11/03/2025
বাংলাদেশে নিউটন তৈরি হয় না কেন জানেন ?
কারণ এ দেশে পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ছাত্রের যোগ্যতা মাপা হয় । গোল্ডেন এ প্লাস না পেলে সে মেধাবী নয়, এমন একটি ভ্রান্ত ধারণা সমাজে গেঁথে দেওয়া হয়েছে । অথচ নিউটন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে একদম সাধারণ ছাত্র । যদি নিউটন এই দেশে জন্মাতেন, তবে হয়তো তিনি গোল্ডেন এ প্লাস না পাওয়ায় ‘মেধাহীন’ বলে গণ্য হতেন।
বাংলাদেশে বিল গেটস তৈরি হয় না কেন জানেন ?
কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা একজন ছাত্রের সৃজনশীলতা বিকাশের সুযোগ দেয় না । বিল গেটস হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপআউট হয়েছিলেন, কারণ তিনি প্রযুক্তির বাস্তবমুখী জ্ঞান অর্জনে বেশি মনোযোগী ছিলেন । অথচ বাংলাদেশে কোনো ছাত্র যদি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে চায় , তবে সে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে ব্যর্থ বলে গণ্য হয় । আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে লাখ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, কিন্তু কঠোর পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের বিশাল অংশকে বাদ দেওয়া হয়, যেন তারা শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরেই রয়ে যায় ।
বাংলাদেশে আইনস্টাইন তৈরি হয় না কেন জানেন ?
কারণ এ দেশে মুখস্থ বিদ্যার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় । আইনস্টাইন নিজেই বলেছিলেন, "Education is not the learning of facts, but the training of the mind to think." কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের চিন্তার স্বাধীনতা দেওয়া হয় না , বরং তাদেরকে পাঠ্যবইয়ের তথ্য মুখস্থ করানো হয় । এ কারণেই দেশে সৃজনশীল বিজ্ঞানী তৈরি হয় না ।
বাংলাদেশে স্টিফেন হকিংস তৈরি হয় না কেন জানেন ?
কারণ এখানে বিজ্ঞান শিক্ষাকে আবিষ্কারের পথে নয়, বরং কেবল তথ্য মুখস্থ করার জন্য ব্যবহার করা হয় । আমাদের পাঠ্যবইয়ে মোবাইল বা কম্পিউটার কীভাবে আবিষ্কার হয়েছে, কীভাবে এর প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটানো যায়—এসব পড়ানো হয় না । বরং পড়ানো হয় মোবাইল বা কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেছেন, তার বাবার নাম কী, তার চৌদ্দগোষ্ঠীর নাম কী ! ফলে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের চেয়ে আমরা পরীক্ষার খাতায় তথ্য উপস্থাপনের প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকি ।
বাংলাদেশে নীল আর্মস্ট্রং তৈরি হয় না কেন জানেন ?
কারণ আমাদের দেশে মহাকাশ বা অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই । আমরা বড় স্বপ্ন দেখার সাহস পাই না, কারণ আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের শুধু চাকরি পাওয়ার জন্য তৈরি করে, উদ্ভাবক হওয়ার জন্য নয় । আমরা বিজ্ঞান পড়ি পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য নয় । আমাদের সমাজে এমন ধারণা প্রচলিত যে, ভালো চাকরি মানেই সফল জীবন, কিন্তু নিজে কিছু আবিষ্কার করা বা নতুন কিছু তৈরি করাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না ।
বাস্তব চিত্র: মানিকগঞ্জের জুলহাস ও শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ারদের তুলনা
একজন ইলেকট্রনিক মিস্ত্রি, মানিকগঞ্জের জুলহাস , নিজের দক্ষতা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে বিমান তৈরি করেছেন এবং সেটিকে আকাশে উড়িয়েছেন । হয়তো তার বিমানটি পুরোপুরি কার্যকর ছিল না, কিন্তু তার সৃজনশীল চিন্তা ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা ছিল অসাধারণ ।
অপরদিকে, দেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করা হাজার হাজার ছাত্রের মধ্যে কজনকে আমরা মোটরসাইকেল বা ছোটখাট একটি যন্ত্র তৈরির কাজে দেখেছি ? ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগই পড়াশোনার সময় বাস্তব কাজের চেয়ে বইয়ের পৃষ্ঠা মুখস্থ করতেই বেশি ব্যস্ত থাকে । ফলে ডিগ্রি অর্জনের পরেও তারা বাস্তবে কোনো কিছু বানানোর দক্ষতা অর্জন করতে পারে না ।
উপসংহার
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে ।মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে গবেষণাধর্মী ও উদ্ভাবনী শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে হবে ।শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার জন্য পড়ানো যাবে না , বরং তাদেরকে চিন্তা ও সৃষ্টিশীলতার স্বাধীনতা দিতে হবে । কেবল তাহলেই বাংলাদেশে নিউটন, আইনস্টাইন,বিল গেটস, নীল আর্মস্ট্রং বা স্টিফেন হকিংসের মতো উদ্ভাবক ও বিজ্ঞানী তৈরি হবে।