগে তার বাসার ডুপ্লিকেট চাবিটা তিতলির হাতে দিয়ে যায়।
হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনাটা সামলে উঠতে তিতলির কয়েকদিন লাগলো।এর মাঝে তিতলি আর জাহিদের আর দেখা হয়নি।জাহিদ ফোন দিলেও তিতলি হু হা করে কাটিয়ে দেয়।নিঝুম রাতে তিতলি নিজের সাথে অনেক হিসাব কষে,জীবনের ছন্দে ফিরে আসতে চায়।জাহিদকে মেনে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়।
সেদিন হঠাৎ জাহিদ তিতলির মোবাইলে মেসেজ পাঠায়,

"বউকে বউ সাজে দেখার ইচ্ছে ছিলো।"

সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে জাহিদ রাত এগারোটার নাগাদ বাসায় আসে।ফ্লাটের দরজা খুলে রুমের লাইট জ্বালিয়ে তার বিষম খাওয়ার অবস্থা।লাল টুকটুকে বউ সেজে তিতলি বসে আছে।জাহিদের চোখকে যেনো সে বিশ্বাস করতে পারছেনা।তিতলির এতো লজ্জা লাগছিলো সে মাথা তুলে জাহিদের দিকেই তাকাতে পারছিলো না।জাহিদ ধীরপায়ে এগিয়ে আসে।তিতলি তার বিছানায় বসে ছিলো,সে হাটুমুড়ে তিতলির সামনে বসে।তিতলি জাহিদের চোখে চোখ রেখে লাজুকলতার মতো হাসে।জাহিদ নিজেও হেসে ফেলে।মাথাটা উঁচু করে তিতলির কপালে ভালোবাসার বিশুদ্ধতম চুমু একে দেয়।
ফিসফিস করে বলে,

"আমার ইচ্ছেটা পূরণ করার জন্য ধন্যবাদ। "

তারপর তিতলিকে আচমকা পাজকোলা করে কোলে উঠিয়ে নেয়।আর সারা বাসা হাটতে থাকে।তিতলি অবাক হয়ে বলে,

"কি করছেন?"

"খুশীতে উদযাপন করছি। ইশ এতো সুন্দর বউ।"

জাহিদের কথায় তিতলি লজ্জায় জাহিদের বুকে মুখ লুকায়।সারাটা রাত শীতের চাদরের মতো একে অপরের সাথে জড়িয়ে ছিলো।আদরে,আবেশে পূর্ণ হয় জাহিদের অপূর্ণ মন-দেহ।নারী দেহ নিয়ে নানা কসরত পোহাতে হয়।এবারও তিতলি বুঝতে পারে এই পুরুষ অদক্ষ, অবুঝ।তিতলির পুরুষ হিসাবে জাহিদ দ্বিতীয় হলেও জাহিদের যে তিতলিই প্রথম সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।সুখের চাদরে তিতলি নিজেকে বিছিয়ে দেয়।খুশীতে ঝুমঝুম হয়ে জাহিদের চোখের নিজের সুখ দেখতে পায়।

এরপরের দিনগুলো জাহিদ তিতলিকে তিল পরিমাণ মন খারাপও করতে দেয়নি।সুখে সুখে আকাশে মেঘের মতো উড়িয়েছে। একসময় তার পরিবারও মেনে নিয়েছে সবকিছু। এই মেয়ের জন্য তো আর ছেলের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদ করা যায় না।তিতলি মাঝেমাঝে নিজের জীবনটার দিকে তাকায় এইতো সে এখন পূর্ণ,বিষাক্ত জীবনের হাতছানি আর তার পিছু করে নেই।জাহিদের দিকে তাকালে মনে হয় এইতো তার সোনার হরিণ।যে তাকে সর্বোচ্চ সুখী রাখার জন্য নিজের জীবনের সবটা বাজি রাখতে পারে।
তিতলি জাহিদের বুকে মাথা রেখে ফিসফিস করে বলে,

"তুমি আমার সোনার হরিণ। ".

