26/01/2024                                                                            
                                    
                                                                            
                                            দাম্পত্য জীবনে বরকত বৃদ্ধির উপায় (৩)
১। দুয়া, দুয়া এবং দুয়া। অনেকেই বলে, "বিয়ের ২-৩ বছর পরেই "হানিমুনের আমেজ" দূর হয়ে গেলেই হাড়ে হাড়ে টের পাবে...।" এখন নিশ্চয়ই এই কথার মাঝে কিছু বাস্তবতা আছে। সেই সাথে দুয়া করার সময় আল্লাহর কাছে তো আমি চাইতেই পারি যে, "ইয়া রব্বুল আলামিন, সারা জীবন ধরে আপনি আমাদের বিয়ের "হানিমুনের আমেজ" বজায় রাখবেন, বরকত দান করবেন, এবং আমাদেরকে নেককার স্বামী স্ত্রী হওয়ার তৌফিক দিবেন যাদের উপর আপনি সন্তুষ্ট।" আমিন।
২। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হচ্ছে: সন্তানের সামনে কখনো স্বামী-স্ত্রীরা নিজেদের ঝগড়া, তর্ক এবং মতপার্থক্য গুলো খোলাখুলি ভাবে প্রকাশ করবেন না। আপনাদের স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে যতই ঝামেলা থাকুক, সেটা প্রাইভেটলি নিজেরা সমাধান করে নিন। বিশেষ করে সন্তানকে কিভাবে বড় করব? এই বিষয়গুলো নিয়ে যদি দুইজন দুই জায়গায় অবস্থান করেন, এবং সেটা আবার অভদ্র ভাষায় ঝগড়ার মাধ্যমে সন্তানের সামনে আসে, তাহলে সন্তান ভাববে "আমার মা-বাবা নিজেরাই ঠিক করতে পারে না যে, আমার জন্য কোনটা ভালো! আমি ওদের কারো কথা কেন শুনবো?" এই জিনিসটা অনেক ক্ষতি করে। তাই সচেতন থাকা জরুরি।
🔸 খুবই চমৎকারভাবে এই দুইটা বিষয়ের গাইডলাইন আমরা কুরআনের আয়াতে পাই। যে আয়াতে আল্লাহ আমাদেরকে শান্তিপূর্ণ পরিবারের জন্য দুয়া করা শিখিয়েছেন। সেই সূরা ফুরকানের ৭৪ আয়াত পড়ে আমরা বেশি বেশি দুয়া করবো নিজের দাম্পত্য জীবনে বরকত বৃদ্ধির জন্য।
শুনতে যতই বেসিক লাগুক, আসলে একটা সুন্দর বিয়ের সম্পর্কে জন্য প্রতিনিয়ত দুয়া করে যেতে হয়। বিয়ের আগেও, বিয়ের পরেও। দোয়া করব, আল্লাহ যেন আমাদের পার্টনারদেরকে আমাদের জন্য "চক্ষু শীতলতাকারী" করেন। 
এই "চোখের শীতলকারী" একজন স্বামী অথবা স্ত্রী হতে পারার অর্থ  অনেক গভীর! দুয়াটা শুধু মুখে মুখে লিপ সার্ভিস না হয়ে যদি গভীরতা বুঝে করা যায়, তাহলে সত্যিকার অর্থেই দাম্পত্য জীবনের মোড় ঘুরে যাবে ইন শা আল্লাহ।
আসুন আমরা এর গভীরতা বুঝার চেষ্টা করি, 
সূরা ফুরকানের ৭৪ আয়াতের দুয়া:
"হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্বামী/স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করুন, এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শ হিসেবে কবুল করে নিন।"
এখানে আল্লাহর কাছে আমরা চাই, আল্লাহ যেন আমাদের পার্টনারদেরকে এবং আমাদের সন্তানদেরকে আমাদের জন্যে "চক্ষু শীতলতাকারী" বানিয়ে দেন। অর্থাৎ আমাদেরকে এমন স্বামী-স্ত্রী দান করেন, যেন তাদের দিকে তাকালেই আমাদের চোখ, মন এবং অন্তর শান্তিতে ঠান্তা হয়ে যায়।
দুয়ার ব্যাখ্যা: 
🔸 আরবের মরুভূমিতে প্রায়ই বালুর ঝড় হতো। সেই ঝড়ের মধ্যে পড়লে সবচেয়ে কষ্ট হতো যখন চোখে বালু ঢুকে যেত! প্রচন্ড ব্যথা লাগত চোখে, আর মরুভূমির গরম বালু লেগে চোখ গরম হয়ে যেত। এ অবস্থা থেকে বাঁচার জন্যে এমন কিছু লাগবে যা চোখকে শীতল করে দিতে পারে।
এই বিষয়টাই আল্লাহ তায়ালা অসম্ভব সুন্দর ভাবে এই দুয়ার সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন। স্বামী স্ত্রীরা একজন আরেক জনের জন্যে এমনভাবে মানসিক, শারীরিক এবং আত্মিক শান্তির উৎস হবে, এমনভাবে সাপোর্ট করবে যেন দুনিয়ার ঝড় মোকাবেলা করতে করতে চোখ -মন যখন ক্লান্ত হয়ে যাবে, তখন আমাদের স্পাউজরাই আমাদের ঠান্তা করবে। 
ঘরের বাইরের ঝড় গুলো সামলে এসে দরজা বন্ধ করে যখন আমি ঘরের ভিতরে ঢুকবো, আমার স্ত্রীর চেহারাটা দেখেই আমার চোখ এবং অন্তর ঠান্ডা হয়ে যাবে—এমন একজন স্ত্রী হওয়ার কথা আমাদেরকে বলা হচ্ছে। এবং স্ত্রীর জীবনের সমস্ত ঝড়ের বিপরীতে শান্তি দানকারী একজন স্বামী হওয়ার কথা আমাদেরকে বলা হচ্ছে। আমরা কি তা করতে পারছি?