জাহিদ পরম আবেশে তিতলির গালে চুমু দিয়ে বলে,

" তুমি আমার সোনা বউ।"

(সমাপ্ত)

28/06/2025

সোনার হরিণ গল্পটায় তাল হারিয়ে ফেলেছি।কি করা যায়?পরামর্শ দিন তো।

 #সোনার_হরিণ #পর্ব_১২ #জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুরজাহিদ ফোন বের করে রেকর্ড শোনালো।বিয়ের দিন সকালে ব্যথাতুর হৃদয়ে তিতলি ফুপিয়ে ক...
22/06/2025

#সোনার_হরিণ
#পর্ব_১২
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

জাহিদ ফোন বের করে রেকর্ড শোনালো।বিয়ের দিন সকালে ব্যথাতুর হৃদয়ে তিতলি ফুপিয়ে কাঁদছে আর বলছে,

"আপনাকে খুব ভালোবাসি জাহিদ সেটা বলা হলো না,কখনোই বলা হবে না,ভালোবাসি।"

তিতলি বি,ষ্ফোরিত চোখে মোবাইল ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছে।বিষ্ময়ভরা কন্ঠে বলে,

"এটা বলার আগেই তো ফোন কেটে দিয়েছিলাম।"

জাহিদ উৎসুক চোখে তিতলির দিকে তাকিয়ে আছে।

"কিন্তু লাইনটা বোধহয় কাটেনি,কাটলে তো আর রেকর্ড হতো না।আমি শুনেছিতোমার না বলা সবটা কথা,বলোনি?"

তিতলি খানিক চুপ থাকে।রেকর্ডটা সত্যি।তার স্পষ্ট মনে আছে সে জাহিদকে ভালোবাসি বলেছিলো কিন্তু সে ভেবেছিলো ফোন কেটে গেছে তাই নিজের অব্যক্ত মনের কথাটাই সে বলেছিলো কিন্তু ফোন কাটেনি এই ভয়েজ রেকর্ডই তার প্রমাণ।তিতলির গলা শুকিয়ে আসে।
তিতলিকে কোন কথা বলতে না দেখে জাহিদ বলে,

"রেকর্ডিংটা অনেক পুরোনো হয়ে গেছে, আরেকবার শুনলে ভালো লাগতো।"

তিতলির দম বন্ধ হয়ে আসে।না তাকিয়েও বুঝতে পারছে জাহিদ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সে রুদ্ধশ্বাসে বলে,

"পরিস্থিতি আর আমাদের হাতে নেই।অনেককিছু পালটে গেছে।আশাকরি পরিনত বয়সে আপনাকে সেগুলো আর বুঝিয়ে বলতে হবে না। "

"সময় আর পরিস্থিতি মানুষ চাইলেই তাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসতে পারে।আমরাও পারবো।পারবো না?"

প্রশ্নটা তিতলির দিকে তাকিয়ে উত্তরের আশায় করে।তিতলিও কাঠকাঠ গলায় জবাব দেয়।

"না।পারবো না।"

জাহিদকে কিছু বলার আগেই তিতলি রিক্সাওয়ালা মামাকে থামিয়ে দেয়।আর নেমে ভাড়া চুকিয়ে হনহন করে হাটতে থাকে।জাহিদ তিতলির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
সেই নরম,কোমলমতি তিতলি আর নেই,এই মেয়ে যেন লোহার মতই শক্ত,একে টলাতে ভিষণ বেগ পোহাতে হবে।

রাতের আকাশ একেক মানুষের কাছে একেক রকম অনুভূতি দেয়।সদ্য প্রেমে পরা কিশোরীর মনে রোমাঞ্চকর এক নরম ঠান্ডা বাতাসের মতো আর দুঃখী মানুষের কাছে রাতের অন্ধকার আকাশ আরও ভারী,ভিষণ কষ্টদায়ক।বারান্দায় হাটুমুড়ে বসে তিতলি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।রাতের অন্ধকার যেনো তার গলা টিপে ধরতে চাইছে।আর সেই অন্ধকারের মাত্রা যেনো তিতলির কষ্টের সাথে পাল্লা দিয়ে হু হু করে বাড়ছে।কিছুক্ষণ আগে তার মা ফোন দিয়েছিলো,বহুদিন, বহুমাস পরে তিতলির মোবাইলে বাবা মায়ের ফোন এলো।সবাই বলে মা বাবা নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে আপন হয়,সভার চেয়ে ভালো করে সন্তানের কষ্ট বুঝতে পারে কিন্তু তার বাবা মা ভিন্ন কেনো?তিতলির মনে পরে একবার সে শুনেছিলো, পৃথিবীর সকল বাবা মা এক হয় না।মা বাবা কয়েক জাতের হয়।যারা ভাগ্যগুনে ভালো তারাই তাদের কপালে ভালো বাবা মা নিয়ে আসতে পারে,আর বাকিরা স্বার্থপর বাবা মা পায়।সেই ভাগ্যবলে তিতলিও বুঝি ভালো মা বাবা পায়নি।যাইহোক আজকের ফোনের আলাপটাও ভিন্ন ছিলো।অনেকদিন আগে তিতলি মায়ের কাছে ফোন দিয়েছিলো সেই সুবাধেই নাম্বারটা তারা পেয়েছে।তারা নাকি তিতলির জন্য পাত্র দেখেছে।ছেলে অবশ্য আগেও দুইটা বিয়ে করেছিলো কিন্তু কপালগুনে তিতলিকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে।ছেলে বিরাট পয়সাওয়ালা।
তিতলি শক্তকন্ঠে বলে,

"রাসেলও বড়লোক ছিলো,অনেক টাকা ছিলো কিন্তু তার বাড়িতে সুখ ছিলো। এই টাকা দিয়ে কি হবে?"

এই কথা শুনে তিতলির মা বলে,

"ঢাকা গিয়া তো বা,লপাকনা কথা ভালোই শিখছিস।জলদি বাড়ি আয়।এমন মাইয়া এখনো বিয়ার বাকি,লোকে কি কয়?সমাজে মুখ দেখানোর মতো অবস্থা আছেনি?"

তিতলি এবার হেসে বলে,

"তুমি তোমার সমাজ নিয়াই থাকো।আমাকে নিয়া ভাবতে হবে না।"

তিতলি আর কোন কথা বলেনি কলটা কেটে চুপচাপ সেই থেকেই বারান্দায় বসে আছে।
মায়ের কটুক্তি, জাহিদের সেই পাগলামি তাকে উদাস করে দিচ্ছে।আজকাল রাত হলেই দমবন্ধ হয়ে আসে,মানুষের মাঝে থাকলে একটু শান্তি লাগে রাতটা যে কি ভিষণ কষ্ট হয় তা তিতলি এই জীবনে কাউকে বলে বুঝাতে পারবে না।তার কষ্টের বোঝা কমাতেই ফোন কাপিয়ে জাহিদের ইচ্ছারা এলো।রিসিভ করবেনা করবেনা করেও তিন বারের সময় রিসিভ করে।ঝাঝালো কন্ঠে বলে,

"বলেছিলাম না আর ফোন দিবেন না,আমার ভালো লাগে না।"

জাহিদ নির্লিপ্ত গলায় বলে,

"তোমার কি অন্ধকার ভালো লাগে তিতলি?"

তিতলি অন্ধকারের দিকে তাকিয়েই বলে,

"হুম।"

"আর কি ভালো লাগে?"

"আপনাকে ছাড়া সবকিছুই ভালো লাগে। "

জাহিদ চাপাস্বরে হেসে বলে,

"আমাকে ভালো লাগতে হবে না ভালোবাসলেই হবে।"

"এসব বলার জন্য ফোন দিয়েছেন?"

"একা একা বারান্দায় বসে না থেকে নিচে আস দুজনে একসাথে চা খাই।মোড়ের দোকানের কাকা খুব ভালো চা বানায়।যাবে?"

তিতলি বসা থেকে উঠে আশেপাশে তাকায়।

"আপনি কোথায়?"

"তোমাকে দেখা যায় এমন যায়গায় দাড়িয়ে আছি।"

তিতলি ভালো করে লক্ষ করে দেখে,
জাহিদ সামনের দোকানের কাছে দাড়িয়ে আছে।
জাহিদের দিকে তাকায়,দোকানের আলোয় স্পষ্ট জাহিদকে দেখা যাচ্ছে,সাদা টিশার্ট আর কালো ট্রাউজার পরিহিত ছেলেটা তার বারান্দার দিকেই তাকিয়ে আছে।তিতলির হঠাৎ বুকভারী হয়ে আসে।কি এক হাহাকারে বুকটা ভেঙ্গেচুরে যায়।চোখের অজস্র পানির ফোটা টুপটাপ পড়তে থাকে।মুখ দিয়ে না চাইতেও অস্পষ্ট কান্নারা দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসে।সেই কান্নারা জাহিদের কর্ণেও হানা দেয়।সে উচাটন হয়ে বলে,

"কি হলো তিতলি?"

তিতলির কান্নার শব্দ যেনো জাহিদকে আরও ভাবিয়ে তুলছে। সে আবার বলে,

"তিতলি?আমাকে বল কি সমস্যা?"

এবার তিতলি সেই আগের তিতলি হয়ে ফিরে।ভিষণ নরম আর ভঙ্গুর কন্ঠে বলে,

"কষ্ট হচ্ছে।"

"কেন?"