এমন হলে, বিবাহিত জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ, ধৈর্য, কান্না, হাসি, একটু ছাড় দেওয়া এভাবে প্রতিটা পর্বই আল্লাহর ইবাদাত হিসেবে গণ্য হবে।
🔸দুয়ার ২য় অংশটুকু আরো চমৎকার - শুধু একজন আরেকজনের অন্তর জুড়িয়ে দিয়েই বিয়ের শেষ না। এই বিয়ের মাধ্যমে আল্লাহ যেন এমন নেক সন্তান পৃথিবীতে রেখে যাবার তাওফিক দেন—যে দুনিয়াতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবে এবং আখিরাতে বাবা-মার জন্যে মুক্তি এবং পুরষ্কারের উসিলাহ হবে।
আমাদেরকে সন্তানদের জন্যে এমন লিডার হবার তাওফিক দিন, যেন আমরা কবরের নিচে মিশে যাবার পরেও সন্তান রা আমাদের জন্যে দুয়া করতে থাকে। এবং সেই দুয়া স্বামী স্ত্রীর জান্নাতে দাখিল হবার উসীলাহ হিসেবে কবুল হয়। 
🔸 সেজন্য নিজেদের মধ্যে যতই মতপার্থক্য থাকুক না কেন, কখনোই সন্তানের সামনে ঝগড়াঝাঁটি করা উচিত নয়। এটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ! আপনাদের স্বামী-স্ত্রীদের মধ্যে কোন সমস্যা তৈরি হলে, এটা প্রাইভেটলি নিজেরা সমাধান করে নিন। বাচ্চার তারবিয়াত নিয়ে দুইজন দুই জায়গায় অবস্থান করলে, সন্তান ভাববে "আমার মা-বাবা নিজেরাই ঠিক করতে পারে না, সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, আমি ওদের কথা কীভাবে শুনবো?"
তাই এই বিষয়টা খুব হিকমতের সাথে মাথায় রাখবেন, স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া/মতপার্থক্য তর্ক গুলো যেন সন্তানের সামনে বাজে ভাবে এক্সপোস না হয়। তাহলে সেই সন্তানকে সুস্থ তারবিয়াহ এবং শিক্ষা দেয়া আরো কঠিন হবে।
একটা পরিবার শক্ত মানে পুরো সমাজ/ উম্মত শক্ত! 
পরিবার একটি সমাজের অন্যতম একক, ইউনিট। এজন্যেই শয়তান সবচেয়ে বেশি খুশি হয় যখন স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া/বিচ্ছেদ ঘটে। একটা ফ্যামিলি ভেঙে দিতে পারলে,  সমাজের কাঠামোই আস্তে আস্তে ভেঙে যায়। আল্লাহর দ্বীন শিখার প্রথম স্কুল হচ্ছে - পরিবার - আমাদের মা- বাবা। ফ্যামিলির ভিত্তি থেকে দুর্বল করে দিলে, সেখানে দ্বীন শিক্ষা তো দূরে, সন্তানরা একটা মিনিমাম আদর্শ ধরে রাখতেই হিমশিম খাবে।
বিয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্যে একটা বিশেষ রহমত। খুশির উৎসব! কত আনন্দ চারপাশে বিয়ে নিয়ে, তাই না? সবকিছুর মাঝে ফুরকানের ৭৪ নং আয়াতটা যেন আমরা ভুলে না যাই! বাচ্চাদেরকে দুনিয়াতে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানিয়ে আখিরাতের জন্যে তাকে ফকির করে যেন বড় না করি!
আপনারা পরিবারে শান্তি, সমৃদ্ধি ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য নিয়মিত সিজদাতে, দুয়া কবুলের সময়গুলোতে দুয়া করতে থাকবেন। এবং এই দুয়ার গভীরতা বুঝে সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে।
আল্লাহ আপনার চোখের শীতলতাকারী ফিরিয়ে দিবেন কারণ তিনি আল-ওয়াহহাব। আল্লাহ কখনো তার বান্দাকে ফিরিয়ে দেন না।
 #রাইটিং_থেরাপি 
©️ শারিন