"আমাকে আর ফোন দিবেননা।আপনি ফোন দিলে আমার বেশী কষ্ট হয়। "

জাহিদ বারান্দার নারী অবয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

"ফোন না দিলে তো আরও বেশী কষ্ট হবে। "

তিতলি কান্নাভিজরিত গলায় বলে,

"হোক।"

জাহিদ কিছু বলার আগেই তিতলি ফোনটা কেটে নাম্বারটা ব্লাকলিস্টে রেখে দেয়।
এদিকে জাহিদ চেষ্টা করেও আর তিতলির সাথে যোগাযোগ করতে পারে না।

চলবে.......

(আমি বোধহয় লেখালেখি আর চালিয়ে যেতে পারবো না,অনেকদিন ধরে চেষ্টা করে এইটুকু লিখলাল তাও লাউছাও।মানসিক চাপ,শারীরিক অসুস্থতা সব মিলিয়ে হারিয়ে যাচ্ছি।)

 #সোনার_হরিণ #পর্ব_১১ #জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুরসারারাত তিতলি ঘুমাতে পারেনি,বুকে কি যে যন্ত্রণা হয়েছে সেটা কাউকে বুঝানো যাবে ...
29/05/2025

#সোনার_হরিণ
#পর্ব_১১
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

সারারাত তিতলি ঘুমাতে পারেনি,বুকে কি যে যন্ত্রণা হয়েছে সেটা কাউকে বুঝানো যাবে না।জাহিদের সামনে আরেকবার নিজেকে উপস্থাপন করার একরত্তি শক্তিও তার নেই।এতোদিন পরে লোকটা আবার কিসের টানে ফোন দেয়?নিভু-নিভু কয়লায় তুষ দিয়ে আবার কি দাউদাউ করে আগুন জ্বালাতে চায়?
রাসেলের ব্যবহারে তিতলির পুরুষদের উপর বিশ্বাস উঠে গেছে।এমন সুন্দর দেখতে রাসেল যদি এমন চরিত্র নিয়ে বাস করে অন্যসব পুরুষরা কেমন হবে ভাবতেই তার গলা শুকিয়ে আসে,শ্বাস নিতে কষ্ট হয়।রাসেলের চেহারার সাথে চরিত্রের কোন মিল নেই।

জাহিদের ক্ষেত্রে আবার ব্যতিক্রম সে রাতটা খুব আরামে ঘুমালো।ঘুমের ঘোরেই বারবার অনুভব করলো তার বুকে নরম একটা দেহ।নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষায় নিজেই লজ্জিত কিন্তু সত্যি কথা বলতে তিতলিকে একবার শক্ত করে জরিয়ে ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে।ধুয়ে দেওয়া গ্লাসের মতোই তিতলি এখন ঝকমকে, কোন দায় দায়িত্ব আর মেয়েটাকে ধরে নেই।জাহিদ চাইলেই এবার তিতলি নামক সোনার পাখিকে নিজের করে নিতে পারবে।আর চাইলেই কি কথা সে নিজের করে নিবেই।তিতলিকে যেকোনো মূল্যে তার করবে।
একবার হারিয়ে কি যে যন্ত্রণা ভোগ করেছিলো এবার আর বরং সে এই যন্ত্রণার থেকে তিতলিকেই নিজের করে নেবে।খুব কি মন্দ হবে ঘুম ঘুম চোখ মেলে বুকের মাঝে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রাখা ভালোবাসাটাকে দেখলে?উহু বরং সেই সকালগুলো শান্তিতে কাটবে।
আজ হাসপাতালে জাহিদকে বেশ ফুরফুরে লাগছে। বহু দিন পরে প্রেসেন্ট দেখতে দেখতে মুখে মুচকি হাসি লেগেই থাকলো।আজ একজন প্রেসেন্টকেও একটু ধমকও দিলো না।অন্যদিন যে দেয় তা না প্রেসেন্টরা ভাবে সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা ভালো করে রুগী দেখে না অবহেলা করে।তাই বারবার এটা সেটা বলে,তাই জাহিদ একটু গম্ভীর হয়ে কথা বলতে চায় আজ সেই গম্ভীর ভাবটাও তার নেই বরং হেসে হেসেই কথা বলছে।
দূর থেকে অহনা দেখে তারপর জাহিদের পিছুপিছু তার চেম্বারে যায় আর বলে,

"কি ব্যাপার আজ ভালো কিছু হয়েছে নাকি?"

জাহিদ চুপচাপ তাকিয়ে থাকে। তারপর ছোট করে বলে,

"কেন?এমন মনে হবার কারণ কি?"

"মুখ থেকে হাসি সরছেই না,মনে হচ্ছে স্টেপলার দিয়ে হাসি আটকিয়ে দেওয়া হয়েছে।"

জাহিদের খুশিটা যে এভাবে প্রকাশ পাচ্ছে আদোও সে বুঝতে পারেনি।সে হালকা করে বলে,

"হাসলে নাকি মন ভালো থাকে তাই হাসছি।"

অহনা ফের পুরোনো আবদার করে,

"মা যেতে বলেছে।"

জাহিদ মাথা নেড়ে বলে,

"আজ সম্ভব না।আজ অন্য এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করার কথা।"

অহনা অনেক বলেও জাহিদকে রাজী করাতে পারলো না।অহনা চলে যাওয়ার পরে জাহিদ তিতলির ফোন নাম্বারে ডায়াল করে।আজ সে তিতলির সাথে দেখা করবে, যেভাবেই হোক দেখা করার জন্য রাজী করাবেই।কয়েকবার রিং হওয়ার পরেও রিসিভ করা হচ্ছে না।
জাহিদ চিন্তিত্বচোখে ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর সে তার ডিউটি শেষ করে বেরিয়ে যাবে তখন নার্সরা এক ইমার্জেন্সি প্রেসেন্ট নিয়ে আসে।
এক নার্স জাহিদকে ডাকলে সে জানায় অন্য ডাক্তার ডাকতে তার ডিউটি শেষ কিন্তু অন্য ডাক্তাররা তখন ব্যস্ত ছিলো।অগত্যা জাহিদকেই সেই প্রেসেন্টের কাছে যেতে হয়।প্রেসেন্টকে দেখে তো জাহিদ অবাক,কারণ এটা তিতলি।অজ্ঞান হয়ে বেডে পরে আছে।কাছে কয়েকটা ছেলে-মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।জাহিদ কি হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলে এই মেয়ে হঠাৎ করেই জ্ঞান হারিয়েছে কিছুক্ষণ হলো আর জ্ঞান ফিরছে না তাই তারা এখানে নিয়ে এসেছে।
জাহিদের কেমন জানো লাগছে,নিজের শক্তিটা কমে যাচ্ছে বলে ধারণা,নাকি প্রিয় মানুষকে এই হালে দেখেই এমন অনুভব হচ্ছে।
তিতলি অনিয়মিত খাবার দাবার গ্রহণ আর অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণেই এমন হয়েছে।কিছুক্ষণ পরেই ছেলেমেয়েগুলো চলে গেলে জাহিদ চুপচাপ তিতলির বেডের পাশে বসে থাকে।ব্যাপারটা অসস্থিকর কারণ সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে।সবার সুচালো চোখের দৃষ্টি থেকে তিতলিই তাকে রক্ষা করলো,তার জ্ঞান ফিরে আসলো।পাশে জাহিদকে দেখে হতচকিত হয়ে যায়,যার থেকে লুকিয়ে থাকার এতো সংগ্রাম ভাগ্যের ফেরে সে তারই সামনে।জাহিদের সামনে তিতলির অসস্থি হচ্ছিলো তাই সে উঠে যেতে চায়।জাহিদ একটা নার্সকে ইশারায় তার রুমে নিয়ে আসতে বলে।
নার্স তিতলিকে জাহিদের রুমে নিয়ে গেলে।জাহিদ বলে,

"তো আপনি খাবার-টাবার না খেয়ে ম,রে যাওয়ার পায়তারা করছেন?"

তিতলি দুর্বল চোখে জাহিদের দিকে তাকায়।জাহিদ তখনো পূর্ন দৃষ্টিতে তিতলির দিকে তাকিয়ে আছে। সে বলে,

"আমি ডাক্তার দেখাবো না।"

অর্থাৎ জাহিদের সাথে কথা বলতে সে ইচ্ছুক না।জাহিদ মুচকি হাসে।

"হাসপাতালে এসে বলছো ডাক্তার দেখাবে না।হাস্যকর না ব্যাপারটা? "

"আমি আসিনি।"

"তোমাকে পথচারী নিয়ে এসেছে।"

তিতলি জাহিদের দিকে আবার তাকায়।
সাদা শার্ট,পূর্ণবয়স্ক যুবক।আগের থেকে এখন আরও বেশী ভালো লাগে দেখতে। তিতলির বুক কেঁপে উঠে।এতোদিন ভালো করে তাকায়নি আজ দেখে মনে হচ্ছে সব শেষ হয়ে যাবে।তিতলি আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়।

জাহিদ বলে,

"কোথায় যাচ্ছ?"

তিতলি কিছু না বলেই বেরিয়ে আসে।আজকাল বড় ছিছকাদুনে হয়ে যাচ্ছে।এই যে এখনো চোখের পানি কোন বাধা মানছে না।
একটা রিক্সা ডেকে সে উঠে পরে।তখনি তিতলি কিছু বুঝে উঠার আগেই ঝড়ের গতীতে জাহিদ ছুটে এসে রিক্সায় বসে পরে।তিতলির দিকে তাকিয়ে বলে,

"কাঁদছো কেন?"

তিতলি চোখভর্তি পানি নিয়ে মাথা নেড়ে বলে,

"কাঁদছি না।"

জাহিদ সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।দুজনেই চুপচাপ বসে আছে। এই প্রথমবারের মতো একে অপরের শরীর সামান্য স্পর্শ হচ্ছে এতেই মনে হচ্ছে বিদুৎ প্রবাহ চলমান।বুকটা ক্ষনে ক্ষনে খামচে উঠছে।কিছুক্ষণ পরে জাহিদ বলে,

"তিতলি...."

তিতলি জাহিদের দিকে তাকালে জাহিদ বলে,

"তোমার বিয়ের দিন ফোন করে যেই কথাটা বলেছিলে সেটা কি আরেকবার শুনতে পারি?আগের মতো করে?"

তিতলির চোখের পলক পরে না,কি অদ্ভুত আবদার।সেই কথাটা?কি করে বলবে?

চলবে.....

 #সোনার_হরিণ #পর্ব_১০ #জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুরতিতলির মনে হচ্ছিলো সবকিছু থেমে গেছে,সে মাথা নিচু করে নেয়।মাছুমা বেগম তিতলিকে ...
26/05/2025

#সোনার_হরিণ
#পর্ব_১০
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর

তিতলির মনে হচ্ছিলো সবকিছু থেমে গেছে,সে মাথা নিচু করে নেয়।মাছুমা বেগম তিতলিকে বলে,

"দেখোতো মেয়ের কি অবস্থা,বৃষ্টিতে না আসলেও পারতে।এখন এসেছো যখন আসো আমাদের সাথে খাবার খেতে বস। "

তিতলি সজোড়ে মাথা নাড়িয়ে বলে,

"না না আন্টি আমি খেয়ে এসেছি। আপনারা খান।"

এটা বলে তীরের বেগে সুহানার রুমে চলে যায়।জাহিদ পাথরের মতো জমে গেছে।বুকের হৃদপিণ্ড কি থেমে গেলো নাকি।মাথায় অজস্র প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।মাছুমা বেগম নিজ থেকেই বললেন,

"মেয়েটা এতো লক্ষী আর পড়ায়ও ভীষন ভালো।"

জাহিদ আর খাবার খেতে পারে না।বহু দিনের গভীর ক্ষতে কেউ যেনো আবার নতুন করে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে।এই যে বুকটা জ্বলছে,তার ব্যক্তিত্বের সাথে এসব যায়?কিন্তু প্রেমী মনটার
সাথে সব যায়।খাবার খেয়ে জাহিদ আজ অকারণেই অনেকক্ষণ অহনাদের বাসায় বসে গল্প করলো।মুখে যদিও সবার সাথে হাসিমুখে কথা বললো,মনটা পড়ে আছে সামনের রুমটায়,যেই মানুষটা ওইখানে বসে আছে তার অপেক্ষায়। কতোদিন পরে একটু দেখা,বের হলে আরেকটু মন ভরে দেখা যাবে সেই আশায় জাহিদ চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে।

তিতলি সুহানাকে পড়ালেও সে বাহিরের কথা শুনে বুঝতে পারে জাহিদ এখনো আছে।একবার না জেনে লোকটার সামনে দিয়ে আসতে পারলেও আরেকবার যাওয়ার সাধ্য নেই।তার কিসের জানো ভয় লাগে। হঠাৎ এই বাসায় জাহিদ কেন?অহনা আপুর সাথে নিশ্চয়ই এসেছে।তাদের কি কোন সম্পর্ক আছে?তারা কি সম্পর্কে আছে?থাকতেই পারে দুজনেই ডাক্তার।এসব ভাবতে ভাবতে তিতলির বুকটা যেনো ধুকপুক করে উঠে।
প্রায় দুইঘন্টা পরে তিতলি বেরিয়ে আসে।বুঝতে পারে জাহিদ চলে গেছে।
দুর্বল শরীলে তিতলি রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ায়।ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে রিক্সাভর্তি মানুষ সাই সাই করে নিজ গন্তব্যের দিকে ছুটে যাচ্ছে।
মাথার উরনাটা ভালো করে টেনে নেয়।তারপর আস্তে-ধীরে নিজ গন্তব্যের দিকে পা বাড়ায়।রিক্সা নিয়ে বাসায় যাওয়া তার জন্য বিলাসিতা। ঢাকায় রিক্সাভাড়া যেনো আকাশছোঁয়া। অল্প আয়ে রিক্সায় চড়ার সাধ সাধ্য কোনোটাই তার নেই।
তিতলি চুপচাপ হাটতে থাকে, বহু বছরের পুরোনো মানুষটাকে দেখে বুকটা কেমন করছে,অথচ কিসের সাথে কিসের তুলনা তার মতো মেয়েকে কেন জাহিদের মতো মানুষ আর পছন্দ করবে?জাহিদের পছন্দ থাকবে এখন তার সাথেই মানানসই। আশ্চর্যজনক ভাবে তিতলির চোখের পানি বাধা অতিক্রম করে পরতে শুরু করলো।বৃষ্টির পানির সাথে যা মিলেমিশে একাকার। এই কান্না কিসের? অহেতুক কান্না।সেই তো জাহিদকে উপেক্ষা করে চলে গিয়েছিলো,বলতে গেলে যেতে বাধ্য হয়েছিলো।তিতলি তার বাসায় চলে আসে।
বোকা তিতলি বুঝতেও পারলো না অতি ধীরগতিতে একটা সি এন জি তার পিছুপিছু বাসা অবধি এসেছে। সেই সিএনজিতে বসে আছে জাহিদ। ভাবুক চোখে সেই তখন থেকেই তিতলিকে পর্যবেক্ষণ করছে। তিতলিকে নিয়ে মনে হাজারটা প্রশ্ন এসেছে। সে শুনেছিলো তিতলির ভালো ঘরেই বিয়ে হয়েছে, তাহলে সে কেনো মেঘ বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে টিউশনে আসবে?আগের থেকে ম্যাচিউর লাগলেও চেহারার শূন্যতা জাহিদের চোখ এড়ায়নি।সামান্য চোখের দেখায় সে তিতলিকে বুঝতে চেয়েছে।তিতলি গেটের ভেতর ঢুকে যাওয়ার পরে জাহিদ ফুস করে একটা শ্বাস ফেলে,আর কয়েকটা বাসার পরেই তার বাসা।দুজনের এতো কাছাকাছি বাস তারপরেও একদিনও তাদের দেখা হয়নি।আশ্চর্য!

এরপরে দিন পনেরো জাহিদ সময় পেলেই এই বাসার সামনে এসেছে কিন্তু তিতলির দেখা পায়নি।তিতলিও খুব সাবধানে সুহানাকে পড়াতে যায়।সে চায়না আর কখনো জাহিদের সমুক্ষে পড়ুক।এই চোখের সামনে পরা মানে ভিষণ লজ্জা,জীবনের এই সারাংশ সে জাহিদের সামনে তুলে ধরবে কেন।বরং লোকটার থেকেই দূরে থাকাই ভালো।
এদিকে জাহিদ কোনোভাবেই তিতলির দেখা পাচ্ছে না।সে বাড়িতে তার কাজিনকে ফোন দিয়ে তিতলির খোঁজ নিতে বললে তার সেই কাজিন জানায় তিন বছর হয়ে গেছে তিতলি আপুর ডিবোর্স হয়ে গেছে।
জাহিদ আশা করেনি সে এমন সংবাদ শুনতে পাবে।হঠাৎ সে উপলব্ধি করলো তার ভিষণ সুখসুখ লাগছে।বুকে প্রজাপ্রতির পাখা ঝাপটানো ছটফট অনুভব করলো। অথচ তিতলির জীবনের এমন হালে তার দুঃখী হওয়ার কথা ছিল কিন্তু স্বার্থপরের মতো জাহিদ ভিষণ ভালো অনুভব করলো।আরেকটা সুযোগ কি তার দুয়ারে?এটা কি বিধাতার লিখন।সেই রাতটা জাহিদ ঠান্ডা মাথায় ঘুমাতে পারলো না,মাথায় কিলবিল করলো তিতলি।তার তিতলি!
জাহিদ কোন উপায় না পেয়ে একটা কাজ করে বসে। লাঞ্চ টাইমে অহনা তার সাথে খাবার খেতে আসে।মাছুমা বেগম আজও নানা পদের রান্না করে দিয়েছে।কথায় কথায় জাহিদ বলে,

"সুহানাকে যে পড়ায় সেই মিসের পড়া কেমন?"

অহনা খেতে খেতেই বলে,

"ভালো।সুহানা তো তিতলি ছাড়া কিছুই বুঝে না।"

জাহিদ ঠোঁট কামড়ে বলে,

"আমাদের বাসার বাড়িওয়ালির মেয়ের জন্য ভালো টিউটর খুজছে তো আমি সুহানার টিউটরেএ কথা বলাতে বললো ফোন নাম্বার নিয়ে দিতে উনি কথা বলে নিতে চায়।"

অহনা বলে,

"তাই নাকি?তাহলে তো ভালোই।তিতলি মেয়েটা না ভিষণ ভালো।"

তারপর অহনা জাহিদকে তিতলির ফোন নাম্বার টেক্সট করে পাঠায়।অহনা লক্ষই করে না জাহিদের চোখে চকমকে খুশীর ঝলক।

রাত এগারোটার দিকে জাহিদ বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে মুঠোফোনটা হাতে নেয়।মুখস্থ ফোন নাম্বারটা।সারাদিনে হাজারবার দেখতে দেখতেই মুখস্ত হতে গেছে।এই নাম্বারটার জন্য আজ কতো যে মিথ্যা বললো ভাবতেই জাহিদ একা হো হো করে হেসে দেয়।তারপর ডায়াল করে।এইতো রিঙ হচ্ছে।জাহিদ চোখ বন্ধ করে নেয়,বুকের ধুকপুকানি বাড়ছে কেন?
একসময় ফোন রিসিভ হয়।তিতলি ঘুমঘুম কন্ঠে বলে,

"হ্যালো।আসসালামু আলাইকুম।"

কন্ঠটা শুনে শীতল প্রশান্তিময় বাতাস কি দেহটাকে ছুঁয়ে গেলো নাকি।জাহিদ সালামের উত্তর দিয়ে বলে,

"তিতলি "

তিতলির ঘুমঘুম ভাবটা নিমিষেই উধাও হয়ে যায়। সেই কণ্ঠ।সেই ডাক।এখনো সেই আগের মতোই আছে।সে অবাক হয়ে বলে,

"জাহিদ।"

জাহিদ জানেনা কেন, সে দাত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে।এই একটা ডাকে এতো মায়া,মনে হচ্ছে কলিজাটা লাফিয়ে বেরিয়ে আসবে।হ্যাঁ, তার তিতলিটা তাকে চিনতে পেরেছে।

"কেমন আছো?".

তিতলির কান্না করতে ইচ্ছে হলো,সব কষ্টগুলো জাহিদের কাছে বলতে ইচ্ছে হলো কিন্তু সবকিছু কি বলা যায়।সে ছোট করে বলে,

" ভালো।"

জাহিদ বুঝতে পারে এই ভালোতে কোন প্রাণ নেই।

"কাল একবার দেখা করি চল।"

তিতলি খানিক চুপ থেকে বললো,

"দেখা করতে পারবো না।আমি ব্যস্ত।"

"বেশী না মিনিট দশেক হলেই চলবে।"

"না।"

দুজনে দুইপাশে চুপ করে আছে।জাহিদ আবার ডাকে,

"তিতলি....."

তিতলির তখন আকাশ ছাপিয়ে কান্না আসছে।বুকটা যে কেমনতরভাবে জ্বলছে তা কিভাবে বুঝাবে।সে কোন কথা বলতে পারলো না কারণ কান্না চলে এসেছে,এই কন্ঠে কথা বললে জাহিদ বুঝে যাবে।জাহিদ তখন আবার ডাকে,

"হ্যালো তিতলি?তিতলি...শুনতে পাচ্ছ।"

তিতলি ফোনটা কেটে দেয়।তারপর বালিশে মুখচেপে হাউমাউ করে কাঁদে।লোকটা ফিরে এসেছে কেন?

জাহিদ রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কানে এখনো ফোনটা সে বিরবির করে বলে,

"এখনো আগের মতোই ভালোবাসি। বুঝেছো।বুঝেছো তুমি?"

চলবে.......

"জাহিদের খুশী হওয়াটা কি আসলেই স্বার্থপরের মতো কাজ হলো?"

Address

Cumilla

Website

Alerts

Be the first to know and let us send you an email when জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর posts news and promotions. Your email address will not be used for any other purpose, and you can unsubscribe at any time.

Contact The Business

Send a message to জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর:

Share